স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট” -ঃ কিয়েগো হিগাশিনো // সালমান হক
প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩০৪
মুদ্রিত মূল্য – ৩৫০
“Good books don’t give up all their secrets at once.” – Stephen King.
“স্যালভেশন” অর্থাৎ পরিত্রাণ, নিস্তার, মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করা। কে, কীভাবে, কী থেকে মুক্তি লাভ করলো সেটা নিয়েই আলোচ্য কাহিনী। বইটি শেষ করার পর এটির টাইটেল নিয়ে ভাবলে হয়তো আরও কিছু গোপন রহস্য উন্মোচিত হতে পারে। এই নামকরণ একেবারেই পারফেক্ট ও সার্থক হয়েছে।
“স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট” বইটি অরিজিনাল জাপানিজ ডিটেকটিভ গ্যালিলিও (মানাবু ইউকাওয়া) সিরিজের পঞ্চম বই, যদিও বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ হিসাবে এটি দ্বিতীয়। এর আগে বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে “The Devotion of Suspect X” বইটি। একটি সিরিজের বই হলেও এটি স্ট্যান্ডএলোন হিসাবে পড়া যাবে।
থার্ড পার্সনে বর্ণিত “স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট” একটি unputdownable মার্ডার মিস্ট্রি যেখানে কে খুন করেছে সেটা পাঠকের কাছে পরিষ্কার কিন্তু কীভাবে খুন করেছে সেটা জানতে বইয়ের গোয়েন্দাদের সাথে সাথে পাঠকও নাজেহাল হয়ে পড়বে। গোটা কাহিনী জুড়েই একের পর নতুন বিষয়ের আবির্ভাব হতে থাকে এবং পূর্ববর্তী ধারণা পাল্টাতে বাধ্য হতে হয়। সাধারণ একটা গল্প কিন্তু মারাত্মক।
গল্পটি এমনঃ
ইয়োশিতাকা মাশিবা ও আয়ানে মিতা – এই দম্পতি গত এক বছর ধরে বিবাহিত কিন্তু এখনো কোন সন্তান হয়নি। ইয়োশিতাকা একজন বেশ ধনী ব্যক্তি ও সফল বিজনেসম্যান। একটি উইকএন্ডে আয়ানে তার বাপের বাড়িতে বেড়াতে গেলে কফি পানরত অবস্থায় ইয়োশিতাকা-এর লাশ উদ্ধার হয়। তদন্তে নামেন ডিটেকটিভ কুসানাগি ও উতসুমি। কিন্তু কীভাবে খুনটা করা হল সেটা বুঝতে গিয়ে তাদের নাজেহাল অবস্থা। একেবারেই পারফেক্ট ক্রাইম যাকে বলে; গোয়েন্দাদের সাথেসাথে পাঠক নিজেও ভাবতে শুরু করবেন যে ক্লু কোথায় রয়ে গেলো রে বাবা!
যার ফলে সাহায্য নিতে হলো গ্যালিলিও ওরফে প্রফেসর ইউকাওয়া-এর। তারপর যেভাবে খুন করার পদ্ধতি জানা গেলো সেটা কল্পনার অতীত।
গল্পের একেবারে শুরুতেই লেখক কে, কেন ও কী দ্বারা খুন করেছে সেটা বলে দিয়ে বিরাট বড় একটা ঝুঁকি নিয়েছেন। সবকিছু আগে থেকেই জেনে যাবার কারণে পাঠকের কাছে গল্পটা একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবার একটা চান্স ছিল। কিন্তু স্টোরিটেলিং, ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট ও বিশ্লেষণ ক্ষমতার গুণে উপন্যাসটি সফল হয়ে গেছে।
লেখকের বিশ্লেষণ ক্ষমতার একটা বড় উদাহরণ হল এক কাপ নিরীহ কফি যে নিজেই একটা “চরিত্র” হয়ে উঠতে পারে সেটা এই বই না পড়লে জানা যেত না।
যা ভালো লেগেছেঃ
১। দেশীয় ও ওয়েস্টার্ন থ্রিলার সাধারণত পড়া হয়ে থাকে, এই বইটির মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কালচার, তাদের জীবনযাপন ও দৈনন্দিন জীবনকে জানার একটা ভালো সুযোগ হলো।
২। লেখনী স্টাইল বেশ ভালো লেগেছে। বেশ সাধারণ একটি গল্পকে দারুণভাবে টেনে নিয়ে গেছেন এবং পাঠককে একটুও বোর হবার সুযোগ দেননি।
৩। দুটি জেন্ডার-এর চরিত্রদের সমানভাবে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তাদের শক্তির জায়গাগুলোকে দারুণভাবে তুলে ধরেছেন।
৪। স্টোরিটেলিং – পাঠক শুরুতেই জেনে গেছেন যে কী হতে চলেছে কিন্তু শেষ অবধি সমান গতিতে গল্প বলে গেছেন দারুণভাবে।
৫। সবচেয়ে যেটা ভালো লেগেছে – এমন একটি পারফেক্ট ক্রাইম বর্ণনা করা হয়েছে যার অপরাধীকে ধরতে গেলে তার মনস্তত্ত্ব বুঝতে হবে এবং ভীষণ সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
অনুবাদঃ
জাপানিজ থ্রিলারের অনুবাদ যখন পড়তেই হবে তখন বাংলাতে পড়াই ভালো। সালমান হক দ্বারা বইটির অনুবাদ যথেষ্ট ভালো বলে মনে হয়েছে। পড়তে গিয়ে কোথাও আটকায়নি বা মনে হয়নি যে অনুবাদ পড়ছি। Salvation of a Saint PDF
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?