বই : ভালোবাসার চাদর।
লেখক : আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস।
মুস্তাফা আল -জিবালী।
প্রকাশনী: সিয়ান পাবলিকেশন।
মূদ্রিত মূল্য : ২৮৮/-
____________________________________________
গতমাসে আমার কাজিনের বিবাহ হল। সেই বিবাহ উপলক্ষ্যে অনেক দিন পর, পরিবারের মোটামুটি প্রায় সবাই একত্রিত হবার সুযোগ হয়েছিল। সেই সুযোগে জমে উঠল পারিবারিক আড্ডা।
আড্ডার এক ফাঁকে আমরা যারা অবিবাহিত আছি, প্রসঙ্গ তাদের দিকে মোড় নিল। কে কবে বিয়ে করছি! যে যার মত উত্তর দিলেও আমি নীরব হাসির মধ্যেই উত্তরটাকে সীমাবদ্ধ রাখবার চেষ্টা করেছি।
এই নীরব হাসির অর্থ হয়তো যে যার মত করে ধরে নিয়েছে। কিন্তু আমি ভাবছিলাম ভিন্ন কথা। বিবাহ নিয়ে আমার জ্ঞান ‘ক’ ও না। যা নিয়ে আমি ‘কলিকাতা’ কল্পনা করে নিবো। তখন ভাবছিলাম, আচ্ছা, বিবাহের গাইড মূলক কোন বই কি বাজারে নেই?
গতকাল রাতে একটি বই হাতে পেলাম। সিয়ান পাবলিকেশন এর ‘ভালোবাসার চাদর’। রাতেই বইটির দুই তৃতীয়াংশ শেষ করলাম। আজ সবটুকু শেষ করে, এই লেখাটি লিখতে বসলাম।
‘ভালোসার চাদর’ বইটির সূচনা হয়েছে ‘কল্যাণময় বন্ধন’ নামক অধ্যায় দিয়ে। এই অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে, বিবাহের প্রয়োজনীয়তা। এমনকি এই অধ্যায়ে সেই সকল মানুষদেরও কথা বলা হয়েছে, যারা কথায় কথায় বলেন, ‘বিবাহই করব না’। এইতো দিন কয়েক আগে আমিও এই গ্রুপের লোক ছিলাম। এই গ্রুপের মানুষগুলোর জন্য রয়েছে দারুণ কিছু নাসীহাহ।
এরপরের অধ্যায়, ‘স্বামী-স্ত্রী’ নির্বাচন পর্ব। আজকাল পাত্রী দেখতে গেলে, শুধু ময়দাই দেখা যায়। পার্লার থেকে হাফ ইঞ্জি ডিসটেম্পার মেরে নিজের আজন্ম কালারটাকেই পরিবর্তন করে দেয়। আর সেই কালার দেখে আমাদের মতিভ্রম অবস্থা।
আবার পাত্রীরা বিয়ে করার আগেই খোঁজ করেন, ‘স্যালারি কত? ঢাকায় ফ্ল্যাট আছে তো?’
এই সকল শ্রেণীর মানুষগুলোর কথা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই অধ্যায়টি।
তৃতীয় অধ্যায়, ‘বিয়ের প্রস্তাব’। রাসূল সা. এর সুন্নাহনুসারে কীভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে সেই সকল বোনদের কথাও আলোচনা করা হয়েছে, যারা দ্বীনদারীর কথা বলে বিয়ের আগে পাত্রকে মুখ দেখাতে নারাজ। অথচ রাসূল সা. তাঁর এক সাহাবীর বিয়ে ঠিক হবার সংবাদ পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছো?’
সাহাবী জবাবে বললেন, ‘না, ইয়া রাসূলুল্লাহ।’
তখন রাসূল সা. বললেন, ‘যাও আগে তাকে দেখ এবং তারপরই তাকে বিবাহ কর।
চতুর্থ অধ্যায় ‘আকদ’। এই অধ্যায়ে পাত্রীর অনুমতি এবং মোহরানা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মেয়ের অনুমতি নিয়ে বিয়ে দেওয়ার অধিকার ইসলামই দান করেছে। অথচ আজকাল অনেকে ইসলামের দোহাই দিয়ে মেয়ের সম্মতির তোয়াক্কা না করেই, প্রায় জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন। এই কাজটি স্পষ্টই ইসলাম বিরোধী।
পঞ্চম অধ্যায় ‘বিয়ের অনুষ্ঠান’। ই্দনিংকালে বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই আমার কাছে ফটোসেশন মনে হয়। একটা বিয়ের পিছনেই প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। অথচ রাসূল সা. বলেছেন, বরকতময় বিবাহ সেই বিবাহ যেখানে খরচ কম হয়। কিন্তু এখন যেন মনে হয়, বিয়ে করা মানেই খরচ করা। এই বাড়াবাড়ি রকমের খরচের ভয়েই আমাদের ন্যায় গরীব ছেলেরা বিবাহের দিকে পা বাড়াতে হয়তো ভয় পাচ্ছে। অথচ ইসলাম আমাদের কতসুন্দরই না সমাধান দিয়েছেন।
এরপরে আরো কয়েকটি অধ্যায় রয়েছে। সেগুলো বিবাহ পরবর্তি জীবনের জন্য গাইডলাইন বলে মনে করি। যেহেতু আমি নিজেই এখনো অবিবাহিত তাই সেদিকে খুব একটা আলোকপাত করলাম না।
পরিশেষে একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে শেষ করি। সেদিন একজন বললেন, ‘চাইনিজ খাইতে চামুচের ব্যবহার ক্যামনে করতে হয়,এটা নিয়ে কোন বই আছে নাকি?’
আমরা চামুচ দিয়ে চাইনিজ খাওয়া শিখতে বই পাঠ করতে চাইলেও বিয়ে নিয়ে বই পাঠ করতে চাই না। অথচ বিয়ে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই বিয়ের উপরই নির্ভর করছে আপনার জীবনের অনেক কিছুই। তাই বিয়ের আগে একবার হলেও সিয়ান পাবলিকেশন এর এই গাইডমূলক বই ‘ভালোবাসার চাদর’ পড়ে ফেলুন। ভালোবাসাগুলো ভালো থাকুক।
রিভিউ : শাহামুন নাকিব ফারাবী।
।। আদর্শ পাত্রের বৈশিষ্ট্য ।।
• ধার্মিকতা
পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে যেমন কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজতে বলা হয়েছে, তেমনি পাত্রের বেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে পাত্রের ক্ষেত্রে প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো তার দীনদারী ও চরিত্র।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনদার এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী পুরুষের সাথে তাদের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দিয়েছেন। সৎকর্মশীলতা এবং উত্তম চরিত্রের জন্য প্রশংসিত কোনো পুরুষ কোনো নারীকে বিয়ে করতে চাইলে তার প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। আবু হুরায়রা, ইবনে ‘উমর এবং আবু হাতিম আল-মুযানি রাদিআল্লাহু আনহুম বর্ণনা করেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যদি কোনো পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তোমার কাছে আসে এবং তুমি তার দীন এবং চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হও, তা হলে তাকে বিয়ে করো—যাতে করে পৃথিবীতে ফিৎনা এবং বড় ধরনের বিপর্যয় ছড়িয়ে না পড়ে।”
[আত-তিরমিযি, ইবনু মাজাহ এবং আরও অনেকে হাদীসটি সংকলন করেছেন। আল-আলবানি হাদীসটিকে হ়াসান বলে মত দিয়েছেন (সহ়ীহু়ল জামে’, হাদীস নং ২৭০ এবং আস-সহীহাহ, হাদীস নং ১০২২)]
• উত্তম চরিত্র
কোনো নারী যখন একজন দীনদার এবং উত্তম চরিত্রের কোনো পুরুষকে বিয়ে করে, তখন তার হারানোর কিছুই থাকে না—সে তাকে স্ত্রী হিসেবে রাখলে উত্তম আচরণের সাথেই তাকে রাখবে; আর সে যদি তাকে তালাক দিতে চায়, তা হলে সেটাও সে উত্তম আচরণের সাথেই করবে। অধিকন্তু, স্বামী দীনদার এবং উত্তম চরিত্রের হলে তা স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি সকলের জন্যই কল্যাণকর। এতে তারা দীনের জ্ঞানার্জন এবং আরও ভালোভাবে দীন পালনের ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহায়তা করতে পারবে।
কোনো পুরুষের যদি এই বৈশিষ্ট্যগুলো না থাকে, তা হলে একজন নারীর উচিত হবে সে পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ না করা। বিশেষ করে যদি সে সালাত আদায়ের ব্যাপারে অবহেলা করে, মদ্যপানে আসক্ত হয়, ব্যভিচারে কিংবা এই ধরনের অন্যান্য বড় পাপে লিপ্ত থাকে। স্বামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্থসম্পদ এবং সামাজিক পদমর্যাদা যেন কখনোই একজন নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাপকাঠি না হয়।
• আর্থিক অবস্থা
দুঃখের বিষয়, বিয়ের জন্য ছেলে খোঁজার সময় মেয়ের পরিবার বা অভিভাবক ছেলের ঈমান-আকীদা এবং তাক্বওয়ার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে প্রথমেই তার অর্থ-সম্পদের দিকে নজর দেয়। অধিকন্তু, আজকের দিনের অধিকাংশ মুসলিম নারীরাও অনৈসলামী মতাদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছে। অথচ তাক্বওয়া, উত্তম চরিত্রই কেবল টেকসই ও প্রেমময় দাম্পত্য-সম্পর্কের নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু অধুনা মুসলিম নারীরা এ ধরনের স্বামী আর খোঁজে না। তারা স্বামী হিসেবে এমন পুরুষকে খুঁজে বেড়ায় যে ঐশ্বর্যশালী, যার রয়েছে উচ্চ পদমর্যাদা কিংবা যে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত কোনো বিশেষ ডিগ্রিধারী। আর এমনটি করতে গিয়ে তারা দীন-ধর্ম, নৈতিকতা এবং সর্বোপরি সখু পর্যন্ত বিকিয়ে দিচ্ছে।
আমরা অবশ্যই মুসলিমদেরকে দারিদ্র্যের মাঝে জীবন কাটানোর আহ্বান জানাচ্ছি না। তবে আমরা দৃঢ়তার সাথে বলছি, অর্থসম্পদ এমন একটি গৌণ বিষয় যেটাকে কখনোই দীন এবং উত্তম চরিত্রের সমকক্ষ মনে করা উচিত নয়। তা ছাড়া দারিদ্র্য কিংবা সচ্ছলতা কোনো স্থায়ী বিষয় নয়। বিত্তশালী কোনো ব্যক্তি অল্প দিনের মধ্যেই দরিদ্র হয়ে যেতে পারে, আবার দরিদ্র কোনো ব্যক্তিও অল্প সময়ের মধ্যেই সচ্ছল হয়ে যেতে পারে।
• আচার-ব্যবহার ও সৌজন্যবোধ
অনেক সময় মানুষের সাধারণ দীনদারি, সালাত, সিয়াম, চরিত্র ঠিক থাকলেও আচারব্যবহার ভালো থাকে না। অনেকের ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, বাইরের মানুষদের সাথে বেশ অমায়িক ব্যবহার করলেও ঘরের মানুষদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকে। এ স্বভাবের কারণে নিজেদেরদের সম্পর্কগুলো একেবারে ভেঙে না দিলেও সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট করে দেয়।
ইসলামে যে উত্তম চরিত্রের কথা বলা হয়েছে সেটা কেবলই অশ্লীলতা ও যিনা- ব্যভিচার থেকে দূরে থাকার কথা বোঝায় না; বরং আচার-ব্যবহারও এর মধ্যে শামিল। কোনো পাত্রের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার সময় খেয়াল করুন তার আচার-ব্যবহার কেমন; সে তার পরিবার-পরিজন, অফিস কলিগদের সাথে কীভাবে মেশে; ড্রাইভার, দারোয়ান কিংবা কাজের লোকদের সাথে কেমন আচরণ করে। মুখে হাসি রেখে কথা বলে, নাকি সারাক্ষণ বদমেজাজি হয়ে থাকে।
• চেহারা
পুরুষদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন কঠোর কঠিন ও দুরূহ কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষি কাজ করা, বিশাল ভারী বোঝা বহন করা, হাজার ফুট মাটির গভীরে খনিতে নেমে খনিজ দ্রব্য উত্তোলন করা, সমুদ্রযাত্রার মতো দুঃসাহসিক কাজ, উঁচু উঁচু ইমারত নির্মাণসহ যত রকম কঠিন কায়িক পরিশ্রমের কাজ আছে এগুলো করা পুরুষের দায়িত্ব। তাই পুরুষের সাধারণ শারীরিক কাঠামোর মধ্যে নারীর মতো কোমলতা, সৌন্দর্য, কমনীয়তা নেই। আল্লাহই পুরুষকে এভাবে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষের সৌন্দর্য তার পৌরুষদীপ্ত কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিহিত। তাই তার চেহারা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে পুরুষের চেহারার সৌন্দর্য তার দাড়ির মধ্যে পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে ‘Beard for a man is like mane for a lion.’ অর্থাৎ ‘পুরুষের দাড়ি হলো সিংহের কেশরসম’।
মুখে দাড়ি না থাকা একটি নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য। দাড়িবিহীন একজন সুস্থ সবল সুগঠিত চেহারার যুবককে কোমলমতি একজন নারীর সাথেই সামঞ্জস্য আনা যায়। এ জন্য অনেক বিদ্বান লোকেরা দাড়িহীন লোকদের দিকে তাকানোকে কিছুটা নারীদের দিকে তাকানোর সাথে তুলনা করেছেন। তাই পাত্রের চেহারা দেখার ক্ষেত্রে দেখুন তার দাড়ি আছে কি না।
[ ‘ ভালোবাসার চাদর ‘ বই থেকে ]