সুখের সোনালি সোপান (pdf download available)
লেখক : উসতাজ হাসসান শামসি পাশা
প্রকাশনী : দারুত তিবইয়ান
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন
অনুবাদক : খোবাইব আহমাদ সাইদ
পৃষ্ঠা : 120
সাপ্লায়ার জানিয়েছেন এই পণ্যটি 28 February প্রকাশিত হতে পারে। প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে পণ্যটি পেতে আগেই অর্ডার করে রাখুন ।
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা…..
বৈবাহিক সুখ অনেকটা মৌচাকের মতো। দুটি মৌমাছি মিলে সেটা তেরি করে। এ মৌচাক তৈরিতে তাদের পরিশ্রম যত বেশি হবে তাতে মধুর স্বাদও হবে তত বেশি।
‘চারটি বস্তু সুখের প্রধানতম অংশ। ১. নেককার স্ত্রী ২. প্রশস্ত বাসস্থান ৩. সৎ প্রতিবেশী ৪. আরামদায়ক বাহন। আর চারটি বস্তু অ-সুখ ও দুঃখের অন্যতম কারণ। ১. খারাপ স্ত্রী ২. অসৎ প্রতিবেশী ৩. খারাপ বাহন ৪. সংকীর্ণ বাসস্থান।” [সূত্র: ইমাম হাকেম এবং বাইহাকী রহ. হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। দেখুন, সহিহুল জামিইস্ সগির: ৮৮৭]
সুতরাং অন্তর বিনষ্টকারী বস্তু তথা খারাপ স্ত্রী মন্দ বাসস্থান ও খারাপ বাহন থেকে নিরাপদ থাকা এবং কোন কষ্ট ক্লেশ ব্যতীত খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যাওয়া—এটুকু হলেই মানুষের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী কতই না চমৎকার। তিনি এরশাদ করেন—
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আপন ঘরে নিরাপদে থাকে, শারীরিকভাবে থাকে সুস্থ, আর তার কাছে থাকে একদিনের খাবারের ব্যবস্থা, তাকে যেন গোটা দুনিয়াই দিয়ে দেয়া হল।” [সূত্র: ইমাম তিরমিজি এবং ইবনে মাজাহ হাদিসটি বর্ণনা করেন। দেখুন, সহিহুল জামিইস্ সগির: ৬০৪২ ]
সুখ কোথায়?
সৌভাগ্য মানুষের হারিয়ে যাওয়া বস্তু। পরম ও আকাঙ্ক্ষিত জিনিস। মানুষ সর্বদা যার পেছনে ছুটে চলে এবং সর্বত্র যা সে খুঁজে বেড়ায়। ব্যক্তিভেদে এর পন্থা যেমন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, তেমনি স্বাতন্ত্র্য পরিলক্ষিত হয় তাদের স্বভাব, ঝোঁক, পরিবেশ ও বিশেষ পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে।
আমরা কতভাবেই না কামনা করি যে, সুখের কল্পনাটি সহজ হোক এবং তা অর্জন করাটা যেন আরও সহজতর হয়। আমরা আরও আশা করে থাকি যে, সুখ অর্জনের জন্য আমাদের একটি ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্রই যদি যথেষ্ট হতো! কিন্তু হায়, তা যে সোনার হরিণ!
সুতরাং আপনি এমনভাবে সুখ তালাশ করবেন না, যেন এটি একটি মুদ্রা; যা আপনার হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেছে অথবা আসবাবপত্রের মাঝে হারিয়ে গেছে। ফলে আপনি বাজারেও যেতে পারছেন না এবং এমন কোনো বিক্রেতাও তালাশ করে পাচ্ছেন না, যে আপনার কাছে মখমলের তৈরি দৃষ্টিনন্দন একটি থলেতে করে সুখ বিক্রি করবে।
সুখ কী জিনিস—এর ব্যাখ্যা নিয়ে মানুষ যতটা মতপার্থক্যে লিপ্ত হয়েছে, দ্বিতীয় কোনো বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এতটা মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়নি। এর একমাত্র কারণ হলো, সুখ—একটি আপেক্ষিক বিষয়।
তাই তো আমরা দেখতে পাই, কোনো একটি বিষয় একজনের চোখে ভালো ও উত্তম মনে হয়। ফলে সে এটিকেই সুখ জ্ঞান করে এবং এর অর্জনকারীকে ভাবে সুখী। পক্ষান্তরে একই বিষয় আরেকজনের দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে, যে এটিকে অ-সুখ ভাবছে এবং এতে বুঁদ হয়ে থাকা ব্যক্তিকে অসুখী ও হতভাগা মনে করছে।
আবার কিছু মানুষ মনে করে, সুখ হলো ইচ্ছেমতো পানাহার ও খেলাধুলা করা, মনের চাহিদামাফিক পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার এবং প্রমোদশালা ও বিনোদনকেন্দ্রে বিপুল সময় কাটানো। কেউ কেউ তো সুখ অনুভব করে পড়াশোনা ও অধ্যয়নে, মণিমুক্তাতুল্য জ্ঞান আহরণে ডুবে থাকতে এবং সাহিত্যের গহিন অরণ্যে পদচারণ করতে।
কিছু কিছু মানুষ তো এই নশ্বর জগৎ থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া এবং এ পৃথিবীর আসবাবপত্র থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করার মধ্যেই সুখ খুঁজে পায়। কারো কারো কাছে মনে হয়, মানুষকে নিজের প্রবৃত্তির পূজারি বানানো এবং তাদেরকে নিজের বাসনা পূরণের কাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করা এবং নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করার মধ্যেই সুখ নিহিত আছে।
শারীরিক চাহিদা মেটানোর মধ্যেই সুখ আছে বলে কিছু লোক ধারণা করে। ফলে তারা আপন প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে জীবনধারণ করে। তাই তো সে পাপিষ্ঠদের সাথে ভাব জমায় এবং নির্বোধ ও চপলবুদ্ধির লোকদের সাথে উঠাবসা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কখনো বিপাকে পড়ে সে হারাম ও অবৈধ পন্থায় সম্পদ উপার্জনের পথও বেছে নেয় এবং ভোগবাদী জীবনের প্রতি আসক্তি তাকে নিষিদ্ধ ও হীন কাজে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করে।
কিছু লোক তো ভাবে, সম্পদ সঞ্চয়ের মধ্যেই বুঝি সুখ আছে! তাই আপনি দেখতে পাবেন, সে সম্পদ সঞ্চয় করে এবং চরম কার্পণ্য করে চলে। এতে সে নিজের ও পরিবার-পরিজনের হক আদায় করতে পারে না। আবার কখনো কোনো রোগ দেখা দিলে সম্পদ সঞ্চয়ের লোভে সে চিকিৎসা থেকে বিরত থাকে। পরিবার-পরিজনের সাথে অভাবী ও দরিদ্রদের মতো জীবনযাপন করে। পরনে থাকে জরাজীর্ণ পোশাক। পেট থাকে ক্ষুধার্ত। আর মানসিকতা থাকে চরম হীন ও নিকৃষ্ট।
আবার কারো কারো থাকে অধিক পরিচিত ও সুখ্যাতি। তাই সে মানুষের ওপর বড়াইগিরি ও দাম্ভিকতার মধ্যে সুখ হাতড়ে বেড়ায় এবং মানুষকে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ দেখতে পছন্দ করে। কিছু কিছু মানুষের অবস্থা তো এমন, তাদের কোনো উচ্চাভিলাষ নেই। নেই তেমন কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষাও। যৎসামান্য পরিশ্রমেই তারা ক্ষান্ত থাকে। ফলে অলসতা তাদের মধ্যে আবাস গড়ে তোলে, তাদের কর্ম স্থবির হয়ে পড়ে এবং তাদের অবস্থার চরম অবনতি ঘটে!
১. বাস্তবতা থেকে পলায়নের মধ্যেই কি সুখ?
কিছু কিছু মানুষ তো বিভিন্ন পন্থায় জীবন থেকে পলায়ন করার মধ্যে নিজেদের সুখ খুঁজে পায়। এ লোকদের দৃষ্টিতে জীবনটি হলো অসহনীয় এক বোঝা এবং জীবিকা উপার্জন তাদের কাছে শরীরের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই নয়। আর ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা, বন্ধুত্বসহ
সর্বপ্রকার ভালো গুণাবলি তাদের বিশ্বাস মতে কল্পিত বিষয়; শুধু কল্পনার জগতেই যার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এসব বিষয় থেকে বাঁচতে তারা জীবনটাকে ভুলে যাওয়ার নানাবিধ মাধ্যম বেছে নেয়। কখনো শূন্যে প্রাসাদ নির্মাণের দিবাস্বপ্ন দেখে। কখনো-বা তলানি পর্যন্ত কয়েক ঢোক মদ পান করে কিংবা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ে। উভয় বিষয়ই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সর্বনিকৃষ্ট ও হীন লোকদের কাতারে নিয়ে যায়।
কিছু মানুষ এ সময় ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করে। সে ভাবে, এ ওষুধ তার পরিশ্রান্ত দেহে আরামের সঞ্চার করবে এবং ক্লান্ত স্নায়ুসমূহ থেকে ক্লান্তি দূর করে দেবে।
অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, এসব ওষুধের আজ বড্ড অপব্যবহার করা হয়। অথচ এগুলোর মৌলিক উদ্দেশ্যই হলো, বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট এক অবস্থার চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা। উপযুক্ত ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া যারা এসব ব্যথা উপশমকারী ওষুধ সেবন করে, তারা নিজেরাই নিজেদের আসক্তি ও ভয়াবহ বিপদের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করছে!
কাতারের ড. আমির ১৯৫৭ সালে ‘হিলাল ম্যাগাজিন’-এ প্রকাশিত তার এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন—
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, ঐ সকল ধনকুবের যারা আমেরিকার ফ্লোরিডা ও ফ্রান্সের রেভেরাসহ আরও অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করে, তারা কিন্তু সেসব ভূখণ্ডের সৌন্দর্য উষ্ণতা বিনোদন ছায়া উপভোগ করেই ক্ষান্ত থাকে না। বরং তারা ডাক্তার ও ফার্মেসিতে গিয়ে ক্লান্তিনাশক ওষুধ খায় এবং এক সফরেই কয়েক বোতল নেশা গলাধঃকরণ করে নেয়।
আমি বলি—তাদের এসব বিষয় বিস্ময়কর হওয়ার পেছনের রহস্য হলো, এদের ব্যাপারে ধারণা করা হয়, সুখ ও সৌভাগ্যের যাবতীয় উপাদান—অর্থসম্পদ, প্রকৃতি, আবহাওয়া, আনন্দ-বিনোদনের সকল উপকরণ, পানি এবং সজীবতা; সবকিছুই তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান। কিন্তু এতকিছুর পরও তারা মানুষের বানানো মাধ্যম গ্রহণ করে এত অধিক সুখ লাভের নেশায়, যার অস্তিত্ব কেবল তাদের কল্পনা ও স্বপ্নের জগতেই পাওয়া যায়। অন্য কোথাও নয়।
বাস্তবতা হলো, এ সমস্ত লোক কোলাহলপূর্ণ এবং আসক্তি ও ভোগের জীবন থেকে পলায়ন করতে চায়। আর এভাবেই তারা মূলত তাদের অজান্তেই সুখ থেকে দূরে সরে যায়।
এদের অবস্থা হলো এমন, যেমন এক লোক নিজের কাছেই আগুন জ্বলতে দেখলো। কিন্তু সে আগুন নেভানো কিংবা তার থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা তো করলোই না; উলটো না দেখার ভান করে তাতে জ্বালানি (লাকড়ি) নিক্ষেপ করে বসলো!
ধনাঢ্যতা ও প্রাচুর্যেই কি সুখ নিহিত?
একটি গোষ্ঠী এমনটিই মনে করে। তাদের ধারণা, প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধিপূর্ণ জীবনেই বুঝি সুখ নিহিত আছে। পর্যাপ্ত অর্থকড়ি ও বিলাসী জীবনযাপনেই সুখের দেখা মেলে। কিন্তু যেসকল দেশ জীবনযাত্রার সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত এবং যেখানে বস্তুবাদী জীবনের চাহিদা ও প্রয়োজন সহজলভ্য, সেসকল রাষ্ট্রই নিয়মিত জীবনের অশান্তি ও শূন্য আত্মার অভিযোগ করে আর খোঁজ করতে থাকে—সুখ লাভের ভিন্ন কোনো পথ ও পন্থা।
সুতরাং এ কথা উপলব্ধি করতে কোনো বেগ পেতে হয় না যে, সম্পদের আধিক্য সুখ হতে পারে না। বরং কখনো কখনো তো অধিক সম্পদ সম্পদশালীর জন্য পরকালের আগে ইহজগতেই বিপদ ও অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা একদল মুনাফিকের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন—
ليعذبهم بها في الحيوة الله فلا تعجبك أموالهم و لا أولادهم إنما يريد ا
(হে নবি) সুতরাং তাদের অর্থসম্পদ এবং সন্তানসন্ততি যেন আপনাকে আকৃষ্ট না করে। (কারণ) আল্লাহর ইচ্ছা হলো, এর মাধ্যমে ইহজীবনেই তাদের তিনি শাস্তি দেবেন। [সুরা তাওবা, আয়াত : ৫৫]
আয়াতে শাস্তি বলতে উদ্দেশ্য হলো—দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা-পেরেশানি ও অসুস্থতা। হুবহু এ চিত্রটি আমরা এমন অসংখ্য লোকের মাঝেই প্রত্যক্ষ করি, যারা সম্পদ উপার্জন ও দুনিয়া কামাই করাকে নিজেদের সবচেয়ে বড় চিন্তা ও চূড়ান্ত আশার বস্তু বানিয়ে নিয়েছে। তাই সে আত্মিকভাবে সর্বদা চাপের মধ্যে থাকে। অনন্তর থাকে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। সদা পেরেশানিতে ডুবে থাকতে দেখা যায়। তার মধ্যে না আসে কোনো স্থিরতা আর না দেখা যায় কোনো সুখকর অবস্থা।
এ মানসিকতারই চিত্রায়ন করতে গিয়ে মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত হাদিস উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন—‘আখিরাতকেই যে ব্যক্তি নিজের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়ে নেবে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে ধনাঢ্যতা ও প্রাচুর্য ঢেলে দেন এবং এবং তাকে একাগ্রতা দান করেন; তখন দুনিয়া তার কাছে এলেও সে থাকে তার প্রতি অনাগ্রহী ও অনীহ। আর যে লোক দুনিয়াকেই তার একমাত্র চিন্তার বস্তু বানিয়ে নেয়, আল্লাহ তার দারিদ্র্য তার দুচোখের সামনে তুলে ধরেন এবং তার চিন্তাকে বিক্ষিপ্ত করে দেন। ফলে তার কাছে দুনিয়ার ততটুকুই আসে, যতটুকু তার জন্য বরাদ্দ করা হয়। [১]
সম্পদের সাথে মানুষের বোঝাপড়াটা আরো ঘনীভূত হয়ে ওঠে তখন, যখন সম্পদ মানুষকে নিজের দাসে পরিণত করে নেয়। তাই সে সম্পদ উপার্জনের নেশায় কষ্ট ভোগ করে এবং তা ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কায় পেরেশানি অনুভব করে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথার্থই বলেছেন—‘ধ্বংস হোক দিনার ও দিরহামের পূজারি এবং রেশমের কাপড় ও দামি দামি পোশাকের নেশায় পড়ে থাকা ব্যক্তি; যাকে দেওয়া হলে সে সন্তুষ্ট থাকে, আর না দেওয়া হলে থাকে অসন্তুষ্ট। [২]
জার্মান আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ আর্নস্ট সিয়ার বলেন— অধিকাংশ মানুষ মনে করে, প্রাচুর্য ও ধনাঢ্যতা সুখ এনে দেয়। কিন্তু আমি বিষয়টিকে বিপরীত মনে করি। নিঃসন্দেহে মানবজীবনে এমন বহু আনন্দ ও সুখ রয়েছে, যেগুলো প্রাচুর্যের আনন্দ ও সুখের চেয়েও অনেক বড়। সুতরাং অধিক পরিমাণ সম্পদ কামাই করার মধ্যে এমন কিছু নেই, যা বিশ্বস্ত ও স্বামীভক্ত স্ত্রীর ভালোবাসা এবং সৌভাগ্যবান সন্তানদের নিয়ে আনন্দ করার স্বাদের সমতুল্য হতে পারে।
কিছু ধনকুবের কিন্তু প্রকৃতার্থে দরিদ্রদের চেয়ে কম অশান্তি ও কষ্টে নেই। এ সমস্ত লোকের একমাত্র দুশ্চিন্তা সুস্বাদু ও নামি-দামি খাবার গ্রহণ করা, যৌন তাড়না, উন্নতমানের আসবাবপত্র ও সবচেয়ে লেটেস্ট মডেলের গাড়ি সংগ্রহ করা এবং সর্বোন্নত পণ্য ক্রয় করা। তবে তারা যতই নিজেদের এই বাহ্যিক স্বাদ ও আরাম-আয়েশে ডুবিয়ে দিচ্ছে, তত দ্রুতই তারা উপলব্ধি করতে পারবে যে, এ সুখ সামান্য কয়েক দিন কিংবা অল্প কয়েক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হবে না এবং এ সুখ তাদেরকে বিরক্তির ক্ষতি থেকেও ফেরাতে পারবে না। [৩]
আগেকার এক বাদশার ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তৎকালে তিনিই ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী ও দুঃখী মানুষ। খাবার-দাবার থেকে শুরু যাবতীয় পছন্দনীয় জিনিস তার হাতের নাগালে থাকতো। কিন্তু এর পরও তিনি সুখ ও শান্তি অনুভব করতেন না।
সবচেয়ে দামি ও মূল্যবান খাবার তার সামনে হাজির করা হয়। এ খাবার খেয়েও তার বদহজম হয়। একদিন সেই বাদশার এক কাছের লোক তাকে প্রস্তাব দিলো, আপনি এক রাতের জন্য হলেও রাজ্যের সর্বাধিক সুখী লোকটির পোশাক পরিধান করে থাকুন। তাহলে আপনি সুখ অনুভব করতে পারবেন। প্রস্তাব অনুযায়ী বাদশার কর্মচারীরা সর্বাধিক সুখী লোকের অনুসন্ধানে নেমে পড়ে। এমনকি তারা সুখী লোক পেয়েও যায়। লোকটির চেহারা ছিল হাস্যোজ্জ্বল। সে ছিল অত্যন্ত ধৈর্যশীল এবং সুখী। তারা লোকটিকে ধরে বাদশার সামনে উপস্থিত করে।
[২] সহিহুল বুখারি
[৩] মাজাল্লাতুল হিলাল, জানুয়ারি ১৯৫৪
আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
We Respect Every Author Hardwork – boipaw.com™
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?