শ্বেত পাথরের মালা – আফিফা পারভীন|

বই_শ্বেত_পাথরের_মালা।

লেখক_আফিফা_পারভীন।

প্রকাশনি_ছাপাখানা।

প্রচ্ছদ_ফাইজা_ইসলাম।

মদ্রিত_মূল‍্য_425।

কাহিনি_সংক্ষেপ: জীবন নদীর মতোই গতিময়। নদীর স্রোত যেমন কারও জন্য থেমে থাকে না, তেমনই জীবনও থেমে থাকে না। সময় বয়ে যায়, জীবন এগিয়ে চলে তার চক্র পূরণ করে মৃত্যু নামক গন্তব‍্যের দিকে। অনিশ্চিত পৃথিবীতে তবুও মানুষ মায়ার সংসার সাজায়, ভালোবাসে, ভালোবাসায়।

পাঠ_প্রতিক্রিয়া:

                           এই বইটা আমার কাছে  একটি জীবন্ত অনুভূতির উপখ‍্যান। বইয়ের প্রতিটি লাইন আমি পড়েছি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। মনে হচ্ছিল লেখক যেন শব্দ দিয়ে ছন্দ তুলছেন। অথবা শব্দগুলো হচ্ছে রং তুলি লেখক ক‍্যানভাসে মনোমুগ্ধকর কোন দৃশ্য একেঁ চলছেন। যেমন- লেখক লিখলেন- শবনম তার নামের মতোই স্বচ্ছ ও টলটলে। সে ভোরের শিশিরের মতোই স্নিগ্ধ ও নিষ্পাপ। লাইনগুলো পড়তে পড়তেই যেন আমি ছোট্ট শবনমকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম!!

গল্পটা শুরু হয় ছোট্ট শবনব ও তিতাসকে দিয়ে। অসম বৈশিষ্ট্যের দুই কিশোর -কিশোরি। একদিকে তিতাস বেল ধীরস্থির ও পরিনত মনের  অন‍্যদিকে শবনম ভীষণ চঞ্চল ও ছটফটে স্বভাবের প্রজাপতির মতন।

ভালোবাসা কি সেটা বোঝার আগেই একজনের মনে ভালোবাসার রং ছেয়ে গেছিল। ভালোবাসলে কি করতে হয় সেটা যানার বয়স তার নয়। তবুও সে যানে ভালোবেসে সে তার চঞ্চল প্রজাপতিকে পর্বত হয়ে আগলে রাখবে। আপর পক্ষ কি কখনো সেই গভীর ভালোবাসা বুঝতে পেরেছিল!!

শিউলি বিছানো পথ ধরে এই দুই কিশোর কিশোরীর একসাথে পথ চলা শুরু হয়েছিল। দুজন কি এক সাথে সারাজীবন সেই পথ চলতে পেরেছিল? নাকি হঠাৎ কোন অজানা ঝড় এসে দুটো পথ আলাদা হয়ে যায়!

ঝর আসে ঝর থামে, মানুষ আবার নতুন করে সাজায় তাদের জীবন।

বইটা পড়তে পড়তে আবিষ্কার করলাম দুই ধরনের ভালোবাসা। ভালোবাসা কি?

সারাদিন আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি করে জাহির করাটা কি ভালোবাসা। নাকি আজকের জেনারেশনের মতন তোমাকে না পেলে বাঁচবো না। তোমাকে না পেলে মরে যাবো টাইপ কথা বলা সেটা ভালোবাসা?

নাকি চুপথেকেও কোন কিছু না বলেও আপর পক্ষকে অনুভব করানো কেউ একজন পাশে আছে থাকবে। টিল দ‍্যা এন্ড অফ দ‍্যা লাইফ। কিছু না বলেও হাজার কথা বোঝানো। দুটো মনের উপলব্দি কেউ আছে পাশে থাকবে সব সময়। ভালোবাসা কি সেটা নয়?

আমরা আজকাল দেখানো ভালোবাসা টাকেই আসল ভেবে নেই। এবং সেখানেই করে ফেলি মস্ত বড় ভুল!!

আরো একটা কথা আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেয় বইটা। বাবা মা যখন কিছু বলেন কিছু করেন। তখন সেটা সন্তানের ভালোর জন্যই করেন।  পৃথিবীর কোন বাবা মা ই বোধহয় তার সন্তানের খারাপ চাইবেন না জ্ঞানত।

তবে আমরা সন্তানেরা দুদিনে জাহির করা ভালোবাসার জন্য নাড়ির টানকে ছিন্ন করতেও ভুল করিনা।

এবং ফলাফল! ভালো হওয়ার কথা কি?

এই বইতে আরো যা পেয়েছি তা হলো বন্ধুত্বের মিশাইল। শুদ্ধতম কিছু বন্ধুত্ব যারা রক্তের সম্পর্কের উর্ধ্বে গড়ে তুলেছে এক আত্মিক সম্পক!

যারা শুধু সুখের সময় নয় দুঃখের সাথী হয়েছে বিপদে ঢাল হয়েছে।

প্রিয়_চরিত্র: লেখকের বাকি বইগুলো পড়তে গিয়ে আমি সব সময় দ্বিধান্বিত হয়ে যেতাম। সবাইতো প্রিয় কতজনের নাম লিখবো!!

কিন্তু এই বইটা পড়ে শুরু করে এবং শেষ করার আগ পযর্ন্ত আমি দুটো চরিত্র মন থেকে অনুভব করতে পেরেছি। এরা দুজন আমার মনে গেথে থাকবে আজীবন। তাই অনেকগুলো পছন্দের চরিত্র থাকলেও প্রিয় চরিত্র দুটো।

চৈতী সিনহা: বন্ধুত্বের মিসাইল বললাম না। এই মেয়েটা তার উদাহরণ। রক্তের সম্পর্কের বাইরেও যে কিছু সম্পর্ক থাকে। যারা আপনার জন্য নিজের জীবন দিতেও কুন্ঠা বোধ করে না। তাদের উদাহরন চৈতী সিনহা।

চৈতী সিনহাকে নিয়ে বলতে গেলে আমি রচনা বানিয়ে ফেলতে পারি। তবে স্পয়লার হয়ে যাবে বলে আর কিছু বললাম না।

চৈতী সিনহা আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। আপনার নামটা প্রতিবার সম্মানের সাথেই উচ্চারণ করি।

(নোটেট:লেখকের সব বইয়ে খুব সল্প সময়ের জন্য আসা চরিত্র গুলো সব সময় গভীর রেশ রেখে যায়।)

তিতাস: একে নিয়ে আমি কি বলবো!!

এর নামটা নিতে গেলেই আমার চোখ ভরে আসে কান্নায়। ধৈর্যতার প্রতিক? ভালোবাসার মিশাইল? নাকি অন‍্য কিছু!

ভালোবাসার অন‍্যরকম এক সংঙ্গা শিখালেন তিনি।

বুকের মধ্যে পর্বতসম ভালোবাসা নিয়েও এভাবে দূরে সরে থাকা সম্ভব!! 

একটা সুন্দর   সম্পর্কে শুধু ভালোবাসা নয় অপর পক্ষের জন্য সম্মান শ্রদ্ধা বিনয় এবং ধৈর্যর প্রয়োজন তা তিতাস শিখিয়ে যায়।

প্রিয়_ লাইন:

নামে কী আসে যায়? ভালো করে পড়াশোনা করো। তোমার নাম যদি ” কলা গাছও হয়, লোকে তোমাকে ‘কলাগাছ স‍্যার” বলেই সম্মান করবে।

(ব‍্যাকটায় সামান্য হিউমারের ব‍্যাবহারে অনেকেই হেসে উড়িয়ে দিবে। তবে আমি  এই ব‍্যাক‍্যের মর্মঅর্থ উপলব্দি করেছি। এবং বুঝতে পেরেছি আসলেও নামে কি আসে যায়?

আমি নিজেকে যেমন ভাবে তৌরি করবো। লোক আমাকে তেমন সম্মান করবেন।)

সামান‍্য কিছু মুহূর্তের ভালোলাগা যদি এমন দীর্ঘস্থায়ী খারাপ লাগা বয়ে আনে, তাহলে তার নাম কি ভালোবাসা হয়?”

( ভালোবাসায় কোনটা জরুরি মন নাকি শরীর? নাকি দুটোই? সব সব কিছুর একটা নিদিষ্ট সময় আছে। কিছু নিষিদ্ধ মুহুর্তের ভালোলাগাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে সারাজীবনের মনে খারাপ কিছু ডেকে আনার নাম কি ভালোবাসা?)

যে মানুষ টা আপনার সাথে দিনের বেলাতেই বেরুতে সাহস পায় না, তাকে আপনি কতটা ভালোবাসতে পেরেছেন আর সে কতটা আপনাকে ভালোবাসে।……. আপনার কাছে যদি সে নিরাপদবোধ না করে তাহলে কোথায়, কীসের ভালোবাসা বলতে পারেন? ভালোবাসা শব্দটার মানে বোঝেন আপনি?

ভালোবাসা নির্ভর হতে শেখায়, স্বস্তি দেয়। তহলে তার ক্ষেত্রে কেন ভালোলাগার মানুষকে নিয়ে এত অস্বস্তি, এত ভয়?

 লাইন দুটো পরপর লিখলাম এ কারনে আমার মনে হয়েছে উপরৃর লাইনে উত্তর এই লাইনটা।)

মাত্র দশদিনের জন্য আমি হেরে গেলাম। আমার চাওয়া ও চেষ্টায় কোনো কমতি ছিলো না।”

প্রচ্ছদ: চোখের শান্তি আর মনের প্রশান্তি দুটোই পাওয়া যায় প্রচ্ছদ টার দিকে তাকালে। চোখ জুড়নো যাকে বলে। বই কেনার ক্ষেত্রে যাদের প্রচ্ছদ আকর্ষণ করে। এই বইটা তাদের মন কাড়বে নিশ্চিত।

বইটা সমানে থেকে দেখতে এতো সুন্দর। যে হাতে নিলে মনটা শিতল হয়ে যায়।

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?