আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ : মূল গল্প – মাঝেমধ্যে যখন মন অস্থির থাকে,কারো লেখাই পড়তে ইচ্ছে করে না এরকম সময়ে হুমায়ূন আহমেদের বই খুব কাজে দেয়। এরকম সময়গুলোতে ওনার বই সবসময় মুড ঠিক করতে সাহায্য করে। তবে ‘আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ’ বইটা দীর্ঘদিন পর আবার পড়ার সময় মনে হলো, এই মুহূর্তে ঠিক এই বইটাই দরকার ছিলো। বইটা আগেও পড়েছি,তখন এত ভালো লাগেনি। কেন সেটা আজ আর মনে নেই। তবে এবার পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। প্রতিটা ছোটগল্পই অতি চমৎকার,যদি মন দিয়ে পড়েন অর্থ ধরতে পারবেন। গতবার হয়তো ঠিকমতো ধরতে পারিনি কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে গেলো এবারে এই গল্পগুলো। সাদামাটার আদলে গল্পগুলো আসলে মারাত্মক সুন্দর।
১.মিস মনোয়ারা- বডি ম্যাসাজ দিয়ে বেড়ানো বোরকাপরা রহস্যময় এক মহিলার গল্প। তিন চার পৃষ্ঠার ছোট্ট একটা গল্প। এটা পড়ে আপনার মজাও লাগতে পারে,রাগও লাগতে পারে। আবার মিশ্র অনুভূতিও হতে পারে। আমার এক বন্ধু এটা পড়ে নাকি খুব হেসেছে, কিন্তু আমার গা ঘিন ঘিন করছিলো।
২.কাকারু- মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে একজন অদ্ভুত বাবা একটা কাক কিনলেন। অস্বাভাবিক শোনালেও ঠিক অস্বাভাবিক না ব্যাপারটা। তিনি কাক কিনেছিলেন কারণ তার মেয়ের প্রথম বলা কথাটা ছিলো ”কাক”। এই কাক বোকাসোকা, লাজুক আশরাফুদ্দিন সাহেবের এক ঢিলে অনেক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
Humayun Ahmed
৩.পঙ্গু হামিদ- এটা পড়ে কষ্ট আর রাগ দুইটাই হয়েছে। হামিদ একজন রাজাকার যে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে বহাল তবিয়তে গ্রামে বসবাস করছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় করা তার পাপগুলো কিছুতেই তার পিছু ছাড়তে চাইছে না। কথায় আছে, ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়। কিন্তু আসলে হামিদের মতো ন্যাড়ারা বারবারই বেলতলায় যায়।
৪.ফোর্টি নাইন- অর্থোপেডিক্স মাসুম রহমানের কাছে হঠাৎই এক অদ্ভুত রোগী এলেন যার ধারনা তার হাইট কমছে। তিনি সাথে করে প্রমানও নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন চার্ট,আগের প্যান্ট ইত্যাদি। অবাস্তব বিষয় বলে মাসুম রহমান সেটাকে উড়িয়ে দিতে চাইলেন কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না যে পৃথিবীতে অনেক অবাস্তব বিষয়ই ঘটে। লেখকের কল্পনাপ্রবণ মনের দারুন একটা ফল। সবকিছুতে যারা লজিক খোঁজে তাদের ভালো নাও লাগতে পারে,আমার বেশ লেগেছে।
৫.সগিরন বুয়া- এই গল্পটা পড়ে চোখে পানি এসেছে। সগিরন একজন বুয়া যিনি একটা বাসাবাড়িতে বাচ্চার দেখাশোনার কাজ পান। নিজের সন্তান না থাকায় বাচ্চাটার প্রতি তার মারাত্মক মায়া পড়ে যায়। শুধু সে না,তার পঙ্গু স্বামী জয়নালেরও বাবুর প্রতিদিনের কান্ডকারখানার গল্প না শুনলে ভালো লাগে না। বেশীরভাগ গল্পেই দেখা যায় বুয়ার কাছে বাচ্চা রেখে গেলে তারা অযত্ন করে, হুমায়ূন আহমেদ একটু অন্য রকম ভাবে ব্যাপারটা দেখিয়েছেন। সব বুয়া একরকম না। কারো কারো হৃদয় থাকে মমতায় পূর্ণ।
৬.নয়া রিকশা- কিছু কিছু গল্পে হুমায়ূন আহমেদকে স্যালুট দিতে ইচ্ছে করে। এটা তেমন একটা গল্প। এত চমৎকার, বাস্তব, সাধারণ একটা আইডিয়া ভাবতে পারাটাও অসাধারণ ব্যাপার। শুধুমাত্র উনিই পারেন। এই গল্প অবলম্বনে নাটকটা দেখেছি, গল্প যে আছে সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। আরেকবার পড়লাম, মুগ্ধ হলাম।
৭.আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ- বইয়ের নাম এই গল্পটা থেকেই। খুব ছোট্ট আর মায়াবী একটা গল্প। মীরা তার ভালোবাসার মানুষটিকে আজ দুপুরে নিমন্ত্রণ করেছে তার বাসায় মাছ খাবার। মানুষটা মেসে থাকে ভালোমন্দ কিছু খেতেই পারে না। এদিকে মীরার বাসায় ছেলে বন্ধু এলাউ না,তার বাবা ভয়ঙ্কর রাগী। এদিকে শওকতের আজ জন্মদিনও, মানুষটা কতদিন ভালোমন্দ খায় না! এদিকে মীরাদের বাসায় আজ কতরকম রান্না! তা সত্ত্বেও কি নিমন্ত্রন ফিরিয়ে নিতে হবে? কম কথায় অনেক বলে ফেলেছেন হুমায়ূন আহমেদ এই গল্পে। এই গল্প অবলম্বনে সুন্দর একটা নাটকও আছে।
৮.আনোভা- গল্পকথক একজন ক্যাব ড্রাইভার যিনি দীর্ঘদিন আমেরিকাতে ইলিগ্যাল সিটিজেন হিসেবে থাকার পর গ্রীন কার্ড পেয়ে গাড়ি চালানো শুরু করেন। তার অনেক টাকার দরকার কারণ সে দেশে যাবে, বিয়ে করবে। এইজন্য সে প্রচুর পরিশ্রম করে,ব্লিজার্ডের রাতে যখন কোন ক্যাবওয়ালা বের হয় না তখন সে বের হয় কারণ বেশী টাকা পাওয়া যায়। এরকম এক রাতেই আনোভা আর তার রহস্যময় মা তার ক্যাবে ওঠে। বলা যেতে পারে,গাড়িতে ওঠার পর থেকে আনোভার এক নতুন জীবন শুরু হয়। সুপারন্যাচারাল গল্পগুলো হুমায়ূন আহমেদ দারুন লেখেন!
৯.তিনি- তার কোন নাম নেই। কারণ তিনি হঠাৎ সবকিছু ভুলে গেছেন। কাছে আছে দুইশত টাকা। তবে সবকিছু ভুলে গেলেও তার বুদ্ধি লোপ পায়নি,যুক্তি দিয়ে ভাবতে পারছেন। সামান্য টাকায় কিছু কিছু কিনছেন, পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কারণ তার বিশ্বাস কিছু একটা ভেবে বের করে ফেলবেন। মূলত একজন মানুষের হঠাৎ স্মৃতি হারাবার পরের মানসিক অবস্থা নিয়ে গল্পটা।
১০.আলাউদ্দিনের ফাঁসি- মারাত্মক একটা গল্প। ছোট একটা গল্পে যে এতকিছু এড করা যায় সেটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! লেখক চাইলে এই আইডিয়া দিয়ে বড়সড় একটা থ্রিলার লিখে ফেলতে পারতেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ অযথা গল্প বড় করার কাজটা কখনোই করেন না। আলাউদ্দিন একটা শিশু হত্যা মামলার আসামী,তার ফাঁসি হবার সম্ভাবনা প্রবল। এক কেসের জাজ নুরুল হককে মূল চরিত্রের জায়গায় রেখে চমৎকার একটা গল্প ফেঁদেছেন লেখক। এই গল্প অবলম্বনেও নাটক আছে।
Novel Review
(রিভিউ) কিংকর্তব্যবিমূঢ় : শরীফুল হাসান | Kingkortobbobimur by Shoriful Hasan
(রিভিউ) মুরতাদ লেখকঃ ইকবাল খন্দকার | Murtad by Iqbal Khondokar (short pdf)
অলসপুরে সোনার কলস pdf short আরকানুল ইসলাম | Oloshpure Sonar Kolos
আজ চিত্রার বিয়ে pdf : হুমায়ূন আহমেদ | aj chitrar biye by humayun ahmed (পিডিএফ)
আফারীত লেখক সামিয়া খান প্রিয়া | Afarit By Samia Khan Priya | বই রিভিউ
আলোর ফেরিওয়ালা : লেখক মুহাম্মদ বরকত আলী | Alor Feriwala by Mohammad Borkot Ali
১১.ভালোবাসা- সুইটি গরীব পরিবারের মেয়ে। তার স্বামী ভালো ইনকাম করে। প্রতিমাসে সাতশ টাকা পাঠায়। সুইটি আবার সাজতেগুজতে ভালোবাসে। অথচ বিয়ের পর স্বামীর ঘর করতে এসে দেখে আসবাবপত্র কিছুই নেই! স্বামীটিও বাইরে যায় খুব কম,দিনের বেলায় ঘুমায়। সুইটি বুঝে উঠতে পারে না তার স্বামী কি কাজ করে! তবে সে স্বামীকে ছেড়েও যায় না, ভালোবাসা দিয়ে তার সব কর্মকান্ডে সাপোর্ট করে চলে। এই গল্প অবলম্বনেও নাটক আছে। নাটকের শেষ কথাটা সুন্দর, “যে ভালোবাসা মানুষকে পশু হতে সাহায্য করে,সেই ভালোবাসার কি কোন মূল্য আছে?”
১২.টিকটিকি- পুলিশ জহিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যে ঘরে আটকে রেখেছে সেইঘর ভর্তি টিকটিকি। তবে জহির টিকটিকি ভয় পায় না। তার স্ত্রী ভয় পেতো,যার অপঘাতে মৃত্যুর কেসে জহিরকে সন্দেহ করা হচ্ছে কিন্তু জহির দাবি করছে আত্নহত্যা। জটিল রহস্য সমাধানের ফাঁকে ফাঁকে টিকটিকি নিয়ে স্বামী স্ত্রীর বিভিন্ন খুনসুটির গল্প। এইজন্য গল্পের নাম টিকটিকি।
১৩. ভূত- দীর্ঘদিনের চাকরি জীবনের পর অনেক অর্থ খুইয়ে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে ইসলামুদ্দিন গ্রামের বাড়িতে চলে এলেন। এই বাড়ি বাসের অযোগ্য বলে প্রথমটা তিনি ভয়ে ভয়ে ছিলেন। তারপর দেখা মিললো বক্রর। সে বাড়িঘর পরিস্কার করে রাখে,খাবার আয়োজন করে কিন্তু নিজে কিছু খায় না। নিজেকে সে ভূত দাবি করে। ইসলামুদ্দিনেরও তাতে কোন অসুবিধা দেখা যায় না,বক্রকে তিনি নিজের ছেলের মতো দেখেন। খুবই রহস্যময় এবং মায়াবী একটা গল্প।