লেখিকা সিলভিয়া অ্যান হিউলেট । গ্রেট ব্রিটেনের সাউথ ওয়েলসের একটি দরিদ্র, বেকারত্বে জর্জরিত মাইনিং এরিয়ায় ছোটবেলা পার করেন। সেখান থেকে এসে ক্যামব্রিজে স্নাতক এবং হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পি. এইচ. ডি ডিগ্রি অর্জন করা তার জন্যে কোন সহজ কাজ ছিল না। প্রবলভাবে ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড এই ব্যক্তিত্ব তার ক্যারিয়ারের কারণে মাতৃত্বের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোকে অস্বীকার করতে নারাজ ছিলেন। কিন্তু কর্মজীবনে বার্নার্ড কলেজে অধ্যাপনার সময় তিনি উপলব্ধি করেন, নারী স্বাধীনতা বলে চিৎকার করা পৃথিবী আসলে স্বাধীনতা বলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘পুরুষের প্রতিযোগিতামূলক আদর্শের অনুকরণকে’ বোঝায়।
এই উপলব্ধি প্রথম হয় যখন তাকে তার প্রথম সন্তান জন্মের দশদিন পর কাজে ফিরতে হয়। সেই সময়টাকে উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন,
‘লিসার জীবনের প্রথম কয়েক মাস যে আমার জন্যে এত কঠিন হবে- তা কখনো ভাবি নি। ওর জীবনের প্রথম আনন্দময় সপ্তাহগুলোতে আমি ক্লান্তির কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিলাম।‘
এই উপলব্ধি আরো গাড় হয় যখন দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের ষষ্ঠ মাসে তিনি তার যমজ সন্তান হারান। (পুরো কাহিনী জানতে হলে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে)।
লেখিকা হিউলেট গতানুগতিক ধারার ক্যারিয়ারের অবসান ঘটান তার বেঁচে যাওয়া দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর। তখন তিনি ছিলেন ‘ইকোনমিক পলিসি কাউন্সিল’ এর নির্বাহী পরিচালক।
‘আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, এই উচ্চস্তরের পেশাটির কাজের চাপ দিনদিন বেড়েই চলেছে এবং আমার তৎকালীন ছোট বাচ্চাদের ন্যায্য দাবীগুলোকে পূরণ করতে আমাকে অসক্ষম করে তুলেছে। আমি দিনদিন হয়ে উঠছিলাম একজন পরিশ্রান্ত, অন্যমনস্ক স্ত্রী এবং মা।‘
গতানুগতিক ধারার ক্যারিয়ার ছেড়ে দিলেও তিনি তার মেধাকে কাজে লাগিয়েছেন ভিন্নভাবে। নিজের সন্তানদের সবচেয়ে প্রয়োজনের সময়ে তাদের সবটুকু সময় দেবার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন ‘Creating a life’ এর মতো জীবনকে নতুনভাবে চিনতে সাহায্য করবে এমন অসংখ্য বই ( বেশিরভাগই পড়ি নি, জিস্ট দেখে বলছি, পড়ার ইচ্ছা আছে ইন শা আল্ল’হ)। একজন সত্যিকারের স্বাধীনচেতা নারী তার ক্যারিয়ার এবং মাতৃত্বকে একসাথে কিভাবে সর্বোচ্চ উপায়ে উপভোগ করতে পারবেন তা নিয়ে ভেবেছেন, লিখেছেন, তৈরি করেছেন অসংখ্য পলিসি।
২০১৪ সালে HR magazine তাকে ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক চিন্তাবিদ’ পদকে ভূষিত করে।
‘Creating a life’ এর অনুবাদ ‘সফলতার কান্না’ কিছুটা সিল্ভিয়া অ্যান হিউলেটের স্বাধীনচেতা মনের প্রতিফলন, কিছুটা ওইসব নারীর কাহিনী যাদের পুঁজিবাদী সমাজ বাধ্য করেছে ক্যারিয়ার বা সংসার যে কোন একটা বেছে নিতে, কিন্তু যতদিনে ওই ফাঁকটা ধরতে পেরেছেন ততদিনে দেরি হয়ে গেছে ঢের।
এবার কিছুটা ব্যাসিক কথা আলোচনা করিঃ
নারী শরীরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ইস্ট্রোজেন ও অক্সিটসিন হরমোন। যার কারণে মমতা, কোমলতা, বাচ্চার প্রতি অসম্ভব টান, দ্রুত সম্পর্ক গঠন, অল্প সময়ের পর্যবেক্ষণে অনেক কিছু আঁচ করে ফেলা এগুলো নারীর স্বভাবজাত। অন্য দিকে স্ট্রেস নেওয়া, প্রচুর পরিমাণে শারীরিক শ্রম দেবার ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তির প্রতি আকর্ষণ, প্রতিযোগী মনোভাব এগুলো পুরুষের শরীরে ভরপুর হরমোন টেস্টোস্টেরণের কাজ ।
২০১৬ সালে Harvard Business Review এ প্রকাশিত হয়, নারী কর্মকর্তারা বেশি স্ট্রেস, উদ্বেগ ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন। পুরুষের চেয়ে স্ট্রেসে থাকা একজন নারীর শারীরিক ক্ষতি বেশি হয়, মানসিক অসুখও বেশি। ২২০০০ নারীর উপর করা এক রিসার্চে এসেছে, যেসব নারীর চাকুরি কেন্দ্রিক স্ট্রেস বেশি, তাদের ৪০% বেশি সম্ভাবনা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের।
এসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান রিসার্চ করেই শেষ, এর বিপরীতে কি করণীয় আপনাকে আমাকে কেউ বলবে না। এই বইয়ের লেখিকা বলার চেষ্টা করেছেন।
শারীরিক ও মানসিক দুইভাবেই নারী ও পুরুষের গঠনতন্ত্র আলাদা, তাই তাদের চাহিদাও আলাদা। ‘সিলভিয়া অ্যান হিউলেট’ এর বই ‘Creating a life’ এর অনুবাদ ‘সফলতার কান্না’ পুরোটাই লিখা হয়েছে নারীর সেই চাহিদা আর চাহিদাপূরণে কি করণীয় তাই নিয়ে। আলোচিত হয়েছে নারী ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বিকল্প পথ এবং ফ্যামিলি সাপোর্টের ব্যাপারে নতুন সব তথ্য।
ব্যাপারটা বুঝতে অবশ্যই আমার এই এক পৃষ্ঠার লেখা যথেষ্ট না, ২৮৩ পৃষ্ঠার পুরো বইটা পড়তে হবে।
কোথায় পাবেন?
Wafilife.com
SEAN Publication