হুমায়ূনের বানানো নাটকগুলো অনেকটা ড্রাগের মতো !

হুমায়ূনের বানানো নাটকগুলো অনেকটা ড্রাগের মতো। একবার এই ড্রাগে আসক্ত হলে, আপনি এই যুগের নাটক আর ৫ মিনিটের জন্যও সহ্য করতে পারবেন না। 
এই নাটকগুলোর লুপ আপনাকে একটা নির্দিষ্ট ফ্রেমে আটকে ফেলবে। আপনি কখনোই এই লুপ থেকে বের হতে পারবেন না। 
আপনি বাকের ভাইয়ে আটকে যাবেন, বদিতে আটকে যাবেন, নক্ষত্রের রাতে আটকে যাবেন, সংশপ্তকে আটকে যাবেন। আটকে যাবেন উড়ে যায় বকপক্ষীর তৈয়বে, আটকে যাবেন আজ রবিবারের মতি মিয়া বা বড় চাচাতে। বহুব্রীহি দেখার পর ঐ নাটকের একটা চরিত্রও আপনি মাথা থেকে বের করতে পারবেন না। 
আগেই বলেছি, হুমায়ূন এর নাটক একটা ড্রাগ। একটা দিয়ে শুরু করবেন, এরপর বহুদিন আপনার খোঁজ থাকবে না। আপনি একে একে সব ধারাবাহিক শেষ করবেন। যাবেন প্যাকেজ নাটকে। ওখানেও যমুনার জল দেখতে কালো বা এনায়েত আলীর ছাগল দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। তারা তিনজন দেখতে দেখতে খাট থেকে পড়ে যাবেন। 
শাওন, রিয়াজ, ফারুক, ডাক্তার এজাজ, চ্যালেঞ্জার, মনিরা মিঠু বা স্বাধীন খসরু। এই মুখগুলো হয়ে যাবে আপনার স্বজন। ফারুকের জন্য আপনার মায়া লাগবে, ডা. এজাজের জন্য লাগবে। শাওনের জন্যও লাগবে। এক সময় আপনার নাটক দেখা শেষ হবে, কিন্তু আপনি অবাক হয়ে দেখবেন, এই মানুষগুলোকে আপনি আর কখনও অপছন্দ করতে পারবেন না। ফারুক হোসেনকে দেখলেই আপনার মতির কথা মনে পড়বে, তৈয়বের কথা মনে পড়বে। 
একসময় হুমায়ূনের সমস্ত নাটক দেখা আপনার শেষ হয়ে যাবে। আতিপাতি করে খুঁজেও আপনি ইউটিউবে হুমায়ূনের আর একটা নাটকও খুঁজে পাবেন না। আপনার একটু দুঃখ দুঃখ লাগবে। আপনি এরপর নতুন নাটকগুলো দেখা শুরু করবেন। 
এবং, এরপরেই, শুরু হবে আসল খেলা। 
হুমায়ূনের নাটক দেখার আগে আপনি যে নাটক দেখে হো হো করে হাসতেন, হুমায়ূনের নাটক দেখে ফেলার পর ঐ নাটকগুলো দেখে আপনি আর হাসতে পারবেন না। একটা, দুইটা, তিনটা। আপনি পাগলের মতো নাটক খুঁজতে থাকবেন। আপনি পাবেন না। একটাও পাবেন না। 
কারণ, ততদিনে হুমায়ূন আপনার হিউমারের লেভেল চেঞ্জ করে দিয়েছে, বদলে দিয়েছে আপনার মস্তিষ্কের মানচিত্র। 
আপনি মনের অজান্তেই মতি মিয়া খুঁজবেন, বৈদেশি খুঁজবেন, কৈতরি খুঁজবেন। কিন্তু মতি মিয়ার স্রষ্টা ভীষণ স্বার্থপর। সেই জাদুকর আপনাকে আসক্ত করে দিয়ে চলে গেসে। তৈরি করে গিয়েছে ভয়ঙ্কর একটা নেশার জগত।  মার্কেট মনোপলি। আপনি একজন উন্মাদ ভোক্তা, অথচ মার্কেটে যোগান নাই। আপনি কিছুদিন রাগে গজগজ করবেন। তারপর আবার ফিরে যাবেন। বাকের ভাইয়ের কাছে। বদির কাছে। তিতলির কাছে। কঙ্কার কাছে। 
এই লুপ থেকে আপনি আর কখনোই বের হতে পারবেন না। মন খারাপের প্রহরে কখন যে সংশপ্তক দেখতে শুরু করেছেন, আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না। বিরক্তিকর কোন দুপুর কখন যে হাসতে হাসতে মহান চৈনিক চিকিৎসক ওয়াং পির সাথে পার করে দিয়েছেন, আপনি জানতেও পারবেন না। 
হুমায়ূনের নাটক সেই মায়াবতী প্রেমিকার মতো, যার সাথে হাজারটা বিকেল কাটালেও মনে হয়, বড় কম সময় কাটানো হলো। যাদের বারবার ভালোবাসলেও মনে হয়, বড় কম ভালো বাসা হয়ে গেল যে!! 
হুমায়ূনের নাটকের জগত একটা কারাগার। শঙ্খনীল কারাগার। যে কারাগারে বন্দি হলে মানুষ আর বের হতে পারে না। বের হতে চায়ও না। কিসের যেন অদ্ভুত এক মায়া, অদ্ভুত এক মুগ্ধতা এই কারাগারের মানুষজনকে মায়ায় বন্দি করে রাখে। যে মায়ার টানে বাইরের জগতটা অসহ্য মনে হয়। 
২০১৫ থেকেই আমি এই শঙ্খনীল কারাগারের আরো একজন বন্দি। যদিও ঢোকার সময় জানতাম না, এই নন্দিত নরকে ঢোকার দরজা আছে কিন্তু বের হওয়ার কোনো রাস্তা নাই। 
©️ Sadiqur Rahman Khan
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?