নাম : আফিয়া সিদ্দিকী |গ্রে লেডি অব বাগরাম।
অনুবাদ ও সাম্পাদনা : আফিয়া মুভমেন্ট বাংলা।
সংকলন : টিম প্রজন্ম।
প্রকাশনী : প্রজন্ম।
প্রকাশকাল : মে ২০১৯ ইং।
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৬৪।
বিক্রয় মূল্য: ২২০ টাকা।
________________________________________
ড.আফিয়া সিদ্দিকী একজন উচ্চশিক্ষিত মুসলিম নারী, গবেষক,ধর্মতত্ত্ববিদ,হাফেজা ও সমাজকর্মী। জন্ম পাকিস্তানের করাচি শহরে।বাবা ব্রিটিশ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত একজন নিউরো সার্জন। ড. সিদ্দিকী পাকিস্তানে পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যান আমেরিকায়। আমেরিকার এমআইটি এবং ব্রান্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার চান্স পান। প্রফেসর নোয়াম চমস্কি আফিয়া সম্পর্কে বলেছিলেন,”আফিয়া যেখানেই যায় তার আশেপাশের পরিবেশ সে পাল্টে দেয়।বাস্তবেও আফিয়া ছিলেন এমন-ই। মানব সেবার বাহিরে তিনি কিছুই কল্পনা করতে পারতেন না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে চলা আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার এই মুসলিম নারী। বইটিতে তার অামেরিকা কর্তৃক অপহরণ, মিথ্যা মামলা,দুর্নীতিগ্রস্থ আমেরিকান বিচারব্যবস্থা সহ আরো অনেক কিছু আলোচনা করা হয়েছে।
বইটিকে ভাগ করা হয়েছে মোট ১৯ টি অধ্যায়ে। যেখানে বহুল আলোচিত আফিয়া সিদ্দিকী কে ? কী তাঁর পরিচয় ? তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। রয়েছে ড.আফিয়া সিদ্দিকী সম্পর্কে তাঁর মা এবং বোন ড.ফাওজিয়া সিদ্দিকীর সাক্ষাৎকার। আর এরপরেই শুরু মূল কাহিনী। অপহরণ, আফিয়া সিদ্দিকীর কি অপরাধ ছিল, তাঁর জীবনের বিভিন্নদিক,এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কার্সওয়াল জেলের স্মৃতি আর রয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রখ্যাত ব্যক্তিদের আলোচনা। এছাড়াও অাফিয়ার বিরুদ্ধে প্রহসন মূলক বিচারব্যবস্থা, ওবামার কাছে আফিয়া সিদ্দীকির মায়ের আবেগময় চিঠি এবং মার্কিন সরকারের প্রতি আফিয়া সিদ্দিকীর পরিবারের খোলা চিঠি।
মোদ্দাকথা বইটিতে আফিয়া সিদ্দিকীর মতো একজন নিরপরাধ মানুষের উপর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার জুলুমের চিত্র ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।
বইটি কারা পড়বেন এবং কেন পড়বেন…???
যেসব মস্তিষ্ক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকার ছোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে তাদের জন্য এই বইটি। যারা আমেরিকার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রসংসা করে থাকে তাদের জন্য এই বইটি। একজন ঘুমন্ত মুসলিমের বিবেক জাগ্রত করার জন্য এরকম একটি বই-ই যথেষ্ট।
আর বইটি এ কারণেই পড়বেন যেন নিজের ভিতরে ‘আমি মুসলিম’ চেতনাটা যেন আবার জেগে উঠে।
ব্যক্তিগত অনুভূতি : বইটি পড়ার সময় নিজেকে আর কন্ট্রোল রাখতে পারিনি। ধরে রাখতে পারেনি চোখের অশ্রু। চোখের অশ্রুতে ভিজেছে বইয়ের বেশকিছু পাতা।
ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মা একবার কারাগারে তাঁর সাথে দেখা করতে গেলে ড. সিদ্দিকী আক্ষেপ করে তার মাকে বলেন “মুসলিম বিশ্বের কোথাও কি সাহসী শাসক নেই? নেই কি কোন তারিক বিন যিয়াদ, মু’তাসিম বিল্লাহ, মুহাম্মদ বিন কাসিমের মতো সাহসী শাসক?”
আহ!!! আমার বোন আজ কারাগারে নির্যাতিত হচ্ছে আর আমরা ভোগ-বিলাসে জীবন-যাপন করছি । একবার ভেবে দেখুন না, আফিয়া সিদ্দিকীর জায়গায় যদি আপনার বোন থাকতো তাহলেও কি আপনি এরকম ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকতেন?
তাই নিজের ঘুমন্ত বিবেকটা জাগ্রত করার জন্য হলেও বইটি পড়া দরকার। অন্তত ইয়াং জেনারেশনের প্রত্যেকটি যুবকের পড়া দরকার। যাতে নিজের ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করা যায়।
বই থেকে কিছু অংশ_______________________
আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে জানতে পারলেন আফিয়াকে… আফিয়াকে… ওহ কিভাবে বলব আমি, আফিয়াকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে পাঁচ পাঁচজন পুরুষ আমার ছোট বোনটার দেহে তল্লাশি চালিয়েছে। তারপর ওরা কুরআন শরীফের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেছে। আর আফিয়াকে বলেছে এর ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে। কিভাবে ও পারবে কুরআনের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে! হ্যাঁ! কী করে সম্ভব? ওরা আফিয়াকে এভাবে হাঁটার জন্য বাধ্য করত। কাপড় পরতে দিত না। নগ্ন করে রাখত। যতক্ষণ না হাঁটবে কুরআনের পৃষ্ঠার ওপর দিয়ে, ততক্ষণ কাপড় দিবে না। আফিয়া আমাদের ভাইয়ার সাথে দেখা করতে চাইলেও ওরা এই কাজ করত। আইনজীবীর সাথে কথা বলতে চাইলেও একই ঘটনা। ওরা এসব করে করে রিপোর্ট করত আফিয়া ওদের কাজে সহযোগিতা করছে না!
ছিয়াশি বছরের কারাদণ্ড পাওয়া আফিয়ার সাথে এই ছিল তাদের ব্যবহার। তার নিজের ভাই কোর্টে উপস্থিত ছিল, কিন্তু দেখা করার অনুমতি পায়নি। তারা ওর মাথা থেকে স্কার্ফ টান দিয়ে খুলে ফেলে। এরপর একে টুকরো টুকরো করে ছেঁড়ে। তারা ওর কাছ থেকে কুরআন ছিনিয়ে নেয়। সেই কুরআন যা ওকে সান্ত্বনা দিত, সাহস যোগাত। আফিয়া আদালতকে জানিয়েছে ওর কোল থেকে নবজাতক সন্তানকে ছিনিয়ে নেওয়াকেই তার কাছে মৃত্যুসম মনে হয়েছিল। কিন্তু কুরআন কেড়ে নেওয়ার তুলনায় সন্তান হারানোর সেই অনুভূতি তার কাছে কিছুই না।
-ড. ফাওজিয়া সিদ্দিকী।