‘সন্তানদের সময় দিতে পারি না। কারণ, আমি ব্যস্ত!’ –

‘সন্তানদের সময় দিতে পারি না। কারণ, আমি ব্যস্ত!’

বিয়ে করে আপনি স্ত্রীর সাথে জীবনের এক নতুন অধ্যায় আরম্ভ করলেন। উভয়ে সন্তান জন্ম দিলেন। কিছুদিন অতিবাহিত হলো, আপনি নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন৷ পরিবারকে দেওয়ার মতো কোন সময় খুঁজে বের করতে পারছেন না। স্ত্রীর সামনে এই বলে অজুহাত পেশ করছেন যে, আমি তো তোমাদেরই কল্যাণে কাজ করছি। 
.
আপনি এসবের মাধ্যমে নিজ সফলতার গল্প লিখতে চান। কিন্তু আপনার সফলতার এই গল্পে পরিবার ও সন্তানের কোন অংশ নেই। পড়াশুনা ও কাজে আপনি মাত্রাতিরিক্ত সময় দিয়ে ফেলছেন। পারিবারিক কর্তব্য আদায় না করে নিজ চাহিদার পেছনে দৌড়াচ্ছেন। নিজকে তো বটেই অন্যদেরও এই বলে বুঝ দিচ্ছেন যে, আমি আসলে এক প্রকার নিরুপায়!
.
আপনি ধরে নিয়েছেন, তারবিয়াত ও সন্তানদের গড়ে তোলার সব দায়িত্ব স্ত্রীর, সে-ই এই দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সন্তানদের অবহেলা করার এই রোগ ধীরে ধীরে আপনার স্ত্রীকেও পেয়ে বসবে। সে-ও তখন সন্তানদের ছেড়ে নিজেকে প্রমাণ করতে ও সাফল্যের গল্প লেখতে ব্যস্ত দিন কাটাবে, সোশ্যাল মিডিয়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সময় ব্যয় করবে। সন্তান এভাবেই একসময় মায়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ থেকেও বঞ্চিত হবে। 
.
পিতামাতার অবহেলায় বেড়ে উঠা এই সন্তানেরা কলহ সৃষ্টি করবে। এমন সন্তানদের সাথে বাবা মায়ের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হবে। এমনকি আপনার সাথে স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ তৈরী হবে এই সন্তানদের কারণেই। উভয়েই একে অপরকে এই করুণ পরিস্থিতির জন্যে দোষারোপ করে যাবেন। ‘সন্তানের বোঝা’ একে অপরের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলবে! আর এসব ঘটবে সন্তানদের চোখের সামনেই। তাদের অন্তরে এই ঘটনা দাগ কাটবে। তারা মনে রাখবে বাবা-মা কিভাবে তাদের কাছে টেনে না নিয়ে ভারি বোঝার মতো আচরণ করেছিল। 
.
আপনিই তখন জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন। হতে পারে, কর্মব্যস্ততা সামান্য কমিয়ে আপনি সন্তানদের গড়ে তোলার পেছনে মনোযোগ দিতে শুরু করবেন। কিন্তু আপনি আবিস্কার করবেন, মায়ের যত্ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে আবার নিবিড় পর্যবেক্ষণে ফিরিয়ে আনা কতটা কঠিন কিংবা কতটা অসম্ভব!
.
প্রিয় ভাই! এমন অনেক ভুল আছে এই দুনিয়ায় যেগুলোকে পরিপূর্ণভাবে শুধরানো আর সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। হতে পারে আপনার পূর্ববর্তী অবহেলা আল্লাহ ক্ষমা করবেন। কিন্তু এই অবহেলার মাশুল আপনাকে পদে পদে দিয়ে যেতে হবে। দাওয়াহর ক্ষেত্রে নবীজির ﷺ  চেয়ে অধিক আগ্রহী কেউ ছিলেননা, তবু তিনি কী বলেছেন শুনুন:
.
‘তোমার উপর তোমার রবের অধিকার রয়েছে। তোমার নিজের অধিকার রয়েছে। তোমার পরিবারেরও তোমার উপর অধিকার রয়েছে। অতএব প্রত্যেককে নিজ নিজ প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দাও।’ (সহীহ বুখারী: ৬১৩৯)
.
আপনি ঘরের একজন পুরুষ। আল্লাহর দেওয়া অভিভাবকত্বের দায়িত্ব আপনার ঘাড়ে। এই অভিভাবকত্বেরই দাবি হলো, স্ত্রীর সামনে প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আদর্শে পরিণত হওয়া। স্ত্রীকে অতীত ভুলের খোঁটা না দিয়ে আপনার বরঞ্চ উচিত আল্লাহর ইচ্ছাকে মাথা পেতে নেয়া।
.
ঘরকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। ‘প্রত্যেককে প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দাও’ মূলনীতি অবলম্বন করুন।
.
ড. ইয়াদ কুনাইবী রচিত ‘সন্তানের ভবিষ্যৎ’ বই থেকে।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?