শঙ্কু সমগ্র – সত্যজিৎ রায়

  • বইঃ শঙ্কু সমগ্র
  • লেখকঃ সত্যজিৎ রায়।
  • ধরণঃ সায়েন্স ফিকশন, চিরায়ত সাহিত্য
  • প্রকাশনায়ঃ আনন্দ পাবলিশার্স
  • প্রচ্ছদ মূল্যঃ ৪০০ টাকা
  • গুড রিডস রেটিং: ৪.৬/৫
  • ব্যাক্তিগত রেটিংঃ ৫/৫

বাংলা সাহিত্যের সবথেকে আন্ডার রেটেড ক্যারেক্টার সম্ভবত প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট এই চরিত্র আমাদের নিজস্ব সুপারহিরো বললে ভুল হবে না।

সব্যসাচী সত্যজিতের লেখা “বঙ্কুবাবুর বন্ধু” আমার পড়া বাংলা সাহিত্যের প্রথম সায়েন্স ফিকশন হলেও ১৯৬৫ সালে প্রথম প্রকাশিত প্রফেসর শঙ্কু তার “শঙ্কু সমগ্র” এর মাধ্যমে আমার জন্য সত্যিকারে সায়েন্স ফিকশনের জানালা খুলে দিয়েছে।
কাহিনী সংক্ষেপ:
“শঙ্কু সমগ্র” মূলত প্রফেসর শঙ্কুর নানান অভিযানের সংকলন। বিহারের গিরিডিতে চক্র প্রহ্লাদ ও ২৩ বছর বয়সী বেড়াল নিউটনকে নিয়ে বসবাসরত শঙ্কু চাইলেই বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতে পারতেন, কিন্তু আবিষ্কারের নেশায় মাতোয়ারা ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু স্বাধীনভাবে গবেষনার জন্য দেশেই থেকে গেছেন। তবে মাঝেসাঝেই নানান দেশী গবেষক বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে পড়েন নানা অভিযানে।
আমরা প্রথমেই জানতে পারি প্রফেসর শঙ্কুর মঙ্গল অভিযানের কথা তাকে নিয়ে প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস “ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি” তে। এরপর স্বপ্ন দ্বীপ, শঙ্কু ও হাড়, প্রফেসর শঙ্কু ও ভুত এমন ৪০ টি অভিযানে আমরা ৭০+ টি আবিষ্কারের মালিক শঙ্কুর দেখা পাই। বটিকা ইন্ডিকা, এয়ারকন্ডিশানিং পিল, লুমিনিম্যাক্স, রিমেম্ব্রেন, মিরাকিউরল, তৃষ্ণানাশক পিল, অ্যানাইহিলিন পিস্তল, শ্যাঙ্কোপ্লেন প্রভৃতি অত্যাশ্চার্জ আবিষ্কারের সাহায্যে নানা বাঘা বাঘা অপরাধীকে টেক্কা দিয়ে গেছেন আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ গোছের এই বিজ্ঞানী।
পাঠক মতামত:
প্রফেসর শঙ্কুর মাধ্যমে সত্যজিত রায় আধুনিক বিজ্ঞান দুর্গম অভিযানের সাথে ভারতীয় ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। সায়েন্স ফিকশন যে কাঠখোট্টা নয় বরং রসাত্মক ও হয় এইটাও প্রফেসর শঙ্কুই প্রমাণ।
ব্যাটম্যানের মত কুল গ্যাজেটওয়ালা এই বিজ্ঞানী আমার দেখা প্রথম সুপারহিরো। বড় হওয়ার পরে পড়ে বুঝলাম, সত্যজিত রায় আসলে শঙ্কুর মাধ্যমে দেখিয়েছেন আমরা যত বড় হই ততই গ্রাউন্ডেড হই।নিজের শেকড়কে মনে রাখলে সাফল্য এমনিই হতে এসে ধরা দেয়। প্রফেসর শঙ্কুর মাধ্যমে লেখক আসলে দেখিয়েছেন বিজ্ঞানের ভালো খারাপ বলে কিছু নেই, যা কিছু ভালো মন্দ তা সবই ব্যবহারকারীর মধ্যে।
লিখনশৈলী: সত্যজিৎ রায়ের লিখনশৈলী নিয়ে আসলে বলার কিছুই নেই।সাথে ছিলো তার নিজের হাতে আঁকানো নানান ছবি। সত্যজিৎ রায়ের জবানিতে প্রোফেসর শঙ্কু চরিত্রটি সৃষ্টির পিছনে প্রধান প্রেরণা ছিল তার পিতা সুকুমার রায়ের গল্প হেসোরাম হুঁশিয়ারের ডায়রি।
স্টোরি টেলিং: প্রথম বক্তার ডায়েরি আকারে লেখা প্রফেসর শঙ্কুর প্রতিটি উপন্যাস ও গল্পের প্লট আর স্টোরি টেলিং দুইটাই পাঠক কে কাহিনীতে ডুবিয়ে রাখবে। শব্দের উপর শব্দ গেঁথে উনি যেন আমাদেরকেও কাহিনীর মাঝে টেনে নিয়ে গেছেন।বারবার এক বসায় পড়ে ওঠার মত বই।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?