১৭ টা কারণে তোমায় ভালবাসি – রায়হান মাসুদ | I love you for 17 reasons – Raihan Masood

  • উপন্যাস : ১৭ টা কারণে তোমায় ভালবাসি 
  • লেখা : রায়হান মাসুদ
  • প্রকাশনী : কুহক কমিক্স এন্ড পাবলিকেশন্স 
  • জনরা : রোমান্টিক ও সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
  • মডেল : বউ 

” এর আগে যেদিন আমি তোমাকে দাবা খেলায় হারালাম। এবং অবশেষে  তোমার আর আমার জয় সমান সমান হল সেই স্মৃতি আপুর ড্রেনে পরার দিন খেলা শুরুর পর থেকে। সেদিন ফেরার পথে বনানীর মধ্যেই একটা দোকানে ঢুকেছিলাম। আমি কখনোই সাজি না। কিন্তু পার্টি আর গ্যাদারিংয়ে সোশাল কোড অনুযায়ী যদি আমাকে সাজতেই হয়, আমি সবসময় একটা লিপস্টিক কিনি। আর এক প্যাকেট টিপ। সেগুলোর রঙ কি বল তো? হ্যা, কালো, আমার সারাজীবনের মত। কিন্তু সেই কালো লিপস্টিক পড়লেও কেউ কখনো উদ্ভট দৃষ্টিতে তাকায় নি আমার দিকে কখনো। মেয়েরা তাকিয়েছে ঈর্ষার দৃষ্টিতে আর পুরুষরা কামনা নিয়ে। এই ঢাকার ঘটনা এগুলো আর কি, স্কুলে পড়তে তো লজ্জা আর ভয়ে আর নিজের প্রতি ঘৃণায় কারো চোখের দিকে তাকাতাম না।
আমার টিপগুলো শেষ হয়ে গিয়েছিল। লিপস্টিকও।২০১৫ থেকে প্রতিবছর বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের আগে আমি এগুলো কিনে রাখি। সোশাল কোড মেনে চলতে। আমি সেদিন আমার পরিচিত কসমেটিকসের দোকানে যখন ঢুকছিলাম, বেশ কয়েকটা কাপলকে দেখেছিলাম সেখানে।  আমার প্রেমিক প্রেমিকা দেখতে বিরক্ত লাগে সবসময়। আমি প্রেম ভালবাসা বিশ্বাস করি না, প্রেম ভালবাসা মানেই শরীরী মোহ। ছেলেগুলো প্রভাবক, আর মেয়েগুলো বিক্রিয়ক। উৎপাদ হল এক সাগর হতাশা, দুঃখ আর বিশ্বাসঘাতকতা। 
ইদানীং আর বিরক্ত লাগছিল না কাপলদের দেখে। বিশেষ করে সেদিন। দোকানের আয়নার সামনে অনেক মেয়েরা লিপস্টিক ঠোঁটে দিতে বা অন্য কোনো প্রসাধনী মুখে মেখে দেখতে লাইনে দাঁড়িয়েছিল। এদের ভিড়ে জায়গা না পেয়ে আমি একটা কাপলকে দেখলাম একপাশে দাঁড়াতে। তখন সন্ধ্যা পেরিয়েছে। ছেলেটার বুক পকেটে একটা সানগ্লাস। মেয়েটা ছেলেটাকে বলল, সানগ্লাসটা চোখে দিতে। তারপর তার দিকে ঝুঁকতে। ছেলেটা তা-ই করল। মেয়েটা ছেলেটার চোখে থাকা সানগ্লাসটায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে দেখে একটা লাল লিপস্টিক নিজের ঠোঁটে লাগাচ্ছিল। এই ফন্দি করে দুইজনেরই হাসি আসছিল। দুইজনই হাসি চেপে রাখছিল। ছেলেটা হাসি চেপে রাখছিল চশমাটা নড়ে গেলে লিপস্টিক লেপ্টে যাবে বলে, মেয়েটা চেপে রাখছিল, ওয়েল, লিপস্টিকটা লেপ্টে যাবে বলে।
তোমাকে দাবা খেলায় হারালে ভেবেছিলাম পৈশাচিক আনন্দ পাব আমি। কিন্তু আজ পর্যন্ত পাই নি। এই মুহুর্তে তোমার চেয়ে আমার দুই জয় বেশি দাবাতে। আমি পৈশাচিক আনন্দ পাই না, আনন্দই পাই না। তবে প্রতি সোমবার আর বৃহস্পতিবারের বিকেলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। আমি সেদিনও তোমাকে হারিয়ে কোনোরকম আনন্দ পাই নি। আমার মনে একটা অনেক গভীর অন্ধকার গর্ত আছে, যে গভীরতার অন্ধকারে পুরুষজাতের প্রতি ঘৃণা আর ঘৃণা, যে ঘৃণা আমাকে তোমার কাছে বহু আগে মেনে নেওয়া হারকে শিকার করতে দেয় না।
কিন্তু ওই মুহুর্তে, ঠিক ওই মুহুর্তে আমি ওই ছেলে মেয়ে দুইটাকে দেখে আমার সারাটাজীবনকে ভুলে গিয়েছিলাম। নিজেকে একটা খুব রোমান্টিক উপন্যাসের নায়িকা মনে হচ্ছিল, যে উপন্যাসের লেখক তোমার আমার বাস্তব পরিণতি না লিখে একটা পারফেক্ট দুনিয়ার মত তোমার আমার মিল করিয়ে দেবে।
আমি তোমাকে দেখছিলাম সানগ্লাস পরা অবস্থায়। আর আমাকে ওই মেয়েটার জায়গায়। যে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব যত্নে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগাচ্ছে। তারপর ওই মেয়েটার মত আমিও লিপস্টিক লাগানো যেন শেষ করলাম। ঠোঁট মিশিয়ে চুমোর ভঙ্গি করে বললাম, “রঙটা ঠিক আছে?”
তুমি মাথা উপর নিচ করলে।  তারপর আমি যেন মেয়েটার মত বেশ কিছু রঙের টিপ বের করলাম। তারপর একটা একটা করে পরে দেখাতে লাগলাম, কোনটায় আমাকে ভাল লাগছে। তুমি সতর্ক চোখে মিলিয়ে দেখছ, কোনটায় আমাকে পারফেক্ট দেখাচ্ছে….
ছেলে মেয়ে দুটো চলে গেল লিপস্টিক আর টিপ নিয়ে। বাইরের অন্ধকারে ছেলেটা সানগ্লাস পরে নামতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে লাগল। মেয়েটা ধরে ফেলল। তারপর সানগ্লাসটা খুলে নিল। তারপর দুইজন পেট চেপে হাসল। ওদের হাসির মত এত সুন্দর ধ্বনি আমি কখনো শুনি নি। “
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?