পারিবারিক সুখের আয়না
By হাবিব রহমান (অরিজিনাল হার্ডকভার)
প্রকাশনী : মাকতাবাতুন নূর
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন
সম্পাদনা : মাহদী আবদুল হালিম (লেখক। সম্পাদক। অনুবাদক)
কোয়ালিটি : হার্ড কভার
পৃষ্ঠা : 168
ভাষা : বাংলা
“বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বিয়ের মাধ্যমে দুটি মানুষ একে অপরের কাছাকাছি হয়। নিজেদের সুখদুঃখের ঝাঁপি একসঙ্গে উন্মোচন করে। শুধু কি দু’জন মানুষ; দু’জনের সাথে দুটি পরিবার এবং আরো অনেক মানুষ এই বন্ধনসুতোয় গেঁথে যায়। বিয়ে অর্ধেক দীন। বাকি অর্ধেক নর-নারী নিজেকে আদর্শ মুমিন হিসেবে তৈরি করবে, তাকওয়া ও তাহারাতের অনন্য বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ হবে, তাহলে প্রত্যেকের মনে বিয়ের আগেই যে বিবাহবোধ জাগ্রত হবে, তা দীনের মজবুত ঘাঁটি তথা সুখী সুন্দর পরিবার গঠনে সহায়ক হবে। প্রকৃতপক্ষে বিয়ের আসরে দীনদারিতাকে প্রাধান্য দিতে নিজেকে সঠিক প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
নিজেকে মেন্টালি, ফাইনানশলি, ফিজিক্যালি, স্পিরিচুয়ালি প্রস্তুত করার গুরুত্বও কিছু কম নয়। বিশেষ করে যারা সংসারকে শুধু একটা যাপিত জীবন বানাতে চায় না, চায় একটা অর্থবহ সফল যাত্রা, পৃথিবীতে কিছু স্বাক্ষর রেখে যেতে, চায় আল্লাহর দ্বীনের জন্য কিছু করে যেতে, তাদের উচিত বিয়ের আগে বিবাহবোধ ও পূর্বপ্রস্তুতি খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করা।
বিবাহ ও দাম্পত্য নিয়ে তরুণ-মনের আবেগ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা জড়ানো আনন্দ-বেদনার শঙ্কা ও উচ্ছাস নিয়ে গল্পের মতোই সুখকর গদ্যে তৈরি হওয়া বিবাহবোধ সত্যিকার অর্থে এ সময়ের বিবাহেচ্ছু বা বিবাহিত দম্পতিকে দাম্পত্য জীবনে মধুর অনুভূতি এনে দিবে। সব মিলিয়ে এটা হাবিব রহমানের তৈরি বিবাহ রেসিপি, দারুণ রসনাবিলাস, সুখময় দাম্পত্য প্রতিস্থাপনের অনবদ্য ব্যবস্থাপত্র।” 💕 wafilife
জীবন হোক অর্থবহ ও উত্তম কর্মের। বিয়ে হোক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের পথ। সুখী ও সুন্দর হোক সবার দাম্পত্য। গল্পের মূল চরিত্রের মহামূল্যবান দর্শন সবার ভাবনার জগৎ বিকশিত করুক, বইটি পড়ে সমৃদ্ধ হোক বিবাহ বোধ।
রাফির মতো সবার একটা শপথ থাকুক “একা ভালো থাকতে চাই না, আমার অনেক হাসিমুখ চাই, অনেক অনেক…” হাবিব রহমান
বিবাহ কি
বিয়ে (marriage) সভ্য সমাজের মানব মনের এক রোমাঞ্চকর আকাঙ্ক্ষা। কাগুজে চুক্তির চেয়েও সুপ্রতিষ্ঠিত সম্পর্ক। অধিকার আর দায়িত্ববোধের সমন্বয়ে উত্তম বন্ধুত্ব। তাই এটি নিয়ে সবারই ভাবনায় বহু স্বপ্ন, ভয়, আশা, রঙিন জল্পনা-কল্পনা ঘিরে থাকে।
ইসলামি শরিয়তে বিয়ের কিছু দারুণ উদ্দেশ্য আছে। যেগুলো আগেই ভাবনায় সাজানো থাকলে যাত্রাটা আরো স্বাচ্ছন্দের ও অর্থবহ করা সহজ হবে। ধাপে ধাপে প্রস্তুত হয়ে বাধা-বিপত্তি জয় করার শক্তি সঞ্চার করা যাবে।
গল্পের মূল চরিত্র রাফি প্রায়ই বলে
“আগে যোগ্য হই তারপর প্রত্যাশা করি ইনশাআল্লাহ যেকোন কাজই সহজ হয়ে যাবে।”
নিজেকে তৈরি করার এই মেহনত আমাদের জীবনকে করবে আরো অর্থবহ, সুখময় এবং সমৃদ্ধ। উপযুক্ত বয়সে কেন বিয়ে করা জরুরি এবং এটিও একটি উত্তম আমল সেটিও দেখে নেওয়া যাবে বোধের আয়নায়।
আচ্ছা, মানুষ বিয়ে করে কেন?…😍
বিবাহ একটি উত্তম আমল
পুকুরঘাটে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে শুভ ও রাফি। করোনার লকডাউনে, এটা তাদের রোজ বিকেলের কাজ। শেষ বর্ষে এভাবে এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাজীবন স্তব্ধ হয়ে আছে। দু’জনেই মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলে, ম্যাট্রিক-ইন্টার শেষ করে কাজে বা বিদেশে চলে গেলেই ভালো হতো। এই ফ্যাকাশে জীবন আর ভালো লাগে না। জুনিয়ররা বিয়ে-শাদী করে জীবন গুছিয়ে ফেলেছে। আর আমরা পড়াশোনা শেষ করে, কবে চাকরি পাবো… ততদিনে বুড়ো হয়ে যাবো মনে হচ্ছে।
বাল্যকাল থেকে এক সাথে বড় হয়েছে দু’জন, কোন বিষয় নেই একে অপরের সাথে শেয়ার করে না। শুভ সরকারী চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে আর রাফি পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট একটা বিজনেস নিয়ে চেষ্টা করছে। কিন্তু এই মহামারি সবকিছু যেন দুরাশা করে দিয়েছে। সবকিছু বন্ধ থাকলেও জীবন তো থেমে থাকে না। আটকানো যায় না সময়। অনুভূতিরাও তো নাছোড়বান্দা, এই বয়সে এসে তাদেরও বশ মানানো কঠিন। একাকিত্বে ছড়িয়ে থাকা নানা ফিতনার উপকরণ পাপের দিকে কেমন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।
ইসলামের জ্ঞান ও চর্চা থাকায় জীবনের নানা বিষয়ে ভালো উপলব্ধি তাদের। প্রতিদিনই আড্ডায় জীবনবোধের নানা বিষয়ে আলোচনা হয় দু’জনের মাঝে। এই বয়সে বিয়ে ও দাম্পত্য বিষয়ক আলোচনাটা মুখরোচক। গল্প, কল্পনা, অনুভূতি মিলে মিশে বয়ে নিয়ে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা, জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা নানা গল্পের কথামালা ছুটে চলে দিগন্ত পেরিয়ে আরেক দিগন্তে।
দু’জনেই বিয়ের চাহিদা অনুভব করে, কিন্তু ভালো কিছু না করে বিয়ে করা যায়? এই সমাজ পয়সা চিনে, পজিশন চিনে ঠিক করে কাকে পাত্তা দিবে আর কাকে দিবে না। তাই প্রয়োজন বোধ করলেও বেকার বা ছাত্র অবস্থায় বিয়ের কথা সাহস করতে পারে না অনেকেই।
বিয়ে নিয়ে শুভর চেয়ে রাফির আগ্রহ ও তাড়াহুড়ো বেশি। তার ইচ্ছে সমাজের চোখে তথাকথিত আইডেনটিটি কবে হবে হোক, ন্যূনতম একটু চলার মতো অবস্থা হলেই চারিত্রিক অবক্ষয় এড়াতে বিয়ের বিষয়ে আগাবে সে। তাই বিয়ে ও সংসার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে টুকটাক জ্ঞান অর্জন ও পরিচিত দু’চার জনের অভিজ্ঞতা জানতে চেষ্টা করে রাফি।
তার কথা হচ্ছে- যখন যে কাজ করতে যাবো, অবশ্যই সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলেই নানা বিষয়ে এলোমেলো না হয়ে একটা তাল লয় বজায় রেখে চলা যাবে। আর বিয়ে মানে তো দুটি মানুষের ব্যাপার না শুধু, এর মাধ্যমে একটা পরিবার রচনা হবে, একটা প্রজন্মের স্বপ্ন শুরু হবে। জীবনের একটা লম্বা ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এটি, এটি একটি ইবাদত। তাই আগে নিজের ভেতরের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পারাটা জরুরি।
আচ্ছা শুভ, বল তো মানুষ বিয়ে করে কেন?
-কী রকম প্রশ্ন এটা রাফি? বিয়ে করে কেন এটা তো আমরা সবাই জানি ই! হতে পারে না আমরা পরিপূর্ণ জানি না অথবা ভুলভাবে জানি? -আচ্ছা! দার্শনিক বাবা তো আপনি ই বলেন শুনি…
কিছুটা হাস্যরস নিয়ে কথাটা ছোড়ে শুভ। রাফিও মুচকি হাসে।
বিয়ে নিয়ে আলোচনায় মুচকি হাসির সাথে এক রকম আবেগ-উচ্ছ্বাস ফুটে উঠে তার চেহারায়। কিন্তু এমনভাবে লুকিয়ে ফেলে পর্যবেক্ষকের নিবিড় দৃষ্টি ছাড়া ধরতে পারা যায় না।
একটু চুপ থেকে, একটু দম নিয়ে বেশ দৃঢ় কণ্ঠে বলে- বিয়ে কেন করে এটা আপেক্ষিক, উত্তরটা একেক জনের কাছে একেক রকম হতেই পারে। তবে অল্প কথায় আমি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য যেটি মনে করি তা হলো “মানুষ তার অপরিপূর্ণ জীবনকে পরিপূর্ণ করতেই বিয়ে করে”।
-বিয়ে ছাড়া জীবন অপরিপূর্ণ?
ইমমমম.. বিয়ে ছাড়া না, সঙ্গী ছাড়া। অপরিপূর্ণ জীবনকে আল্লাহর রহমত, বরকত, মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির উপলব্ধি দিয়ে পূর্ণ করতে বিয়ে করা প্রয়োজন, হালাল জীবনসঙ্গী প্রয়োজন। এর মাধ্যমে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত হয়। সামাজিক কাঠামো বজায় থাকে এবং এক আত্মিক বন্ধনে টিকে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
তাছাড়া দেখ, এই চব্বিশ বছরে এসে আমাদের বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন, বাড়ি-ঘর সব থাকার পরও কেমন একটা ফ্যাকাশে অনুভূতি হয় না? এই যে আমরা এতো ভালো বন্ধু, তারপরও দিনশেষে নিজের একটা একান্ত মানুষের চাহিদা তৈরি হয়। যার কাছে আরো মেলে দেওয়া যাবে নিজেকে, আরো কাছের কেউ, হৃদয়ের হাহাকারটুকু আরো যত্ন নিয়ে যে দূর করে দিতে পারে, এমন একজন প্রিয়তমা…
কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে শুভ! রাফিকে এভাবে দেখেনি আগে। একজন সিরিয়াস মুডের মানুষের ভেতরে কেমন যেন একটা ভিন্নরকম মোলায়েম রূপ, গভীর আগ্রহের ছায়া দেখছে সে!
সত্যি ই তো! মানুষ তার অপরিপূর্ণ জীবনকে নানাভাবে পূর্ণ করতেই বিয়ে করে। কেউ তার একাকিত্বে একজন সঙ্গী চায়, কেউ চায় পথ চলার সহযোগী, কেউ চায় মাথা এলিয়ে বসার একটা বিশ্বস্ত কাঁধ, নফসের সাথে লড়াই করে ক্লান্ত কেউ চায় একজন হালাল পার্টনার, কেউ চায় সন্তান লাভের অপার্থিব সুখের উৎস, কেউ চায় তার উত্তরাধিকার টিকে থাকুক, কেউ চায় যত্ন দিয়ে আগলে রাখুক তার পরিবার…
নানা জনের এমন নানা অপূর্ণতা থেকেই মানুষের ভেতর একটা একান্ত প্রিয় মানুষের চাহিদা তৈরি হয়। এই শূন্যতা মানুষের স্বভাবজাত এবং প্রাকৃতিক । আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বিয়ের মাধ্যমে একে হালাল ও বরকতময় করেছেন। বহু ফজিলতপূর্ণ এই বিয়েকে তাই অর্ধেক দ্বীনও বলা হয়ে থাকে, এটি একটি উত্তম আমল।
-উত্তরটা দারুণ লেগেছে রাফি! বেশ উপলব্ধি করতে পারছি বন্ধু। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত না হলে এই সমাজে বিয়ের কথা ভাবা যায় না। তার উপর একটা
সংসার চালাতে এখন যে পরিমাণ খরচ…
এটা ঠিক, আয়-রোজগার ছাড়া বিয়ে করলে নানা রকম সমস্যা। তবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নামে যে উচ্চাশা এটা মনে হয় একটু বেশি বেশি। প্রতিষ্ঠিত বলতে যেটা মিন করা হয়, ভালো ক্যারিয়ার, পয়সা-কড়ি, বাড়ি-গাড়ি এটার ফাঁদে পড়লে আমাদের ছেলেদের বিয়ে করতে টু মাচ লেট হয়ে যাবে।
যেকোন একটা হালাল কাজ, বেসিক প্রয়োজন মেটানোর সামান্য উপার্জন এবং বিয়ের প্রয়োজন অনুভব করলে ছাত্র অবস্থায়ই বিয়ে করা জরুরি। শুনিস নাই? নিজেকে পবিত্র রাখতে যে সামান্য সামর্থ্য থাকলেও বিয়ে করবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার রিজিকে বারাকাহ দান করবেন…
দেখ শুভ, আমরা বড় হয়েছি, অনেক কিছুই বুঝি। গোপন পাপের ভয়াবহতা দিনদিন কি ভয়ানক রূপ নিচ্ছে! নিজেরাও জানি, অন্যদের দেখে বা শুনেও বুঝতে পারি। জৈবিক এই চাহিদাগুলো মানুষের ভেতরগত, নানা মাদক দ্রব্যের চেয়ে বেশি নেশা সৃষ্টিকারী। পেটের ক্ষুধায় মানুষ হয়তো কাতর হয়, কিন্তু মানসিক ও জৈবিক ক্ষুধায় হয় উন্মাদ, বোধহীন পাগল ।
দেখতে শুনতে নম্র-ভদ্র মনে হয় এমন কত ছেলে মেয়ে যে হারাম রিলেশনে ইনভল্ভ! পরিবার মনে করে, সন্তান এখনও ছোট। অথচ তাদের ফাঁকি দিয়ে কিশোর-কিশোরী বয়সেই অনেকে দিব্যি হারাম রিলেশন করে বেড়াচ্ছে! আর কিছু অভিভাবক তো বুঝতে পেরেও এড়িয়ে যায় মনে হয়…
একটা কথা আছে না, প্রয়োজন আইন মানে না? আর আইনে তো ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারের নানা ধারা আছেই। সো বিয়ে কঠিন হলে এর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া তো সমাজে পড়বেই। যে ছেলে কিংবা মেয়েটার জৈবিক এবং মানসিক চাহিদা তৈরি হয়েছে পনেরো থেকে আঠারোতে, সময়ে সময়ে এই চাহিদাগুলো উন্মাদনা সৃষ্টি করে। তাদের যদি বিয়ে দিতে দিতে আটাশ-ত্রিশ বা এরও বেশি করা হয়! তখনও চাহিদাগুলো দমিয়ে রেখে কত পার্সেন্ট যুবক-যুবতি পূত-পবিত্র থাকবে? আর এই প্রযুক্তি নির্ভর আকাশ সংস্কৃতির আধুনিক যুগে এসে ইমোশনাল ও ফিজিক্যাল বিষয়গুলোকে ইগনোর করে সুফি-সাধক হওয়া অত সহজও না।
-ঠিক রাফি, তোর প্রতিটি কথাই যৌক্তিক। তার উপর এখন ইন্টারনেটে অবাধ বিচরণের কারণে অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েরাও যে কি পরিমাণ মিস গাইড হচ্ছে, কত কিছুর এক্সেস পেয়ে যাচ্ছে তা আর খুলে বলার দরকার নেই। আমার মনে হয়, ছেলেদের পঁচিশ আর মেয়েদের বিশ একুশ বিয়ে করার জন্য সুন্দর সময়।
বিয়ের বয়সটা আপেক্ষিক শুভ। যার যার চাহিদা ও অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে খুব কমও না আবার লেট করেও না। তোর ধারণাটা একদিক থেকে ঠিক, এদেশে পড়াশোনা শেষ করতেই অনেক লেট হয়ে যায়, তারপর চাকরি…। যারা আগেই আয় রোজগারে চলে যায় কিংবা পরিবার একটু সাপোর্ট করে তারা এদিক থেকে আগেই স্যাটল হয়ে যেতে পারে।
খুব অল্প বয়সে বিয়ে করলে নানা অপরিপক্কতা থাকতে পারে, ফ্যামিলি প্ল্যানিং ও প্যারেন্টিং নিয়ে সচেতনতা কম থাকে। তখন অর্থবহ দাম্পত্য বিল্ড করা কঠিন। আবার খুব বেশি লেট করলে বয়সের একটা গাম্ভীর্য চলে আসে, সোনালী যৌবনকে উপভোগ করার মতো আবেগ, অনুভূতি ও প্রেমময়ী সত্তাটা বয়স, বাস্তবতা ও দায়িত্বের চাপে ঢাকা পড়ে যায়। তখনও দাম্পত্যের নির্মল প্রেমকেলী, আনন্দ-সুখ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
আরো একটা ব্যাপার লক্ষ করা যায় শুভ- যাদের বাবা-মা সামর্থ্যবান তারাও কিন্তু ছেলেমেয়েদের চরিত্র হেফাজতের জন্য একটু সদয় হতে পারেন। ক্যারিয়ার ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দোহাই দিয়ে লেট না করালেও পারেন। তাদের তো যথেষ্ট সামর্থ্য আছে। চাইবার আগেই ছেলেমেয়েদের নানা আবদার পূরণ করে দেন। কোন শখ অপূর্ণ রাখেন না। তবে এই ফিতনার যুগে তাদের চরিত্র রক্ষার জন্য বিয়ের দায়িত্বটুকু নেওয়া কি খুব কঠিন? অথচ সমাজ কী বলবে, লোকে কী বলবে এই দোহাই দিয়ে কেমন গড়িমসি করে, সন্তানদের মহামূল্যবান চরিত্র রক্ষায় সহযোগিতা করেন না…
-অন্যের কথা কী বলবো রাফি! আমার নিজের পরিবারের কথাই বলতে হয়। আমাদের বাপ-দাদাদের যথেষ্ট সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বড় ভাইয়ার বিয়ে দিচ্ছে না শুধু মাত্র এখনও ভালো জবে ঢুকতে পারেনি বলে। আর আমার কথাতো বাদই দিলাম, চব্বিশে এসেও মনে হয় তাদের চোখে আমি নাবালক, শিশু সন্তান! সামর্থ্যবান যৌথ ফ্যামিলিতে একজন বাড়তি মানুষের জন্য আলাদা করে কতটুকু কী লাগবে বল? তাদেরকে এই কথা কে বুঝাবে!
কিরে শুভ! পরিবারের প্রতি ভালোই ক্ষোভ তোদের দুই ভাইয়ের? তোর ভাইয়ের সাথে ওইদিন কথা হলো সেও আক্ষেপ প্রকাশ করলো। হাহাকার নিয়ে বললো, অনেক সময় বাবা-মায়ের উদাসীনতার জন্যেও ছেলেমেয়ে খারাপ হয়ে যায়… শিক্ষিতের একটা ট্যাগ পড়েছে তাই নিজের ইচ্ছেতে কিছু করতে বিবেকে বাধে… যাই হোক বাসায় বুঝিয়ে বল ভালো করে। দরদ দিয়ে বুঝাতে পারলে তারা অবশ্যই বুঝবে। ভাইয়ার তো মেবি ত্রিশ হয়ে গেছে প্রায় না?
-হ্যাঁ, সার্টিফিকেটে ঊনত্রিশ। তবে এমনিতে ত্রিশ পার হয়ে গেছে…
যেহেতু বিয়ের জন্য ছেলেমেয়ে সবারই শারীরিক পরিপক্কতা, বিচারবুদ্ধি, বিবেচনাবোধসম্পন্ন হওয়াটা জরুরি। সেই হিসেবে সরকারী বিবাহযোগ্য বয়সটা সুন্দর রেঞ্জই মনে হয় আমার কাছে। এর বেশি আগে বা অনেক লেটে হলে ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য নানা রকম সমস্যা হতে পারে। আর এই বয়সটা কিন্তু এমনি এমনি নির্ধারণ করা হয়নি শুভ, এর পেছনে বিশেষজ্ঞ দলের গবেষণা ছিলো। যেখানে অভিজ্ঞ ডক্টর যেমন ছিলো, তেমনি ছিলো সাইকোলোজিস্ট, সোশিওলজিস্টসহ বিভিন্ন ফিল্ডের এক্সপার্টদের ভাবনা চিন্তা। বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে বাবা-মা চাইলে কিছু আগেও বিয়ে দিতে পারে তাদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণে। তবে বাপ-দাদাদের বিয়ের বয়স ধরিস কিংবা সরকারী হিসেব; যেকোন দিক থেকে চিন্তা করলেও আমরা অলরেডি অনেক লেট!
অনেকেই ভাবে আগে জীবন গুছিয়ে নেই তারপর বিয়ে করবো। তাদের এটাও ভাবা উচিত বিয়ে, পরিবার, জীবন গোছানোরই খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বয়স এবং সামর্থ্যটুকু হয়ে গেলে বিয়ে করে ফেলা যায়। যে জীবন গোছানোর কথা বলে অনেকে বেশি লেট করে, তারা কেন ভাবে না বিয়ের পরও জীবন গোছানো যায়। আরও ভালোভাবে, একে অপরের সহযোগিতায়, দু’জনে মিলেমিশে, বন্ধুর মতো, প্রেম প্রেম ছন্দে। আর জানিসই তো
“দু’জনের পারস্পরিক ভালোবাসা স্থাপনের জন্য বিবাহের বিকল্প নেই”। (ইবনু মাজাহ-১৮৪৭)।
বিয়ে একটি ইবাদত নবী রাসূলের সুন্নত ও আদর্শ”
-ভালোই তো রাফি! বিয়ে নিয়ে অনেক গবেষণা করিস বোঝা যাচ্ছে… তো পাত্রী অলরেডি পছন্দ করা আছে নাকি দেখবো আমরা?
না বন্ধু, ওই রকম কেউ এখন নেই, থাকলে তুমি জানতে। আর তোমাদের কন্যা দেখার রাইট নাই, হি হি… জানাশোনার মধ্যে দ্বীনদার ভালো পরিবারের কেউ থাকলে সন্ধান দিতে পারো…
আচ্ছা আচ্ছা… তা কবে বিয়ে করছো বন্ধু? ভাবি দেখতে পারবো না ঠিকাছে,
কিন্তু ভাবির হাতে রান্না খাওয়া কিন্তু আমাদের শখ ও হক…
হা হা হা… হক থেকে তোমাদের বঞ্চিত করবো না ভাই। সামনের বছরেই ইনশাআল্লাহ মিসকিন জীবনের ইতি টানার নিয়ত। আপাতত একটু পড়াশোনা ও মনস্তাত্ত্বিক প্রিপারেশন নিতে হবে। একটা মিনিংফুল ও সুখময় দাম্পত্য ডিজাইনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার দরকার আছে বন্ধু।
বিয়ে মানে নানা দায়িত্ব। অন্য একটা মানুষের মন-মেজাজ ভালো লাগা, মন্দ লাগা বুঝে ট্রিট করার। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দাম্পত্য পরিচালনার। দুটি পরিবারের সাথে মানিয়ে চলার- এই সেই করে অনেক কিছু। আসলে এই বিষয়ে স্টাডি না করলে এতো কিছু টেরই পেতাম না! সো নিজের ভেতর আগে এক চামচ বিবাহ বোধ তৈরি হৈাক কি বলো?
-হা হা হা। বাহ! ফিলোসফার বন্ধু, বাহ!
এগিয়ে যান… আপনার থেকে ম্যারেজ ম্যানেজমেন্ট কোর্স করবোনে আমরা। আমাদের তো আর অত সময় সুযোগ নাই হাবিজাবি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার। এমনিতেই জবের কত্ত বড় সিলেবাস, মোটা মোটা বই! এগুলো পড়েই কোন কুল কিনারা করে উঠতে পারছি না…
একজন শায়েখের একটি কথা মাথায় গেঁথে গেছে রাফির বিয়ের আগে নিজেকে খুঁজে পাওয়া জরুরি। একটি মানসিক বলয় তৈরি হওয়াও দরকার, যা দাম্পত্য জীবনের নানা অপ্রত্যাশিত সমীকরণ মেলাতে খুব সহায়ক হবে।
মানুষের যেমন আত্মার সাথে শরীরের একটা নিবিড় যোগাযোগ আছে, তেমনি প্রস্তুতির সাথে পার্ফমেন্সের একটা গভীর সংযোগ থাকে। আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে প্রিপারেশন নেই ঠিকই। তবে পারিবারিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলার জন্যও কি কিছু প্রস্তুতি জরুরি নয়?
যদি স্বপ্ন থাকে জৈবিক প্রয়োজনের বাহিরে দাম্পত্যকে আরো মিনিংফুল করা। একে অপরের সহযোগী হয়ে পৃথিবীতে কিছু স্বাক্ষর রেখে যাওয়া। তবে তো কিছু মেন্টাল, ইমোশনাল, স্পিরিচুয়াল, ফিজিক্যাল, ফাইনানশল প্রিপারেশান দরকার আছে বন্ধু…
এবার তবে কিছু প্রস্তুতি চলুক নিজের ভেতর,
মনোজগতে, আত্মা বিনির্মাণে…
লেখক হাবিব রহমান পরিচিতি
হাবিব রহমান ঢাকার অদূরে নবাবগঞ্জ থানাধীন একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা একজন সাধারণ যুবক । জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করে বর্তমানে এমবিএ পড়ছেন । পাশপাশি ডিজাইনার এবং ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে কাজ করছেন স্বপ্নের ক্ষুদ্র উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে । অবসরে বই পড়ে ও লেখালেখি করে সময় কাটে তার । কলেজে পড়ার সময় পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশের পর থেকেই ইচ্ছে নিজের কাগুজে সন্তান ছুঁয়ে দেখার । সাহিত্যের স্বাদে দ্বীনি বোধ , আত্মোন্নয়ন এবং উদ্যোক্তামুখি বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা তার । বার বার হোঁচট খাওয়া এক সময়ের হতাশ মানুষটা নতুন করে জীবনের মানে খুঁজে পেয়ে এখন স্বপ্ন দেখতে ও স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন । জীবনের লক্ষ্য একজন পজিটিভ ও আলোকিত মানুষ হওয়া এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে অনেকগুলো কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করা । রাব্বে কারীম তার কলম ও মেধায় বারাকাহ দান করে এই প্রচেষ্টাকে কবুল করুন । আমীন I
🚫 আরো পড়তে অথবা দেখতে : অবশ্যই আপনাকে বইটির অরিজিনাল কপি ক্রয় করতে হবে।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?