Title |
কিংকর্তব্যবিমূঢ় |
Author |
শরীফুল হাসান |
Publisher |
অবসর প্রকাশনা সংস্থা |
Quality |
হার্ডকভার এবং সর্ট পিডিএফট |
ISBN |
9789848799840 |
Edition |
1st Published, 2021 |
Number of Pages |
176 |
Country |
বাংলাদেশ |
Language |
বাংলা |
|
Cover Image : Kingkortobbobimur |
কিংকর্তব্যবিমূঢ় ‘সমনাবুলিজম’ শব্দটি সবার জীবনে বাস্তবে প্রতিফলিত না হলেও মনোবিজ্ঞানের এ ভৌতিক শব্দের সাথে কমবেশি পরিচয় সবারই থাকার কথা। ইংরেজি পরিভাষায় একে ‘স্লিপ ওয়াকিং’ বা ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটা বলে। আমি যখন ক্লাস ফোর কিংবা ফাইভে পড়ি, আচমকা আমার মধ্যে এ সমস্যাটা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। রাতের দ্বিপ্রহরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি প্রায়ই শুনতে পেতাম আঙিনায় দাঁড়িয়ে পরিচিত কেউ আমাকে ডাকছে। কণ্ঠস্বরটা আপনজনের মনে হতো, তথাপি নিশ্চিত হতে পারতাম না। কপাট খুলে আমি বেরিয়ে যেতাম। উঠোন কিংবা বাড়ির আশে-পাশে কিছুটা সময় পায়চারি করে আবার এসে ঘুমিয়ে যেতাম। কখনও কখনও ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটাহাঁটির সময়ই আমার সম্বিৎ ফিরে আসতো। এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে প্রচণ্ড ভয়ে অস্থির আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যেতো। এ সমস্যাটা আমার জীবনে দীর্ঘসময় ছিল। ডাক্তার-কবিরাজ, ফকির-সন্ন্যাসী ও নানান আকৃতির তাবিজ-কবজের কল্যাণে কিংবা প্রাকৃতিকভাবেই আমার জীবন থেকে এ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। তবে নিঃসন্দেহে একটা ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে যে আমি মুক্তি পেয়েছি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভয়াবহ এ অধ্যায়টা স্মৃতির ডাটাবেজে প্রায় ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। পাঠকপ্রিয় লেখক শরীফুল হাসানের সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’র ধাক্কায় স্মৃতির আঙিনায় আবার জ্বলজ্বল করে ওঠে বাল্যকালের সেই ভয়াবহ স্মৃতিপট।
নিঃসন্তান তানিয়া-সায়েম দম্পত্তির জীবন নৌকাটি স্রোতের প্রতিকূল কিংবা অনুকুলে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই সুখের বার্তা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলো। আচমকা এক দমকা বাতাসের ধাক্কা লাগে এই সুখী দম্পত্তির জীবনে। নানান অতিপ্রাকৃত বা ভৌতিক সমস্যার মুখোমুখি হতে থাকে ওরা দুজন। কর্মজীবনেও সায়েম সম্মুখীন হতে থাকে নানাবিধ সংকটের। কর্মব্যস্ত পুরো অফিসটাকে তার কাছে মাঝে-মাঝে মনে হতে থাকে একদম জনমানবহীন শূণ্য করিডোরে। আবার কখনও শাড়ি পরিহিত তানিয়ার অস্তিত্বও অনুভব করে সায়েম। মধ্যরাতে ঘুমের ঘোরে হেঁটে বেড়ায় পুরো বাড়ি। আবার কখনও বারান্দার গ্রিল ধরে নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুটা সময়। এ সবই ঘুমের ঘোরে হয়।
তানিয়াও বাদ যায়নি এ পরিস্থিতি থেকে। বিকট চিৎকার শোনে কাজের মেয়ে তহুরাকে সে আবিষ্কার করে রান্নাঘরে অজ্ঞান অবস্থায়। পরক্ষণেই মেয়েটা এমনভাবে উঠে দাঁড়ায়, যেন কোথাও কিছু হয়নি বা ঘটেনি। এসি বন্ধ আছে, তথাপি তানিয়া অনুভব করে পুরো কামরায় বরফের ন্যায় শীতলতা। তানিয়া চরমভাবে বিভ্রান্ত হয়। একদিকে স্বামী সায়েমের এহেন অবস্থা, অন্যদিকে নিজের জীবনে বিভ্রান্তিময় নানান সংকট, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় তানিয়া। দ্বারস্থ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মনোবিজ্ঞানী আহমেদ করিমের।
তানিয়া-সায়েম দম্পত্তির জীবনে সংকট, বিভ্রান্তি, হেলুসিনেশন আর অদ্ভুত সব ঘটনার মাত্রা প্রকট আকার ধারণ করে, যখন তারা একটু রিফ্রেশমেন্টের প্রত্যাশায় পা রাখে সায়েমের পৈত্রিক বাড়ি ময়মনসিংহে। প্রায় পরিত্যক্ত পুরনো এ বাড়িটিকে কেন্দ্র করে এমনিতেই এলাকার লোকমুখে প্রচলিত আছে নানারকম মিথ এবং গল্পকথা। তানিয়ার নিমন্ত্রণে পুরনো এ বাড়িতে এসে নিজেও নানান সংকটের মুখোমুখি হতে থাকেন সাইকিয়াট্রিস্ট আহমেদ করিম এবং তার দুই সহযোগী সোহেল আর রকেট। মানসিক চিকিৎসা করতে এসে তিনি নিজেই পরিণত হন মানসিক রোগীতে। সায়েম-তানিয়ার মতো তিনি ও তার সহযোগী সোহেল মুখোমুখি হতে থাকে একটার পর একটা অতিপ্রাকৃত ঘটনার। রহস্যময় বাড়ির রহস্যের জালে ক্রমেই আটকে যেতে থাকেন সাইকিয়াট্রিস্ট আহমেদ করিম। বাড়ির দীর্ঘদিনের কেয়ারটেকার আমির হামজাকে একটা রহস্যময় মানব মনে হতে থাকে তাঁর কাছে। তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন।
পাঠকপ্রিয় থ্রিলার লেখক শরীফুল হাসানের লেখা আহমেদ করিম সিরিজের দ্বিতীয় বই ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’। প্রথম বইটা আমার পড়া হয়নি। ‘পড়া হয়নি’ শব্দদ্বয়কে আরেকটু পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করলে বলব, ইচ্ছে করেই পড়িনি। কারণ সাইকোলোজিক্যাল থ্রিলারের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ‘মিসির আলি’র আদলে অন্য কোনো চরিত্র কিংবা নতুন কাউকে আমি সহজভাবে নিতে পারতাম না। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকজন লেখকের এ জনরার বই পড়ে অন্ততঃ এটুকু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয় আমার।
কিন্তু এ বইটি পড়ে আমার পুরো ধারণা পাল্টে গেল। ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ পড়ে অন্ততঃ এটুকু আমি বলতে পারি, হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলীর পরে এ জনরাকে সমৃদ্ধ করার জন্য বাংলা সাহিত্যে যদি কোনো লেখকের আগমন ঘটে থাকে তবে তিনি হচ্ছেন শরীফুল হাসান। চমৎকার লিখেছেন তিনি। সত্যিই আমি অভিভূত। অসংখ্য হেলিসিনেশনকে একই কেন্দ্রবিন্দুতে স্থানান্তরিত করার যে অভিনব মুন্সিয়ানা তিনি দেখিয়েছেন, নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবীদার। এই লেখকের সাম্ভালা সিরিজ পড়ে যতটা না ‘থ’ হয়ে গিয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি ‘ভ্যাবাচ্যাকা’ খেলাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় পড়ে। তার সৃষ্টি আহমেদ করিম চরিত্রটি যে বাংলা সাহিত্যে একটা জায়গা করে নিতে এসেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ পড়ে আমি নিজেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম।
Donald Miller
ক্রিম কালারের কাগজ, টেকসই বাঁধাই আর উন্নতমানের প্রিন্টিংএ অবসর প্রকাশনীর ব্যানারে প্রকাশিত এই বইটি হাতে নিলেই মন ভরে যায়। তবে বইটির সবচেয়ে বেশি মন খারাপের জায়গা হলো প্রচ্ছদ। সজল চৌধুরীর করা প্রচ্ছদগুলো চলনসই গোছের হলেও এই প্রচ্ছদটি ছিল একেবারেই ‘যা ইচ্ছে তাই’ ধরণের। অবসরের সৃষ্টি চমৎকার এ প্রোডাকশনের সাথে এই প্রচ্ছদটি কোনোভাবেই যাচ্ছে না। লেখক শরীফুল হাসানকে প্রচ্ছদ নির্বাচনে আরও মনযোগী হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
প্রিয় পাঠক, শরীফুল হাসান সৃষ্ট আহমেদ করিম সিরেজের দ্বিতীয় বই কিংকর্তব্যবিমূঢ় এ অাপনাকে স্বাগতম। রহস্যের জালে নিজেকে কঠিনভাবে জড়াতে চাইলে পড়তে পারেন এই বইটি। আমার বিশ্বাস, প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি প্রাপ্তি হবে আপনার। হ্যাপি রিডিং।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?