ষোলো: দ্বিতীয় সংখ্যা (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০২২) – Sholo Magazine Second Volume

ষোলো: দ্বিতীয় সংখ্যা (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০২২)

প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন
বিষয় : ইসলামি ম্যাগাজিন
সম্পাদক : লস্ট মডেস্টি
পৃষ্ঠা : 80, কভার : পেপার ব্যাক
ভাষা : বাংলা
Image
ফেব্রুয়ারি মাস এলেই চারিদিকে বেহায়াপনার এক রমরমা ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। ভালোবাসার নাম ভাঙিয়ে চলে নানান রঙের অশ্লীলতা। ভালোবাসার ব্যকরণ ভুলে যাওয়া এই প্রজন্মকে ভালোবাসার আদি ও অকৃত্রিম পাঠ শেখাতেই প্রকাশিত হয়েছে কিশোর ম্যাগাজিন ‘ষোলো’ এর ফেব্রুয়ারি সংখ্যা।স্কুল-কলেজ বন্ধের এই সময়টা অনেকেই হেলায় নষ্ট করে। প্রচুর অবসর থাকায় এ সময় অনেকেই অনলাইন গেইম, টিকটক, লাইকির মতো বাজে অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ে। অখণ্ড এই অবসরে কিশোর-কিশোরীদের জন্য চমৎকার উপহার হতে পারে কিশোর ম্যাগাজিন ‘ষোলো’। সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি তারা জানতে পারবে ছাত্রজীবনকে কীভাবে আরও বেশি সুন্দরভাবে সাজানো যায়।এবারের সংখ্যায় ছড়া-গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ ছাড়াও থাকছে থ্রিলার গল্প, সীরাত কুইজ, গণিত ধাঁধা, অরিগামি, রহস্যজট-সহ আরও অনেক কিছুই।
Image
1. নদীর পাড় ধরে হাঁটছি। উদ্দেশ্যহীন হাঁটা। সন্ধ্যা বেলার এই মনোরম সময়টা নিজেকে দেওয়ার জন্য খুবই উপযুক্ত। দিনের প্রখর রোদের ঝলকানি শেষে এ সময়টা ভালো লাগার মতো। আমার জীবন একটি আদর্শ বিরক্তিকর এবং কষ্টের জীবনের উদাহরণ। কষ্টের কারণটা বলতে পারব। কিন্তু এখন না, যথাসময়েই বলব। বিরক্তির নির্দিষ্ট কারণ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, বলতে পারব না। তবে, আমি শুধু জানি, আমি আমার জীবনের প্রতি বিরক্ত। মাঝে মাঝে একঘেয়েমিপূর্ণ এক রুটিনে বাঁধা জীবন থেকে পালাতে ইচ্ছা করে। কিন্তু পালিয়ে কোথায় যাব?
এখন রাত আটটা। আমি দাড়িয়ে আছি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ছয় নং প্ল্যাটফর্মে। স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই চিত্রা এক্সপ্রেস খুলনার উদ্দেশ্যে ছাড়বে। উঠে বসলে হয়। রাতের ট্রেন ভ্রমণ ভালো লাগার কথা। অন্তত বিকেলের ঘটনাটা কিছুক্ষণ ভুলে থাকা যাবে।
2.
‘শুভ, তোর ভাইয়া এসেছে??
‘আসেনাই, আম্মু৷”
দিলরুবা বেগমের টেনশন বেড়েই চলেছে। তাঁর বড় ছেলে অভ্রনীল বের হয়েছে বিকাল চারটায়। এখন রাত ন’টা৷ কোনো কাজে তো যায়নি। বলে গিয়েছিল, শুধু হাঁটতে যাচ্ছে। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী তার হন্টন প্রক্রিয়া চলছে? এ কেমন হাঁটা? ইদানীং অভ্রনীল কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। মায়ের কাছে প্রায়ই ওর বিষণ্ণ সময়গুলোর কথা বলে। হঠাৎ এমন অদ্ভুত বিষণ্ণতা ওকে আক্রমণের কারণ খুঁজে পান না দিলরুবা বেগম৷
3. ‘বস, কমলাপুর থেকে ট্রেনে উঠেছে।’
‘কোন ট্রেন?’
‘চিত্রা এক্সপ্রেস৷’
‘এ ট্রেন তো খুলনা যায়৷
‘জি, বস৷’
“উঠে বোস৷ প্রতি মুহূর্তের খবর পাই টু পাই চাই।’
8. আজ বৃহস্পতিবার৷ ট্রেনে জায়গা পাওয়া মুশকিল। বিশাল ট্রেন৷ তবে, জয়দেবপুর আসার পর অনেক জায়গা খালি হয়ে গিয়েছে। বসলাম আয়েশ করে। হঠাৎ কামরার লাইট অফ৷ ব্যাপার কী? সে যাই হোক, গুরুতর কিছু নয়। আমার জন্য বরং ভালোই। আলো আঁধারির পরিবেশ । প্রিয় আমার। ‘আয়েশ করে চিন্তা করার জন্য এ পরিবেশ খুবই উপাদেয়৷ একটু ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছে৷ রাতে তো ভালো ঘুম হয় না। কোথায় যাচ্ছি জানা নেই। অবশ্য বিষয়টা এমন না। এটা খুলনা যাবে তা তো জানিই। একদম শেষ স্টেশনে নেমে পড়ব৷ নেমে কী করব? তা দেখা যাবে।
5. দিলরুবা বেগম এসে বসলেন স্বামীর কাছে৷ রাতের খাবারে বসার কথা, কিন্তু অভ্রনীলের আব্বু দেরি করছেন৷ তিনি মনযোগ দিয়ে একটি বই পড়ছেন৷ নাম, ‘সাঁতার শেখার একশত এক উপায়’। জয়নাল সাহেব সাঁতার জানেন না। এটি তার খুবই চিন্তার কারণ। চেষ্টা যে করেননি তা অবশ্য না৷ কিন্তু কোনোভাবেই সাঁতার আয়ত্ত করতে পারছেন না। জীবনে একটিই চাওয়া, মরার আগে তিনি আধঘণ্টা হলেও পানিতে মাছের মতো সাতার কাটতে চান।
‘এই, তুমি কী করছ?’
‘আহহা, দিলে তো মনযোগটা নষ্ট করে। আচ্ছা শোনো দিলরুবা, মনে হচ্ছে এবার সাতার শেখা হয়েই যাবে।”
‘রাখো তো। সাতার শিখতে পানিতে চুপনি খেতে হয়৷ বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে সাতার শেখা যায়
‘আমি শিখে দেখাব৷ চ্যালেঞ্জ!
‘অভ্রনীল এখনো আসেনি।’
‘ভালো কথা। তাতে কী সমস্যা?
‘কোনো সমস্যা নয়??
‘সমস্যা নাকি? আমি তো কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না৷’
‘জনাব, কোথায়, কবে, কোন কাজে সমস্যা নামক বস্তুটি আপনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলতে পারেন?”
‘না, পারি না। এখন যাও, আমার গবেষণায় ডিস্টার্ব করবে না৷’
‘ভাত খাবে না?’
‘খাব, অবশ্যই খাব, আলবৎ খাব। তবে এখন Go, take dinner and then sleep.”
৬. ঝাঁকি দিয়ে ট্রেন বন্ধ হয়ে গেল। ব্যাপার কী?
‘কী হইছে ভাই?’
‘ভাই, ক্রসিং।’
আধো ঘুমে থাকার কারণে হালকা ঝাঁকিকেই বেশি ঝাঁকি মনে হলো। ঘুমাবার কথা না তো আমার! যেতে যেতে ‘চিন্তা’ করব দেখে ট্রেনে উঠা৷ অথচ ঘুমাচ্ছি। ট্রেন থেমেছে দিগন্তবিস্তৃত মাঠের মধ্যখানে৷ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে অবাক হলাম৷ জ্যোৎস্না রাত আজ। সাহিত্যের ভাষায় ‘চান্নিপসর রাইত’। চাঁদ রাতগুলো এত সুন্দর! আল্লাহ এ চাঁদটাকে কত সুন্দর করেই না সৃষ্টি করেছেন! অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে। ভালো লাগা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে জোনাকি পোকার ঝাঁক৷ দিগন্তবিস্তৃত মাঠের হলে এবং অন্তরীক্ষে জ্যোৎস্না এবং জোনাকির খেলা দেখছি। সুন্দর৷ অতি সুন্দর। এ সৌন্দর্য না দেখলে কাউকে বোঝানো দুরূহ কাজ। বিকেলের ঘটনার রেশটুকু আর মনে রইল না।
9. ‘কী খবর?’
‘বস, ক্রসিং এ আছি। টাঙ্গাইলের আগে৷’
‘ওদিকে সবাইকে রেডি থাকতে বলা হয়েছে? ‘বলিনাই৷ এখনই বলতেছি।”
‘হ্যাঁ, খুবই সাবধানে দ্রুততার সাথে কাজ করতে হবে। কোনোভাবেই যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। তা হলে সব শেষ।
‘জি, বস৷ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা৷
Image
আপাশাপাশি দেখলে চট করে বোঝা যায় না। আশা অসম্ভব সুন্দরী। গায়ের উজ্জ্বল রং ঠিকরে বেরোচ্ছে। বড় বড় চোখ, ঘন কালো চুল। যে কেউ এক দেখায় ওকে পছন্দ করে ফেলবে। রাহীর চেহারা সাদামাটা। চাপা গায়ের রং, চেহারাতে তেমন লাবণ্য নেই, মুখের গঠনও মনে রাখার মতো কিছু না। তবে সবমিলিয়ে একটা মায়াবী ভাব আছে। স্বভাবেও দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। বড় বোন আশা নদীর মতো শান্ত, স্থির। পড়াশোনা ছাড়া আর কোনোদিকেই মনোযোগ নেই। ক্লাসের সময়টুকু বাদে সারাদিন এ বই সে বই পড়ে দিব্যি সময় কাটিয়ে দেয়। আর রাহী ঠিক তার উলটো। একেবারে ঝড়ের মতোই উত্তাল, বেপরোয়া। পড়াশোনার ধারে কাছে তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তার প্রধান কাজ হলো আয়না দেখা। দিনের মধ্যে কমপক্ষে বিশ-তিরিশবার নিজের চেহারা দেখা চাই। শুধু চেহারা দেখলেও কথা ছিল। সারাক্ষণই ছুটছে। কখনো বন্ধুদের আড্ডায়, কখনো ভার্চুয়াল জগতে, কখনো মেইক আপ, কখনো শপিং।
কাজেকর্মে অমিল হলে কী হবে, দুই বোনের মধ্যে দারুণ ভাব। বাবা আফজাল সাহেব দুই মেয়ের মাঝে কোনোদিন তারতম্য করেননি। মা মরা মেয়ে দুটোর জন্য তার স্নেহের কমতি নেই। অতি আদরেই কি না কে জানে, মেয়েদের মধ্যে বাবার প্রতি কোনো ভয় তৈরি হয়নি। শাসন কী জিনিস ওরা চোখেই দেখেনি কখনো। এর ফল হলো, অল্প আঘাতও ওদের সহ্য হয় না। ক্লাসের টিচার বকা দিলে কেঁদে বুক ভাসায়। ভাগ্য ভালো যে, ওদের ক্লাসে স্যার-ম্যাডামরা কাউকেই তেমন বকাবাজি করেন না।
রাহী কলেজে উঠার পর থেকে ক্লাসেও সেজেগুজে যায়৷ মাঝেসাঝে সে সাজকে বেশ
উগ্রই বলা চলে। আফজাল সাহেবের চোখেও ব্যাপারটা ধরা পড়েছে, তারা ছোট থাকতে এভাবে ক্লাসে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারতেন না! আশা-রাহীর মা-ও নিজেকে পরিপাটি রাখতে খুব ভালোবাসতেন, তবু তিনি মার্জিত পোশাকের বাইরে কিছু পরতেন না। স্ত্রী গত হওয়ার পর থেকে দুই মেয়েকে তিনি একইভাবে বড় করেছেন। কই, আশা তো এমন হয়নি! রাহীটা এত অন্য রকম হয়ে গেল কেন বুঝে পান না তিনি। কিন্তু বাড়ন্ত মেয়েকে লজ্জায় কিছু বলতেও পারেন না। তা ছাড়া মেয়েদেরকে ছোট থেকেই সবসময় ইচ্ছামতো চলতে দিয়েছেন, এখন এসে সে স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সেদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলেন, রাহী কয়েকজন ছেলে বন্ধুর সাথে গাড়ি করে বের হয়ে গেল। যাওয়ার আগে বলেছিল, আজ একটা বার্থডে পার্টি আছে পাপা। তিনিও বরাবরের মতো সায় দিয়েছেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে উদ্বেগ তাকে ছেকে ধরল। মেয়েটা ক্রমেই লাগামছাড়া হয়ে উঠছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি, তবু বাবার মন কন্যার বিপদের আশঙ্কায় কেমন দুরুদুরু করতে লাগল।
দু বোন কোথাও ঘুরতে গেলে সবাই যে আশাকেই ঘুরে ঘুরে দেখে, এটা রাহীর নজর এড়ায় না। এত সুন্দরী কেন আশা? বড় বোনকে মাঝে মাঝে খুব হিংসা হয় ওর। ইশ, সে-ও যদি এত সুন্দরী হতে পারত! আজকাল অবশ্য চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি। আগেও সাজগোজ করত, ইদানিং আরও বেড়েছে। সামনা-সামনি আশার মতো প্রশংসা না পেলেও সোশ্যাল মিডিয়াতে ওর বিরাট ফ্যানবেইজ। টিকটক আর ইন্সটাগ্রামের সুবাদে এখন ওর লাখ লাখ ফলোয়ার। হাজারো মেয়ে ওর কাছে মেইক-আপ টিপস চায়। কোথায় কোন মেইক-আপ করতে হবে, কোন জামার সাথে কোন লুকটা মানাবে, ইন্সটাগ্রামে কোন ফিল্টার দিয়ে ছবি এডিট করতে হবে সব তার নখদর্পনে। কত ছেলে ওর জন্য পাগল! এক ডাকে মরতে রাজি। ব্যাপারটা রাহী বেশ উপভোগ করে। হাজার হোক, প্রশংসা পেতে কার না ভালো লাগে! আশা এমনিতে যতই প্রশংসা পাক না কেন, ইন্সটাগ্রামে ওর এত ফলোয়ার নেই, এটা ভাবলে চেহারা নিয়ে রাহীর কষ্ট কিছুটা হলেও কমে।
কত ছেলে ওর জন্য পাগল! এক ডাকে মরতে রাজি…
লাইকের সংখ্যার সাথে সাথে রাহীর লুকস নেওয়ার পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। একদিন পার্টি লুক তো আরেকদিন ভ্যাম্পায়ার লুক! সেদিন একটা স্টার্ন লুক নেওয়ার জন্য পার্লার থেকে মাথার একপাশের চুল চেছে ফেলল। অন্যপাশের চুল করে ফেলল উজ্জ্বল নীল। চোখ-ধাঁধানো নীল চুল, গায়ে ফ্যাশন কোট, ঠোঁটে ফেইক রিং লাগিয়ে যখন ভিডিও ছাড়ল, সবাই খুব বাহবা দিচ্ছিল। ঠিক এমন সময়ই পাপা ঘরে ঢুকে ভ্রূ কুঁচকে তাকালেন। রেগে গেলেও পাপা চিৎকার চেঁচামেচি করেন না। কিন্তু মেজাজ যে খারাপ হয়েছে রাহী কি তা বোঝেনি! খাবার টেবিলে ঠিক মেজাজ বেরিয়ে এল। পাপা রাহীর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আজকাল খুব ঘোরাঘুরি হচ্ছে। কাল যে ছেলেগুলোকে দেখলাম, ভালো ফ্যামিলির ছেলে বলে মনে হলো না।
অন্যদিন হলে হয়তো রাহীও হাসতে হাসতে বলতো, হ্যাঁ বাবা, ওরা সবগুলা এক একটা বদ। কিন্তু এই মুহূর্তে রাহীর মেজাজও চড়ে আছে। বাবা সবসময় ওর পিছেই লাগে। কই, আশার বান্ধবীদের নিয়ে তো কখনো কিছু বলে না? ধুম
করে বলে বসল, আমি দেখতে খারাপ দেখেই আমার বন্ধুদের পিছে লেগেছ তুমি। আশা ফর্সা তাই ওর কোনো দোষ নাই, না? যত দোষ খালি আমার? আমার বন্ধুরা খারাপ আর ওর বন্ধুরা খু-উ-ব ভালো?
আফজাল সাহেব নির্বাক হয়ে গেলেন। তার ছোট মেয়েটা একটু একরোখা তিনি জানেন। কিন্তু এভাবে তাকে যা-তা বলবে এতটাও আশা ছিল না। কিছু বলার আগেই রাহী এক ঝটকায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। গটগট করে নিজের ঘরে গিয়ে ধড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিল। আফজাল সাহেব কিছুক্ষণ তড়িতাহতের মতো বসে রইলেন। এরপর মেয়ের ক্ষুধার কথা ভেবে আর বসে থাকতে পারলেন না। সোজা মেয়ের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।
আশাও বাবার পিছু পিছু দাঁড়াল। রাহী মা, খেতে আয়!
-না, আমি খাব না। ভেতর থেকে রাহীর বজ্রকণ্ঠ শোনা গেল। এর পরপরই কান্নার আওয়াজ।
আমি কি তোকে বন্ধুদের সাথে মিশতে মানা করেছি?
রাহী কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে কী বলল বাইরে থেকে তেমন বোঝা গেল না। আশা একটু রাগ হয়েই বলল, রাহী, তুই কোনো কিছু শোনার অবস্থায় নেই। তুই বের হ। আগে খেয়ে নে, বাবা তোর জন্য না খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে!
রাহী দরজা খুলল না। আশা নরম হয়ে বললেও হয়তোবা দরজা খুলত। কিন্তু আজ আশাও তাকে কথা শোনাচ্ছে! তার মনে হলো, পৃথিবীর কেউ তাকে ভালোবাসে না। কেউ তার আপন না। মৃত মায়ের কথা ভেবে ভেবে মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে খানিকক্ষণ কাঁদল সে, এরপর উঠে গিয়ে দাঁড়াল আয়নার সামনে। সাজতে শুরু করল। কাজল লেপ্টে চোখের চারপাশে ছড়িয়ে আছে, ঠোঁটে কান্নার মতো এক চিলতে হাসি, কপালে মোটা সিঁদুর। ছবির ক্যাপশন দিলো ‘পারু। সেই ছবিতে আধা ঘণ্টার মধ্যে দেড় লক্ষ লাইক পড়ল। রাহীর মনও আনন্দে নেচে উঠল। মনে মনে নিজেকে একটু ধমকে বলল, ইশ, কেন যে পাপাকে উলটাপালটা কথা বলে এত হার্ট করলাম! কাল সকালে উঠেই ‘স্যরি’ বলব।
U.
আশা মা, রাহী মা, জলদি রেডি হ। আমি পনেরো মিনিট পরেই বেরোব।
রাহী ফট করে বলে বসল, বাবা, পনেরো মিনিটে পারব না। আধ ঘণ্টা লাগবে। আশা চোখ কটমট করে তাকাল বোনের দিকে। ইশারায় চুপ করতে বলল।
ওদের বড় ফুপা ইন্তেকাল করেছেন কিছুদিন হলো। আজ সে উপলক্ষে দুআ-কালামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাবার মন রাখতে ওদেরও সঙ্গে যেতে হবে।
-মরাবাড়িতেও তোর সাজগোজ করা লাগবে? ইশ আশা, কী যে বলিস না তুই! মরাবাড়িতেই তো এক্সট্রা কেয়ারফুলি সাজতে হবে!
– কী সাজবি শুনি?
একটা স্যাড অ্যান্ড সোবার লুক, ইউ নো! নাথিং মাচ। আয় না, তোকেও সাজিয়ে দিই। একদম হালকা করে…
– না বাবা, তুই-ই সাজ। আমার অত লাগবে না। ‘যাহ, ঢং’ বলে ব্যস্ত হাতে নিজেকে একটু সাজিয়ে নিল রাহী। মনে মনে খুব তারিফ করল নিজের। ও খেয়াল করেছে, সাজলে লোকে ওর প্রশংসা করবেই করবে।
ফুপুর বাসায় অনেক লোক গমগম করছে। পুরুষরা বেশিরভাগ ছাদে আর নিচে চলে গেছে। একজন হুজুর মাইকে সবাইকে দুআ পড়ার কথা অনুরোধ করছেন, নিজেও তিলাওয়াত আর দুআ-দরুদ পড়ছেন। আশার দিকে আড়চোখে তাকাল রাহী। দেখল, আশা ওর আঙুলের ভাঁজ ধরে ধরে মুখ বিড়বিড় করছে। কেমন করে যে আশা সবখানে খাপ খাইয়ে যায় রাহী ঠিক বুঝতে পারে না। রাহীর উশখুশ লাগছে। আগরবাতির গন্ধে বমি পাচ্ছে ওর। আশাটা একটু কথা বললেও হতো। মানুষের ভারি নিঃশ্বাস আর কিছুক্ষণ পর পর মহিলাদের কান্নায় বাতাসটা গুমোট হয়ে আছে।
টুপ করে মহিলাদের ভিড় ছেড়ে উঠে পড়ল রাহী। এরকম দমবন্ধ পরিবেশে কতক্ষণ বসে থাকা যায়। এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে একেবারে কোণার বেডরুমটায় চলে এল। এই ঘরটায় লোকজন অপেক্ষাকৃত কম। পাশেই লাগোয়া বারান্দা, ঠান্ডা বাতাসে জানালার পর্দা উড়ছে। মাঝ বরাবর একটা খাট। সেদিকে তাকিয়ে রাহীর চোখ আটকে গেল।
বিদেশি পুতুলের মতো একটা মেয়ে! কত বয়স হবে? ওদের সমানই বোধ হয়। কিন্তু এত সুন্দর! এত ভয়ংকর সুন্দর কোনো মানুষ হতে পারে! রাহীর মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণের জন্য ওর শ্বাস আটকে গেছে। একমনে তিলাওয়াত করছে মেয়েটা। অপূর্ব সেই তিলাওয়াত! হুজুরদের কুরআন পড়াও তো এতক্ষণ শুনল। কেমন যেন মরামার্কা। এই মেয়েটার পড়ায় এক অদ্ভুত জীবন্ত সুর। একেবারে অন্তরে গিয়ে নাড়া দিচ্ছে। রাহীর হৃদয় মোচড় দিয়ে উঠল।
মেয়েটার সৌন্দর্যে একটা অপার্থিব ব্যাপার আছে। সাদা সুতির একটা কামিজেও কী যে মানিয়েছে।
😍আরো পড়তে অথবা দেখতে – অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। We Respect Every Author Hardwork – boipaw
 
ষোলো: দ্বিতীয় সংখ্যা pdf download free no available (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০২২) – Sholo Magazine PDF Download Free No available.
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?