আমরা পুরুষরা নিজেদের যৌন আচরণ সম্পর্কে যতটা ধারণা রাখি—তার ন্যূনতম ধারণাও নারীদের ব্যাপারে আমাদের থাকে না। এমনকি সম্ভবত পুরুষের যৌন আচরণের ব্যাপারে নারীদের ধারণাও খুব একটা ক্লিয়ার না।
দুঃখজনক হলেও সত্য—আমরা নারীদের যৌন আচরণ ও আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি গল্প, উপন্যাস, কবিতায়! কেউকেউ দ্বারস্থ হয়—অশ্লীল সিনেমা কিংবা পর্নোগ্রাফির—যার বেশিরভাগের রচয়িতা বা নির্মাতা স্বভাবতই পুরুষ। তারা-গল্প কবিতা বা সিনেমায় নারীদের এমনভাবে সাজায়—যেমনটা একজন পুরুষ দেখতে চায়। এই পুরো ব্যাপারটায় একজন নারী কীভাবে নিজেকে দেখতে চায়—তা আমাদের অজানাই থেকে যায়।
নারীরা নিজেদের যৌন অনুভূতি এবং আচরণ সম্পর্কে অনেকটাই passive থাকে, তারা এসব সম্পর্কে পাবলিকলি খুব একটা কথা বলে না। হয়তো বা এর পেছনে নারীদের মনস্তাত্ত্বিক কোনো ব্যাপার স্যাপার থাকতে পারে, অথবা (কারো-কারো মত অনুযায়ী) সমাজের বেঁধে দেয়া চিন্তাকাঠামোর কারণেও এমনটা ঘটতে পারে।
একজন কিশোর যখন প্রথম যৌবনে পা রাখতে শুরু করে এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কৌতুহলী হতে শুরু করে—নারীর যৌন আচরণ সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয় (for example) কোনো চটিগল্প থেকে; যেখানে দেখানো হয়—একজন পুরুষের সেক্সুয়াল জোর-জবরদস্তির প্রতি নারীরা প্রথম-প্রথম মেকি প্রতিবাদের চেষ্টা করলেও—সে আসলে নিজেকে মনেমনে সঁপে দিতে চায়; তাই প্রথমে মিছে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে পরে ঠিক নিজেই কামনায় গা ভাসিয়ে দেয়।
এ গল্পগুলো স্বাভাবিকভাবেই কোনো উন্মত্ত পুরুষকে ধর্ষণে উদ্ধুদ্ধ করে।
কেউ কেউ আবার মজা করে বলে- “ধর্ষণ যেখানে নিশ্চিত, উপভোগই সেখানে শ্রেয়!”
এ ধরণের চটিগল্প কিম্বা পর্নোগ্রাফিতে পুরুষের সেক্সুয়াল যত ফ্যান্টাসি আছে—তা নারীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। আর সদ্য কৈশোর থেকে বের হওয়া একজন তরুণ যখন কৌতুহল বসত কিংবা বন্ধুদের মারফতে এসবের ভোক্তা হয়, সে ভাবে—নারীরা বুঝি নিজেদের এমনটাই দেখতে চায়, তাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা বোধহয় এরকমই, তারা বুঝি এতটাই সহজলভ্য হতে চায়!
অথচ একজন নারী স্বয়ং যৌনতার ব্যাপারে কী ভাবে, একজন নারী স্বয়ং তার পার্টনারের কাছে কী চায়—তা আর সে তরুণের জানা হয় না। একইভাবে একজন তরুনীও পুরুষের যৌন আচরণের ব্যাপারে অনেকটাই বেখবর থেকে যায়।
যৌনতার চাহিদা একজন পুরুষের কাছে তিনবেলা খাবারের চাহিদার মতো। আল্লাহ বিশেষ কারণে পুরুষদের এভাবেই বানিয়েছেন। ফলে একজন পুরুষ ভালোবাসাপূর্ণ কোনো মেন্টাল এটাচমেন্ট ছাড়াই যৌন-ক্রিয়া করে যেতে পারে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। নারীদের জন্য তার পার্টনারের সাথে ভালোবাসাপূর্ণ আবেগ এবং মেন্টাল এটাচমেন্ট থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নারীরা যেসব পুরুষের কাছে নিজেদের নিরাপদ অনুভব করে—সাধারণত তাদের প্রতি শারীরিকভাবে আকর্ষিত হয়। তেমনি, পুরুষরা যেসব নারীর কাছ থেকে নিজের প্রতি আনুগত্য, শ্রদ্ধা ও নির্ভরতার ব্যাপারটা অনুভব করে—তাদের প্রতিই ‘ভালোবাসাপূর্ণ’ যৌন-আকর্ষণ অনুভব করে।
পুরুষদের কাছে যৌনতা তিনবেলা খাবারের চাহিদার মতো ব্যাপার, কিন্তু একই সাথে এটিই আবার একজন পুরুষের জন্য ভালোবাসা প্রকাশের সর্বোচ্চ উপায়। ব্যাপারটা অনেকটা দুটো শরীরের সম্পূর্ণ এক হওয়ার মাধ্যমে দুটো আত্মার একতাকে সিম্বোলাইজ করে। এটা আমি একজন পুরুষের পার্সপেক্টিভ থেকে বললাম।
একজন পুরুষের যৌন আচরণের জন্য ভালোবাসার অনুভূতির খুব একটা প্রয়োজন হয় না; কিন্তু সত্যিকার অর্থে কাউকে ভালোবেসে প্রতারিত হলে একজন পুরুষ সাধারণত পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।
আল্লাহ পুরুষ ও নারীর ফিতরাত সম্পর্কে অবগত। তিনি ইসলামের মাধ্যমে আমাদের নারী-পুরুষের দাম্পত্য সম্পর্কের যে বিধান দিয়েছেন¬—তা যথাযথভাবে যদি আমরা অনুসরণ করতাম—তবে আমাদের দাম্পত্য জীবনের অনেক সমস্যাই ‘নেই’ হয়ে যেতো। ইসলাম যৌনতার ব্যাপারে আমাদের কী বিধান দিয়েছে—সেটাই আমরা ভালো করে জানি না, মানা তো দূর কী বাত! অথচ পুরুষ এবং নারী সাহাবীগণ এসব ব্যাপারে রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞেস করতেন, আর তিনিও খোলাখুলিভাবে বিস্তারিত জবাব দিতেন।
মাদরাসার ছাত্রগণ যৌন-শিক্ষায় অনেকটাই এগিয়ে থাকলেও জেনালের শিক্ষিতদের সেই সুযোগ খুব একটা থাকে না। স্কুলের কারিক্যুলাম যেভাবে রদবদল করা হচ্ছে—তাতে মনে হয় ভবিষ্যতে আমাদের স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের পশ্চিমা বিকৃত যৌন-শিক্ষা গেলানো হবে; যা নারী-পুরুষের মধ্যকার বিদ্যমান যৌন-সংকট দূর তো করবেই না, বরং দীর্ঘমেয়াদী বিকৃতির কারণ হবে।
আমাদের এখনই এসব ব্যাপারে সচেতন হবার সময় এসেছে। নারী-পুরুষের মধ্যকার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন এবং আচরণগত ভিন্নতার ব্যাপারে আমাদের পরিণত বয়সের ছেলেমেয়েদের শেখাতে হবে; তবে অবশ্যই সুন্নাহ সম্মত উপায়ে। শেখার চাহিদা থাকা সত্তেও আমরা যদি তাদের প্রপার গাইডলাইন দিতে না পরি—তবে বয়সের তাড়নায় তাদের ভুল সোর্সের দিকে ধাবিত হওয়াকে আটকে রাখা সম্ভব হবে না।
— জাহিদ হাসান হৃদয়
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান