Title | রিসাইকেল বিন |
Author | প্রসেনজিৎ রায় |
Publisher | সতীর্থ প্রকাশনা |
Quality | হার্ডকভার |
ISBN | 9789849582199 |
Edition | 1st Published, 2022 |
Number of Pages | 144 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
১।
” মধ্যরাতের আকাশ থেকে শিখে নিলাম ব্যক্তিশোকের সূত্রবদ্ধ অর্থনৈতিক জ্ঞান,
পৃথিবীর সব থেকে দামি দু’টো দেদারসে বিক্রি হয় সর্বোচ্চ সস্তায়।
একটি অশ্রু, দ্বিতীয়টি শরীর! “
কিছু কিছু মানুষ বলেন, ” আমি ভাই কবিতা বুঝিনা। “
কিছু মানুষ বলেন, ” রাখেন তো এসব কবিতা-টবিতা। এইসবের মানুষ পড়েটা কী?”
আফসোস হয় তাদের জন্য। তাদের আসলে দোষারোপ করার কিছু নেই। তাদের ভাগ্যটাই মন্দ বলে আমার ধারণা। নইলে কবিতার মত অমৃতের স্বাদ থেকে তারা বঞ্চিতই বা কেন হবে?
থাক সে কথা, ওপরে উদ্ধৃতি চিহ্নের ভেতরের লেখাটা পড়েছেন? সাবলীলভাবে কত সুন্দর একটা সত্য কবি বলে ফেললেন কবিতার মাধ্যমে। যে সত্যটা মোলায়েমভাবে ছুটে গিয়ে হৃদয়ে গেঁথে যায়।
কবিতা অবশ্য সবাই লিখতে পারে না। কেউ কেউ কবিতার নামে কিছু শব্দ শুধুমাত্র লিপিবদ্ধ করতে জানে। কিংবা হয়ত সেগুলো কবিতাই। মানুষের পেট থেকে যেমন অমানুষ জন্মায়, কবিতারও তেমন ‘অকবিতা’-র প্রকার আছে হয়ত। ছাড়ুন সে বিষয়।
ওপরের কবিতাটা যে বই থেকে নিয়েছি, তার নাম– ‘ রিসাইকেল বিন ‘। সতীর্থ প্রকাশনা থেকে ছাপা হওয়া বইটার লেখক, প্রসেনজিৎ রায়।
থ্রিলার জনরার যখন বিশ্বজুড়ে জয়ধ্বনি, ফিকশনের দাপট যখন আকাশছোঁয়া; নন-ফিকশন বইগুলো যখন দরাজ গলায় হাঁক ছাড়ে, তখন ফিকে হয়ে যায় ‘কবিতা’-দের আত্মবিশ্বাস। মিইয়ে যেতে থাকে একরাশ স্বপ্ন।
সেই অভিমান নিয়েই এ বইটার নামকরণ করেছেন এই সাহিত্যিক। প্রকাশকের ভাষায়, ” সামগ্রিকভাবে কবিতার প্রতি মানুষের অনাগ্রহের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে কবি তার তার এই বইটির নামকরণ করেছেন রিসাইকেল বিন। “
১৪৪ পৃষ্ঠার এই বইটিতে সর্বমোট কবিতা রয়েছে ৮০টি। এই কবিতাগুলো বিভিন্ন মাত্রা ও ছন্দে লেখা রয়েছে। কবিতাগুলোর কোনোটি খুবই হালকা মেজাজের আবার কোনোটি আপনাকে নিয়ে যাবে ভাবনার গভীরে। ধরুন আপনার মন খুব খারাপ, বইটা হাতে নিয়ে বসলে, কিছু কবিতা আপনার জন্য টনিক হিসেবে কাজ করবে। আবার দেখা গেল, মন খুব ভালো কিন্তু কোন কাজের চাপ নেই। এক কাপ চায়ের সাথে ” রিসাইকেল বিন ” নিয়ে বসুন, দেখবেন ফুরফুরে মেজাজের পালে জোর হাওয়া পাবেন। আবার, মন ভালো না আবার খারাপও না, এমন যদি হয়। তবুও টুক করে দুটো কবিতা পড়ে নিন বই থেকে, দেখবেন ফ্রেশ ফিল করছেন।
বইয়ের সবগুলো কবিতাই যে আমার মনকে আন্দোলিত করেছে তা কিন্তু নয়। তার মানে এই নয় সেগুলো মানসম্মত নয়। এর মানে এই যে, আমার চিন্তাধারার বা পছন্দের সাথে সেগুলো খাপ খায়নি কোথাও। তবে ঐ ৮০টি কবিতার মধ্যে কিছু আমাকে প্রবলভাবে আন্দোলিত করেছে। এর মধ্যে, ‘ সব গল্প আমার নয় ‘ এবং ‘ ফেরেশতা ‘ অন্যতম। প্রথমটা পড়ার সময় ঘোরগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম অনেকটা। এ দুটো ছাড়াও শরীর, আকুতি ও কাক নামক কবিতাগুলো পছন্দের তালিকার শুরুরদিকে থাকবে।
পরাগ ওয়াহিদ-এর প্রচ্ছদটা তৃপ্তিদায়ক লেগেছে আমার কাছে। আই সুদিং একটা কালার স্কিম ছিল প্রচ্ছদে। সুদিং কন্টেন্টের সাথে সুদিং কভার মন মাতিয়েছে আমার ব্যক্তিগতভাবে।
২।
বইটির যে সকল বিষয় আমার তৃপ্তির ষোলকলা পুরণে ব্যর্থ হয়েছে সেদিকে আসি।
বইটির সবগুলো কবিতা আনকোরা ছিল না। কিছু কবিতা আগেও সামাজিক মাধ্যমে কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে পড়েছি বলে মনে হয়েছে। সেক্ষেত্রে এটা নতুন ও পুরোনো কবিতার সংকলন বলে ধারণা করছি।
সতীর্থ প্রকাশনা এই বইটিতেও প্রুফ রিডিংয়ে তাদের অবহেলা কিংবা ব্যর্থতার ছাপ রেখেছে। টাইপিংয়ে ভুল সহ সঠিক বানানের অজ্ঞতার ছাপও চোখে পড়েছে। কবিতার গভীরে ঢুকে যাবার পর একটা ভুল বানান আপনাকে ছিটকে ফেলে দেবে সেখান থেকে, এটা একদমই কাম্য নয়।
বইটার একটা পৃষ্ঠায় স্কেলিংয়ের ভুলে খানিকটা অংশের ছাপা আসেনি। আবার এটা শুধুমাত্র আমার খরিদকৃত কপির ক্ষেত্রেও হতে পারে।
একশ সত্তর টাকা দিয়ে কেনা বইয়ের সম্পাদনায় ঘাটতি থাকলে তা খানিকটা আশাহত করবে এটাই স্বাভাবিক। এমনকি মূল্য একশ সত্তরগুণ কম হলেও সেই একই কথা প্রযোজ্য হবে। অচিরেই সতীর্থের বরাবরই এরকম দায়সারা কাজকর্মের অবসান হবে বলে আশা করছি।
প্রেমের বিরহের নস্টালজিয়া যারা সহ্য করতে পারেন না তাদের জন্য বইটি নট রিকমেন্ডেড। প্রেম, বিরহ, আনন্দ, প্রকৃতি, সমাজের ভালো-মন্দ দিক, ডিফ্রেন্ট হিউম্যান সাইকোলজিসহ বিভিন্ন বিষয়াবলী নিয়ে রচিত হয়েছে কবিতাগুলো।
রিসাইকেল বিন বইটার কবিতাগুলো পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবে বলেই আমার ধারণা। কবির অভিমান গলা স্রোতে রিসাইকেল বিনে ফুটবে নাম না জানা ফুল, সুবাস ছড়াবে দিগবিদিক।
গত শতাব্দীতে কবিতার যে বিপ্লব পৃথিবী চাক্ষুষ করেছে, আবারও ফিরে আসবে সেদিন। কবিকে তার ভাষায় বলতে পারি–
” দেখা হবে…; আবার হবে দেখা,
ভোর আসছে; ভোর আসছে…
পূবের কোণে ফুটছে আলোর রেখা। “
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?