‘প্রিয়তমার সন্তুষ্টির সমতুল্য কিছু হতে পারে না। লাঞ্ছিত হওয়া ছাড়া তা লাভ করা যায় না। ‘
★পাঠ আলোচনা–
––––––––––––
বৈবাহিক জীবনে খুনসুটি, ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে অধৈর্য হয়ে সামান্য কারনে তালাক দেওয়া বা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া খুবই নিকৃষ্ট কর্ম। মুসলিম হিসেবে আমরা আল্লাহর নির্দেশ মতো রাসূলের দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করে থাকি। এটাই সর্বোত্তম পন্থা ইহকাল ও পরকাল লাভের। সাংসারিক জীবনে সুখী হতে তাই আমাদেরও উচিত নবিগণ, সাহাবি, সালাফে সালেহীন,উলামায়ে কেরামের আদর্শ অনুসরণ করা। স্ত্রীর অত্যাচার, অসদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁরা সবসময় সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছেন। স্ত্রীর যে বিষয়টি তারা অপছন্দ করতেন তার বদলে এমন কোনো বৈশিষ্ট্য খুঁজতেন যার কারনে তিনি স্ত্রীকে পছন্দ করেন। স্ত্রীদের খারাপ আচরণের জন্য তাঁরা সবসময় নিজেদের আমলকে দোষারোপ করতেন। কারন তাঁদের মতে, স্ত্রীদের দূর্ব্যবহার তাদের আমলের চিত্র। আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করার ফলে তাদের স্ত্রীরা তাদেরকে অসন্তুষ্ট করছে। এভাবে তাঁরা নিজেদের ধৈর্যের পরীক্ষা দিতেন এবং তাদের ভুলগুলো সংশোধন করতেন। তাঁরা এমন বদকার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কথা চিন্তায় আনতেন না কারন এমন নারীকে অন্য পুরুষও সহ্য করতে পারবে না।
‘স্ত্রীদের সাথে নবি ও মনীষীদের আচরণ’ গ্রন্থে বৈবাহিক জীবনে বুজুর্গ ব্যক্তিদের ধৈর্য, বাস্তবতা ও ভালোবাসার জলন্ত কিছু প্রমান দেওয়া হয়েছে। এসব কোন রূপকথার গল্প নয়। মহান ব্যক্তিদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা যা আপনাকে শিখাবে কীভাবে সংসারে শান্তি বজায় রাখতে হয়। স্ত্রীরা তাঁদের আঘাত করেছে, জনসম্মুখে অপমানিত করেছে, রাতে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে এমনকি মহানবি হযরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণও উনার সাথে মাঝে মাঝে তর্ক করতেন, বুকে হাত রেখে ধাক্কা দিতেন। উনারা এসব কিছু ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করেছেন সুবহানাল্লাহ। এই গ্রন্থের বিষববস্তু তিনভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমত, লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে স্ত্রীদের মন জয় করবেন।
দ্বিতীয়ত, কীভাবে তাদের অসদ্ব্যবহারের সময় ধৈর্যধারন করবেন।
তৃতীয়ত, কীভাবে নিজেকে সংশোধন করে পারিবারিক শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখবেন।
★এই বইয়ের শিক্ষা–
–––––––––––––
♣ পুরুষের কাছে অর্থ-সম্পদ থাকলে তার অন্যান্য দোষ ঢাকা পড়ে। আর দারিদ্র্যতা তাঁর স্ত্রীর কাছে তার বৈশিষ্ট্যগুলোকেও যন্ত্রণাদায়ক করে তুলে।
♣ রাতে স্ত্রীকে বিছানায় রেখে গ্রন্থপাঠে মগ্ন স্বামীর ইলম অর্জনকে স্ত্রীর কাছে তিন সতীনের চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক মনে হয়।😶
♣ বদকার স্ত্রীর সাথে সদাচরণ করতে হবে। সর্বোচ্চ ধৈর্যধারন করে সহানুভূতিশীল হতে হবে।
♣ স্ত্রীর নিকট স্বামীর প্রাণনাশের আশংকা থাকলে তবে তালাকের সিদ্ধান্ত নিতে হবে অন্যথায় সহ্য করে যেতে হবে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করে। কারন তালাক হচ্ছে আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট হালাল বিষয় ।
♣ কারো স্ত্রীর আচরণ খারাপ হলে স্ত্রীকে দোষারোপ না করে নিজের ভুল-ত্রুটির কথা চিন্তা করুন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন। আপনার কোন দোষের কারনে এমন বদকার স্ত্রী কপালে জুটেছে। তার সংশোধন করুন। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করলে শাস্তি স্বরূপ আপনার স্ত্রীও আপনি অসন্তুষ্ট হোন এমন আচরন করবে। এগুলো হচ্ছে দুনিয়ার শাস্তি। ধৈর্যের পরীক্ষা। তাই তাদের সাথে খারাপ আচরণ না করে সহানুভূতিশীল হোন। হতে পারে সে আপনার আমলের চিত্র।
♣ অনেক উলামায়ে কেরাম অসদাচরণের শিকার হওয়ার পরও স্ত্রীদের তালাক দিতেন না।কারন তাঁর সাথে বিচ্ছেদের পর যখন সে অন্য পুরুষকে বিয়ে করবে তখন যদি ওই পুরুষ তাকে সহ্য করতে না পেরে অত্যাচার করে!!
♣ নারীরা ভদ্র পুরুষদের পরাস্ত করতে পারে। অত্যাচারের জবাব অত্যাচার দিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু ভদ্র, আত্মসম্মান বোধ সম্পন্ন পুরুষরা সহনশীলতা প্রদর্শন করে।
আর নারীদের জব্দ করতে পারে ইতর, অভদ্র, নীচ প্রকৃতির পুরুষ।
★ভালো লাগা লাইনসমূহ–
–––––––––––––––––
১. আমি কামনা করি প্রিয়ায় প্রাণের সুবাস। আর প্রিয়া চাই আমার প্রাণ হরণ। একলা ফেলে অথবা তাড়িয়ে দিয়ে কিংবা হৃদয়ের দূরত্ব বাড়িয়ে।
২. আমি তার সামনে নত হলে, তার অহংকার আরও বেড়ে যায়। আমার যখন দুঃসময় তখন সে আমায় ছেড়ে চলে যায়।
৩.মূর্খতার জবাব আমরা আমাদের সহনশীলতার মাধ্যমে দিয়েছি। আমরা চাইলে মূর্খতার জবাব মূর্খতা দিয়ে দিতে পারতাম।
৪.নারীরা শুধু ভদ্র পুরুষদেরকে পরাস্ত করতে পারে। আর তাদেরকে পরাস্ত করতে পারে একমাত্র ইতর,নীচ লোকেরা। মূলত পুরুষের ধৈর্যধারনকেই এখানে রূপকার্থে পরাজয় শব্দ দিয়ে ব্যক্ত করা হয়েছে।
বূই- স্ত্রীদের সাথে নবি ও মনীষীদের আচরন
লেখক- শাইখ ইউসুফ আবজাক সূসী
প্রকাশনায়- মাকতাবাতুন নূর
মুদ্রিত মূল্য- ১৭৫ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যা- ৯৪
৩০% ছাড়ে ১২৫৳
Leave a comment