Post ID 111562
বইঃ আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই
লেখকঃ সাদাত হোসাইন
ক্যাটাগরিঃউপন্যাস
প্রকাশনাঃ ভাষাচিত্র
ব্যক্তিগত রেটিংঃ[৯/১০]
পড়তে পারেন_
Sadat Hossain এর আরো কিছু বই।
আপাতদৃষ্টিতে এটি কোনো প্রেমের উপন্যাস মনে হলেও, সর্বোপরি এ যেন এক প্রেম, বাস্তবজীবন সম্পৃক্তা, গ্রামীণ জীবনের দ্বন্দ্ব , দুঃখ, ঝামেলা ও অনিরাপত্তা সবটুকুরই এক দারুণ মিশেল।লেখক এখানে কিছু বাস্তবসম্মত বিষয় এমন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন,যার অনেক কিছুই পড়ে আপনার জীবন্ত মনে হবে।এটি একটি বৃত্তবদ্ধ মানুষের উপাখ্যান।
এ উপন্যাসটির একদিকে যেমন অন্তজীবনের অন্তর্জ্বালা ওঠে এসেছে,ঠিক তেমনি ওঠে এসেছে সমাজ জীবনের কিছু ক্লেদাক্ত চিত্র। উপন্যাসের চরিত্রগুলো এবং ঘটনাপুঞ্জ পরস্পরের সাহচর্যে লাভ করেছে অখণ্ড সমগ্রতা।
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্যতম “সাদাত হোসাইন”।তিনি এই বইটিতে আমাদের গতানুগতিক সাধারণ জীবনের চমৎকার এক গল্প ফুটিয়ে তুলেছেন।
বইয়ের শুরুতে ঘূর্ণাক্ষারে বুঝা যাবে না যে এই গল্পের শেষে এসে এমন হতে পারে!প্রতিটি পৃষ্ঠাজুড়ে রয়েছে রহস্য, ভালোবাসা, আর বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী।এসব কিছু গল্পটাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।বইয়ের নামের মধ্যেই যেন একটি কোনো আবেগ জড়িত!
আমাদের জগৎটা বড্ড বিস্ময়ের, কত রকমের মানুষের বসবাস সমাজে।কত সব নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে আমরা বেঁচে আছি যুগের পর যুগ ধরে।পাখিরা কত স্বাধীন! ইচ্ছেমতো ডানা মেলে আকাশপানে উড়ে বেড়ায়।পাখিদের দেখে কিছু মানুষেরও ইচ্ছে জাগে তাদের মতোন কানামাছি খেলতে!কিন্তু পাখির মতো তো মানুষ চাইলেই কানামাছি খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে না।সবাই যে পারে না,বিষয়টা তেমনও না।কেউ কেউ পারে,যাদের সমাজ ব্যবস্থায় রয়েছে অঢেল প্রভাব- প্রতিপত্তি। এই পুরো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে ‘ ‘আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই’ উপন্যাসটিতে।
রাবেয়া চরিত্রটি সমগ্রতাদানকারী একটি চরিত্র। উপন্যাসের একেবারে মূল থিম তাকে ঘিরেই। রাবেয়ার মতো নিরন্ন অসহায় মানুষেরা সবদিক ধেকে ব্যর্থ হলেও তার চরিত্রে কোনো মলিনতার প্রকাশ আমরা দেখিনা। সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারার কষ্ট, স্বামী ফরিদের নিখোঁজ হবার পরও অতি কষ্টে সংসারের ঘানি টেনে গেছে সে।রাবেয়ার মতো নারীদের কোথাও যাবার নেই, তাই একই বৃত্তে বন্দি হয়ে থাকে এবং অপেক্ষা করতে থাকে স্বামীর জন্য।
আজহার সাহেবের একমাত্র মেয়ে লাবণী। লাবণীকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসলে নানান ছুঁতায় সেই বিয়ে লাবণী ভেঙে দেয়। হয়তো এর পিছনে গোপন কারণ হিসেবে কাজ করে বাড়ির লজিং মাস্টার বাদলকে লাবণীর নীরবে ভালোবেসে যাওয়া। বাদল যদিও মুখে কখনো প্রকাশ করে নি যে সেও লাবণীকে ভালোবাসে,কিন্তু মনের ভেতরের কোনো এক জায়গায় তাঁর লাবণীর জন্য ভালোবাসা কাজ করত।লাবণীর অনেক ইচ্ছে বাদলকে একবার ছুঁয়ে দেখার!
আজহার সাহেবের স্ত্রী নাসিমা। নাসিমা খুব অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। অনেক বড় ঘরের মেয়ে ছিলেন নাসিমা। নিজের সমস্ত আভিজাত্যের সুখ, আয়েশ জলাঞ্জলি দিয়ে এবং বাবার সাথে সব সম্পর্ক বিসর্জন দিয়ে একদিন এই আজহার সাহেবের হাত ধরে সংসারের স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন নাসিমা। কিন্তু তাঁর এই ভালবাসার মূল্য শেষ জীবনে এসে আজহার সাহেব দিয়েছিলেন বিশ্বাসঘাতকতার মধ্য দিয়ে। এই ভালবাসার পরিণাম জীবনের বলিদান করেই গুনেছিলেন নাসিমা। সেই কাহিনী ভয়াবহ এবং কষ্টের।
অন্যদিকে বাদলের প্রতি লাবণীর ভালবাসার একটু আভাস আজহার সাহেবও পেয়েছিলেন। তাই তিনি বাদলের চাকরির ব্যবস্থা করে তাকে লাবণীর সংস্পর্শ থেকে দূরে সরিয়ে দেন এবং এক পর্যায়ে নানা ভাবে বাদলকে ভয়ও পাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কারণ লাবণীর বিয়ে তিনি দিতে চাইছেন মন্ত্রীর ছেলের সাথে। অথচ লাবণী এক অর্থে তার বাবাকে ঘৃণা করে এবং শেষ পর্যন্ত বাবার প্রতি প্রতিশোধ সে অকল্পনীয় একটি ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিল!
বাদলের বোন রাবেয়া শাশুড়ি আর ছোট ছেলে নিয়ে স্বামীর প্রতিক্ষায় এবং সারারাত দুশ্চিন্তা তার দিন কাটে। কারণ রাবেয়ার প্রতি গ্রামেরই কোন এক লোকের কুনজর পড়েছে। রাবেয়ার ইজ্জত নষ্ট হওয়ার ভয় রাবেয়ার প্রতিনিয়ত। শেষ পর্যন্ত কী রাবেয়া পেরেছিল নিজের সম্মান বাঁচাতে?
স্বামী ফরিদের ফিরে আসার মধ্য দিয়ে মিলনাত্মক পরিণতির মাধ্যমে উপন্যাসটি শেষ হয়েছে। নিম্নের চুম্বক বাক্যের মধ্য দিয়ে রাবেয়ার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে লেখক রেখেছেন তাঁর প্রাতিস্বীকতার পরিচয়-
‘তার হঠাৎ মনে হলো, এই মানুষটাকে ছেড়ে সে কোথাও যাবে না। কোথাও না।’🤔
পড়তে আপনাকে হবেই,হয় বই নয়তো পিছিয়ে!
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?