Post ID 111419
বইয়ের নামঃ ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ
লেখকঃ সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী
অনুবাদঃ মুহাম্মদ আব্দুর রহীম
প্রকাশনীঃ আধুনিক প্রকাশনী
“ইসলামকে সাধারণত একটি গনতান্ত্রিক মতবাদ বলে অভিহিত করা হয়। অন্তত বিগত শতকের শেষার্ধ হতে অসংখ্যবার একথাটির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। কিন্তু যারা কথাটি প্রচার করে বেড়ায়, তাদের মধ্যে হাজারে একজন লোকও দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী নয় বলে আমার নিশ্চিত বিশ্বাস। এমনকি, ইসলামে কি গনতন্ত্রের স্থান রয়েছে এবং স্বরুপই বা কি তা অনুধাবন করার জন্য তারা বিন্দুমাত্রও চেষ্টা করেন নি। এদের কিছু সংখ্যক ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার বাহ্যিক রুপ ও অনুষ্ঠানসমূহ লক্ষ্য করে এর উপর গনতন্ত্রের লেবেল এঁটে দিতে ব্যর্থ প্রয়াস পেয়েছে। এ ব্যাপারে অধিকাংশ লোকেরই মানসিকতা হচ্ছে মারাত্মক। দুনিয়াতে যে বস্তুটি সাধারণভাবে প্রচলিত হতে দেখে, ইসলামেও এর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য এই শ্রেণির লোকেরা উঠে পড়ে লেগে যায়। আর এ ধরনের কাজকে ইসলামের বিরাট খেদমত বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে। সম্ভবত ইসলামকে তারা একটি অসহায় “ইয়াতিম শিশুর” সমপাংতেয় বলে মনে করে। কারণ ইয়াতীম শিশু যেমন কোন প্রভাবশালী ব্যাক্তির পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া বাঁচতে পারে না। তারা মনে করে – ইসলামের অবস্থাও ঠিক অনুরুপ। কিংবা তারা হয়ত মনে করে – আমরা কেবল মুসলমান হওয়ার কারণেই দুনিয়ার বুকে সম্মানিত হতে পারিনি। আমাদের জীবন ব্যবস্থা ও আদর্শ দুনিয়ায় প্রচলিত সকল মত ও প্রথার মূলনীতিসমূহের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারলেই আমরা বিশ্বের দরবারে সম্মান লাভ করতে পারব।”
উক্ত লেখা দিয়েই বইটি শুরু হয়েছে। লেখক শুরুতেই ইসলামের যে কোন বিধি-বিধানের মৌলিক ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন। নববী দাওয়াতে প্রত্যেক নবী আল্লাহকে ‘রব’ এবং ‘ইলাহ’ হিসেবে মেনে নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। লেখক এই পরিভাষা দুটি স্পষ্ট করেছেন।
তারপর লেখক ইসলামী রাষ্ট্রের মূলভিত্তি আল্লাহর সার্বভভৌমত্ব তথা সকল ধরনের বিধান প্রনয়নের অধিকার একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন ইসলাম কিছুতেই গনতন্ত্রের মত না। এক্ষেত্রে লেখক ‘হুকুমাতে ইলাহিয়া’ শব্দ ব্যবহার করার মত দিয়েছেন।
অতঃপর ইসলামী রাষ্ট্রে মানুষের স্বাধীনতার সীমা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আল্লাহ কর্তৃক মানুষের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার কারণ নিয়ে লেখক আলোচনা করেছেন।
বইয়ের শেষে আবার ইসলামী গনতন্ত্র শব্দটি কেন ব্যবহার করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়, যেখানে বইয়ের প্রথম দিকে ইসলাম গনতন্ত্রের মত না বলে লেখক মত দিয়েছেন। ভুলটা লেখকের নাকি অনুবাদকের আল্লাহই ভাল জানেন।
তাছাড়া লেখক ইসলামী রাষ্ট্রে সকল মুসলিমের ভোটাধিকারের কথা এসেছে, এক্ষেত্রে তিনি সকল মুসলিমকে দুনিয়ায় খলিফা হিসেবে প্রেরণ করাকে যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন। যদিও আমার জানামতে ইসলাম নির্দিষ্ট জ্ঞানের অধিকারী ব্যাক্তিদের শাসক নির্বাচনে মতামত দেওয়ার অধিকার দেয়।
সবশেষে আরও কিছু পয়েন্ট এসেছে।
১. ইসলামী সমাজে সকলের সামাজিক মর্যাদা সমান।
২. কোন ব্যাক্তি বা দলের ডিকটেটর হওয়ার সুযোগ নেই, কারণ শাসক মূলত জনগণের প্রতিনিধি। তারা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ, জনগণ তাদের সমালোচনা করতে পারবে। শাসক কুরআন হাদীসের সীমালঙ্ঘন করলে জনগণ তাকে পদচ্যুত করার অধিকার রাখে।
৩. ইসলাম সংখ্যাধিক্যকে সত্যের মাপকাঠি মনে করে না। শূরার সংখ্যাধিক্য মতের বিপরীত একজনের শক্তিশালী যুক্তিপূর্ণ মতামত বেশী গ্রহণযোগ্য। এমনকি আমিরের ক্ষমতা রয়েছে শূরার মতামত গ্রহণ করা বা না করার।
৪. দলীয়করণ করে দলের সব অন্যায় অবিচারের পক্ষ নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেউ প্রার্থী হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছুড়াছুড়ি, লোকদের সমর্থন চাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যে পদের জন্য প্রার্থী হয়, সে পদলাভের অযোগ্য বিবেচিত হয়।
৫. বিচার বিভাগে কারও হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। আদালতের সীমায় কারও কোন বিশেষ মর্যাদা ধর্তব্য নয়।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?