বইঃ শীত নামে পাহাড়ে
লেখকঃ আলী রেজা
ধরনঃ সমকালীন উপন্যাস
বিক্রয় মূল্যঃ ২৫০/-
প্রকাশনীঃ দূরবীণ
ডাকবাংলোয় পৌঁছে দেখলাম, আপ্রুমা বারান্দায় দাড়িয়ে। বললাম, ‘আহা! একদম ভুলে গিয়েছিলাম। কতক্ষণ এসেছ?’ বলে দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে ক্যামেরা রাখলাম। হাত-মুখ ধুয়ে যখন বারান্দায় এসে বসলাম তখন। বেলা আর বিশেষ অবশিষ্ট ছিল না। গোধূলির সোনালী আলো পড়েছে। বারান্দায়। আপ্রুমা কাঠের রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে দাড়িয়েছিল। গায়ে তার জীর্ণ একটা মামারাউজি (ব্লাউজ)। বেলা শেষের স্নিগ্ধ আলোতে লক্ষ্য করলাম, তার তের-চৌদ্দ বছরের তরুণ লতানো দেহে যৌবন আসছে ধীরে, জীর্ণ কাপড়ের আবরণে তার আভাষ সুস্পষ্ট। কিন্তু বাঙালি মেয়েদের মত সেদিকে তেমন বড় একটা সতর্কতা নেই। তার মুখখানা বড় সরল, বড় মিষ্টি ও লাবণ্যময় । সেখানে শুধই তারুণ্য; যৌবনের আভাস প্রকাশ পায়নি এখনো। উঠে গিয়ে তাকে টেনে এনে হাতলে বসালাম এবং নিজে ভাঙ্গা ইজি চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসে বললাম, ‘অনেকক্ষণ হয় এসেছ বোধহয়, না?’ আপ্রুমা মাথা নেড়ে জানাল, “হ্যাঁ।”
বললাম, ‘আজ তো আর বেলা নেই, অন্যদিন ছবি আঁকা যাবে। আজ গল্প করা যাক, কি বল??
আমিই প্রথম শুরু করলাম- দেশ-বিদেশের গল্প, শহুরে জীবনের রকমারী ঘটনা, বন-জঙ্গলের দুঃসাহসিক অভিযান ও পরিশেষে ভূতের গল্প। ক্রমে প্রথম পরিচয়ের জড়তা অনেকটা কেটে গেল। বেশ একটু ঘনিষ্ঠ হল সে। তথাপি সেদিন শুধু মাঝে মাঝে দু-চারটা ছাড়া বেশি কথা বলেনি। হয়তো মনের ভাব খুব গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারবে না ভেবে। শুধু শুনেছে নীরবে এবং তার সরল সুন্দর মুখে মাঝে মাঝে হয়তো ফুটে উঠেছে ভয়, বিস্ময়, সমবেদনা ও খুশির অভিব্যক্তি, কিন্তু অন্ধকারে আমি তা দেখতে পাইনি।
রাত বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে শীত। চারদিকের অন্ধকারে অসংখ্য অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত উড়ে বেড়াচ্ছে জোনাকির দল। ঝিঁ ঝিঁ ডাকছে অবিশ্রান্ত একটানা স্বরে। চৌকিদার তখনো আসেনি। বললাম, শীত করছে বোধহয়? চল, তোমায় পৌছে দিয়ে আসি ।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?