বইঃ তুমি ফিরবে বলে (ফিমেইল ভার্সন)
লেখকঃ জাকারিয়া মাসুদ
Review Credit 💕 Tanha Tony
“তুমি ফিরবে বলে” শুধু একটি বই না। আমি “শুধু একটি বই” বলে লেখকের এত বিশাল প্রচেষ্টাকে ছোট করতে চাইনা। প্রতিটি পরতে পরতে, পাতায় পাতায় আমি প্রমাণ পাচ্ছিলাম অতল অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া তুমিটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য লেখক তার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই দিয়েছেন। “তুমি ফিরবে বলে” নামটি সার্থক। নামটি সার্থক প্রতিটি লাইনে লাইনে, পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়। বিপথে হারিয়ে যাওয়া পথহারা পথিককে রবের হিদায়াতের ছায়াতলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লেখক জাকারিয়া মাসুদের বিশাল এক শ্রমের নাম যেনো “তুমি ফিরবে বলে”
দুনিয়াটাকে নিজের একমাত্র গন্তব্য, ভোগের স্থান ভাবা মেয়েগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনোকিছুই যেনো বাদ দেননি জাকারিয়া মাসুদ তার এই বইয়ে।
হতাশার কারণ, হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই, হতাশা থেকে রবের ছায়াতলে ফিরে আসার উপায়, নারীদের উপর পাশ্চাত্যের সুকৌশল চক্রান্ত, আইটেম সঙ, সুন্দরী প্রতিযোগিতা, এক টাকার শ্যাম্পু থেকে লাখ টাকার গাড়ি, রিসিপশন কিংবা খবরের পাতায় পাতায় কীভাবে পশ্চিমারা, বেণিয়ারা নারীদেহটাকে ব্যবসার একটা উপকরণে পরিণত করেছে, কীভাবে নারীদের চোখদুটোকে অন্ধ বানিয়ে রেখেছে সেসবকিছুর আগা-গোরা কোনো কিছুই বাদ দেননি লেখক এই বইয়ে।
রূপচর্চা, পোশাক-আশাক, কিউটনেস, যশ-খ্যাতি, প্রতি সপ্তাহয় দু’বার করে স্পা করতে অভিজাত্য পার্লারে যাওয়া,বয় ফ্রেন্ডের সাথে লঙ ড্রাইভে যাওয়া, মিনিস্কার্ট পড়ে বয়ফ্রেন্ডের বুক জড়িয়ে বাইকে ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদি দুনিয়ার চাকচিক্য ও প্রসাধনীর মোহে আটকে পড়া মেয়েটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যত ধরণের প্রচেষ্টা প্রয়োজন সবই যেনো লেখক তার এই কলমযুদ্ধে রেখেছেন।
বাদ দেননি ইসলামে নারীর সম্মান এর বিষয়ও। মধ্যযুগীয় বর্বরতা নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা ভেঙে দিতেও ভুলেননি লেখক জাকারিয়া মাসুদ। যে যুগে ভারতীয় শুদ্র নারীদেরকে স্তন ঢাকার অপরাধে কর দিতে হয়েছে, নারী হওয়ার অপরাধে ব্রাক্ষ্মণ নারীরা মন্ত্র পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো, বেদ স্পর্শ করার অপরাধে শাস্তি পেতো নিম্নবর্ণের হিন্দুরা স্বজাতি থেকে,যে যুগে মধ্যযুগের ক্যাথলিক চার্চরা আইরন মেইডেন বানিয়ে নারীদের খুঁচিয়ে মারত, ব্রেস্ট রিপার দিয়ে স্তন ছিন্নভিন্ন করে ফেলত কিংবা হেরেটিক্স ফর্ক লাগিয়ে গলা এফোর ওফোর করে ফেলত, যে যুগে পাদ্রীরা নারীদেরকে শুধুমাত্র সেক্সের বস্তু হিসেবে ভাবত,যে যুগে পাশ্চাত্যরা নারী জাতিকে ইশ্বরের অভিশাপ ভাবত, ঋতুমতী নারীকে অশুচি ভাবত, পশ্চিমা ধর্মগুরুরা নারী শিক্ষার কঠোর বিরোধিতা করত সেই একই যুগে কাবা শরীফ পর্যন্ত মুসলিম নারীদের বিচরণ, রাষ্ট্রীয় ভাবে নারীদের দ্বীন শেখার এমনকি দাসীদেরকেও শিক্ষিত করার ব্যবস্থা, সবকিছুতে নারীদের অধিকার, বোন, স্ত্রী, মা, কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান দিয়েছিলো ইসলাম সেসবকিছুই বইটিতে তুলে ধরছেন লেখক।
তওবার পথে, সিরাতল মুস্তাকিমের পথে ফিরে আসতে শয়তান কত ধরণের বাধা দেয়, শয়তানের কূটকৌশল এবং সেগুলোর বিররুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হবে, রবের দয়াশীলতা, তাওবাকারী বান্দার প্রতি রবের ভালোবাসা, স্নেহমমতা সবই রয়েছে বইটিতে। প্রথমেই যে বললাম “তুমি ফিরবে বলে” নামটি সার্থক। বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় অক্লান্ত পরিশ্রম কোনো এক বা একাধিক তুমিকে রবের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য…..
________________________________
বইটি থেকে কিছু মনকাড়া, হৃদয়ে লাগার মতো অংশ তুলে ধরলাম—
★অন্তরে যখন মহান আল্লাহ ছাড়া প্রসাধনী-মেইকয়াপ, ড্রেসাপ ইত্যাদি জিনিস স্থান পাবে, তখন হতাশা কেবল বাড়তেই থাকবে। না পাওয়ার বেদনা তাড়া করবে ক্ষণে ক্ষণে। ‘কি যেনো নেই আমার’, ‘কোন জিনিস যেনো পাইনি আমি’, ‘কোথায় যেনো একটা শূন্যতা রয়ে গেছে’— মনে এমন ভাবনার উদয় থাকবে প্রতিটা মূহুর্তে।
★বোন আমার, তোমার রব তোমাকে শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন। না, তোমার সৌন্দর্যের জন্য না। রূপলাবণ্যের জন্যও না। তুমি শ্রেষ্ঠ, কারণ তোমার আত্মমর্যাদা আছে। তোমার কাছে আছে ইমান। আছে আয়িশা, ফাতিমা কিংবা খাদিজার মতো মহীয়সী নারীদের আদর্শ। তুমি পৃথিবীসেরা সভ্যতার অনুসারী। এরপরও কী অসভ্যতার অলিতে গলিতে ঘুরে নিজেকে নিঃশেষ করে দেবে?
★তুমি নিজের সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে কেন মেলে ধরো?
দেহসুষমা কী রাস্তায় দেখিয়ে বেড়ানোর মতো তুচ্ছ জিনিস?
টোকাইকে যৌন-উদ্দীপ্ত করার জন্য কী আল্লাহ তোমায় রূপ-লাবণ্য দিয়েছেন?
কীসের জন্য এতোটা উন্মাদ হয়ে গেলে?
★প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে কোনো পুরুষকে ভালোবেসে যাওয়ার নাম “কাছে আসা” নয়। কারও সাথে পালিয়ে গিয়ে সংসার করার নাম “কাছে আসা” নয়। এগুলোতে সাহসের ছিটেফোঁটাও নেই। কেবল আছে নোংরামো ও অবাধ্যতা। সত্যিকার কাছে আসা তো রবের দিকে ফিরে আসার নাম। সত্যকে আলিঙ্গন করার নাম “কাছে আসা”
★বোন আমার,জীবনকে স্পাইসি করে তোলার সব আয়োজনই বৃথা, যদি আমরা না জানি—আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী। জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেউ যদি ঠাওর করতে না পারে, তাহলে দুনিয়ায় আসাটা তার জন্য মূল্যহীন। আর মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে কেউ যদি এমনটা করে, তবে তার জীবনটা তো ষোলোয়ানাই মূল্যহীন। ওর জীবন আর নাদুসনুদুস গরুর জীবনের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ওই গরুটা Voracious Animal, আর সে Voracious Human— পার্থক্য সর্বোচ্চ এতটুকুই।
★হৃদয়ে যদি আল্লাহর জন্য সামান্য জায়গাও থাকত, তবে তো তাঁর বিরহে একটু হলেও কাঁদতে। কেঁদেছিলে কখনো? বলো তো, শেষ কবে তাঁর জন্যে চোখের জল ফেলেছিলে?
★সবচেয়ে সম্মানিত, মর্যাদাবান ও সর্বোত্তম মেয়ে কারা, তার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠে হিজাব পরিধানের মধ্য দিয়ে। হিজাবি মেয়েরা এই বার্তা দিয়ে যায় যে, তারা অন্যান্য মেয়েদের থেকে অনেক সম্ভ্রান্ত। তাদের জীবনাচার মানুষের জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয়।
★তুমি যদি আল্লাহর বিধান মানতে না চাও, অসুবিধা নেই। সাড়ে সাত শ কোটি মানুষের মধ্যে ছয় শ কোটিকে যদি ইসলাম তার তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে, তবে তোমার মতো নারী ইসলামে না থাকলে কীই বা আসে যায়!
★মহীয়সী নারীদের কেউই চাকরি-বাকরি নিয়ে পড়ে থাকেননি। তাঁরা ঘর সামলেছেন, বাচ্চা সামলেছেন। পর্দার আড়ালে থেকেই তাঁরা গড়ে তুলেছেন আবু হানিফা, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক কিংবা ইবনু তাইমিয়ার মতো মনীষীদের।
★অনবরত পাপ কাজ শেষ করে দেয় লজ্জাকে।অন্তরকে করে দেয় কলুষিত। সে অন্তর দিয়ে মন্দকে আর মন্দ বলে উপলব্ধি করা যায়না। ফলে লজ্জার কাজটাও নির্লজ্জের মতো করে ফেলে মানুষ
__________________________________
এরকম হাজার হাজার লাইন আছে,মোটিভেশন আছে, ফিরে আসার পথ বলে দেওয়া আছে বইটিতে। রয়েছে অসংখ্য কুরআন ও হাদিসের আয়াত।
এ পর্যন্ত যেক’টা লাইন তুলে ধরেছি বই থেকে তাতে অনেকে ভাববে পুরো বইটাই বুঝি প্রকাশ করে ফেলেছি লিখে। কিন্তু সত্যি বলতে আমি যতটুকু এখানে তুলে ধরেছি তা পুরো বইটার একশ ভাগের এক ভাগও না। এ বইটা মিস করলে অনেক কিছু মিস করে ফেলবেন এটুকু বলতে পারি। আমার তরফ থেকে এডভাইস হিসেবে সবার জন্য মোস্ট রিকমন্ডেড একটা বই। এ বইয়ের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে ফিরে আসার গল্প। সত্যিই সার্থক একটি নাম “তুমি ফিরবে বলে….”