তোমার পালনকর্তা যাদের ওপর রহমত করেছেন, তারা ছাড়া (সবাই মতভেদ করতে থাকবে)। এ জন্যই আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন। ‘আমি অবশ্যই জিন ও মানুষ দ্বারা জাহান্নামকে পরিপূর্ণ করব’—তোমার প্রতিপালকের এ কথা পূর্ণ হবেই। [সুরা হুদ, আয়াত : ১১৯ ]
🍁 অনুক্রমণিকাঃ
জিন বইটির নাম দেখেই বুঝা যায় বইটি জিন নিয়ে হবে। হ্যাঁ, ঠিকই বুঝেছেন, পুরো বইটি জিনদের নিয়ে আবর্তিত, সাথে উঠে এসেছে দুইপ্রান্তের দুটো পরিবারের কাহিনি।এই বইটি না পড়লে বুঝতে পারতাম না যে জিন আর কালো জাদুর আসল স্বরুপ কেমন। খানিক লোভে পড়ে কিংবা দুনিয়াবে কিছুর পিছনে ছুটে মানুষ কীভাবে ইমান হারায় আর সেই ইমান হারানোর পিছনে শয়তান কীভাবে জিন জাতিকে ব্যবহার করে তা ফুটে উঠেছে এই বই। জিনদের প্রতি বিশ্বাস করা আমাদের আকিদার অংশ। বইটা পড়ে এই আকিদা বেশ ভালোভাবেই ক্লিয়ার হলো।
🍁 বই থেকে পর্যালোচনাঃ
পুরো বইয়ে দুটো কাহিনি সমান্তরাল এগিয়েছে৷ ঢাকার বেশ অভিজাত পরিবার সাজেদের। স্ত্রী তারিন, কেয়ারটেকার রফিক আর ছোট মেয়ে মাহাকে নিয়ে বেশ সুখেই আছে। মাহার জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল পার্টি রাখে সাজেদ আর সেই পার্টির পর থেকেই তারিন বদলে যেতে শুরু করে। তার সাথে ঘটতে থাকে ভয়ংকর সব ঘটনা। কখনো দেখে কেউ তাকে ডাকছে, কখনো বা দেখা পাচ্ছে শয়তানের। সাজেদ কিংবা রফিক ও বাঁচতে পারেনি এই আছড় থেকে। মাহার টিউটর আসলান নামে এক বিপ্লবী ছেলেও ফেসে যায় ঘটনাক্রমে। তারা ধীরে ধীরে বুঝতে পারে তারিনকে প্রচলিত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব না৷ রফিক ছুটে গিয়ে ফেনী থেকে হুজুর আনে, কিন্তু সে হুজুর ও রক্তবমি করে যায়। তার চিকিৎসা কররে প্রতিবেশী ডাক্তার জাফরকে ডাকে। জাফর চিকিৎসা করতে গিয়ে বুঝতে পারে এই বাড়ির উপর এক গাঢ় অন্ধকার বাসা বেধেছে।
মুয়াজ্জিন হাফেজ মিয়া অধিকাংশ সময় হতাশায় ভুগেন। গ্রামের একটা মসজিদ। বেশ ভাঙ্গা চোরা। মসজিদে নামাজী নেই বললেই চলে। হুজুর ও নেই। একদিন ফজরের সময় তাকে চমকে দিয়ে হাজির হয় এক সুদর্শন হুজুর। সে আসার পর থেকেই বেশ অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। গ্রামে আরেক প্রান্তে বাস করে এক কালো জাদুকর। হঠাত করেই সেই কালো জাদুকর ও হিংস্র হতে থাকে। যার রেশ পড়ে ঢাকা তারিন আর হাফেজ মিয়ার উপর।
কাহিনি আলাদা হলেও তাদের সূত্রপাত এক। যা খোলা হয় গল্পের শেষে।
🍁 পাঠ্যানুভূতিঃ
“জিন” বইটির কথা আগে অনেক শুনেছি যে, জিন ও কালো জাদু নিয়ে থ্রিলার ধাঁচের বই একটি। আগ্রহ জন্মে বেশ৷ থ্রিলার লেখা, তাও ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। না কিনে পারলাম না। একদিন পড়া শুরু করেছিলাম আর একদিনেই শেষ আলহামদুলিল্লাহ।
প্রথমে বেশ বর্ণনা ছিলো। কিছু জায়গায় বেশ ধৈর্য্য নিয়ে পড়েছি। কিন্তু গল্পের মোড় চেঞ্জ হয় জাফর আসার পর। হাত থেকে রাখার উপক্রম নেই।
এই বইয়ে প্রচুর তথ্যের সমাবেশ ঘটেছে। কিন্তু একটা তথ্য পড়তেও বিরক্ত জন্মেনি। বেশ সুন্দর করে লেখক গুছিয়ে লেখেছেন। পুরো গল্পে ইসলামের ছোঁয়া পাবেন। গল্পের চরিত্রদের থেকে শুরু করে সব জায়গায়। আর লেখক সফল হয়েছেন। কোথাও ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, এমন কিছু তুলে ধরেননি। আজকাল অনেককেই দেখি ইসলামিক থ্রিলার ট্যাগ দিয়ে বই বের করে। পড়ার পর বুঝা যায় সব নন-ইসলামিক কার্যক্রমে ভরা। এদিক থেকে লেখক সফল।
🍁বইটি আপনি কেন পড়বেন?
আমাদের সমাজে অনেক শির্ক আর কুফরি আছে। মুসলিমরা না বুঝে এসবে লিপ্ত। গ্রামে-গঞ্জে ৭০-৯০% মানুষ মাজার, তাবিজ, কবিরাজ কিংবা কালো জাদুতে বিশ্বাসি এবং কোনো সমস্যায় পড়লে তারা কবিরাজের আশ্রয় নেই। হ্যাঁ, শয়তানের সাহায্য নিয়ে ক্ষতি করা যায় যদি আল্লাহ চাই। কিন্তু সেটার শরয়ী চিকিৎসা ও আছে। এই বইটা পড়ে তা জানতে পারবেন। এবং সমাজে প্রচলিত কুফর সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা পাবেন।
জিন, কালো জাদু, সুলেমান আলাইহিসসালাম সহ অনেক ইতিহাসের সমাবেশ ঘটে বইয়ে। কেবল রোমাঞ্চই পাবেন না, শিখতে পারবেন অনেক কিছু।
🍁শেষ কথাঃ
আলহামদুলিল্লাহ বইটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। লেখককে ধন্যবাদ এমন একটা কঠিন, সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে এত প্রাঞ্জল ভাষায় লেখার জব্য। অপেক্ষা করছি বইটির সিকুয়েল এর জন্য।
বই পরিচিতি
বই-জিন
লেখক- এম.জে. বাবু
প্রকাশনা – গ্রন্থরাজ্য
পৃষ্ঠা- ৩৩৪
মূল্য -৫৮০
রিভিউ লিখেছেন 💕 সামিরা জান্নাত
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?