বই হরেক কিসিমের হয়। তার কোনোটা পড়ে ভুলে যাওয়া, বেচে দেওয়া বা স্রেফ ফেলে দেওয়ার মতো। কোনোটা মুগ্ধতার পরশ মাখিয়ে রেখে দেওয়ার মতো। আর কোনোটা পড়ার পর শেলফে রেখে, দেখে এবং দেখিয়ে তৃপ্তি পাওয়ার মতো।
এই দ্বিতীয় শ্রেণিতে অনেকরকম বই-ই দেখা যায়। রবীন্দ্র রচনাবলি থেকে ইরোদভের ফিজিক্স মোটামুটি সবই আমাদের সামনে সগর্বে পরিবেশিত হয়েছে হ্যান্ডলুমের বেডশিট, এমনকি পেঁপেগাছের পটভূমিতে। তবে আজ যে বইটা পড়লাম সেটা নান্দনিকতা এবং মুদ্রণসৌকর্যে আমাকে স্রেফ বাকরুদ্ধ করে দিল।
বইটির লেখক দেবদত্ত গুপ্ত কলকাতা তথা বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণালব্ধ তথ্য আর নানা ভাবনাকে লোকায়ত আখ্যানের সঙ্গে মিশিয়ে তিনি এই বইটি লিখেছেন। এতে তিনি যে কৃত্রিম ভাষাটি ব্যবহার করেছেন তাকে কমলকুমার-লাইট বলা চলে। এ-প্রসঙ্গে লেখক ‘শুরুয়াতি কথা’-তে লিখেছেন, “আমার নানা কিসিমের আবলুশি ভাবনাকে জুড়ে কেটে তৈরি করেছি এক নতুন গদ্য।” তাতে কোনো সমস্যা হয়নি অবশ্য; আসবাবটি বসার মতো, থুড়ি পড়ার মতো হয়েছে। সেই ভাষায় তিনি মোট আটটি লেখা পেশ করেছেন এই বইয়ে। সেগুলো হল~
১. খেজুর
২. রেলগাড়ি ঝমাঝম
৩. জারি আছেন দক্ষিণের রায়
৪. মিরজাফরের বেগম
৫. সাবাস আমার হাওয়াগাড়ি
৬. ফেয়ারি কুইন
৭. রূপবান
৮. কালু রায় আর পল্টন দেখা দূরবিন
…….
বিশ্বাস করুন, এত দৃষ্টিনন্দন বই আমি শেষ কবে পড়েছি তা মনে করতে পারছি না।
একে তো বইটা ‘পাতায়-পাতায় ছবি’ কথাটাকে আক্ষরিক অর্থে প্রয়োগ করেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বুদ্ধিদীপ্ত অঙ্গসজ্জা, রঙের ব্যবহার এবং লে-আউট।
তর্কের খাতিরে বলা যায়, অলংকরণ হিসেবে পুরোনো বিজ্ঞাপনের ব্যবহারে হয়তো খুব একটা নতুন নয়। কিন্তু রঙের ব্যবহারে এবং নকশা দিয়ে এ-বই বাজারে অনেক সুশোভন ও সুমুদ্রিত বইকে গোলের মালা পরিয়ে দেবে।
তার ওপর গোটা বইটা হ্যান্ডমেড পেপারে ছাপা!
অলংকরণের দায়িত্ব যিনি নিয়েছিলেন সেই সুস্মিতা দত্ত (দত্ত বণিক)-এর উদ্দেশে আভূমি সেলাম জানালাম। তাঁর মতো করে অলংকরণ তথা অঙ্গসজ্জার ভাবনা নিয়ে আরও বেশি শিল্পী তথা স্রষ্টা এগিয়ে এলে বাংলা প্রকাশনায় সিগনেট প্রেস যুগের প্রত্যাবর্তনের আশা করাই যায়।
বইটি যত দ্রুত সম্ভব সংগ্রহ করুন। যা শুনলাম তাতে পাঁচশো কপি ছাপা হলেও এখন নাকি খুব বেশি কপি পড়ে নেই। তবে আমার নিজের মনে হয়, এ-জিনিস দেখানোর নয়। প্ল্যাটিনামের গয়না দেখাতে নেই। বরং নিজে এমন একটা অসামান্য প্রোডাকশন সংগ্রহে নিয়ে ওনিডা-ভাবে গ্রস্ত হন। তাতেই সুখ।
শুধু একটাই মুশকিল হল। এই বইটা দেখার পর আর কিছুই চোখে রুচবে না বেশ ক’দিন। যাই পড়তে যাই না কেন, শুধু মনে হবে, “এই বইটা ওইরকম ‘রূপবান’ হলে কেমন হত?”
— ঋজু গাঙ্গুলী
রূপবান আর হাওয়াগাড়ি (দ্বিতীয় মুদ্রণ)
দেবদত্ত গুপ্ত
মুদ্রিত মূল্য ৩০০ টাকা মাত্র
প্রাপ্তিস্থান
কলকাতা
দে’জ, দে বুক স্টোর, ইতিকথা বইঘর, ধ্যানবিন্দু, লালন
বাংলাদেশ
জনান্তিক (ঢাকা), ছাপাখানা (ঢাকা), বাতিঘর (সমগ্র বাংলাদেশ)
নিউজ হোম (রাজশাহী)
অনলাইন
https://www.boiporboi.com
এবং https://boighar.in/?s=khasrakhata&post_type=product&type_aws=true-এ
অথবা কল বা হোয়াটসঅ্যাপ করুন
+৯১ ৭০০৩৬৮০৭১৬ / +৯১ ৯০০৭৮০৯৯১৮ এই নম্বরে
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?