স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট : লেখক কিয়েগো হিগাশিনো | Salvation Of A Saint

  • ব‌ই : স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট
  • লেখক : কিয়েগো হিগাশিনো
  • অনুবাদক : সালমান হক।

আমি প্রচন্ড থ্রিলারপ্রেমী। প্রচুর থ্রিলার পড়ি কিন্তু থ্রিলারের রিভিউ দিতে পারিনা। ভয় হয় যে রিভিউ দিতে গিয়ে মনের ভুলে কোথাও স্পয়লার না দিয়ে ফেলি। সাধারণত থ্রিলার গল্পের রিভিউগুলো, “ওমুক কি পারবে সমাধান করতে?” টাইপ হয়। 

সালমান হকের তিনটা থ্রিলার পরপর শেষ করলাম। দি পোয়েট,দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স আর স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট। তিনটাই দারুন তার ভেতর এটা যেন একটু বেশী মাত্রায় দারুন। লেখক কথাতে তিনি যদিও প্রথমেই বলে দিয়েছেন যে, “জাপানি থ্রিলার ধীরে পড়তে হয়” কিন্তু সামনে পরীক্ষা এইজন্য ভেবেছিলাম যত দ্রুত সম্ভব শেষ করবো। বাস্তবিক সেটা পারিনাই। নিজের অজান্তেই ধীরে পড়া শুরু করে দিয়েছি কারণ এটা এমন একটা ব‌ই যা বেশী দ্রুত পড়লে অনেক কিছুই দৃষ্টিগোচর হবে না। 
একসপ্তাহ লাগলো আমার এই ব‌ইটা শেষ করতে কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি এই ব‌ইয়ের সাথে একটা সপ্তাহ অসাধারণ সময় কাটালাম। আর সেজন্য আমি ব‌ইটার একটা পূর্ণ রিভিউ দিতে চাই কারণ যারা এই ব‌ইটা পড়েননি রিভিউটা পড়ে হয়তো বুঝবেন যে কত জোশ একটা ব‌ই মিস করে বসে আছেন।
রিভিউ: স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হবার পরপরই খুন হন ইয়াশিতাকা মাশিবা। খুন নাকি আত্মহত্যা? বিভ্রান্ত হয়ে যান ডিটেক্টিভগন। কেননা খুনের সময় কেউ উপস্থিত ছিল না তার বাড়িতে। বিষাক্ত আর্সেনাস এসিডযুক্ত কফি খেতে খেতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। প্রাথমিকভাবে সেটাকে আত্মহত্যা বলে মনে হলেও পরবর্তীতে ডিটেক্টিভগন খুন হিসেবেই ধরে নেন সেটাকে। কেননা কেউ যদি আত্মহত্যা করতে চায় সে ঘুমের ওষুধ বা এই জাতীয় কিছু ব্যবহার করবে। আর্সেনাস এসিড নয়। 
তার সম্পর্কে খোঁজখবর করতে গিয়ে অনেক জটিল কিছু ব্যাপার সামনে আসে। যেমন, পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন তিনি, এবং স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চাইছিলেন কেননা সন্তান দরকার তার। স্ত্রীর সাথে একবছরের চুক্তি ছিল যে এরমধ্যে যদি সন্তান না দিতে পারে সে তাকে, তাহলে ডিভোর্স দিতে হবে। 
জুনিয়র ডিটেক্টিভ উতসুমির ধারনা খুনটা করেছে ভিক্টিমের স্ত্রী আয়ানে মাশিবা। কেননা শক্ত মোটিভ ছিল তার। স্বামী পরকিয়ায় লিপ্ত, ডিভোর্স চায়। সে ছাড়া আর কে করবে? 
কিন্তু সিনিয়র ডিটেক্টিভ কুসানাগির ধারণা এটা অসম্ভব। কেননা খুনের সময় কয়েক হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছিলো সে‌। তার বাপের বাড়িতে। সেটা এতদূরে থেকে চাইলেও সেখান থেকে ফিরে এসে খুন করে যাওয়া আদৌ সম্ভব না। তাছাড়া শক্ত অ্যালিবাই‌ও আছে তার। বাপের বাড়িতে ঐদিন তিনি কোথায় কোথায় ছিলেন কি করছিলেন সব প্রমান মিলেছে,তাকে সন্দেহ করার যুক্তি কোথায়? কুসানাগি বরং উঠে পড়ে লাগলো ভিক্টিমের প্রেমিকা হিরোমি ওয়াকাইমার পেছনে। কেননা মৃত্যুর দিন সকালেও ভিক্টিমের সাথে কফি খেয়েছে সে, এছাড়াও স্ত্রী বাড়িতে নেই সে সুযোগে আগের রাতটাও একসাথে কাটিয়েছে তারা।
এ অবস্থায় উতসুমি শরনাপন্ন হয় ডিটেক্টিভ গ্যালিলির‌। যার বুদ্ধিদীপ্ত রহস্য সমাধান আমরা সাসপেক্ট এক্স ব‌ইয়ে আগেও পড়েছি এবং মুগ্ধ হয়েছি। উতসুমি কুসানাগিকে না জানিয়েই তার বন্ধু গ্যালিলিওর কাছে সব খুলে বলে এবং এটাও বলে,কুসানাগি আয়ানে মাশিবার প্রেমে পড়েছে। এই অবস্থায় আয়ানে মাশিবাকে কোনমতেই সন্দেহ করতে রাজি হবে না সে। 
ঘটনার সত্যতা আছে। আয়ানে মাশিবার প্রতি প্রথম দর্শনেই কুসানাগি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে আর বারবার মনেপ্রাণে প্রার্থনা করতে থাকে যে আয়ানে যেন কোনোভাবেই দোষী সাব্যস্ত না হয়,তাতে করে সবচেয়ে বেশী কষ্ট কুসানাগিই পাবে। 
মাঠে নামেন ডিটেক্টিভ গ্যালিলিও। আগের রাতে এবং পরদিন সকালে একসাথে কফি খেয়েছে ভিক্টিম আর তার প্রেমিকা কিন্তু তাদের কিছুই হয়নি কিন্তু তার পরপর‌ই ভিক্টিম একা কফি বানিয়ে খেয়েছে,সেই কফিতে বিষ কে মেশালো?
ট্যাপের পানি,বোতলের পানি,ফিল্টারের পানি,কেতলি সবকিছুই ফরেনসিকে পরীক্ষা করতে পাঠায় গ্যালিলিও কিন্তু কিছুই পাওয়া যায় না। দীর্ঘ বিরতির পর একটা সম্ভাব্য সমাধান বের করেন ডিটেক্টিভ গ্যালিলিও যেটা পদার্থবিজ্ঞানে সম্ভব হলেও কাগজে কলমে অসম্ভব। সেই সাথে জুনিয়র ডিটেক্টিভ উতসুমিকে তিনি এটাও বলেন, বাদ দাও! এটা অসম্ভব! 
কিন্তু উতসুমি হাল ছাড়তে চায় না। বলে যে এই পদার্থবিজ্ঞানের সমাধান নিয়েই আমি এগোতে চাই আপনি বলুন কি করতে হবে। 
একদিকে কুসানাগি যে কোনভাবেই আয়ানে মাশিবাকে খুনী মানতে রাজি নন অন্যদিকে উতসুমি যে গোয়ারের মতো কোনো প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও আয়ানে মাশিবাকেই আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে এমন অবস্থায় পদার্থবিজ্ঞানের সম্ভাব্য সেই সমাধান দিয়ে প্রায় ডুবে যাওয়া পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে টেনে তোলেন ডিটেক্টিভ গ্যালিলিও। তার চিন্তা করার ক্ষমতা আর বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান দেখে পাঠকসমাজের চোখ বড় বড় হয়ে যাবে আরেকবার। 
রেটিং দিয়ে এই ব‌ইকে ছোট করবো না। ৫/৫ বললেও কম বলা হবে। যারা থ্রিলার পছন্দ করেন কিন্তু কি ব‌ই কিনবো ভেবে দ্বিধায় ভুগছেন তাদের বলবো চোখ বন্ধ করে এই ব‌ইটি লিস্ট করে রাখুন। এটি এমন একটি ব‌ই যা শেষ করবার পর মনে হবে,কেন শেষ হলো?
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?