শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা। book review 2021 ll bookpoint24

 বইঃ শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা

লেখকঃ ভাস্কর চক্রবর্তী 

প্রকাশনীঃ দে’জ পাবলিশিং 

প্রচ্ছদঃ দেবাশিস রায়

পৃষ্ঠাঃ ৫৬

মূল্যঃ ৪০ রুপি। 

সব ভাষাতেই এমন কবি বিরল, যাঁর কবিতায় একটি নতুন যুগ, তাঁর নিজের ভাষায় কথা বলে ওঠে। ভাস্কর চক্রবর্তী  সেই বিরল জাতের কবি। তাঁর কবিতায় বাঙালির নগরজীবন, অবশেষে তাঁর নিজের ভাষা খুঁজে পেয়েছে। যে কোনও কবির পক্ষেই এ এক বিরল কীর্তি, তাতে সন্দেহ নেই।

 বস্তুতপক্ষে বাংলা কবিতায় আধুনিকতার জন্মলগ্ন থেকেই জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, সমর সেন প্রমুখ কবির হাতে নাগরিক মানুষের সংকট ও শূন্যতার সঠিক অভিব্যক্তি রচনার চেষ্টার শুরু। পরবর্তী কালে শক্তি-সুনীল-শঙ্খ-উৎপল আদি পঞ্চাশের কবিদের কলমে সেই প্রয়াস তীব্রতর। কৃত্তিবাসী আন্দোলন এবং হাংরি আন্দোলন এ দুয়েরই মিলিত অভীষ্ট ছিল কবিতায় নাগরিক কণ্ঠস্বরের চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠা। সব মিলিয়ে কবিতায় নগর-যন্ত্রণার ভাব জমছিল অনেক, কিন্তু ভাষাটা ঠিক ফুটছিল না। এমন সময়, বিশ শতকের ষাটের দশকে, ভাস্কর চক্রবর্তী নামের এক নতুন কবির কবিতায় হঠাৎ শোনা গেল  আশ্চর্য উচ্চারণ।

 বাংলা কবিতায়, বিপন্ন – বিষণ্ণ নাগরিক মানুষের অথেনটিক কাব্যভাষার জন্ম হল। এই কাব্যভাষার আবিষ্কারই ভাস্করের কবিজীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। অতঃপর এই নতুন আবিষ্কৃত ভাষায় ভাস্কর লিখে চললেন আধুনিক মানুষের নৈঃসঙ্গ্য, বিষাদ ও শূন্যতাবোধের অমোঘ অকাট্য সব কবিতা। সেই কবিতা এক দিকে যেমন নগরজীবনের কান্না, স্তব্ধতা ও দীর্ঘশ্বাসের অবিকল ধ্বনিচিত্র; অন্য দিকে তেমনই সেই কবিতা নগরজীবনের ক্লেদ, গ্লানি ও হতাশার বিরুদ্ধে এক ক্ষুব্ধ কবি হৃদয়ের নিরন্তর গেরিলাযুদ্ধের মরিয়া রেড বুক। গ্লানিময় ও অন্তঃসারশূন্য এই নগরজীবনের যথাযথ কাব্য রচনা করার জন্য এক দিকে ভাস্কর নিজের ‘রাস্তায় – ঘোরা’ জীবনকে একটা কবিতার গিনিপিগের মতো ব্যবহার করেছিলেন, অন্য দিকে এই কাব্যের যথাযথ আঙ্গিক রচনার জন্য ভাস্কর তৈরি করেছিলেন কবিতার ব্যক্তিগত ম্যানিফেস্টো, যাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘কবিতার একটা লাইনের থেকে আরেক লাইনের দূরত্ব হবে কমপক্ষে একশো কিলোমিটার। কিন্তু, অদৃশ্য তলদেশে থাকবে মিলিমিটারের নিবিড় সম্পর্ক।’।

 এখানে অবশ্য তথ্যের খাতিরে একটা কথা বলতেই হবে যে, বাংলা কবিতায় আন্তর্জাতিক অনুপ্রেরণার ধারা বজায় রেখে, ভাস্করও, তাঁর এই কাব্যরীতির নির্মাণে, পাশ্চাত্যের অ্যান্টি – পোয়েট্রি আন্দোলন এবং বিশেষত তাদেউশ রুজেভিচ প্রমুখ কয়েক জন পূর্ব ইউরোপীয় কবিদের দ্বারা প্রাণিত হয়েছিলেন।

কবি ভাস্কর চক্রবর্তী  বিংশ শতকের ষাটের দশকের বিশিষ্ট কব।  তিনি পেশায় শিক্ষক ছিলেন।

♦শেষ রাত্তিরের ঝড়ে আমার হলদে চাদর উড়ে গিয়েছিলো, তোমাদের বাগানবাড়ির দিকে–

♦ আমার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে ন

আমার ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে না

আমার কোন চেয়ার টেবিল নেই।

♦ঝরে পড়ছে নক্ষত্র,  শব্দ নেই, শুধু মানুষ 

মাদুর পেতে শুয়ে রয়েছে বারান্দায় 

মরা মারছে

বুড়ো হয়ে যাচ্ছি আমি

♦ হাতে, পুরোনো কাগজের মালা–তুমি জানো শুধু, অপেক্ষা করতে হয় কীভাবে–

♦আমার হারিয়ে -যাওয়া দিনগুলোর কথাই শুধু ভেবেছি  আমি–আমি

জিভ দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছি মৃত্যু,  ছুয়ে দেখেছি জীবন–এবার গ্রীষ্মে

আমার অসুখ আরও ভয়ংকর ছড়িয়ে পড়বে মনে হচ্ছে 

এবার গ্রীষ্মে, এক নতুন হাতপাখা আমি উপহার দিয়ে যাবো তোমাকে। 

আমার ভালো লাগে না

শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকবো।

লিখেছেন:- প্রিয়াক্ষী ঘোষ

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?