প্রোডাক্টিভ রামাদান পিডিএফ ডাউনলোড
লেখক : উস্তাদ আলী হাম্মুদা, মোহাম্মাদ ফারিস
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আসলাফ
বিষয় : সিয়াম, রমযান, তারাবীহ ও ঈদ, ইবাদত ও আমল, ইসলামি বিধি-বিধান ও মাসআলা-মাসায়েল, প্রোডাক্টিভিটি
পৃষ্ঠা : 196, সংস্করণ : 1st Published, 2021
অনুবাদক: মুওয়াহহিদ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ, নাফিস নাওয়ার সহ আরও অনেকে
সংকলন ও সম্পাদনা: মুওয়াহহিদ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ
লেখক পরিচিতি
এই সংকলনে যাদের লেখা স্থান পেয়েছে তারা হচ্ছেন:
মুহাম্মাদ ফারিস (ইন্টারন্যশনাল কোচ ও বক্তা, প্রোডাক্টিভ মুসলিম ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা। ইসলামি অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৬ সালে দুবাই সরকার কর্তৃক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে ইসলামি ইকোনমি পদক পান। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মিশর, সৌদি আরবসহ অনেক দেশে সেমিনারে বক্তব্য প্রদান করে থাকেন)
আলি হাম্মুদা (ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত আলিম ও দ্বাঈ, যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ আল মানার সেন্টারের ইমাম এবং লন্ডন মুসলিম রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চার, মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীয়াহর উপর বিএ ডিগ্রি এবং ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট ইংল্যান্ড থেকে আর্কিটেকচারে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।)
& করিম এলসাইদ ( কর্পোরেট কনসালটেন্ট, লাইফ কোচ ও ট্রেইলব্লেজার আপরাইজিং নামক বিখ্যাত প্রশিক্ষণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা)
আমিনা খান (অ্যাওয়ার্ড উইনিং ফিটনেস স্পেশালিস্ট ও আমানাহ ফিটনেসের প্রতিষ্ঠাতা। কানাডার সেরা ফিটনেস প্রফেশনালের পুরস্কার অর্জন করেছেন। মুসলিমাহ নারীদের স্থূলতা ও ফিটনেসের সমস্যা কাটানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন এবং হেলথ সাইকোলজিতে পিএইচডি করছেন)
ড. আয়িশাহ মুহাম্মাদ ( একজন ডাক্তার ও পারসোনাল ট্রেইনার। খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্য ও ফিটনেস নিয়ে পড়াশোনা ও লেখালেখি করতে ভালোবাসেন) & রুকাইয়া ডেভিডস (দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসী এ শিক্ষিকা ইসলাম নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন ও প্রোডাক্টিভ মুসলিম ব্লগে নিবন্ধ লিখেন।)
জারা চৌধুরি (ফিটনেস ট্রেইনার, মুসলিমাহ নারীদের ফিটনেস নিয়ে কাজ করেন)
ড. উসমান আদম (একজন হাফিজ ও ডাক্তার। আন্তর্জাতিক মেডিকেল ব্লগ জেপিএমএস এর সহকারী প্রধান সম্পাদক)
নাদিন কামাল (আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে লেখালেখি করেন)
মারিয়া নাসির (খাদ্য, পুষ্টি ও রান্না বিষয়ে লেখালেখি করেন)
অনুবাদক পরিচিতি
এ সংকলনের প্রবন্ধগুলো অনুবাদে যারা শ্রম দিয়েছেন তারা হলেন:
- মুওয়াহহিদ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ
- মুহাম্মাদ নাফিস নাওয়ার
- সামী মিয়াদাদ চৌধুরী
- মাসউদ রহমান
- নাফিসা কবির
- তানজিনা তাসনীম
সংকলন, সম্পাদনা ও অনুলিখন
মুওয়াহহিদ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ
প্রোডাক্টিভ রামাদান – রামাদান মাস হচ্ছে মুসলিম জাতির আমলি বসন্ত। প্রত্যেক প্র্যাক্টিসিং মুসলিম এই মাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। এই মাসে আমলের সওয়াব অন্য মাসগুলোর আমলের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আমাদের সবারই লক্ষ্য থাকে এ মাসে বেশি বেশি আমল করা, আরো বেশি প্রোডাক্টিভ থাকা। এমাসে আমাদের কাজকর্ম, পড়াশুনা, পারিবারিক চাহিদা পূরণ ইত্যাদির পাশাপাশি অর্ধেক দিন সিয়ামরত অবস্থায় এবং বাকি অর্ধেক সময়ে রাতের ইবাদত এবং কুরআন তিলাওয়াতও করতে হয়। এটা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। রামাদান মাসে কীভাবে এত এত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে আরো বেশি প্রোডাক্টিভ থাকা যায়, সে বিষয়েই কিছু কার্যকর পরামর্শ দেয়া হবে এ বইয়ে। রামাদানের প্রস্তুতি, লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও রুটিন বানাতে এ বই আপনাদের জন্য সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। রামাদানে আমলে মনোযোগী হওয়ার, কুরআন পড়ার ও দুআ করার
ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে এ বইয়ে। শুধু তাই নয়, রামাদানের খাদ্যাভ্যাস ও ফিটনেস ধরে রাখার উপায়, একাডেমিক পরীক্ষার ব্যস্ততা সামলে আমল করার উপায়ও বাতলে দেয়া হয়েছে এ সংকলনে। সবশেষে, রামাদানের পরেও কুরআনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ও সুস্থ থাকার পরামর্শ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ বই। আশা করি, বইটি রামাদানের প্রস্তুতির জন্য ও প্রোডাক্টিভভাবে রামাদান কাটানোর জন্য কার্যকর একটি গাইডবুক হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রোডাক্টিভ রামাদান : নিঃসন্দেহে রমাদান মুসলিমদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়, যার জন্য প্রত্যেক প্র্যাক্টিসিং মুসলিমই অধীর আগ্রহে থাকে। এটি মুসলিম জাতির আমলের জন্য উৎকৃষ্ট সময় বা মাস।এসময় সর্বস্তরের মুসলিমরা কম-বেশি আমল ইবাদাত করার চেষ্টা করে থাকে কিন্তু একজন প্রোডাক্টিভ মুসলিমের জন্য রমাদান বাকি দশটা মুসলিমের চেয়ে ভিন্ন কেননা এসময় টা তাদের কাছে একটা চ্যালেন্জের মত।এমাসে তাদের(প্রোডাক্টিভ মুসলিম)কে কাজকর্ম, পড়াশুনা, পারিবারিক চাহিদা পূরণ ইত্যাদির পাশাপাশি অর্ধেক দিন সিয়ামরত থেকে রাতের ইবাদত এবং কুরআন তিলাওয়াতেও সময় দিতে হয়।সুতরাং বরকতময় এমাসের প্রতিটি চ্যালেন্জ কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে এবং আমলে-ইবাদতে কিভাবে বেশি থেকে বেশি প্রোডাক্টিভ থাকা যায় সে বিষয়ে উত্তম পরামর্শ দেওয়া আছে এই বইয়ে।রমাদানের প্রস্তুতি, লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও রুটিন বানাতে এই বই আমাদের সকলের জন্য সহায়ক হবে ইন শা আল্লাহ।
প্রোডাক্টিভ রামাদান বই সম্পর্কে অনুভূতি
বইটিতে রমাদানের আমলে মনোযোগী হওয়ার, কুরআন পড়ার ও দো’আ করার বয়াপারে উত্তম দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে আলহামদুলিল্লাহ।
আমি মনে করি, আন্তরিকতার সাথে সময়-সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে রমাদানের পরিপূর্ণ বরকত হাসিলের জন্য বইটি আমাদের প্রত্যেকের জন্য উপকারী হবে ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে আবারও আমলের সে বসন্তে অর্থাৎ রমাদানে পৌঁছে দিক। আমিন ইয়া রব্বুল ‘আলামীন।
অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের ব্যবসা কে না করতে চায় বলুন!? ব্যবসায়ীদের একটা নির্দিষ্ট মৌসুম থাকে, যখন তারা কয়েকগুণ লাভ ঘরে তোলে।
ঠিক তেমনিভাবে আমাদের জীবনেও ইবাদাতের একটা নির্দিষ্ট মৌসুম রয়েছে, যখন ইবাদাত করে আমরা একের বিপরীতে সত্তর গুণ বেশি সাওয়াব লাভ করতে পারি।
পাঠক নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন আমরা কোন্ মাসের কথা বলেছি!? জি, আমরা সেই গৌরবান্বিত রামাদান মাসের কথাই বলছি।
জানেন তো, এ মাসের ব্যাপারে আমাদের রব কী বলেছেন!? তিনি বলেন, ❝রোজা আমার জন্যই হয়ে থাকে, আর আমি নিজেই তার প্রতিদান দেবো।❞ অপর বর্ণনা মতে, ❝রোজা আমার জন্যই হয়ে থাকে, আর আমি নিজেই তার প্রতিদান।❞
কিন্তু পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ইচ্ছা ও সামর্থ্য থাকাসত্ত্বেও আমরা অনেকেই রামাদান মাসটাকে কাজে লাগাতে পারি না।
খাদ্যাভাসের অনিয়ন্ত্রণ এবং লাগামছাড়া ঘুমের অনুশীলন, —এসবের কারণে বরকতের এই পুরো মাসটাই কেটে যায় চরম আলস্যে।
“প্রোডাক্টিভ রামাদান” বইয়ের মধ্যে এমন কিছু সফল ও কৌশলী দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে একজন মুসলিম রামাদানের মর্ম উপলব্ধি করতে পারবে এবং সেই অনুযায়ী কাজে লাগাতে পারবে। পাশাপাশি এই মাসে বেশি বেশি আমল এবং তাকওয়া অর্জনের পথে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যাবে।
বই: প্রোডাক্টিভ রামাদান
লেখক : মুহাম্মাদ ফারিস, আলী হাম্মুদাসহ আরো অনেকে
প্রকাশনায়: মাকতাবাতুল আসলাফ
মুদ্রিত মূল্য: ২৪০৳
ছাড় মূল্য: ১৬৫৳
একটি সফল রামাদান পরিকল্পনা
রামাদানের জন্য পরিকল্পনা করা, ব্যক্তিগত লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং এতে সফল হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। রামাদানে আপনার লক্ষ্যগুলো হতে হবে সুবিন্যস্ত ও স্পষ্ট। আর তাহলেই আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সুবিন্যস্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হলে আপনাকে নিচের মূলনীতিগুলো অনুসরণ করে নিজের লক্ষ্যগুলোকে পুনর্বিবেচনা করে নিতে হবে।
ইতিবাচক লক্ষ্য
অনেক লোকের ইচ্ছা থাকে যে রামাদানে নিজের কোন নেতিবাচক অভ্যাস বা জীবন থেকে নেতিবাচক কিছু ঝেড়ে ফেলার। এটি হতে পারে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয়ার লক্ষ্য কিংবা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের লক্ষ্য। কিন্তু আমি আপনাকে ভিন্ন কথা বলব। রামাদানে কোন অভ্যাস ত্যাগ করার বা পরিবর্তন করার লক্ষ্যের চেয়ে আমাদের বেশি জোর দেয়া উচিত নতুন অভ্যাস গঠন করার লক্ষ্যের প্রতি। আপনার মন সেইদিকেই আকৃষ্ট হবে যা নিয়ে আপনি চিন্তা করছেন। তাই যখন আপনার লক্ষ্যের কথা আপনি নেতিবাচক ভঙ্গিতে লিখবেন তখন আপনার মন তা করার প্রতিই বেশি আগ্রহী হয়ে যাবে। সুতরাং, লিখবেন না, “রামাদানে আমার ওজন ২০ কেজি কমাতে হবে”; বরং লিখুন, “রামাদানের শেষে আমার ওজন ৭০ কেজিতে নিয়ে আসতে হবে।” একইভাবে আপনি যদি লিখেন, “এই রামাদানে কুরআন খতম দিতে ব্যর্থ হলে চলবে না”; তাহলে তা আপনার মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বরং, লিখুন, “এই রামাদানে কুরআন খতম করতে হবে।”
প্রাসঙ্গিক লক্ষ
রামাদান নিয়ে আপনার লক্ষ্য হতে হবে প্রাসঙ্গিক। রামাদান আসলে আলেমরাও তাদের ফিকহ-হাদিসের কিতাবাদি ঘুচিয়ে কুরআন পড়তে মনোনিবেশ করতেন। আপনার রামাদানের লক্ষ্য এমন কিছু হতে হবে যা রামাদান মাসের সাথে প্রাসঙ্গিক হয়। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, স্ব-প্রণোদিত হয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন। কারো কথায় আকৃষ্ট না হয়ে নিজের তাড়না থেকে লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।
নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার টার্গেট রাখুন
আমরা সাধারণত এমন সব লক্ষ্য নির্ধারণ করি যা আমাদের পক্ষে পূরণ করা সহজেই সম্ভব। তবে রামাদানে এমন করবেন না। একটু কঠিন লক্ষ্য নির্ধারণ করুন যা দেখে আপনি একটু হলেও নার্ভাস হবেন। জীবনে আগে কখনো রামাদানের প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ পড়েন নি? প্রতিদিন ইশার নামাজের পর সম্পূর্ণ তারাবিহর নামাজ পড়েন নি? আগে কখনও ই’তিকাফ করেন নি? – তাহলে এখনই সময়। রামাদানে আপনার জন্য এ কাজগুলো করা সহজ, কারণ শয়তান শেকলবদ্ধ থাকে, চারিদিকে প্রবাহমান থাকে রামাদানের সুশীতল বাতাস। তাছাড়া আমলের ফজিলতও তো অনেক বেশি। নবীজি রামাদানের শেষ দশকে নিজের কোমরবন্ধ শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং রামাদানের আগের বিশ দিন যে পরিমাণ ইবাদাত করতেন, শেষ দশ দিন তার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতেন। আমাদেরও এভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার টার্গেট রাখতে হবে।
সংখ্যাবাচক লক্ষ্য
মনে করুন, রামাদানে আপনি একবার সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করার লক্ষ্যস্থির করলেন। তাহলে, প্রতিদিন এক জুয অর্থাৎ প্রায় ২০ পাতা তিলাওয়াত করতে হবে। তাহলে, আপনি দিনে ১০ পাতা আর রাতে ১০ পাতা তিলাওয়াত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। অথবা, প্রত্যেক ফরয নামাজের পর ৪ পাতা করে পড়তে পারেন। এভাবে সংখ্যাবাচক লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তা পূরণ করা সহজতর হবে।
পর্যালোচনা
রামাদানে আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী কতটুকু পূরণ করতে পারছেন তা প্রতিদিন হিসাব নিতে হবে, আত্মপর্যালোচনা করতে হবে। তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোথায় সমস্যা হচ্ছে এবং কোথায় আরো বেশি চেষ্টা চালাতে হবে। ইসলামি পরিভাষায় আত্মপর্যালোচনাকে মুহাসাবা বলে। হাসান রাহিমাহুল্লাহ
রামাদানের আদর্শ রুটিন
রামাদানে আমাদের আগের রুটিন এলোমেলো হয়ে যায়। তাই আগেভাগে রামাদানের পরিবর্তিত শিডিউল অনুযায়ী নতুন রুটিন করে রাখলে রামাদান মাসকে আরো প্রোডাক্টিভভাবে আমল করে কাটানো সম্ভব হবে। আমাদের সবার জীবনযাত্রা ও দায়িত্বগুলো একইরকম নয়। আর তাই, সবার রুটিন এক হবে না এটাই স্বাভাবিক। তবু এখানে একটি খসড়া রুটিন সাজিয়ে দেয়া হল, যা আপনাকে প্রাথমিক ধারণা দিবে যে কোন কাজগুলোকে আপনার বানানো ব্যক্তিগত রুটিনে প্রাধ্যন্য দেয়া উচিত আর কোন কাজগুলোকে কম গুরুত্ব দেয়া উচিত।
★ সেহরির জন্য উঠুন। যদি এসময় খেতে আপনার ভালো না লাগে, তাও উঠে পড়ুন। অল্প কিছু হলেও খেয়ে নিন বা পান করুন, যাতে প্রতি রাতে সাহরীর সুন্নাহ পালন করার প্রতিদান আপনি পেয়ে যান। কেননা সাহরীর মধ্যে আছে বারাকাহ। [বুখারি ও মুসলিম, আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে]
★ এই সময় চেষ্টা করুন দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করার যাতে রাতের শ্রেষ্ঠ অংশে – তিনভাগের শেষ ভাগে আপনি সালাত আদায়ের আর দু’আ করার সাওয়াব অর্জন করতে পারেন। নিজের গুনাহর দিকে লক্ষ্য রেখে এই সময়টাকে ব্যবহার করুন এবং এরপর ইস্তিগফার করতে থাকুন। যারা রাতের এই সময়টায় ইবাদাতে রত থাকে, আল্লাহ স্বয়ং তাদের প্রশংসা করেছেন। [সূরা আলে ইমরানঃ ১৭]
★ প্রিয় ভাই, নিশ্চিত করে নিন যে কমপক্ষে ফজর আর ইশার সালাত আপনি মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করছেন। বেশিরভাগ মানুষেরই কাজের সময়ের সাথে এই দুই ওয়াক্তের কোন ঠোকাঠুকি যেহেতু লাগে না, অতএব এই দুই ওয়াক্তে জামা’আতে সালাত আদায় করা সহজ।
রামাদানে যেভাবে কুরআন পড়বেন
شهر رمضان الذي أنزل فيه القرءان هدى للناس وبينت من الهدى والفرقان で
“রামাদান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতের জন্য
এবং হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে।” ১।
এই আয়াতটা পুরো কুরআনের উদ্দেশ্যকে দুটো শব্দের ভেতর নিয়ে এসেছে: প্রমাণ বা নিদর্শন আর হিদায়াত। আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আর তাঁর রাসূল *-এর উপর ঈমান আনার পর কুরআন আর সুন্নাহর শরণাপন্ন হই হিদায়াতের জন্য। কুরআন আর সুন্নাহ থেকে আমরা জানতে পারি কিভাবে আমাদের নেক আমলকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করা যায়।
এখন একটু ভাবুন। যখন আপনি কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চান, তখন আপনি তার সাথে যত বেশি সম্ভব ভালো সময় পার করার চেষ্টা করতে থাকেন। আপনি চাইবেন তাদের মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটা শব্দ খেয়াল করতে যাতে বুঝতে পারেন তারা আসলে কী বলছেন। এই উদাহরণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব একটা যথাযথ নয়। আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্কের সাথে মানুষের সাথে আমাদের সম্পর্কের কোন তুলনাই চলে না। যাই হোক, যদি আমরা আল্লাহর ঘনিষ্ঠতা অর্জন করতে চাই, তবে অবশ্যই আমাদেরকে তাঁর কিতাবের সাথে একটা কোয়ালিটি টাইম পার করতে হবে।
[১] সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫
রামাদানে অনেকেই এই চেষ্টা করে থাকেন। আমরা রামাদান শুরু করি পূর্ণ শক্তি আর উৎসাহের সাথে, দূর করে দিতে চাই সমস্ত বাধাবিঘ্নকে, যাতে করে আমরা আমাদের ঈমান আর উপলব্ধির উন্নয়নে অখণ্ড মনোযোগ দিতে পারি। কিছু মানুষ এই উদ্দীপনা খুঁজে পায় না কারণ তারা আসলে জানেই না কোথা থেকে শুরু করতে হবে। এমনকি যারা প্রচণ্ড উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে এই যাত্রা শুরু করে, এক সময় তাদেরও উৎসাহ উদ্দীপনার ভাটা পড়তে শুরু করে।
এই ক্ষেত্রে প্রথমেই যে কাজটা করা উচিত তা হল: অবিরাম আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহ যাতে আপনার অন্তরে তাঁর শব্দমালার সঠিক, বিশুদ্ধ বুঝ দান করেন। সমানভাবে কুরআন পড়ার, মুখস্ত করার আর এর উপর চিন্তাভাবনা করার ক্ষেত্রে নিজের নিয়তকে বারবার যাচাই করা এবং নবায়ন করে নেওয়া চাই।
“প্রতিটি আমলই নিয়তের উপর নির্ভরশীল আর মানুষ তার নিয়ত অনুসারেই প্রতিদান পাবে।” [বুখারি ও মুসলিম]
এই বিখ্যাত হাদিসটি তাদের জন্য স্বস্তির উৎস যাদেরকে কুরআনের ভাষা শিখতে বা তিলাওয়াত করার এবং কুরআন বোঝার দক্ষতা আয়ত্ত করতে সংগ্রাম করতে হয়। ইনশাআল্লাহ, আন্তরিক নিয়ত থাকলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবেন এবং আপনাকে পুরস্কৃত করবেন অগণিত পুরস্কারে।
যখন প্রশ্ন আসে কিভাবে রামাদানে আমরা কুরআনের সাথে পথ চলবো, তখন তিনটা বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত: তিলাওয়াত, হিফয এবং কুরআনের উপর চিন্তাভাবনা ও আমল। এখন আমরা এই তিনটা ক্যাটাগরির অধীনে চারটা করে ব্যবহারিক পরামর্শ দেব, যেগুলোর উপর রামাদানে প্র্যাকটিস চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রোডাক্টিভ রামাদান pdf download লেখক : উস্তাদ আলী হাম্মুদা, মোহাম্মাদ ফারিস | Productive Ramadan PDF Download Free Bangla (পিডিএফ)
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?