শহরের উষ্ণতম দিনে : লেখক তাসনিয়া আহমেদ | Sohorer Usnotomo Dine

  • বই : শহরের উষ্ণতম দিনে
  • লেখক : তাসনিয়া আহমেদ 
  • প্রচ্ছদ : সানজিদা স্বর্ণা
  • অলংকরণ : তাসনিম তাহসিন তনু
  • ধরন : গল্পগ্রন্থ
  • প্রকাশনী : সতীর্থ প্রকাশনা
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১০
  • মলাট মূল্য : ২১০ টাকা
আঠারোই জুন’ ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ ‘অধরা’ ‘নয়ন’ ‘প্রথমবার’ ‘অপেক্ষা কিংবা মায়াবতীদের গল্প’ শুনতে চাইলো। ‘তর্জনী’ মেপে ‘একদিন’ ‘জলপদ্ম’ হাতে ‘ঠিকানা’ বরাবর ‘পুতুল’ ভবনের ‘পাঁচতলা’ পৌঁছালাম। চেষ্টা তদবিরে ‘মতিন সাহেবের একদিন’ জুটলো, তিনি গল্প শোনাবেন ‘শান’ বাঁধানো পুকুর ঘাটে।
বইয়ে থাকা গল্পের শিরোনাম দিয়ে ছোট্ট একটি গল্প বলার চেষ্টা করলাম৷ হাহা! আমার এই চেষ্টা সফল না হলেও গল্পকারের চেষ্টা সফল হয়েছে। ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন ঢঙের মোট ১৪টি গল্প দিয়ে পুরোটা সময় বেশ মাতিয়ে রেখেছিলেন। 
শহরের উষ্ণতম বিকেলে হাতে তুলে নিয়েছিলাম ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ বইটি৷ নাম শুনলে মনে হয় যেন রোমান্টিক উপন্যাস। প্রথম চমকটা এখানেই৷ এটি রোমান্টিক কোনো উপন্যাস নয়৷ একক গল্প সংকলন। অবশ্য প্রচ্ছদেই এটি উল্লেখ ছিল। ১১০ পৃষ্ঠার বইয়ে মোট ১৪টি গল্প৷ তাই গল্পগুলোও বেশ ছোট ছোট৷ তবে আনন্দের বিষয় হলো, প্রত্যেকটি গল্প তৃপ্তিদায়ক। নির্দিষ্ট কোনো জনরায় আটকে থাকেনি৷ হরর, সুপারন্যাচারাল, মিস্ট্রি, রিভেঞ্জ, থ্রিলার, রোমান্টিক, স্যোশাল, ট্র্যাজেডি জনরাগুলোর সরব উপস্থিতি ছিল। সেইসাথে কাহিনি, চরিত্র, বর্ণনার ভাবভঙ্গি ও উপস্থাপনায় ছিল বৈচিত্র। অসাধারণ লেখনশৈলী আর শব্দ-বাক্যের পরিমিত ব্যবহার ভীষণরকম মুগ্ধ করেছে।
আমার কাছে মনে হয়, সাহিত্যের সবচাইতে কঠিনতম শাখা হচ্ছে ছোটগল্প। অল্প কথায়, স্বল্প পরিসরে একটি গল্প লেখা সহজ ব্যাপার নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা ‘ডু অর ডাই’ পরিবেশ তৈরি করে৷ কেননা একজন লেখক হয়তো অনেক সময় নিয়ে, অনেক ভেবেচিন্তে লেখেন। একটা থিম, একটা নির্দিষ্ট ঘটনা, একটা বিশেষ বার্তা তুলে ধরতে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন৷ উপন্যাসের মতো এসকল ছোটগল্পে খুব বেশি বিস্তারিত তথ্য উল্লেখের সুযোগ থাকে না৷ কিন্তু পাঠক যখন একটানা পড়ে যায় গল্পগুলো, অতি অল্প সময়েই একেকটা গল্প শেষ হয়ে যায়। ঠিকভাবে কানেক্টেড হওয়ার সময় পর্যন্ত পাওয়া যায় না৷ গভীরে প্রবেশ করা যায় না। গল্পে থাকা সূক্ষ্ম পয়েন্টগুলোও মিস হয়ে যায়। আমি এমন অসংখ্য পাঠক দেখেছি, যারা পড়া শেষে কিছু বুঝতে না পারলেও এক গল্প পুনরায় পড়ার আগ্রহ বোধ করে না। পড়লেও তৎক্ষনাৎ সেই চেষ্টা দেখা যায় না৷ তাই পাঠক অবধি পৌঁছানোর পূর্বেই একজন গল্পকারকে বেশ সতর্ক থাকতে হয়৷ সংযত কারণেই ছোটগল্প লেখা তাই খুব শক্ত কাজ৷ আর এ কাজটিই অত্যন্ত যত্ন সহকারে এবং সুনিপুণভাবে করেছেন লেখিকা তাসনিয়া আহমেদ। তিনি প্রকৃতপক্ষেই প্রশংসার দাবিদার। 
বইয়ের কোন গল্প কেমন ছিল তার বিস্তারিত বর্ণনায় যাবো না। হাতের পাঁচটি আঙুল যেমন সমান হয় না, তেমনি একটি বইয়ের সবগুলো গল্পের মান ও আবেদন একরকম আশা করা বৃথা৷ তবে গল্পগ্রন্থের বেলায় আমার এক ধরনের প্রত্যাশা থাকে৷ যেমন মোট গল্পসংখ্যার অর্ধেকও যদি মনে ধরে, তাতেই আমার সন্তুষ্টি। সেই হিসাবে বইয়ের সব গল্পই ভালো লেগেছে। তবে ‘ঠিকানা’, ‘তর্জনী’, ‘পুতুল’, ‘পাঁচতলা’, ‘প্রথমবার’, ‘আঠারোই জুন’ এবং ‘নয়ন’ এই ৭টি গল্পকে পছন্দের বিচারে এগিয়ে রাখবো৷
বইয়ের বানান, সম্পাদনা, প্রিন্টিং এবং বাঁধাই সন্তোষজনক। প্রচ্ছদটাও নজরকাড়া। তবে অলংকরণ আরও ভালো হতে পারতো। সবমিলিয়ে গল্পগ্রন্থটি বেশ উপভোগ্য ছিল৷ যারা ছোটগল্প পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য “শহরের উষ্ণতম দিনে” বইটি সাজেস্ট করব। হ্যাপি রিডিং। – Zamsedur Rahman Sajib
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?