নবিজী মোহাম্মদ সঃ এর মুজিযা – সিরাতে রাসূল (সাঃ)

শৈশবে নবি মুহাম্মদ (সাঃ) এর মুজিযা

life bio data,Prophet's Life Bangla,Islamic blog,মহানবীর জীবনী - Serat Mohammed,

রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্মের সময় যেসব নিদর্শনাবলি সংঘটিত হয়েছে, তাও প্রসিদ্ধ। সে বছরই হস্তীবাহিনীর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। জন্মলাভের পর শৈশবে প্রকাশ পেয়েছে বহু নিদর্শন এবং তাঁর সত্যতার স্বপক্ষে বহু দলিল। এ সময় যে মহিলা তাঁকে দুধ পান করিয়েছেন, তিনি নিজেই সেসব নিদর্শনাবলি পরিলক্ষ করেছেন।
আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার ইবনি আবী তালিব (রদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দুধ-মা হালিমা বলেন,
‘কোনো এক দুর্ভিক্ষের বছর দুগ্ধপোষ্য শিশু সংগ্রহের জন্য বানূ সা’দ ইবনু বকরের কয়েকজন মহিলার সঙ্গে আমি মক্কায় যাই। দুর্বল একটি গাধীতে সওয়ার হয়ে মক্কায় পৌঁছি। আমার সঙ্গে ছিল আমারই একটি শিশু সন্তান আর একটি বুড়ো উটনী। আল্লাহর শপথ! উটনীটি আমাকে এক ফোঁটা দুধও দিচ্ছিল না। আর শিশুটি ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদতে থাকায় আমরা সেই রাতে একবিন্দুও ঘুমাতে পারিনি। কারণ, তাকে খাওয়াবার মতো না আমার স্তনে এক ফোঁটা দুধ পেয়েছি, আর না উটনীর ওলানে। তবে আমরা এই সংকট কাটিয়ে উঠে স্বচ্ছলতা লাভে আশাবাদী ছিলাম।
যা হোক, সেই গাধীটির পিঠে সওয়ার হয়ে পথ চলতে লাগলাম। গাধীটি দুর্বল ও শীর্ণকায় হওয়ায় আমার গতি শ্লথ ছিল। এতে আমার সঙ্গীদের বেশ কষ্ট হচ্ছিল।
দুগ্ধপোষ্য শিশুর খোঁজে একসময় আমরা মক্কায় এসে পৌঁছলাম। আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমাদের সব কজন মহিলার সামনেই রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু শিশুটি ইয়াতীম শুনে কেউই তাকে গ্রহণ করতে সম্মত হলো না। আমরা বললাম, ‘বাচ্চার বাপ থাকলেই না টাকা পয়সা দিতে পারত। মা-দাদা কীই-বা করবে??
যা হোক, আমি ছাড়া আমার সঙ্গী সব মহিলা একটি করে শিশু নিয়ে নেয়। আমরা যখন ফেরার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি, তখন আমার স্বামীকে বলি, ‘আল্লাহর শপথ, শিশু সন্তান না নিয়ে এইভাবে শূন্য হাতে ফিরে যেতে আমার খারাপ লাগছে। আমি ওই ইয়াতীম শিশুটিকে অবশ্যই নিয়ে যাব।’ স্বামী বলেন, “ঠিক আছে, তাই করো! হতে পারে, আল্লাহ তার মধ্যে আমাদের জন্য বরকত রেখেছেন।’ আমি গিয়ে শিশুটিকে নিয়ে নিলাম। আল্লাহর শপথ, আমি তো তাকে গ্রহণ করেছিলাম অন্য শিশু না পেয়ে নিতান্ত নিরূপায় হয়ে।
ইয়াতীম মুহাম্মাদকে নিয়ে আমি আমার বাহনের কাছে গেলাম। তাকে দুধ পান করানোর সময় লক্ষ করলাম, আমার দুই স্তন পর্যাপ্ত দুধে পরিপূর্ণ। শিশু মুহাম্মাদ তৃপ্তির সাথে তা পান করে এবং তার দুধ ভাইও সেই দুধ পান করে তৃপ্ত হয়। আমার স্বামী উটনীর কাছে গিয়ে দেখতে পান, তার ওলান দুধে পরিপূর্ণ। উটনী থেকে তিনি দুধ দোহন করেন। নিজে পান করেন, আমিও তৃপ্তি সহকারে পান করি। সে রাতটা শান্তিতে কাটাই আমরা। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্বামী আমাকে বলেন, ‘হালিমা! আল্লাহর শপথ, আমার মনে হচ্ছে, তুমি একটি বরকতময় শিশুই নিয়েছ।’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর শপথ, আমি এমনই আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা বের হয়ে গাধীটিতে আরোহণ করি। শিশুটিকে আমার সাথে নিয়ে বসি। শপথ আল্লাহর! গাধীটি আমাদের নিয়ে এত দ্রুতগতিতে ছুটে চলে যে, সঙ্গের একটি গাধাও তার নাগাল পাচ্ছিল না। তা দেখে আমার সঙ্গীরা বলতে শুরু করে যে, ‘আবূ যুআইবের মেয়ে, ব্যাপারটা কী? আসার সময়ও এই গাধীর পিঠেই ছিলে না?’ আমি বলি, ‘হ্যাঁ, এটিই।’ তারা বলল, ‘আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় এর বিশেষ কোনো রহস্য আছে!’
এভাবে আমরা বানূ সা’দের এলাকায় এসে পৌঁছি। তখন এই ভূখণ্ডের চেয়ে অনুর্বর কোনো ভূমি আল্লাহর জমিনে ছিল বলে আমার মনে হয় না। শিশুটিকে নিয়ে আসার পর থেকে আমার বকরির পাল সারাদিন চরে সন্ধ্যাবেলা তৃপ্তপেটে স্তনভর্তি দুধ নিয়ে ফিরে আসতে শুরু করে। আমরা সে দুধ দোহন করে পান করতে লাগলাম। অথচ আমাদের আশেপাশে তখন কারও বকরিই এক ফোঁটা দুধ দিচ্ছিল না। প্রতিবেশীর বকরিগুলো সারাদিন চরে সন্ধ্যাবেলা ক্ষুধার্ত পেটেই ফিরে আসত। তাই তারা রাখালদের বলে দেয়, ‘আবূ যুআইবের মেয়ের বকরির পাল যেখানে চরে, আজ থেকে আমাদের বকরিগুলোও তোমরা সেখানেই চরাবে।’ তারা তাদের বকরিগুলো আমার বকরিপালের সঙ্গে চরাতে শুরু করে। কিন্তু তারপরও তাদের বকরি আগের মতোই দুধবিহীন ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফিরত। কিন্তু আমার বকরি ফিরত তৃপ্তপেটে স্তনভর্তি দুধ নিয়েই।
এ ছাড়াও আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে একের-পর-এক কল্যাণ লাভ করতে থাকি। এইভাবে দুটি বছর হয়ে যায়। আমি তাকে দুধপান করানো বন্ধ করে দিই। এরইমধ্যে সে এক নাদুস-নুদুস বালকে পরিণত হয়।
আমরা তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাই। বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় তাকে ফিরিয়ে দিতে আমাদের মন সায় দিচ্ছিল না। যা হোক, তার মা তাকে দেখার পর আমি বলি, ‘আরও স্বাস্থ্যবান হওয়া পর্যন্ত আপনার ছেলেকে আমার কাছে দিয়ে দিন। মক্কার মহামারিতে সে আক্রান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছি আমি।’ আল্লাহর শপথ, আমি কথাটা বারবার বলায় শেষ পর্যন্ত তিনি সম্মত হন।
তাকে নিয়ে আমরা বাড়ি চলে আসি। এর এক মাস পর একদিন তিনি তার দুধ শরিক এক ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের বাড়ির পেছনে বকরি চরাতে যান। হঠাৎ তার ভাইটি দৌড়ে এসে বলে, ‘সাদা পোশাক পরা দুজন লোক এসে আমাদের ঐ কুরাইশী ভাইকে শুইয়ে তার পেট চিড়ে ফেলেছে!’ খবর শুনে আমি ও তার দুধপিতা দৌড়ে তার কাছে গিয়ে দেখি, বিবর্ণ অবস্থায় সে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরি। জিজ্ঞাসা করি, ‘বাবা, তোমার কী হয়েছে?’ জবাবে সে বলে, ‘সাদা পোশাক পরা দুজন লোক এসে আমাকে শুইয়ে ফেলে। তারপর আমার পেট চিড়ে পেটের ভেতর থেকে কী যেন খুঁজতে থাকে।’
হালিমা বলেন, আমরা তাকে ঘরে নিয়ে গেলাম। তার দুধপিতা বলেন, ‘হালিমা, আশঙ্কা হয় যে, আমার এই সন্তানটিকে জিনে পেয়ে বসেছে। চলো, আমরা যা আশঙ্কা করছি, কিছু একটা ঘটে যাওয়ার আগেই ভালোয় ভালোয় আমরা তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।’ তাকে নিয়ে আমরা তার মায়ের কাছে চলে গেলাম। তার মা জিজ্ঞাসা করেন, ‘ব্যাপার কী, ধাত্রী? আমার ছেলের প্রতি আপনাদের দুজনের এত আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও আপনারা একে ফিরিয়ে আনলেন কেন?’ হালিমা এবং তার স্বামী বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহর অনুগ্রহে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। এখন এর ব্যাপারে আমাদের মনে নানা বিপদাপদের আশঙ্কা হচ্ছে। তাই আপনার পুত্রকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিতে আসলাম। যেমনটা আপনি ভালোবাসেন।’
তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘কীসের আশঙ্কা করছেন আপনারা? কী ঘটেছে, সত্যি করে আমাকে খুলে বলুন!’ আমরা তাকে ঘটনার বৃত্তান্ত শোনালাম। শুনে তিনি বলেন, ‘আপনারা কি এর ব্যাপারে দুষ্ট জিনের ভয় করছেন? কক্ষনো নয়, আল্লাহর শপথ! আমার এই ছেলের ওপর শয়তানের কোনো হাত থাকতে পারে না। আল্লাহর শপথ! আমার এই ছেলে ভবিষ্যতে বিরাট কিছু হবে। একটা ঘটনা শোনাই?’ আমার বললাম, “জি হ্যাঁ, শোনান।’ তিনি বললেন, ‘ও যখন আমার গর্ভে, তখন একদিন স্বপ্নে দেখলাম, যেন আমার ভেতর থেকে এক ঝলক আলো বের হয়ে তাতে সিরিয়ার সকল রাজপ্রাসাদ আলোকিত হয়ে গেছে। আল্লাহর শপথ, তার চেয়ে সহজ ও হালকা কোনো গর্ভস্থ সন্তান আমি কখনো দেখিনি। আবার যখন তাকে প্রসব করি, তখন সে আকাশ পানে মাথা তুলে দুহাতে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। তাই আপনারা একে নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না!’”[২০]
এমনিভাবে শৈশবকালে যেসকল অলৌকিক বিষয় তাঁর সঙ্গে ঘটেছে, সেগুলো এখানে উল্লেখযোগ্য। এরমধ্যে তাঁর বক্ষবিদীর্ণ করার ঘটনাটি অন্যতম।
আনাস ইবনু মালিক (রদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন শিশুদের সাথে খেলা করছিলেন, এ সময় তাঁর কাছে জিবরীল Read More…

     নবিজী মোহাম্মদ সঃ এর মুজিযা

মুজাহিদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা রাঃ বলতেন, আল্লাহ্‌র কসম, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কখনও পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদা আমি তাঁদের (রাসূলুল্লাহ সাঃ এবং ছাহাবীদের) রাস্তায় বসেছিলাম, যেখান দিয়ে তারা বের হ’তেন। আবূ বকর রাঃ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি এ উদ্দেশ্যেই তা করলাম, যেন তিনি আমাকে কিছু খেতে দিয়ে পরিতৃপ্ত করেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ওমর রাঃ আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকেও সেই একই উদ্দেশ্যে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু তিনিও চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাঃ আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। তিনি আমার চেহারা দেখে মনের কথা বুঝতে পারলেন এবং বললেন, ‘হে আবূ হির রাঃ! আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল সাঃ! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন,‘তুমি আমার সঙ্গে চল’! অতঃপর তিনি চললেন, আমি তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি বাড়ীতে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আমি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম।
তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুধ কোথা থেকে এসেছে’? বাড়ির লোকজন উত্তর দিল, ‘অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা আপনার জন্য হাদিয়াস্বরূপ দিয়েছে’। তিনি বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা (রা.)’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল’! তিনি বললেন, ‘আহলে ছুফ্‌ফা’র লোকদেরকে গিয়ে এখানে ডেকে আন’। (রাবী বলেন) ‘আহলে ছুফ্‌ফা’ ছিল ইসলামের মেহমান। তাদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না। আর এমন কেউ ছিল না, যার উপর ভরসা করা যায়। যখন কোন ছাদাক্বার মাল রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর নিকট আসত, তখন তিনি তাদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। নিজে সেখান থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যদি কোন হাদিয়া (উপঢৌকন) আসত, তিনি সেখান থেকেও এক অংশ তাদের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে এতে তাদেরকে শরীক করতেন এবং নিজে এক অংশ গ্রহণ করতেন।
(আবু হুরায়রা বলেন) রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর আদেশ শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, এতটুকু দুধ দ্বারা ‘আহলে ছুফ্‌ফা’র কি হবে? আমিই এ দুধ পানের বেশী হকদার। আমি তা পান করলে আমার শরীরে শক্তি ফিরে পেতাম। যখন তারা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তাদেরকে দুধ পান করতে দেই। আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছা.)-এর আদেশ মান্য করা ছাড়া আমার কোন গত্যন্তর ছিল না।
সুতরাং আমি ‘আহলে ছুফ্‌ফার নিকট গিয়ে তাদেরকে ডেকে আনলাম’। তারা এসে (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা ঘরে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল! রাসূলুল্লাহ (ছা.) আমাকে বললেন, এটি তাদেরকে দাও। আমি (দুধের) পেয়ালা হাতে নিয়ে দিতে শুরু করলাম। এক ব্যক্তির হাতে দিলাম, সে পান করে পরিতৃপ্ত হ’ল এবং আমাকে পেয়ালা ফেরত দিল। অতঃপর আমি অন্য একজনকে দিলাম, সেও তৃপ্তি সহকারে পান করে পেয়ালা ফেরত দিল। তৃতীয় জনকে দিলে সেও তাই করল। এভাবে আমি (সর্বশেষে) রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর নিকট পৌঁছলাম। সবাই পরিতৃপ্ত হ’ল। তিনি পেয়ালা নিলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল’! তিনি বললেন, ‘এখন আমি আর তুমি বাকী’। আমি বললাম, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহ্‌র রাসূল’। তিনি বললেন, ‘বসে পড় এবং পান কর’। আমি বসে পান করলাম। তিনি (পুনরায়) বললেন, ‘পান কর’। আমি পান করলাম। তিনি একথা বলতেই থাকলেন, অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হ’লাম যে, ‘আল্লাহ্‌র শপথ! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই’। তিনি বললেন, ‘তাহলে আমাকে দাও’। আমি তাঁকে দিলে তিনি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে বাকী দুধ পান করলেন।
বুখারী শরীফ হা/৬৪৫২, মিশকাত হা/৪৬৭০।
শিক্ষা :
১. রাসূল সাঃ ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ। তিনি তাঁর ছাহাবীদের মুখ দেখেই তাদের অন্তরের অবস্থা বুঝতে পারতেন।
২. বসে পান করা সুন্নাত।
৩. বিসমিল্লাহ বলে পান করতে হবে।
৪. আমন্ত্রিত ব্যক্তি অনুমতি না নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করবে না।
৫. পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির জন্য হাদিয়া বা উপঢৌকন প্রদান করা সুন্নাত।
৬. বিপদগ্রস্ত বা অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।
হে আল্লাহ্ আমাদের কে নবিজী সাঃ এর শিখিয়ে দেওয়া 
শিক্ষার উপর ক্বায়ীম রাখুন।
[২০] ইবনু ইসহাক কৃত আস সিরাতুন নববিয়্যা, ১/১৪৯, ইবনু হিব্বান, ৬৩৩৫, তাবারানি, ২৪/ ২১২-২১৪, তারিখুত তাবারি, ২/ ১৫৮-১৬০, বাইহাকি কৃত দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ, ১/১৩২-১৩৯, এ ঘটনার সনদ যঈফ। ইবনু ইসহাক এটি বর্ণনা করেছেন জাহাম বিন আবূল জাহাম থেকে। যার ব্যাপারে যাহাবি (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার পরিচয় আমি জানি না। সে হালিমা সাদিয়্যার ঘটনা বর্ণনা করেছে। (আল মুগনি ফিয যুআফা, ১/১৩৮)

আর জাহাম এটি আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার থেকে শুনেননি। আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার এটি কোনো মাধ্যম ছাড়াই হালিমা থেকে বর্ণনা করেছেন, অথচ হালিমার সাথে তার সাক্ষাতই ঘটেনি। এ ঘটনাটিকে আলবানি যঈফ বলেছেন। দেখুন, দিফাউন আনিল হাদীসিন নববি, ৩৮-৩৯, আত তালিকাতুল হিসান, ৬৩০১ ।
 Content Copyright Credit 💕 মুজাহিদুল ইসলাম মাইমুন
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?