বইয়ের নামঃ পদ্মা সেতু
লেখকঃ মোঃ এনায়েত চৌধুরী
পড়াশোনাঃ বুয়েট (পুরাকৌশল বিভাগ)
(এর থেকে বড় পরিচয় সে “নটরডেমিয়ান”)
প্রভাষকঃ বুয়েট (পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট)
আজ কিংবা কাল কিংবা দশ বছর পরে হলেও, পদ্মা সেতু নিয়ে বিস্তর গভেষণা হবেই। গভেষনাটি সাধারণ মানুষেরা নয়- হবে স্থাপত্যবিদ্যা অথবা লিডারশীপ নিয়ে যারা পড়াশোনা করবে, তাদের টেবিলে তাদের এগিয়ে চলার জন্যই। কারণ এই সেতু অন্য ১০-২০টি সেতুর মতো নয়। এমনকি বিশ্বের সবথেকে দীর্ঘ সেতুর থেকেও এই সেতুর গুরুত্ব অনন্য।
এই সেতু অন্য দশটি সেতু থেকে কেন ভিন্ন, তা বুঝাতে এই নদী সম্পর্কে একটি উদাহরণ দিলেই যথেষ্ট যা কিনা লেখক তার বইয়ে খুব সুন্দর ভাবেই তুলে ধরেছেন। পদ্মা সেতু কতটা ভয়ঙ্কর ও খরস্রোতা তা বলতে গিয়ে উনি লিখেছেন, “পদ্মা তার পানির স্রোতের সাথে করে নিচ থেকে বিপুল পরিমাণে মাটি তুলে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এভাবে নদীর নিচের মাটি ক্ষয় হতে পারে ৬৫ মিটার গভীর পর্যন্ত যা কিনা ২১ তলা উঁচু দালানের সমান গভীরতা এবং সেই সেই জন্যই এর প্রতিটি পাইলের উচ্চতা ১২৮ মিটার কিংবা ৪২ তলা দালানের সমান!!!
যাই হোক, লেখক Enayet Chowdhury সাথে আমার পরিচয় টেনেট নামক একটি সিনেমা নিয়ে বিশ্লেষণ ধর্মী একটি ভাইরাল ভিডিও দেখতে গিয়ে
https://fb.watch/4VrGgn9cgF/)। তার ব্যাখ্যায় মুগ্ধ হয়ে এরপর তার চ্যানেলের প্রায় সব ভিডিও-ই দেখে ফেলেছি যার অনেকগুলো আপনারা অনেকেই হয়তো দেখেছেন এরই মধ্যে।
এবার আসি তার লেখা “পদ্মা সেতু” নিয়ে যা কিনা বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ এবং যেখানে উনি খুবই সহজ-সরল বাক্যে পৃথিবীর অন্যতম জটিলতম স্থাপনা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন প্রচুর তথ্য নিয়ে। পদ্মা সেতু নিয়ে পড়তে গেলে আপনার অচেতন মনে যেসকল প্রশ্ন দেখা দিতে পারে তার প্রায় সব প্রশ্নেরই উত্তর উনি দিয়েছেন নানান ভাগে।
প্রকৌশলগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের এই সেতুকে নিয়ে লেখা বইয়ে উনি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানান সেতুর ইতিহাস, এতো জায়গা থাকতে কেন মাওয়া-জাজিরা প্রান্তেই করতে হলো, ভূমিকম্প হলে এই সেতু ভেঙে যাবার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা আর ভূমিকম্পকে মাথায় রেখেই “বেজ আইসোলেশন” সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে তাও জানতে পারবো। একই সাথে বিশ্বের সবথেকে গভীরতম পাইলিং কেন বাঁকা করে স্থাপন করা হয়েছে, পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে সেতুর নিচ দিয়ে যেন বড় জাহাজ যেতে পারে তার জন্য “নেভিগেশনাল ক্লিয়ারেন্স” কীভাবে রাখা হয়েছে তাও আমরা জানতে পারি। (কয়েক বছর আগে বুড়িগঙ্গা নদীতে একটি দুর্ঘটনা ঘটে এবং ডুবে যাওয়া লঞ্চকে উঠাতে যাওয়া নৌযান ‘প্রত্যয়’ আসতে পারেনি কারণ তার উচ্চতা সেতু থেকেও বেশি ছিল!)
একটি মজার তথ্য হলো, পদ্মা সেতুর নির্মান কতটা জটিল তা বুঝাতে গিয়ে লেখক উল্লেখ করেছেন যে, এই সেতুর দরপত্র নিয়েছিল কয়েকটি কম্পানি যদিও দরপত্র জমা দেয় একটি মাত্র কম্পানি! আর তা হলো – চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড যারা কিনা চীনের বিখ্যাত হানঝৌ বে ব্রিজ নির্মান করেছিল।
শেষ করি কেন এই সেতুকে নিয়ে ভবিষ্যতে গ্লোবাল নেতৃত্ব একে নিয়ে
করবে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন বিশ ও একুশ শতকের সেরা ৫ জনের একজন সাহসী ও শ্রেষ্ঠ নেতা হয়ে থাকবেন। আমেরিকা, ইউরোপকান্ট্রি কিংবা চায়ণা, রাশিয়ার কোন নেতা চাইলেই যেকোন উদ্যোগকে সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারে। কারণ তাদের আছে অর্থ, ভূমি ও প্রচুর শিক্ষিত নাগরিক। কিংবা বাংলাদেশ সেই দিক থেকে একেবারেই নগণ্য। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও দেশ মিলে বলেছে যে বাংলাদেশ এই সেতু নিজের টাকায় বানাতে পারবে না, ঠিক তখন এই একটি মাত্র ব্যক্তির প্রচেষ্টায় এই সেতুর কাজ শুরু হয় এবং আজ তা সত্য; মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। যা আজ বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের অকুতোভয় শক্তিকে রিপ্রেজেন্ট করছে। ঠিক যেমন করে ৫০ বছর আগে শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা এক মহান নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামক এক রাষ্ট্রের জন্ম নিয়েছিল।
আমি এনায়েত ভাইকে (ভাই বলে সম্বোধন মনের ভিতর থেকেই আসছে ) সাধুবাদ জানাই এবং আশা করি তার লেখা এই মহামূল্যবান এই বইটি সবায় পরে দেখবেন। সময় নিলেও এই বইটি একদিন না একদিন বাংলাদেশ দাপীয়ে বেড়াবে এবং এই সেতু নিয়ে হাজারো বইয়ের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়াবে।