সংখ্যায় নিতান্ত ছোট হলেও এগুলো আমার জন্য রত্ন স্বরূপ

আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহ বলতে চৌচালা ঘরের বেড়ার সাথে ঝোলানো তক্তার উপর সযত্নে তুলে রাখ আল্পকিছু বই। সংখ্যায় নিতান্ত ছোট হলেও এগুলো আমার জন্য রত্ন স্বরূপ। প্রতিদিন না হোক অন্তত সপ্তাহে দু-চার বার বইগুলোর ধুলো বালি পরিষ্কার করতাম।যে বই গুলো পড়া হয়নি সেগুলো পড়ার জন্যও তক্তার কাছে যেতে হতো।

বই সংগ্রহ করার অভ্যাসটা ধীরে ধীরে নেশায় পরিণত হয়ে গেলো।গত দুইবছরে প্রতিমাসে অন্তত একটা হলেও বই কিনতাম।টিউশনি করে যে কয়টা টাকা পেতাম তার প্রায় সবগুলোই বই কেনার পেছনে খরচ হতো।এমন করে গত দুই বছরে নতুন পুরাতন মিলিয়ে আমার সংগ্রহে প্রায় ২০০+ বই যুক্ত হয়েছে।
অক্টোবর মাসে এইচএসসি রুটিন প্রকাশ করার পর একাডেমিক পড়ার চাপে,নন-একাডেমিক বই পড়ার অভ্যাসে ভাটা পড়ে।যেখানে দুই তিনদিন অন্তর অন্তর বইয়ের তক্তার কাছে যেতাম বই নিয়ে নাড়াচাড়া করতাম সেখানে বইগুলো অবহেলিতের মতো পড়ে রইলো এক কোণে। 
যাকে ভালোবাসো তাকে অবহেলা করো না এমন কথা প্রায় সময় ফেসবুকের কল্যাণে আমার সামনে আসতো।নিজের অবহেলার কারণে হারিয়ে যাওয়া জিনিস নিয়ে বা অন্যের অবহেলা সহ্য করতে না পেরে ছেড়ে আসা মানুষদের আবেগঘন কথাবার্তা দেখে সবসময় মনে হতো,সত্যিই কি মানুষের অবহেলার কারণে প্রিয় জিনিস গুলো হারিয়ে যায়!আর ফিরিয়ে আনা যায় না সেই প্রিয় জিনিসগুলোকে!আমিও যে এমন অনুভূতির সম্মুখীন হবো কখনো ভাবিনি। 
যেমনটা বললাম এইচএসসি’র রুটিন প্রকাশের পর থেকে বইগুলো এক প্রকার অবহেলায় পড়ে রইলো।তাদের যত্ন নেওয়া তো দূরের কথা তাদের দিকে ফিরে চাহিবারও ফুরসত মিলে নি।অথবা আমিই অবহেলার বশবর্তী হয়ে তাদের দিকে তাকাই নিই।সে যাই হোক। এই অবহেলার ফল ছিলো ভয়াবহ।আমার বইগুলো অবহেলা সহ্য করেনি।
একদিন বিকাল বেলায় এক ভাইয়ের সাথে কথা প্রসঙ্গে আমার বইগুলো কথা উঠলো।বইগুলো নিয়ে কথা উঠতেই মনে পড়ে গেলো,মহামারির সময় থেকে শুরু হওয়া বই কেন্দ্রীক রুটিনের কথা।মনে পড়ে গেলো আমার অবহেলায় অযত্নে প্রায় ১ মাসের বেশি সময় ধরে বইগুলো পড়ে আছে পুরাতন জাং ধরা টিনের ঘরের এক কোণে।হঠাৎ বইগুলোর প্রতি মায়া আবার জেগে উঠলো। আবার বইগুলোকে স্পর্শ করার তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে এলাম।ছুটে গেলাম একসময়ের অবসরের একমাত্র সঙ্গীদের কাছে।
অবহেলা সবাই সহ্য করতে পারে না।আমার বইগুলোও পারেনি। সেদিন সন্ধ্যায় বইগুলোর অবস্থা দেখে খুবই মর্মাহত হই।আমারই অবহেলার কারণে সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে পুরাতন বই দুইটি উইপোকার উদরপূর্তির বস্তুতে পরিণত হয়।বাকিগুলোতেও তারা ভাগ বসানোর চেষ্টা করছিলো।কিছু কিছু বইয়ের ক্ষেত্রে খানিকটা সফলতাও পেয়েছিলো।তবে উইপোকারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে পুরাতন বই দুটোর।তাদের কবল থেকে যখন বইগুলোকে উদ্ধার করি তখন তাদের অবস্থা ছিলো খুবই করুন।পড়ার মতে অবস্থায় ছিলো না দুইটা বইয়ের একটাও।বাকিগুলোকে একপ্রকার রক্ষা করতে পারলেও বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত বই দুটো আমার অবহেলা সহ্য করে নি।অথবা বার্ধক্যের কারণে উইপোকাদের সাথে পেরে উঠে নি।
সেই রাতে আমার অবস্থা ছিলো অধিক শোকে পাথর হয়ে যাওয়ার মতো।কি করবো বুঝে উঠতে পারিনি।শুধু মনে হয়েছে এমনটাই আমার প্রাপ্য ছিল।কী এমন হতো অতীতের মতো সপ্তাহে দুই-একবার বইগুলোর খবর নিলে?
এখনো এইচএসসি’র বাকি আছে আরো একমাস।এখনো পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।শুধু পার্থক্য একটাই এখন বই গুলো আমার শিয়রের কাছে থাকে।প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে তাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি আর মনে মনে চিন্তা করি হায় সেদিন যদি ঐ ভাইয়ের সাথে দেখা না হতো, তাহলে হয়তো একটা বইও আস্ত থাকতো না।বাকি বইগুলো সহিসালামতে উদ্ধার করার আনন্দ থেকে দুইটা বই হারানোর দুঃখই আমার মনপ্রাণ জুড়ে বিরাজ করে।
সকল বাইপড়ুয়া,বইপোকাদের কাছে একটা অনুরোধ রইলো,আপনার প্রিয় বইগুলোর খোঁজ নিন।শত ব্যস্ততার মাঝেও দিনে না হোক সপ্তাহে একবার বইগুলোর খোঁজ করুন। 
আপবার প্রিয় আবসরের সঙ্গীগুলো আপনার একটু অবহেলার কারণে চলে যেতে পারে উইপোকা, ইঁদুর কিংবা তেলাপোকাদের উদরে। – Rakib Hasan
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?