![]() |
Cover image: লাল রঙের নীল বৃষ্টি by তৃধা আনিকা |
“আচ্ছা, জীবনে এত বিচিত্র ঘটনা কেন ঘটে? কেউই হয় না মানুষটাকে নিজের সব পছন্দ কেন সঁপে দিতে ইচ্ছে করে? এই যে মাহির সব অনায়াসে ছেড়ে দিয়ে ভালো লাগছে, এর পেছনের কারণটা কী? কী?”
★ কাহিনী সংক্ষেপ:
গল্পটা একটা মিষ্টি মেয়ের। টিনেজ বয়সী সেই মেয়েটির জীবনের সবচেয়ে কষ্টের বিষয়টি ছিলো তার জীবনে মায়ের অনুপস্থিতি। মাকে হারানোর পর বাবা আর সে মিলে খুঁজে নেয় এক নতুন ঠিকানা। অনিচ্ছাকৃতভাবে পাওয়া সেই ঠিকানাটাই কিভাবে কিভাবে যেন একদিন তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর শুরুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনুভূতির খেলায়ও হার জিত থাকে। সেই একটু একটু হেরে যাওয়া, হেরে গিয়েও জিতে যাওয়া, লজ্জায় রাঙা লাল রঙা ভালোবাসার অনেকটুকু নীল রঙা সম্পর্কের চমৎকার এক বৃষ্টির গল্প! যেখানে বাবা-মেয়ে, ভাই-ভাই, ভাই-বোন, বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, ভালোবাসা আর সম্পর্কের ঝলমলে আলোতে আলোকিত হয়ে থাকবে পাঠক।
★ পাঠ প্রতিক্রিয়া:
যেহেতু লাইভে বারবার করে শারমিন আপু এবং তৃধাপু বলছিলেন বইয়ের সেট আপে ঝামেলা হয়েছে একটু, আমি বই পড়া শুরু করেছি চিন্তিত মনেই। প্রথম পৃষ্ঠা, দ্বিতীয় পৃষ্ঠা, তৃতীয় পৃষ্ঠা…এভাবে একের পর এক যখন পড়ে যাচ্ছিলাম, তখন এইসব বিষয় আমার মাথায়ই ছিলো না আর। পড়তে এত মজা পাচ্ছিলাম! ওইযে তৃধাপু লাইভে বলেছিলো “হ্যাপি মুডের গল্প” ঠিক তাই! প্রথম থেকেই আনন্দের সাথে পড়ছিলাম। নাজিয়া-রায়ানের বন্ডিংটা পড়ে উপন্যাসের শুরুটা হয়েছে একরাশ ভালো লাগা নিয়ে। এরপর তো আস্তে ধীরে যখন পুরো গল্পটা পড়েছি একেবারে প্রথম থেকে শেষ অবধি সবাইকে ভালো লেগেছে। আয়ানের ভুলভাল নামে নাজিয়াকে ডাকা, সবসময় ফ্লোর নাম্বার ভুল বলা, সায়েন্টিফিক সব ব্যাখ্যা আর সূত্রদের অকারণে নাজিয়ার উপর চাপিয়ে দিয়ে পড়া নেয়া আমার এত হাসি পাচ্ছিলো! মার্জিয়া থেকে শুরু করে জর্জিয়া পর্যন্ত কোনোকিছু বাদ পড়েনি (ঘর কাঁপানো হাসির ইমোজি)। একদম সিম্পল একটা স্টোরিলাইন যা মন খারাপ থাকা অবস্থায় পড়লে মন ভালো হতে বাধ্য! আমি দিন দুনিয়া ভুলে গিয়ে শুধু নাজিয়ার গল্পে ডুবে ছিলাম। আমার পরীক্ষার রুটিন হলো, রাতে আমায় হলের এসিস্ট্যান্ট প্রভোস্ট ম্যাম খোঁজ করলেন, আমি সবাইকে বলে রেখেছি যে আমি আজকে নেই। নেই মানে নেই। এতটাই মজে ছিলাম লাল রঙের নীল বৃষ্টিতে। আর পড়া শেষ করে আমার অবস্থা এমন হলো যে আমি হাঁটতেছি এতেও মনে হচ্ছে আমার সামনে মাহি দাঁড়িয়ে আছে, আসিফ বিড়ালের ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। খেতে গেলে বুয়ার জামাই আপ্যায়নের সব রেসেপির কথা মাথায় ঘুরঘুর করছে! বিরক্ত হয়ে আমি বইটা সামনে নিয়েই বসে থাকলাম এতে যদি অন্তত এরকম অস্থিরতা আর চিন্তা ভাবনাগুলো দূরে গিয়ে একটু শান্ত হতে পারি! যেকোনো গল্প পড়া শেষে যে মানুষদের সাথে আমার সবচেয়ে বেশি গল্প বিষয়ক আড্ডা হয়, তাদেরকেও বলতে ইচ্ছে করছিলো না যে বইটা পড়া হয়ে গেছে। শুধু মনে হচ্ছিলো আমি মনে মনে নিজের সাথেই আড্ডা দিতে পারবো। এত মিষ্টি একটা পরিশিষ্ট! পরিশিষ্ট একাই তো একটা গল্প হতে পারে। প্রোমোতে যখন পড়েছি নাজিয়াকে ‘নায়া’ বলে সম্বোধন করা হচ্ছিলো, বিষয়টা আমার কাছে অনেক ন্যাকা মনে হচ্ছিলো। নাজিয়া নামটাই তো সুন্দর, একে আবার নায়া বলে ডাকার কি হলো? কিন্তু বই পড়ে নায়া নামের পিছনের কারণটা জেনে অনেক ভালো লেগেছে। এরপর তো মনে হলো নায়াই পার্ফেক্ট! মা হারানোর বিষয়টা জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে মেয়েটা এমনভাবে বলে গেছে যে আমার এক দৌড়ে আম্মুর কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করছিলো। আর মাহিরা, জাহির, আসিফ এই তিনটা চরিত্র অল্প সময়ের জন্য থেকেও সবচেয়ে বেশি দারুণ! ভালোবাসা একটা শব্দ অথচ এর প্রকাশের ধরণ প্রতিটা মানুষে মানুষে আলদা। লুইস, আয়ান, আরাফ, বিথী, লিজা, নাজিয়ার বাবা প্রত্যেকটা মানুষের ভালোবাসবার ক্ষমতা কত অসাধারণ! লিজার তো প্রতিটা কথা চমৎকার! “ভালোবাসা আমার জিনিস। আমি খুব হিসেব করে করে খরচ করবো। যে আমাকে খুব ভালোবাসবে আমি শুধু তাকে ভালোবাসবো। সে আমার পছন্দ না হলেও আমার ভালোবাসাটা শুধু সেই পাবে।” লিজার বলা এই অংশটা আমি যে কয়বার পড়েছি সেটা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব!
বইটা কেমন লেগেছে আমি ঠিকঠাক গুছিয়ে বলতেই পারছি না। এই প্রথম কোনো বইয়ের রিভিউ গিয়ে আমার ভয় করছে পাছে না স্পয়লার হয়ে যায়। শুধু বলবো, যে বইটা একটু তাড়াতাড়ি পেয়ে পড়ে ফেলতে টানা ৫টা দিন আমি একা একা কুমিল্লায় থেকে গেছি আমার সবটুকু সময় স্বার্থক! আর তৃধা আনিকা স্বার্থক কিসে জানেন? লাল রঙের নীল বৃষ্টির ভূমিকাটা যেমন ইঙ্গিত করেছে, লেখক পুরো গল্পটায় সেটা ধরে রাখতে পেরেছেন। আমার তো মনে হয়েছে ভূমিকাটাই একটা চমৎকার ছোটগল্প! যে গল্পটাকে বেইস ধরে এগিয়ে গেছে পুরো উপন্যাসটা।
★ ব্যক্তিগত মতামত:
বইয়ের প্রি অর্ডার আসার আগেই প্রকাশনী থেকে এলার্ট দেয়া হয়েছিল যেহেতু আমি পার্সোনালি বইয়ে সেই কারণটা খুঁজে গেছি। একটা সময় এসে যখন ওরকম কিছু মূহুর্ত পেয়েছি, আমার মনে হলো নিউলি ম্যারিড কাপলদের সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট একটা ক্রাইসিস নিয়ে লেখা হয়েছে জাস্ট। ক্লাস লেকচারে এরথেকে সিরিয়াস বিষয় শুনে পড়াশোনা করা আমার কাছে তখন মনে হলো এটা বুঝি (…) কিছু? ধ্যাত! বরং আমি আবার গেলাম বইয়ের একেবারে প্রথমদিকে ভূমিকার পৃষ্ঠাটা মন দিয়ে আরো কয়েকবার পড়লাম তারপর যখন লেখক পরিচিতি পড়তে এসেছি, অনেকদিন পর কোনোকিছু পড়ে এতটা আবেগাপ্লুত হয়েছি। তৃধাপুর দশম বই! ঠিকই তো কিভাবে কিভাবে যেন দশটা বই হয়ে গেলো! এইতো কিছুদিন আগেও বই মেলার সিজন আসলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি একদিন তৃধাপুর বই আসবে…নিনীকার মতো গল্প যিনি ফেসবুকে দিয়ে রেখেছেন তাঁর লিখা বই না জানি কতটা চমৎকার হবে! তৃধাপুর লেখালেখির জার্নি পুরোটা চোখের সামনে ভাসছিলো তখন। কত আপ্স এন্ড ডাউনস! কিন্তু একটা বিষয় কন্সট্যান্ট ছিলো। তিনি তৃধা আনিকা। ৪০০+ ফলোয়ার থাকা অবস্থায় আমি যেমন দেখেছি মানুষটাকে এখন ৪০কে+ ফলোয়ার নিয়েও তিনি ঠিক সেরকমই আছেন। এখন আমারও না তৃধা আপুর মতো বলতে ইচ্ছে করছে, ‘অভিনন্দন সকল পাঠককে। অভিনন্দন তৃধা আনিকা।’
আর হ্যা তৃধাপু তোমাকে বলছি, নাজিয়ার ঋণটা তুমি সত্যি সত্যিই শোধ করে দিয়েছো। পরের বইয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। ১০ সংখ্যাটা একদিন ১০০ হোক, ১০০০ ছুঁয়ে যাক। অনেক অনেক ভালোবাসা ♥
★ কিছু প্রিয় অংশ :
▪️একজনকে ভালোবাসলে যে আরেকজনকে বিয়ে করা যায় না তোমায় কে বললো? ভালোবাসা হলো মনের ব্যাপার, আত্মীক ব্যাপার। আর বিয়েটা জাগতিক ব্যাপার, সামাজিক ব্যাপার। (আয়ান)
▪️সাকসেস হলো এমন একটা ব্যাপার সেটা যখনি আসবে তখনি সেলিব্রেট করতে হয়। পরের কথা বলে এখন কেন বাদ দেবো? (রায়ান)
▪️কোনো মানুষই কোনো মানুষের থেকে আলাদা হয় না। মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে দিই আমরা। ভালোবাসার বিভেদ, চাওয়া-পাওয়ার বিভেদ, সামর্থের বিভেদ। কিন্তু দিনশেষে জানো, প্রতিটা মানুষের নিজের একটা গল্পই থাকে। আর সেই গল্পে একজন মানুষের সাথে আরেকজনের মিল থাকবেই। (মায়া)
▪️মেয়েদের সত্যিকারের ভালোবাসার আরেক নাম সহ্য করা। আর ছেলেদের ভালোবাসার আরেক নাম, নিজের করে রাখা। (লিজার মা)
▪️বাবুর জন্যই তো দেশে এলাম। যে মাটিতে আমি জন্মেছি সেখানে আমার সন্তানও জন্মাবে। আমার নিঃশ্বাস নেওয়া বাতাসেই ওর প্রথম নিঃশ্বাস পড়বে। (বীথি)
▪️তোর ভালোবাসার যে অসম্মান করবে তাকে শাস্তি দেওয়ার আরেক নামই তো প্রেমের যত্ন। যে নিজের ভালোবাসাকে যত্ন করে না, রক্ষা করে না, সামলায় না, সে ভালোবাসতেই জানে না। (লিজা)
▪️মাঝে মাঝে কিছু মুহুর্ত এমন কেন হয়? সামনের মানুষটার সাথে অনেক কথা, হাজার কথা অথচ বলতে ইচ্ছে করে না। নিঃশব্দ নিঃশ্বাস ফেলে ফেলে সময় পার করতে হয়। কেন এমন হয়? (নাজিয়া)
▪️অনুভূতির ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নায়া। রাগ বলো, ভালোলাগা বলো এটা আমরা কখনো কারো জন্য ধরে বেঁধে করতে পারি না। না দেখা জিনিস তো তাই হাতে আনাও যায় না। এছাড়া আর লাভ কী হলো বলোতো? (আরাফ)
▪️কে কার কাছে বিশেষ হবে, সেই ব্যাপারটা মন থেকে তৈরি হয় নায়া। এটা কারো সফলতা, ব্যর্থতা, গুণ আর সৌন্দর্য দেখে হয় না। আর হলেও ভেবে নিতে হবে এটা মন থেকে আসেনি। আর যে ব্যাপারটা মনের নয় সেটা তো ভালোবাসা হতেই পারে না। (আয়ান)
▪️তুমি পাশে না থাকলে ভালো খেয়ে কী লাভ? তুমি না থাকলে ভালো জামা কেন পরবো? (লুইস)
▪️মায়া আমি তোমার কাছে কেনা হয়ে আছি। আমি তোমার জিনিস মায়া, আর কারো নই। আমায় আর কেউ কোনো দামে কিনতেই পারবে না কখনো। (আতিক)
★ ব্যক্তিগত রেটিং – ৫/৫
~ সিদনা চৌধুরী
People also search for
Tridha anika book pdf
তৃধা আনিকা গল্পের লিংক
কুন্দনিকা বই
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?