স্পেনের কান্না PDF মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানীর বই | Spener Kanna Boi

Title স্পেনের কান্না PDF / পিডিএফ ডাউনলোড
Author (شيخ الاسلام مفتي محمد تقي عثماني) শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী
Publisher মাকতাবাতুল হাসান
Quality Paperback
ISBN 9789848012208
Edition Edition, 2019
Number of Pages 159
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

“স্পেনের কান্না” এটি কোন বইয়ের নাম হতে পারে? আপনি যখন বইটি পড়া শুরু করবেন তখন মনের অজান্তেই আপনার অশ্রু ধারা প্রবাহিত হবে তখন হয়তো বুঝতে পারবেন বইয়ের নাম কি কতোটা যৌক্তিক ছিল।

বইটি পড়ার সময় আপনি নিজের অজান্তেই নিজেকে আবিষ্কার করবেন সেই সোনালী যুগের আন্দালুসে( স্পেন) । যেখানে হয়তোবা আপনি দেখবেন আল্লামা কুরতবি (রহ:) এর কুরআন এর দারস। কিন্তু হঠাৎ আপনি নিজেকে আবিষ্কার করবেন এগুলোতো নিছক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। আপনি হয়তো বা শুনতে পারবেন কর্ডোভা জামে মসজিদের সেই সুললিত আজান কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করবেন কল্পনায় কিন্তু বাস্তবতা হলো সুদীর্ঘ 700 বছর ধরে এই মসজিদের দেওয়ালগুলো তাওহীদের ধ্বনিতে কম্পিত হয় না যা বর্তমানে খ্রিষ্টানদের একটি চার্চে রূপান্তরিত করা হয়েছে ।পাশাপাশি আপনি দেখতে পারবেন আত্ম অহংকার, দলাদলির ফলে বিভক্তময় এক আন্দালুস( স্পেন)। যেখানে এক দ্বীনি ভাই অপর দ্বীনি ভাইকে আক্রমণের জন্য সাহায্য নিচ্ছে খ্রিষ্টান বাহিনীর। এই বাতুলতার কারনে আন্দালুসের সোনালী যুগের আলো একসময় নিভে যায় এবং আন্দালুস এর স্থান হয় ইতিহাসে।

পরিশেষে: যারা কিনা ইসলামের সোনালী যুগের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা এই বইটি পড়তে পারেন কারণ ইসলামের সোনালী যুগের একটি বড় অংশ স্পেন কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।

স্পেনের কান্না PDF

১৯৮৯-এর নভেম্বরে জেদ্দাস্থ ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক ও ইসলামি ফিকাহ একাডেমির যৌথ উদ্যোগে মরক্কোর রাজধানী রাবাতে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল “শরিয়তের দৃষ্টিতে প্রচলিত অর্থ ব্যবস্থা।” উক্ত আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে আমিও আমন্ত্রিত হয়েছিলাম।
করাচি হতে রাবাত পর্যন্ত সরাসরি কোনো বিমান ফ্লাইট না থাকায় প্যারিস হয়ে রাবাত পৌঁছতে হয়। তাই পূর্ব-পরিকল্পনা মোতাবেক ১৪১০ হিজরির ১৯ রবিউস সানির এক কাকডাকা ভোরে পি. আই এর প্যারিসগামী বিমানে করাচি ত্যাগ করি। প্যারিস যাওয়ার পথে বিমান কিছুক্ষণের জন্য কায়রোতে অবস্থান করে। অবশেষে টানা এগারো ঘণ্টা বিমানে বসে থাকার
মরক্কো : আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর পশ্চিম কোণে ও জিব্রালটার প্রণালির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত মুসলিম রাষ্ট্র। আয়তন: ৭,১০,৮৫০ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ২ কোটি ১৫ লক্ষ। রাজধানী রাবাত।
মরক্কোতে ইসলামের আগমন ঘটে ৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দে আরব বিজেতা উকবা বিন নাফে’র মাধ্যমে। মরক্কোর অনেক বার্বার উকবা বিন নাফে’-র হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। নবম শতাব্দী থেকে ইদ্রিসি, মুরাবিতীন, মুওয়াহহিদীন, মুরাইনিয়ীন প্রভৃতি রাজবংশ মরক্কো শাসন করেন। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্স তা দখল করে নেয়। ১৯৫৫ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।
প্যারিস: সীন নদীর তীরে অবস্থিত ফ্রান্সের রাজধানী। লোকসংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ।
কায়রো : নীল নদের তীরে অবস্থিত মিশরের রাজধানী। কায়রো, আরব বিশ্ব ও আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে বড় শহর ৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে জনৈক ফাতেমি সেনানায়ক কায়রো শহর আবাদ করেন। এর পর ফাতেমিগণ বিভিন্ন সুদৃশ্য ভবন, মসজিদ, দুর্গ, বিশ্ববিদ্যালয় ও দর্শনীয় স্থান দিয়ে কায়রোকে সুন্দর নগরীতে পরিণত করেন।
বর্তমানে কায়রো শিক্ষা, সংস্কৃতি ও কারিগরী বিদ্যার কেন্দ্রভূমি। বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় জামেয়া আযহার এ কায়রো নগরীতেই অবস্থিত। কায়রোর সাথে রয়েছে রেল, নৌ ও বিমান যোগাযোগ। নীল নদের তীরে অবস্থিত মিশরের রাজধানী। কায়রো, আরব বিশ্ব ও আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে বড় শহর ৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে জনৈক ফাতেমি সেনানায়ক কায়রো শহর আবাদ করেন। এরপর ফাতেমিগণ বিভিন্ন সুদৃশ্য পর স্থানীয় সময় ৩টায় প্যারিসের ওরলি (Orly) বিমানবন্দরে অবতরণ করি। বিমানবন্দরে প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এয়ার ফ্রান্সের দ্বিতীয় ফ্লাইট পেয়ে যাই। প্যারিস টু মরক্কো ফ্লাইট। যথারীতি আসন গ্রহণ করার পর তিন ঘণ্টার মধ্যেই মরক্কোর স্থানীয় সময় রাত সাড়ে নয়টায় রাবাত পৌঁছি।
আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল হায়াত রেজেন্সি হোটেলে। আলোচনা সভাও এ হোটেলের এক হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আলোচনা সভার লাগাতার অধিবেশন ও অধিবেশন-পূর্ব খসড়া প্রণয়ন মিটিং এর কাজে প্রায় পাঁচ দিন ব্যস্ত ছিলাম। ফাঁকে ফাঁকে কয়েকবার রাবাত নগরীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখারও সুযোগ ঘটে। কিন্তু বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি ও ভেতরে ঘনঘন অধিবেশনের কারণে অধিকাংশ সময় হোটেলেই থাকতে হয়। স্পেনের
=ভবন, মসজিদ, দুর্গ, বিশ্ববিদ্যালয় ও দর্শনীয় স্থান দিয়ে কায়রোকে সুন্দর নগরীতে পরিণত করেন।
বর্তমানে কায়রো শিক্ষা, সংস্কৃতি ও কারিগরী বিদ্যার কেন্দ্রভূমি। বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি
বিশ্ববিদ্যালয় জামেয়া আযহার এ কায়রো নগরীতেই অবস্থিত। কায়রোর সাথে রয়েছে
রেল, নৌ ও বিমান যোগাযোগের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।
8 স্পেন/আন্দালুসিয়া : আইবেরীয়ান উপদ্বীপ অর্থাৎ আধুনিক স্পেন ও পর্তুগাল মুসলিম জাহানে (মধ্যযুগের অবসান কাল পর্যন্ত) আন্দালুস / উন্দুলুস নামে পরিচিতি ছিল। ৯৮ হিজরি মোতাবেক ৭১৬ খ্রিষ্টাব্দের একটি দ্বিভাষিক (ল্যাটিন ও আরবি) দিনারে “আল আন্দালুস” নামটি অঙ্কিত দেখা যায়। তাতে “আল আন্দালুস” নামটির ল্যাটিন রূপ Spania ব্যবহৃত হয়েছে।
আরব লেখকগণ যখনই আল আন্দালুস শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তখন তাঁরা মুসলিম স্পেনকে বুঝিয়েছেন। সে স্পেনের আয়তন যতটুকুই থাকুক না কেন। মধ্যযুগের আবসান অব্যবহিত পরে এর ব্যবহার অনেক হ্রাস পেয়ে ইসবানিয়া, হিসবানিয়া ইত্যাদি ব্যবহৃত হতে থাকে।
তবে বর্তমান কালেও উপকূলবর্তী ভূখণ্ডের ভৌগোলিক এলাকা (পূর্ব হতে পশ্চিমে) ও আলমেরিয়া হতে ওলিভা (Hueliva) পর্যন্ত ভূখণ্ড চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে আন্দালুস নাম প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে।
প্রাকৃতিক অবস্থান : ইউরোপের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত আইবেরীয় উপদ্বীপ অনেকটা পঞ্চভূজ আকৃতিবিশিষ্ট এক শৈলান্তরীপ (Pro montory) গঠন করেছে। এটা পিরেনিজ পর্বতমালা দ্বারা ইউরোপ মহাদেশের সাথে সংযুক্ত এবং অবশিষ্ট অঞ্চল সবচেয়ে নিকটবর্তী মুসলিম রাষ্ট্র হলো মরক্কো। স্পেনের সাথে যেহেতু জড়িয়ে আছে মুসলমানদের আট শ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, তাই বাল্যকাল থেকেই মনের গহীনে এ ভূখণ্ডটি দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা লালন করে আসছিলাম। মরক্কো এসে সে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা যেন অদৃশ্য জীয়ন-কাঠির স্পর্শে জেগে উঠল। তাই মনে মনে মরক্কো থেকে স্পেন যাওয়ার প্ল্যান প্রোগ্রাম তৈরি করতে লাগলাম। কিন্তু হাতে সময় ছিল একেবারে কম। তদুপরি দরকার একজন ভালো সফর-সঙ্গীর।
আল্লাহর কী রহমত! ভাগ্যক্রমে আলোচনা সভা নির্দিষ্ট তারিখের দু’দিন আগেই শেষ হয়ে যায়। সাথে সাথে হয়ে যায় সফর সঙ্গীরও ব্যবস্থা। আমার প্রিয় বন্ধু ফয়সাল ইসলামি ব্যাংক বাহরাইন শাখার এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জেনারেল সাঈদ আহমদ সাহেব এ সফরে শুধু আমার সফর সঙ্গী-ই হননি উপরন্তু সফরের যাবতীয় ঝায়ঝামেলা স্বেচ্ছায় নিজ কাঁধে চাপিয়ে নিয়েছিলেন। আর এমন সুন্দরভাবে তা আঞ্জাম দিয়েছিলেন যে, আমাকে কিছুই করতে হয়নি।
প্রথমে ভেবেছিলাম রাবাত থেকে রেলযোগে টাংগের গিয়ে পরে টাংগের থেকে স্টিমারে ভূমধ্য সাগর অতিক্রম করে স্পেনের উপকূলীয় নৌবন্দর আলজাযিরাতুল খাদরা গিয়ে উঠব। কিন্তু এ পথে সময় লেগে যায় প্রায় একদিন। অথচ আমাদের হাতে সময় একেবারে কম। তাই স্পেনের
=আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্য সাগর দ্বারা বিধৌত। এর আয়তন প্রায় ২,২৯,০০০ বর্গ মাইল। পর্তুগাল বাদে আধুনিক স্পেনের আয়তন ১,৯৫,০০০ বর্গমাইল।
বক্ষ্যমাণ পুস্তিকায় আন্দালুস এর অনুবাদ স্পেন করা হয়েছে। কেননা আমাদের দেশে আন্দালুস শব্দটি তেমন পরিচিত নয়।
• বাহরাইন : সৌদি আরবের পূর্বে অবস্থিত স্বাধীন আরব রাষ্ট্র। এটি পারস্য উপসাগরের উপর ছোট বড় ৩৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। আয়তন ৫৯৮ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ৪,২৫,০০০। রাজধানী মানামা। মুদ্রা দিনার।
* টাংগের : জিব্রাল্টার প্রণালির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত মরক্কোর প্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক বন্দর ও শহর জনসংখ্যা ৩,২৫,০০০। এটি একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র।
9 আলজাযিরাতুল খাদরা : স্পেনের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় শহর। স্পেন বিজয় পর্বে
এ শহরটিই সর্ব প্রথম মুসলমানদের অধিকারে আসে। এর বর্তমান নাম আলজেসিস। উপকূলীয় শহর মালাগা” পর্যন্ত বিমানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। ২৩ রবিউস সানির সন্ধ্যায় আলোচনা সভা শেষ হওয়ার পর ২৪ রবিউস সানির সকাল সাতটায় কারযোগে কাসাব্লাংকার দিকে রওনা হলাম। রাবাত থেকে কাসাব্লাংকা সড়ক পথে দু’ঘণ্টার পথ। স্টার্ট নিয়ে গাড়ি দ্রুত বেগে চলতে লাগল। ডানে ভূমধ্য সাগরের উপকূল, দিগন্তে আকাশ আর সমুদ্র মিশে যেন একাকার হয়ে আছে। বামে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া সবুজ শ্যামল বন-বনানী ও চিরহরিৎ বৃক্ষের ছড়াছড়ি। সবুজ বনানীর ফাঁকে মাঝে মাঝে ফুটে ওঠেছে ছোট ছোট লোকালয়, যেন পত্ৰবেষ্টিত পুষ্প। এসব পেরিয়ে প্রায় ন’টায় পৌঁছে গেলাম পঞ্চম মুহাম্মদ বিমান বন্দরে।
স্পেনের আইবেরিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান মালাগার দিকে যাত্রা শুরু করল বেলা এগারোটায়। বিমান কাসাব্লাংকা থেকে বেরিয়ে মাত্র পঞ্চাশ মিনিটে ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করল। ভূমধ্য সাগর অতিক্রম করার পর স্পেনের উপকূল ও উপকূলবর্তী শহর মালাগার সুদৃশ্য ইমারতগুলো ভেসে উঠতে লাগল। ধীরে ধীরে শ্লথ হয়ে এলো বিমানের গতি। মালাগা বিমানবন্দরে বিমান যখন অবতরণ করল তখন স্থানীয় সময় ছিল দুপুর ১টা বেজে ৩০ মিনিট
মালাগার পরিচিতি ইনশাআল্লাহ সামনে তুলে ধরব। কিন্তু এখানে এতটুকু বলে রাখছি যে, মুসলমানদের শাসনামলেও মালাগা স্পেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল। এর উপর দিয়ে বয়ে গেছে স্পেনের মোড় পরিবর্তনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। কালের সাক্ষী হয়ে মালাগা আজ আমাদের
মালাগা : স্পেনের দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত বন্দর নগরী। জনসংখ্যা ৪,৭৫,০০০। এখানে অনেক খ্যাতনামা মনীষী ও আলেম জন্ম গ্রহণ করেন। ফল ফলাদি, মৎস ও যয়তুনে সমৃদ্ধ।
* কাসাব্লাংকা : আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত মরক্কোর নৌ-বন্দর। এটি মরক্কোর সবচেয়ে বড় কারিগরী, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। জনসংখ্যা ২,১০,০০০। ১০ মুহাম্মদ (৫ম) ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে মরক্কোতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৭ সালে মরক্কোর বাদশাহ মনোনীত হন। ১৯৫৩ সালে ফরাসিরা তাঁকে মাদাগাস্কারে নির্বাসিত করে। ১৯৫৬ সালে তিনি মরক্কোর স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৯৫৭ সালে পুনরায় বাদশাহ মনোনীত হন। দেদীপ্যমান। কিন্তু তার পূর্বের সে রূপ আর নেই। আধুনিকতার হাওয়া লেগেছে তার গায়ে। এসেছে অনেক পরিবর্তন। কিন্তু তবুও ভাঙা-গড়ার এ লীলাভূমিতে চিরদিন থাকবে সে কালের সাক্ষী হয়ে। আগত প্রজন্মের জন্য হয়ে থাকবে সে এক জীবন্ত ইতিহাস।
মালাগা এয়ারপোর্টে অবতরণ করে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন বের হচ্ছিলাম তখন ঘড়িতে প্রায় আড়াইটা বাজছিল। এখান থেকে গ্রানাডা পৌছাতে আনুমানিক আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তাই জোহরের নামাজ মালাগা এয়ার পোর্টেই পড়লাম। নামাজ পড়তে গিয়েই অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল দুচোখ। এত সেই ভূখণ্ড যেখানের প্রতিটি বালিকণায় ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতো সুললিত কণ্ঠের আজান ধ্বনি। অনুরণিত হতো ইথারে পাথারে। মন্ত্র-মুগ্ধ হয়ে খোদার প্রেমিকেরা ধেয়ে আসত সে ধ্বনি লক্ষ্য করে। এ ভূখণ্ডে মনে হয় এমন কোনো অংশ নেই যেখানে খোদাভক্তদের সেজদা পড়েনি। কিন্তু আজ? কেবলার সঠিক অবস্থান বলে দিতে পারে এমন কেউ এখানে নেই। মানবজাতির উত্তান-পতনের এ রূঢ় বাস্তবতা বড়ই করুণ।
অবশেষে কেবলানুমার (কেবলানির্ণয়ক যন্ত্র বিশেষ) মাধ্যমে কেবলা নির্দিষ্ট করে এয়ারপোর্টের এককোণে জামাতের সাথেই নামাজ আদায় করলাম। যে ভূখণ্ডে নবজাতক শিশু ভূমিষ্ঠ হয়ে সর্বপ্রথম তাওহিদ ও রিসালাতের কালেমা শিখত, হৃদয়ের সবটুকু ভক্তি ও আবেগ মিশিয়ে প্রভুর সামনে আনত মস্তকে নামাজ পড়ার দৃশ্য অবলোকন করত, সে ভূখণ্ডের বর্তমান অধিবাসীদের কাছে আমাদের নামাজ পড়ার দৃশ্য এতই অভূতপূর্ব মনে হচ্ছিল যে, একরাশ কৌতূহল নিয়ে তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। তাদের জিজ্ঞাসুনেত্র হতে যে বিস্ময় ঠিকরে পড়ছিল তাতে মনে হলো এমন দৃশ্য বোধ হয় তারা জীবনে আর কখনো দেখেনি। ইউরোপ আমেরিকার অনেক উন্মুক্ত স্থানেও নামাজ পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে কিন্তু স্পেনিশদের মাঝে যে কৌতূহলী ভাব
গ্রানাডা : দক্ষিণ স্পেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর। সিরানুভিদা পর্বতমালার পাদদেশে ও গুইডাল কুইভার (ওয়াদিল কাবির) নদীর শাখা জেনিল (শানীল) এর তীরে অবস্থিত। জনসংখ্যা ২৫,০০০। স্থাপত্য নিদর্শনে বেশ সমৃদ্ধ। মুসলমানদের যুগে তৈরি গ্রানাডার আল-হামরা ও জেনারেলিফ বিশ্বনন্দিত স্থাপত্য। ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে রাজা ফার্ডিন্যান্ডের হাতে গ্রানাডার পতনের মধ্য দিয়ে স্পেন থেকে মুসলিম সাম্রাজ্যের বিদায় ঘটে। দেখেছি তা আর কোথাও দেখিনি। যা হোক, চাপা বেদনা আর ক্ষোভ নিয়ে স্পেনের বুকে এ প্রথম নামাজ পড়লাম।
পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের মতো স্পেনেও যেহেতু চালকবিহীন গাড়ি ভাড়ায় পাওয়া যায়, তাই আমরা একটি ‘ফিটা’ গাড়ি দু’দিনের জন্য ভাড়ায় নিলাম। কিন্তু গাড়ি নিয়ে পড়লাম মহাভাবনায়। কারণ, এখানকার রাস্তাঘাট আমাদের সম্পূর্ণ অপরিচিত। তদুপরি স্থানীয় ভাষাও জানা নেই। তাই মনে হলো, নিজেরা গাড়ি ড্রাইভ করতে গেলে হয়তো বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে। তাই আগপিছ ভাবতে লাগলাম। কিন্তু আমাদের সফরসঙ্গী বন্ধুবর সাঈদ সাহেব ওসব কিছুর তোয়াক্কা না করে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করার হিম্মত করে ফেললেন। তাই এয়ারপোর্ট থেকে গ্রানাডা পর্যন্ত রাস্তার একটি ম্যাপ সংগ্রহ করলাম। এ ম্যাপের ডিরেকশন মোতাবেক সাঈদ সাহেব যাত্রা শুরু করে দিলেন।
গ্রানাডাগামী হাইওয়ে পৌছাতে মোটামুটি কষ্ট স্বীকার করতে হলো। কিন্তু এরপর মালাগার অভ্যন্তরীণ সড়কেই গ্রানাডার পথ নির্দেশক তির চিহ্ন ও মাইলস্টোন ইত্যাদি দেখা যেতে লাগল। এ পথ নির্দেশকগুলো কিছুক্ষণ পরপর ধারাবাহিকভাবে এমন দর্শনীয় স্থানসমূহে স্থাপন করা ছিল যে, কাউকে জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজন হয়নি। তির চিহ্ন অনুসরণ করেই আমরা মালাগার ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয় অতিক্রম করে এক ছিমছাম সুন্দর হাইওয়েতে উঠলাম। বেশ পরিচ্ছন্ন ও প্রশস্ত হাইওয়ে। গাড়ি যতই সামনে অগ্রসর হতে লাগল পেছনে ফেলে আসা শহরের সুদৃশ্য ভবনগুলো তত মিলিয়ে যেতে লাগল। ধীরে ধীরে সড়কের দু’ধারে ফুটে উঠতে লাগল সবুজ শ্যামল পর্বতমালা, পত্রবেষ্টিত বন-বনানী ও আদিগন্ত-বিস্তৃত যয়তুন গাছের সুবিন্যস্ত সারি। পাহাড়ের কোলে ও পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমিতে গড়ে ওঠা এ বাগানগুলো দেখতে বেশ চমৎকার। ইতিহাস ও সাহিত্যের গ্রন্থে স্পেনের প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের যে বিবরণ পড়েছিলাম বাস্তবের সাথে তা যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছিল ।
এ স্পেনের সাথেই প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের আট শ বছরের উত্থান-পতনের করুণ ইতিহাস। এজন্য বাল্যকাল থেকেই মনের গভীরে লালন করে আসছিলাম এর প্রতি অজানা এক আকর্ষণ। কল্পনার জগতে হারিয়ে গিয়ে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সবুজে ঘেরা, বনবনানী, বন্ধুর গিরিপথ,

Spener Kanna PDF Download Link

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?