সুখের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ | Shukher Kace By Buddhadeb Guho

কোলকাতার এক বৃদ্ধ চাকুরিজীবী সান্যাল বাবু তার মেয়ে মহুয়া আর মেয়ের জামাই হিসেবে মনস্থির করা তারই অফিসের আরেক চাকুরিজীবী কুমারকে নিয়ে বেড়িয়ে পরেন  কয়েকদিনের বেতলা ভ্রমণে৷ উদ্দেশ্য মেয়ে আর তার পছন্দের ছেলেটিকে কাছাকাছি এনে নিজেদের চেনার সুযোগ করে দেয়া৷ জঙ্গলে ঘেরা রাস্তায় তাদের গাড়ি নষ্ট হবার পর ঘটনাচক্রে তারা পৌঁছান সুখের মিস্ত্রির বাড়িতে৷ এরপরই মূলত গল্পের শুরু৷ 

পাহাড়ি এলাকা৷ মানব মানবীর সহজাত প্রেম। বিরহ৷ এসবের বাইরেও বুদ্ধদেব গুহের লেখাতে সব সময় থাকে নিজের সাথে অন্তঃদ্বন্দ, বোধ৷ যেসব নিজের মনে ঘুরপাক খায়; কি এক সামাজিক ভয়ে উপরে আসেও না৷ তিনি সেসব অবলীলায় মোটা দাগে তুলে আনেন সহজেই৷ প্রেম মানে আমরা সবাই জাহির করি মন, আত্মা, ভুংচুং এসব শব্দ দিয়ে। ছেড়ে গেলে দোষারোপ করি একে অপরকে৷ কাদাই মাখামাখি করি নিজেরা নিজেদের জড়িয়ে৷ এসব রাবীন্দ্রিক প্রেম শুধু বলাই যায়। অথচ শরীরকে যে অবহেলা করা যায় না, যায়নি সেটা সকলেই জানে৷ 
কিন্তু ভাবি শরীর জড়ালেই সব সয়ে মন্দ হলেও বাস করতে হবে৷ অথচ তা তো নয়। প্রেমে মন থাকবে শরীর থাকবে৷ অথচ দেখি মানুষ তাদের সহজাত বোধ খুইয়ে অলীক কল্পনায় ভালোবাসা মাপে৷ ব্যাপারটা আদতেও বুঝে আসে না৷ মনের জন্য তো শরীর দরকার। আর শরীর না থাকলে মন কই থাকে? বুঝি না কিছুই৷ পুরো ব্যাপারটা নিছক ভালোবাসার, ভালো লাগার।
ভালোবাসার মানুষই যদি কষ্ট পেতে থাকে, দীনতার স্বীকার হয় সেখানে সম্পর্ক তিক্ত করার চেয়ে দূরত্ব বাড়ানোই শ্রেয়৷ “যাকে কাছে রাখতে চায় কেউ, তাকে দূরে দূরে রাখাই বুঝি তাকে কাছে রাখার একমাত্র উপায়৷ বড় বেশি কাছাকাছি ঘেঁষাঘেঁষি ভালোবাসার, ভালো লাগার রঙটা ফিকে হয়ে যায়৷” এই লাইন থেকেই বোধহয় পাঠকদের অনেকটা বুঝে যাবার কথা৷ মনের যতো প্রশ্ন পরিষ্কার হবার কথা৷ 
সুখেন মোটর মিস্ত্রী আর মহুয়া শহুরে আধুনিকা৷ পরকীয়া প্রেম এখানে নেই৷ সময় সেখানে বড্ড কম৷ কথা প্রায় একরকম ঠিক হয়ে আছে যে মহুয়া কুমার সাহেবেরই কোলে বসে ছাঁদনাতলা পার হবে। আমাদের জীবনের মতোন৷ 
সম্পর্কের ছন্দপতন দেখি সান্যাল বাবু আর তার মেয়ের মাঝে৷ মানসিক অস্থিরতা দেখি কুমার চরিত্রে। দেখি সান্যাল বাবুর অতি উচ্চ উদার দর্শনও কোথাও এসে ফিকে হয়ে যায়৷ তীব্র প্রেম তিনি করেননি আর পানওনি। চিরকাল মোটা দাগে নিছক মিথ্যে আত্মগৌরবে বেঁচেছেন তাই হয়তো তার দিক থেকে সেরকম ভাবাটা স্বাভাবিকই৷ সুখেন আর কুমারের পার্থক্যও শুরু থেকেই বেশ চোখে পরে৷ একজন বেশ সাবলীল ভাবেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে অন্যজনের জন্য একরকম জীবন উৎসর্গ করেই দিয়েছে আর অপরজন মিথ্যে অহমিকার আত্মকেন্দ্রিকতায় ভরপুর৷ আর মহুয়া সে তো এক ইচ্ছে পাখি৷ 
ভালোবাসা যেমন সত্য তেমনি সত্য ভালোবাসা রক্ষার্থে ভালোবাসাকে মুক্তি দেয়া৷ এই বোধটাই যে মানুষের আছে সেই আসলে সত্যিকারের ভালোবাসতে পারে৷ ভালোবাসায় শরীর সত্য, ভালোবাসায় মন সত্য, ভালোবাসায় মিলন বা বিরহ সবই সত্য৷ 
বুদ্ধদেব গুহের আর সব লেখনীর মতোন এটিও অনবদ্য৷ এক’শ চার পাতার বই মুহুর্তেই শেষ হয়ে যাবে। থেকে যাবে একরাশ মুগ্ধতা, কিছু চমক আর নিজের ভাবনাগুলোকে উসকে দেয়া কিছু আগুনে আফসোস৷ 
নিজস্ব রেটিং – ৩.৫/৫
সুখের কাছে। 
বুদ্ধদেব গুহ৷ 
দে’জ পাবলিশিং৷ 
১০০ রুপি৷
রিভিউ ক্রেডিট : বাঁধন সরকার 
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?