বইয়ের নাম: সহীহ হাদীসের আলোকে ফরজ সালাতের পর পঠিতব্য এবং সকাল সন্ধ্যার দুআ ও যিকর।
সংকলন: মুহাম্মাদ মাহিন আলম।
সম্পাদনা: উস্তায আবদুল্লাহ মাহমুদ।
পৃষ্টা সংখ্যা: ৩২ (পকেট সাইজ)।
মুদ্রিত মূল্য: বিনা মূল্যে।
প্রকাশনায়: বিলিভার্স ভিশন।
প্রত্যেক ফরজ সালাতের সালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য
১। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালাত শেষ করে তিনবার- أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
‘আসতাগফিরুল্লাহ।’ বলে ক্ষমা চাইতেন এরপর বলতেন-
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রাকতা যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময় এবং তোমার থেকে শান্তি আসে। তুমি কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী।
(সহীহ মুসলিম, হা.৫৯১; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.২০০৩; নাসায়ি, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হা.১৩৯; আল-আযকার, হা.১৮৩; ইমাম জাযারি, আল-হিসনুল হাসীন, পৃ.৮৩)
২। একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুআয (রা.)-এর হাত ধরে বললেন, হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, হে মুআয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দুআটি কখনো পরিহার করবে না:
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِك
আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ইবা-দাতিক।
হে আল্লাহ! আপনার যিকর করতে, আপনার শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদাত করতে আমাকে সাহায্য করুন। অতঃপর মুআয (রা.) এই হাদীসের বর্ণনাকারী এবং তাঁর ছাত্র আস-সুনাবিহি (রাহি.)-কে এবং আস-সুনাবিহি (রাহি.)-ও তাঁর ছাত্র আবূ আবদুর রহমানকে অনুরূপ দুআ করার ওয়াসিয়াত করেন।
(সুনানু আবু দাউদ, হা.১৫২২; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, হা.৭৫১; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.২০২০; মুসতাদরাক হাকিম, হা.১০১০; আল-হিসনুল হাসীন, পৃ.৮৬)
৩। বারা ইবনু আযিব (রা.) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পিছনে সালাত আদায় করলে তাঁর ডান দিকে দাঁড়ানো পছন্দ করতাম যাতে তিনি ঘুরে বসলে আমাদের দিকে মুখ করে বসেন। তিনি (রা.) আরো বলেন, আমি তাকে (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,
رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
রাব্বি ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবা-দাকা।
অথবা
رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَجْمَعُ عِبَادَكَ
রাব্বি ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাজমাঊ ইবা-দাকা।
হে আমার রব! যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে পুনরায় জীবিত করবে; অথবা বলেছেন, একত্রিত করবে সেদিনের আযাব থেকে আমাকে রক্ষা করো। (সহীহ মুসলিম, হা.৭০৯; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, হা.১৫৬৩, ১৫৬৫; আল-হিসনুল হাসীন, পৃ.৮৬)
৪। মুসলিম ইবনু আবূ বাকরা (রা.) বলেন, আমার পিতা প্রত্যেক সালাতের পর বলতেন,
اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ، وَالْفَقْرِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি, ওয়া আযা-বিল কাবরি।
হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কুফরি থেকে ও দারিদ্র থেকে এবং কবরের আযাব থেকে।
তারপর আমিও তা বলতে থাকলে আমার পিতা আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি এ দুআগুলো কার কাছ থেকে শিখেছ? আমি বললাম, আপনার কাছ থেকে। তারপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ () (প্রত্যেক) সালাতের পর এ দুআগুলো বলতেন।
(সুনানুন নাসায়ি, হা.১৩৪৭; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, হা.৭৪৭; ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হা.১১১; আদ-দাওয়াতুল কাবীর, হা.৩৪৫; আল-আযকার, হা.১৯৭)
৫। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালাত শেষে সালাম ফিরিয়ে বলতেন –
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَد
লা- ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কাদীর,
আল্লা-হুম্মা লা- মা-নিআ লিমা- আ’তায়তা ওয়ালা মু’তিয়া লিমা- মানা’তা ওয়ালা- ইয়ানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ।
আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনি এক ও শরীক বিহীন। সার্বভৌম ক্ষমতা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট। সব প্রশংসা তারই প্রাপ্য। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তাতে বাধা দেয়ার শক্তি কারো নেই। আর যা দিতে না চাও তার দেবার শক্তিও কারো নেই। আর কোনো সম্পদশালীর সম্পদ তোমার নিকট থেকে রক্ষা করতে পারে না।
(সহীহ বুখারি ৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা.৫৯৩; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.২০০৬; নাসায়ি, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হা.১৩০; আল-আযকার, হা.১৮৪; ইবনু তায়মিয়্যাহ, আল-কালিমুত তাইয়িব, পৃ.৫২)
৬। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের পরে নিম্নোক্ত কথাগুলো বলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন-
لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الكَافِرُون
লা- ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যাহু। লাহুন নি‘মাতু ওয়া লাহুল ফাদলু, ওয়া লাহুস সানাউল হাসান। লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ দীন ওয়া লাও কারিহাল কাফিরূন।
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি নেই। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, আমরা কেবল তাঁরই ইবাদাত করি, নিয়ামতসমূহ তাঁরই, যাবতীয় অনুগ্রহও তাঁর এবং উত্তম প্রশংসা তাঁরই। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, আমরা তাঁর দেওয়া দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। (সহীহ মুসলিম, হা.৫৯৪; আল-আযকার, হা.১৮৫; আল-কালিমুত তাইয়িব, পৃ.৫৩; আল-হিসনুল হাসীন, পৃ.৮৩)
৭। আমর ইবনু মায়মূন আউদি (রাহি.) বলেন, শিক্ষক যেমন ছাত্রদের লেখা শিক্ষা দেন, সা‘দ (রা.) তেমনি তাঁর সন্তানদের এ বাক্যগুলো শিক্ষা দিতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সালাতের পর এগুলো থেকে আশ্রয় চাইতেন,
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْجُبْنِ وَأَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আঊযু বিকা আন উরাদ্দা ইলা-আরযালিল উমুরি, ওয়া আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া, ওয়া আঊযু বিকা মিন আযা-বিল কাবরি।
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কাপুরুষতা থেকে, আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি অপমানকর অতিবৃদ্ধ বয়সে পৌঁছান থেকে, আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফিতনা থেকে, আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে।
(সহীহ বুখারি, হা.২৮২২; আল-হিসনুল হাসীন, পৃ.৮৬)
এভাবেও বর্ণিত হয়েছে,
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ البُخلِ، وأعوذُ بِكَ منَ الْجُبْنِ وأعوذُ بِكَ أن أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আঊযু বিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আঊযু বিকা আন উরাদ্দা ইলা-আরযালিল উমুরি, ওয়া আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিদ দুনইয়া, ওয়া আঊযু বিকা মিন আযা-বিল কাবরি।
(সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, হা.৭৪৬; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.২০২৪; তাবারানি, আদ-দুআ, হা.৬৬১)
৮। আলি ইবনু আবি তালিব (রা.) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (ﷺ) কখনো “সবশেষে তাশাহহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে” আবার কখনো “সালাম ফিরানোর পর” তিনি বলতেন:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা-কাদ্দামতু ওয়ামা-আখখারতু ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আ’লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ’লামু বিহী মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা-ইলা-হা ইল্লা-আনতা।
হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বের ও পরের, গোপনে এবং প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ ক্ষমা করে দাও। আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি তাও ক্ষমা করে দাও। আমার কৃত যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চাইতে বেশি জানো তাও ক্ষমা করে দাও। তুমিই আদি এবং তুমিই অন্ত, তুমি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই।
(সহীহ মুসলিম, হা.৭৭১, ৭৭১(২); ইবনুল জারূদ, আল-মুনতাকা, হা.১৭৯; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, হা.৭২৩, ৭৪৩; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.১৯৬৬, ২০২৫; আল-আযকার, হা.১৭৫; আল-কালিমুত তাইয়িব, পৃ.৫০)
৯। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: দুটি বিষয় বা দুটি অভ্যাসের প্রতি যে মুসলিম খেয়াল রাখবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে যাবে। অভ্যাস দুটি সহজ কিন্তু তা আমলকারীর সংখ্যা কম। তা হলো:
(১) প্রত্যেক সালাতের পর দশবার সুবহানআল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ ও দশবার আল্লাহু আকবার বলবে। মুখে এর সংখ্যা (পাঁচ ওয়াক্তে) একশো পঞ্চাশ কিন্তু মীযানে তা এক হাজার পাঁচশ।
(২) যখন শয্যায় যাবে চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ ও তেত্রিশ বার সুবহানআল্লাহ বলবে। তা মুখে একশো কিন্তু মীযানে এক হাজার।
আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তা হাতের আঙ্গুলে গণনা করতে দেখেছি। সাহাবিগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! অভ্যাস দুটো সহজ হওয়া সত্ত্বেও এর আমলকারীর সংখ্যা কম কেন? তিনি (ﷺ) বললেন: তোমরা বিছানায় ঘুমাতে গেলে শয়তান তোমাদের কোনো লোককে তা বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর সালাতের মধ্যে শয়তান এসে তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং সে ঐগুলো বলার আগেই প্রয়োজনের দিকে চলে যায়।
(সুনানু আবু দাউদ, হা.৫০৬৫, সুনানুত তিরমিযি, হা.৩৪১০; সুনানু ইবনু মাজাহ, হা.৯২৬; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.২০১২; ইমাম তিরমিযি (মৃত্যু:২৭৯ হিজরি) হাদীসটি হাসান সহীহ বলেছেন।)
১০। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: প্রত্যেক ফরজ সালাতের পরে কিছু দুআ আছে, যে ব্যক্তি ঐগুলো পড়ে বা কাজে লাগায় কখনো নিরাশ বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তা হলো, তেত্রিশবার তাসবীহ (সুবহানআল্লাহ) বা পবিত্রতা বর্ণনা করা, তেত্রিশবার আল্লাহর প্রশংসা (আলহামদুলিল্লাহ) পাঠ করা এবং চৌত্রিশবার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করা। (সহীহ মুসলিম, হা.৫৯৬)
এই যিকরটি আদায় করার পদ্ধতি এ হাদীসের রাবি তাবিয়ি আবূ সালিহ (রাহি.)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
اللَّهُ أَكْبَرُ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ
وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ
আল্লা-হু আকবার ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদুলিল্লা-হ,
ওয়াল্লা-হু আকবার ওয়া সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াল হামদুলিল্লা-হ ।
এভাবে সবগুলো মোট তেত্রিশবার বলবে এবং শেষে একবার “আল্লাহু আকবার” অতিরিক্ত পাঠ করে একশো পূর্ন করবে।
(সহীহ মুসলিম, হা.৫৯৫; আল-হিসনুল হাসীন, পৃ.৮৪)
যিকরটি- سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ
এভাবেও পড়া যাবে। কারণ হাদীসে এর শব্দমালা আগে-পরে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। পরের হাদীসটি দ্রষ্টব্য।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের শেষে তেত্রিশবার আল্লাহর তাসবীহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করবে (সুবহানআল্লাহ), তেত্রিশবার আল্লাহর প্রশংসা করবে (আলহামদুলিল্লাহ) এবং তেত্রিশবার তাকবীর বা আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা করবে (আল্লাহু আকবার) আর এভাবে নিরানব্বই বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে,
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
লা- ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা-লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কাদীর।
আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। তিনি একক ও তাঁর কোনো অংশীদার নেই। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তিনিই। সব প্রশংসা তারই প্রাপ্য। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।
তার গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম, হা.৫৯৭; আল-হিসনুল হাসীন, পৃ.৮৪)
১১। একজন আনসারি সাহাবি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সালাত শেষে একশো বার বলতে শুনেছি,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ
আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়াতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুল গাফূর।
হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি তাওবা কবুলকারী, ক্ষমাশীল। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ, ১০/২৩৪ হা.২৯২৬৬; নাসায়ি, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হা.১০৩; শাইখ উসামা হাদীসটির সানাদ সহীহ বলেছেন। শাইখ সা’দ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)
১২। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নির্ধারিত (ফরজ) সালাতের পর আয়াতুল কুরসি (সূরাহ বাকারাহ, আয়াত নং ২৫৫) পাঠ করল, তার জান্নাতে প্রবেশের জন্য বাধা শুধু মৃত্যু।
(নাসায়ি, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হা.১০০; ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হা.১২৩; আল-হিসনুল হাসীন, পৃ.৮৫; ইমাম ইবনু হাজার (মৃত্যু:৮৫২ হিজরি) (নাতায়িজুল আফকার, ২/২৯৪) হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন।)
১৩। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উকবাহ ইবনু আমির (রা.)-কে সালাতের পর সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস পাঠের আদেশ করেছেন।
(সুনানুত তিরমিযি, হা.২৯০৩; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, হা.৭৫৫; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা.২০০৪; ইমাম তিরমিযি হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন।)
১৪। আবূ আইয়ুব (রা.) বলেন, যখনই নবি (ﷺ)-এর পিছনে সালাত আদায় করতাম তখন সালাত শেষে উঠার সময় পাঠ করতেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي خَطَايَايَ وَذُنُوبِي كُلَّهَا اللَّهُمَّ انْعَشْنِي, وَاجْبُرْنِي, وَاهْدِنِي لِصَالِحِ الْأَعْمَالِ وَالْأَخْلَاقِ؛ إِنَّهُ لَا يَهْدِي لِصَالِحِهَا, وَلَا يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ
আল্লা-হুম্মাগফিরলী খাতা-ইয়া-ইয়া ওয়া যুনুবী কুল্লাহা, আল্লা-হুম্মা আনআশনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াহদিনী লিসা-লিহিল আমা-লি ওয়াল আখলা-ক, ইন্নাহু লা- ইয়াহদী লি সা-লিহিহা, ওয়ালা- ইয়াসরিফু সাইয়িয়াহা ইল্লা আনতা।
হে আল্লাহ! আপনি আমার সকল ভুল ও গুনাহ ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করুন, আমাকে পূর্ণ করুন এবং আমাকে উত্তম কর্ম ও আচরণের তাওফীক প্রদান করুন; কারণ আপনি ছাড়া আর কেউ উত্তম কর্ম ও ব্যবহারের পথে নিতে পারে না বা খারাপ কর্ম ও আচরণ থেকে রক্ষা করতে পারে না।
(তাবারানি, আল-মু’জামুস সাগীর, ১/৩৬৫, হা.৬১০; মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হা.১৬৯৭৫; ইমাম হাইসামি (মৃত্যু:৮০৭ হিজরি) হাদীসটির সানাদকে জাইয়িদ বা উত্তম বলেছেন।)