* বইয়ের নাম : হরপ্পার জাদুমূর্তি;
* লেখক : কৃষ্ণেন্দু দাস;
* প্রকাশক : বইচই পাবলিকেশন;
* হার্ডকভার, ২০০ পৃষ্ঠা, ₹ ২৪৪/-
সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা নিয়ে গত কয়েক দশকে বহু কাজ হওয়া সত্বেও তাকে নিয়ে আমাদের জানার পরিমাণ অজানা-র তুলনায় বড়োই কম। একটা প্রাথমিক প্রশ্নই ধরুন। যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে ওই সভ্যতার মোটামুটি প্রধান ধর্মবিশ্বাস কী ছিল, আপনি কী উত্তর দেবেন?
একশো জনের মধ্যে নব্বই জনই উত্তর দেবেন~ ওই সভ্যতায় মাতৃকা-উপাসনাই ছিল প্রধান। এই উত্তরের পেছনে কারণ হয়ে থেকে যাবে হুইলার ও মার্শালের অতি প্রাচীন ভাবনা। কিন্তু আদতে উত্তরটা কি এতই সহজ?
হরপ্পা ও মোহেঞ্জোদারো থেকেই মূলত পাওয়া মূর্তিগুলো কি সত্যিই মাতৃকা উপাসনার চিহ্ন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন গবেষক আলোচ্য বইটিতে।
দুর্গা বসু’র একটি মূল্যবান ‘মুখবন্ধ’ এবং লেখকের তরফে আলোচ্য কাজের পটভূমি স্পষ্ট করে লেখা ‘ভূমিকা’ দিয়ে শুরু হয়েছে বই। তারপর আমরা একে-একে পেয়েছি এইক’টি অধ্যায়~
১. হরপ্পা সংস্কৃতির পোড়ামাটির মানব-মূর্তি: নির্মাণের প্রাগিতিহাস;
২. কারা তৈরি করতেন এই পোড়ামাটির নারীমূর্তি;
৩. কোথা থেকে পাওয়া গেল মূর্তিগুলো;
৪. অলংকার, অলংকরণ ও অঙ্গসজ্জা;
৫. হরপ্পা সংস্কৃতির পোড়ামাটির নারীমূর্তি: মাতৃকা দেবী পরিচয়— তত্ত্ব ও কিছু তথ্য;
৬. হরপ্পা সংস্কৃতির পোড়ামাটির নারীমূর্তি: অনুমান, বিশ্লেষণ ও কিছু প্রস্তাব;
৭. হরপ্পা সভ্যতা ও তার ধর্মবিশ্বাস।
শেষে রয়েছে সহায়ক গ্রন্থ ও তথ্যসূত্র।
প্রচুর ফটো এবং প্রত্নতাত্ত্বিক রেফারেন্সের সাহায্যে লেখক দু’টি জিনিস দাবি করেছেন~
প্রথমত, গোটা সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা জুড়ে, সব স্তরে আদৌ মাতৃকা-উপাসনা হত না। বরং এই মূর্তিগুলো নিভৃত ও ব্যক্তিগত বিশ্বাস তথা আচারের সঙ্গেই জড়িত ছিল। সামাজিক বা সার্বজনীন অর্থে অগ্নির ব্যবহার-সহ যজ্ঞের নিদর্শনই ক্রমে স্পষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ত, সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতারও আগে মেহরগড়ে যে মূর্তি নির্মাণের কৌশল দেখা গিয়েছিল, পরবর্তীকালে তাতেও এসেছিল নানা পরিবর্তন— যা উন্নততর প্রযুক্তি বা উপকরণের বদলে মানসিকতার তথা জনবিন্যাসে পরিবর্তনের ইঙ্গিতই দেয়।
অন্য কোনো গবেষক হলে এই প্রামাণ্য তথ্যটুকুর সাহায্যে গল্প ফেঁদে বসতেন। কিন্তু আলোচ্য বইয়ে লেখক তা করেননি। বরং তিনি আমাদেরই বলেছেন ভেবে বের করতে, ঠিক কেন এই সভ্যতার কেন্দ্রগুলোতে প্রতিটি মূর্তি ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে!
এ কি সমাজের স্তরবিন্যাস শিলীভূত হওয়া তথা পিতৃতন্ত্রের বাহক হিসেবে কোনো নতুন দেবতার উত্থানের চিহ্ন?
নাকি মাতৃকা-উপাসকেরা ততদিনে রওনা হয়েছিলেন পশ্চিমে ইশতারের পূর্বসূরি হয়ে?
নাকি সিঁদুর-ব্যবহারের রেওয়াজ এবং কিছু ক্ষেত্রে পক্ষীমাতৃকার সাধনার স্মৃতি বয়ে সেই উপাসকেরা চলে এসেছিলেন একেবারে পুবদিকে?
এই নিয়ে কোনো তত্ত্ব দেননি লেখক। বরং তথ্যের পরিবেশন করেই তিনি বিদায় নিয়েছেন।
যদি ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে এই ছোট্ট কিন্তু তথ্যনিষ্ঠ বইটি পড়তে ভুলবেন না।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?