দ্য ইন্ড অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার | The End of Mental Disorder | কামরুন নাহার মুক্তি

দ্য ইন্ড অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার [ PDF Not Coming ]
লেখক : কামরুন নাহার মুক্তি
প্রকাশনী : শব্দশৈলী
বিষয় : জেনারেল বুকস, মন ও মানসিক কাউন্সেলিং
পৃষ্ঠা : 152, কভার : হার্ড কভার
আইএসবিএন : 9789849624035

দ্য ইন্ড অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার PDF | The End of Mental Disorder PDF | কামরুন নাহার মুক্তির বই

মানসিক স্বাস্থ্য _______________________________

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে , স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির শারীরিক , মানসিক এবং সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয় । সুতরাং আমরা বলতে পারি , একজন মানুষের স্বাস্থ্য হলো রোগবালাই মুক্ত সুস্থ শরীর এবং সেই সঙ্গে ভয় , হতাশা , বিষণ্নতা , মানসিক চাপ থেকে মুক্ত মন এবং সমাজের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সক্ষম মন । অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে , সুস্থতা বলতে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে বোঝায় । আর মানুষের চিন্তা , আবেগ ও আচরণ এ তিন মিলে মানসিক স্বাস্থ্য । এককথায় মানসিক স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় , “ Full and harmonious functioning of whole personality M শারীরিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আপনারা যেমন সচেতন , মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও সচেতন থাকা দরকার । 

হাত – পা কেটে গেলে যেমন আমরা চিল্লাচিল্লি , দৌড়াদৌড়ি লাগিয়ে দেই , ব্যান্ডেজ করি , পানি ঢালি ও পরিষ্কার করি । এমনভাবে অনেকেই হয়তোবা মানসিকভাবে আঘাত পায় , কেউ কোনো কথা বলছে আর তাতে আমরা কষ্ট পাই , কারো ব্যবহারে কষ্ট পাই । এই যে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য , এটার ব্যাপারে আমরা সচেতন না । এই সমস্যার কথা আবার কাউকে বলাও যায় না । বললে বলে , ‘ আরে ধুর ! এটা কোনো সমস্যা হলো ! পাগলের ডাক্তার লাগবে নাকি ! ‘ তাহলে মানসিক সমস্যা মানেই আমাদের সমাজে ধরেই নেওয়া হয় পাগলের ডাক্তার লাগবে , পাগলাগারদে পাঠাতে হবে । 
এই তথাকথিত প্রচলনের কারণে অনেকে বলতেই চায় না তার কোনো মানসিক সমস্যা আছে । যার কারণে তারা মানসিক যে পীড়ার মধ্যে আছে , সেটা জমতে জমতে অনেক বড় কিছু হয়ে যায় । 
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার উপায় : 
১. Exercise : যেদিন সকালে আপনি বেশি ঘুমান , ১২ টা পর্যন্ত , সেদিন দেখবেন একটু পরে খাওয়ার পর আবার ঘুম পাবে । তার কারণ হলোআপনার বডি রেস্ট নেওয়ার সঙ্গে আসতে আসতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে , বডি আরও ঘুম চাচ্ছে । অন্যদিকে আপনি যদি সকালে একটু এক্সারসাইজ করেন , একটু হাঁটেন , বিকেলে খেলেন বা দৌড়াদৌড়ি করেন , তাহলে দেখবেন বডি সতেজ লাগবে । ঘুমঘুম ভাব , অবসাদ অতটা আসবে না । আবার এক্সারসাইজ করলে বড়িতে সেরোটোনিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয় । এটি এমন একটি হরমোন যা মানুষের হাসিখুশির সাথে সম্পর্কিত । 
২. পানি খাওয়া মানুষের শরীরের ৭০ শতাংশ পানি । অনেক সময় পড়তে বসে ঘুম আসে । দুই গ্লাস পানি খেয়ে আসুন বা এক গ্লাস পানি খেয়ে আসুন , দেখবেন আপনার ঘুম কেটে গিয়েছে । 
৩. পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ : বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এটাই দেখেছেন যে , সুষম ও পুষ্টিকর খাবার শুধু শরীরই নয় , মনও ভালো রাখে । ভিটামিন বি -১২ , ওমেগা -৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার আমাদের মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলোকে চাঙা রাখতে সাহায্য করে । তাছাড়া তাজা ফলমূল , সবজি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । পুষ্টিকর খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । ফলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যই ভালো থাকে 
৪. মেডিটেশন : মেডিটেশনের অনেক উপায় আছে । একটি ইন্টারেস্টিং উপায় হলো Guided meditation । ইউটিউবে guided meditation লিখে সার্চ করলে প্রচুর ভিডিও পাবেন । Guided meditation মানে কেউ একজন আপনাকে গাইড করবে । অথবা নামাজ পড়ুন । নামাজ খুব ভালো একটি মেডিটেশন । আপনি যদি কী বলছেন আরবিতে , ওটা বুঝে পুরো নামাজ পড়েন , দেখবেন সেটাও একটা খুব ভালো মেডিটেশন হিসেবে কাজ করছে । 
৫. মিডিয়া এক্সপোজার কমিয়ে ফেলুন : আপনি দিনের কতটুকু সময় খবরের সঙ্গে থাকবেন , সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে থাকবেন- সেটা নির্ধারণ করে ফেলুন । কারণ সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক খবর শেয়ার করা হয় , তার মধ্যে ভালো খবর যেমন থাকে তেমন এমন কিছু খবর থাকে যা আপনার উদ্বেগ বাড়ায় । যেসব পেইজ প্রোফাইল আপনার অ্যানজাইটি বাড়ায় , সেগুলো আপাতত মিউট করে রাখাই ভালো । ফোনে যদি নোটিফিকেশন , ব্রেকিং নিউজ অ্যালার্ট থাকে , সেগুলো আপাতত বন্ধ করে দিতে পারেন । আপডেটেড থাকাও জরুরি । তবে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে খবর জানুন । তারপরও খবরের সঙ্গে খুব বেশি সময় ধরে না থাকাই শ্রেয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।
৬. প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটান : প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটালে মন ভালো থাকে । সোশ্যাল এন্টারঅ্যাকশন , একে – অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা , সাপোর্ট দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ । আপনার কলিগ , বন্ধু – বান্ধব , পরিবারের যাদের সঙ্গে একটা মিনিংফুল সময় কাটাতে পারবেন , তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় ব্যয় করুন । পরিবার দূরে থাকলে ভিডিও কল ব্যবহার করতে পারেন । আপনার পজিটিভ এক্সপেরিয়েন্সগুলো শেয়ার করুন । আবার দুশ্চিন্তাগুলো নিয়েও কথা বলা উচিত । কারণ সেগুলো যদি শুধু নিজের মধ্যে রেখে দেন , আস্তে আস্তে অ্যানজাইটি দানা বাঁধবে । তাই যাদের বিশ্বাস করতে পারেন , তাদের সঙ্গে দুশ্চিন্তাগুলো শেয়ার করার চেষ্টা করবেন । 
৭. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা : একটি খুব ভালো অভ্যাসের কথা বলি । আপনি প্রতিদিন রাতে তিনটি জিনিস লিখুন , যে তিনটি জিনিসের জন্য আপনি আজকের দিনটির কাছে কৃতজ্ঞ অর্থাৎ গ্রেটফুলনেস যখন আপনি প্রকাশ করবেন , তখন আপনার অনেক ভালো লাগবে । তিনটি জিনিস হতে পারে আজকে আপনার প্রোপারলি ৮ ঘণ্টা ঘুম হয়েছে , আজকে আপনার বাবা বাজার থেকে আপনার জন্য কিছু এনেছেন , অনেক পুরোনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে । 
যখন লাইফের ছোট ছোট বিষয়গুলো লিখে রাখবেন তখন মনে হবে যে , হ্যাঁ আমার লাইফে ভালো কিছু আছে । কিছু লিখতে পারবেন না যখন , শুধু লিখেন আপনি আজ জীবিত ঘুম থেকে উঠতে পেরেছেন । অনেকেই তো ঘুমের মধ্যে মারা যায় । এই যে কৃতজ্ঞতাগুলো প্রকাশ করছেন , প্রতিদিন ডায়রিতে তিনটি করে লিখে রাখছেন , এটার জন্য দেখবেন আপনি ডেইলি রাতের ওই মোমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছেন । কারণ ওই মোমেন্টের তিনটি জিনিস দেখার ফলে আপনার অনেক ভালো লাগছে । 
৮. শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন : শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত । তাই নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে । পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম , পুষ্টিকর খাবার খাওয়া , নিয়মিত ব্যায়াম করা- এগুলো শরীর সুস্থ রাখবে । অনেকের রুটিন উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে অনেকদিন ধরে লকডাউনে থাকায় । এখন যদি দিনগুলো একটু গুছিয়ে এনে ঘুমের সিডিউল ঠিক করা যায় তাহলে আপনার শরীর ভালো থাকবে । আর সেটা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখবে ।
৯. To do list : প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে পরের দিন কী কী কাজ করবেন , তা যদি লিখে রাখেন তাহলে পরের দিন সকালে উঠে দেখতে পাবেন সেদিন কী কী কাজ আছে আপনার । এরপর একটা একটা করে সে কাজগুলো সম্পূর্ণ করে খাতায় কেটে দেবেন । দেখবেন তখন আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করছে । একটি কাজ সম্পূর্ণ করে কেটে দেওয়ার মাঝে যে আনন্দ আছে , to do list যে মেনটেইন করেনি , সে বোঝে না । তাই to do list- এ কাজ করার পর কেটে দিবেন । এই কেটে দেওয়ার মাঝে যে আনন্দ আছে তা আপনাকে পরবর্তী কাজ করার অনুপ্রেরণা দেবে । আমি যদি কোনো কাজ করি , কিন্তু সেটা to do list- এ নেই তখন আবার আমি গিয়ে to do list- এ কাজটি লিখি , তারপর কাটি । এই কাটার মধ্যে যে আনন্দ আছে , সেটা আমাকে পরের দুটি কাজের অনুপ্রেরণা দেয় । 
১০. ভালো লাগে এমন কাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকুন : মনকে প্রফুল্ল রাখে যে ছোট ছোট কাজগুলো , সেগুলো চালিয়ে যেতে হবে । বই পড়া , কবিতা লেখা , গান গাওয়া , গান শোনা , মুভি দেখা , রান্নাবান্না , মেকাপ , গেমিং , ইয়োগা— যার যেটা ভালো লাগে । এসবের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে এই এক্টিভিটি রিলেটেড অনেকগুলো অনলাইন কমিউনিটি আছে । যেমন- বই পড়ার পর একটি বুক রিভিউ পোস্ট করলেন , সে সুবাদে আরও কিছু মানুষের সঙ্গে কথা হলো । তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে টক্সিসিটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে । 
১১. নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়ানো : নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখলে জীবনে অনেক এগিয়ে যাওয়া যায় । আমরা কেউ – ই নিখুঁত নই । অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে হীনম্মন্যতায় ভোগা উচিত নয় । এতে করে হতাশা , বিষণ্নতা বৃদ্ধি পায় । তার থেকে নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে কিংবা তা দূর করার প্রয়াস করলে নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়বে । 
১২. লাইফে গোল সেট করা : ফাইনালি আপনার লাইফের জন্য একটি গোল সেট করুন । কারণ আপনার লাইফে যদি কোনো গোলই না থাকে , তাহলে আপনার লাইফ কোন দিকে যাচ্ছে ! আপনি কি এমন কোনো বাসে উঠবেন , যে বাস কোথায় যাচ্ছে জানেন না ? আপনি যদি একটি বাসেই না উঠেন , যে বাস কোথায় যাচ্ছে জানেন না তাহলে কীভাবে একটা লাইফকে চালাচ্ছেন , যে লাইফ কোথায় যাচ্ছে জানেন না ? তেমনভাবে আপনার লাইফের যদি একটা স্পেসিফিক গোল থাকে , তখন লাইফের একটা উদ্দেশ্য আপনি ফিল করবেন , লাইফ মিনিংফুল হবে । তখন দেখবেন প্রতিদিন আপনার কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ জন্মাবে । সুতরাং এই কাজগুলো চেষ্টা করে দেখুন , একই সঙ্গে আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে , তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে । আপনার লাইফের প্রোডাক্টিভিটি বেড়ে যাবে ।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?