[১]
‘কেউ ছেড়ে যাওয়ার’ বা কাউকে ‘হারিয়ে ফেলার’ ফিলিংসটা খুব বাজে! এই হাহাকার আর দুঃখবোধটা জগতের কাউকে বুঝানো যায় না! যে চলে যায় তাকেও গিয়ে বলা যায় না! কারণ চলে যাওয়া মানুষটা কখনো আপনার ছিলই না। আর যে আপনার নয় তার সাথে দুঃখবিলাস করে লাভইবা কি! কথায় আছে, ছেড়ে দেয়া বা চলে যাওয়ার জন্য একটা কারণই যথেষ্ট, আর থাকার জন্য হাজারটা কারণও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। হাজারটা সমস্যাও হাতটা ছেড়ে দিতে বাধ্য করেনা বরং আঁকড়ে ধরে সকলবাঁধা পেরোতে সহযোগিতা করে। কেননা, রিলেশনটাতো সহযোগিতামূলক হওয়া উচিত, প্রতিযোগিতামূলক নয়।
আজকাল চারদিকে ছেড়ে যাওয়া বা ছাড়িয়ে নেয়ার হিড়িক পড়ে গেছে। আপনি কাউকে ছেড়ে দিয়ে বা ছাড়িয়ে নিয়ে সর্বসুখ হাসিল করে ফেললেন বা একদম আজাদ হয়ে গেলেন বিষয়টা এমন নয়। আজকে কাউকে তুচ্ছজ্ঞান করলেন, আগামীকাল আপনাকে আরেকজন তুচ্ছজ্ঞান করবে। বাপের বাড়িতে যে তার আয়েশী জিন্দেগী পেয়েছে, অন্যের বাড়ীর গরীবী জিন্দেগী সে সহজে কবূল করতে পারবেনা। যতদিন পর্যন্ত সে বুঝবে যে, আপনাকে দিয়ে ভবিষ্যতে কিছু হবে, ততদিন আপনার সাথে থাকবে! যেদিন বুঝবে যে আপনার জীবনে ভাল কিছু হচ্ছেনা বা হবেনা, অথবা আপনি অক্ষম’ সেইদিনই টা টা… বাই বাই! সবাই না হলেও অধিকাংশ মানুষের মন-মেজাজ এমন।
.
[২]
.
চাহিদার কোন সীমা-পরিসীমা নেই, নির্দিষ্ট রূপ-ও নেই। যার যত আছে তার ততই চাই। চাহিদা মানুষকে লোভী বানিয়ে দেয়, আর এই লোভ-লালসা এমনভাবে অন্ধ ও নির্বোধ করে দেয়, মানুষ বাস্তব সত্যকে বুঝবার উপলব্ধিটুকু হারিয়ে ফেলে। ফলে নিজের যা আছে তার উপর সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। সমগ্র দুনিয়া কখনোই হাতের মুঠোয় আসবে না, তা জানা স্বত্ত্বেও দ্বিকবিদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। একসময় আল্লাহ্প্রদত্ত নি’আমাতও ভূলে যায়। রবের শুকরিয়া আদায় করার সময়টুকু আর হয়ে উঠে না। তাই দুনিয়ার মামলায় আমরা যখনই নিচের দিকে তাকাবো তখনই আমাদের জবানে আল্লাহর শুকরিয়া আসবে। জরুরত ফকীরেরও পুরো হয়ে যায়, চাহিদা বাদশারও পুরো হয়না। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন — “যে ব্যক্তি দুনিয়াকে তার সবচাইতে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় বানাবে, আল্লাহ তাআ’লা তার কাজকর্ম এলোমেলো করে দেবেন, তার দুই চোখের মাঝে সর্বদা দারিদ্রতাকে দৃশ্যমান করে রাখবেন। আর সে দুনিয়া শুধুমাত্র ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদীরে লিপিবদ্ধ ছিল। আর যার কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ্ তাআলা তার সব কাজ সুন্দরভাবে সমাধান করে দিবেন, তার অন্তরকে তৃপ্ত করে দেবেন। আর দুনিয়া নিজেই তার কাছে ধরা দেবে, যদিও সে তা কামনা করে না।” — [সুনানে ইবনু মাজাহ: ৪১০৫। সিলসিলাহ সহীহাহ: ৯৫০]।
.
[৩]
.
আমার চেহারা দেখে, আমার লেখাজোকা পড়ে, আমার কথাবার্তা শুনে অথবা আমার টাইমলাইন দেখে কেউ আমাকে জাজ করবেন না। আমিও অতটা দ্বীনদার নই যতটা আপনি ভাবছেন আর আপনিও অতটা নন যতটা আমি ভাবি। যাহোক, ইদানীং ফেইসবুকে বিয়ে, রিলেশন, মাসনা-সূলাসা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। অশ্লীলতা উস্কে দেয়া আর কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা — সমীচীন মনে করিনা।কিন্তু কথা হচ্ছে এইযে আবেগসিক্ত অনুরাগে প্রেরণা-উজ্জীবনীমুলক চমৎকার গল্পগুলো সোনালী হরফে লিখে, হৃদয়ের অব্যক্ত অনুভূতিগুলো চটি গল্পাকারে মলাটবদ্ধ করে, প্রেমানুভূতি জাগিয়ে আমরা যুবসমাজের কি উপকারটা সাধন করছি বলুনতো?!
আমিতো মনে করি যারা বই আকারে বা ফেইসবুকে এসব গাল-গল্প লিখে ওদেরকে কানের নিচে কষে দুটো মারা উচিত। এগুলো ফ্যান্টাসি ছাড়া আর কিছুই না।একটা সময় ছিল যখন ব্লু-ফিল্ম ছিলনা, যৌন শিক্ষা ছিলনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিলনা কিন্তু আমাদের মা-নানিদের সংসারে সুখ ছিল, আট-দশটা বাচ্চাকাচ্চাও ছিল, স্বামীভক্তি ছিল, স্ট্রং পারসোনালিটি ছিল, সম্পর্কগুলো মজবুত সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ছিল। কই তাদেরতো কোন সমস্যা হয়নি। আজকে সবকিছু থাকার পরও কেন আমরা এতো আন-হ্যাপী? কেন এত তালাক? কেন এত হাহাকার?
.
যাইহোক, অবিবাহিত ভাই-বোনদের উদ্দেশ্য নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে দুটো কথা বলি, আমাদের সম্মানিত শাইখ ড. রাবী বিন হাদী আল মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) বলতেন, “শহরের মেয়ের চেয়ে গ্রামের মেয়ে উত্তম, আল্লাহভীরু নারী কালো হলেও সুশ্রী নারী চেয়ে হাজারগুণ উত্তম! আর একসাথে যদি দুইটাই পেয়ে যাও তাহলেতো তোমার ‘চাঁন কপাল।” শাইখের বক্তব্যের আলোকে বলব, নিজে আধা দ্বীনদার হয়ে প্রাক্টিসিং কাউকে খুঁজতে যাইয়েো না অথবা প্রাক্টিসিং মুসলিম হয়েও আধা দ্বীনদার খুঁজিও না! যেহেতু আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, “তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং ‘কুফু’ (সমতা) দেখে বিবাহ কর।” — [বুখারী, ২০৯৭, মুসলিম, ৭১৫]।
দুনিয়াবী বিষয়গুলো যেমন মালসম্পদ, বংশ, রুপ, আভিজাত্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ডিগ্রী এগুলো যেন তোমার চাইতে বেশি না হয়। পরে সমস্যা হতে পরে।
‘তোমার লেভেল থেকে ঠিক একটু কম বা কমসে কম সমতা যেন থাকে, বেশি যেন না হয়’ এই উসূলটা সবসময় মাথায় রাখবা। জেনারেল শিক্ষিতরা আলিমাহ কমপ্লিট মেয়ে বিয়ে না করাই সাবধানতা! এটা ইলমের কুফু! পক্ষান্তরে, জেনারেল লাইন থেকে উঠে আসা কোন মেয়ে দাওরাহ পাশ মুফতি বিয়ে না করাও সাবধানতা! সমস্যা হতে শুনেছি, হলেও কিছু করার নেই। হঠাৎ করে দ্বীনে এসে হুযুরের বউ হওয়ার সখ থেকে বিরত থাকাও সাবধানতা। আমার এই কথাগুলো মানতে কষ্ট হতে পারে, কিন্তু এটাই বর্তমান বাস্তবতা, ভোক্তভোগীরা ভাল বলতে পারবেন। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। বহু ব্যতিক্রম আছে। এটা জাস্ট প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে আপাত সতর্কতার একটা ফর্মুলা বললাম। তুমি গ্রহণ করতে পারো, আবার বর্জনও করতে পারো। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সুপথে পরিচালিত করুন, আমীন।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?