রাগ কি মানসিক রোগ
লেখা: অর্পিতা ঐশ্বর্য
কথায় আছে রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন,
কিছু কিছু মানুষ আছে হঠাৎ হঠাৎ করেই রেগে যান , খুব সামান্য কিছু হলেই যেন রাগে তাদের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়, আবার কিছুক্ষণ পর সেই মানুষ টা বুঝতে পারে আসলেই তার রাগ করা উচিত হয়নি ।
রাগ এমন অনুভূতি, যা কারও প্রতি আপনাকে আগ্রাসী করে তোলে অথবা এমন অন্যায্য কিংবা অন্যায় কোনো ঘটনা-যা কিনা বিরক্তিকরভাবে আপনাকে ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান, কিছু করার অক্ষমতা, অন্যায়ভাবে ভীতি প্রদর্শন, অন্যের দ্বারা অসম্মানিত হওয়া, অন্যায্য আচরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো সাধারণত আমাদের রাগান্বিত করে তোলে। রাগ অনেকটা ঝড়ের মতো; ঝড় শেষে টের পাওয়া যায় কতটা ক্ষতি হয়েছে।
তাহলে কি রাগের নানা রকম শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি রয়েছে ? কিংবা রাগ কি কোন রোগ,
অনেকেই এটাকে মানসিক রোগ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন , এ নিয়ে অনেকে গবেষণাও করে ফেলেছে ।
আসলে হঠাৎ রেগে যাওয়া রোগের কারণ এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। এ রোগের প্রকোপ সম্পর্কে এখনো তেমন জানা যায়নি তবে এ রোগের প্রকোপ খুব বেশি নয় বলেই ধারণা করা হয়।
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন এ রোগের কারণ কি?গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের স্ট্রায়েটাম নামের অংশের গোলমালের ফলে এ রোগের উৎপত্তি হয়।
ভয়, লজ্জা, বিরক্তির মতো নানা কারণেই রাগ দেখায় মানুষ। এ ছাড়াও ক্ষণে ক্ষণে রেগে যাওয়ার পিছনে থাকতে পারে অন্য কোনও কারণ । সম্পর্ক বা আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে তৈরি হওয়া মানসিক চাপও রাগের পিছনে একটি বড় কারণ । কয়েক ধরনের মানসিক অসুখও রাগ প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
রাগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের মানসিক অবস্থার একটি বহিঃপ্রকাশ।
ফ্রয়েডের মতে, অন্যের প্রতি আক্রমণ মানুষের নিজের প্রতি ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তির এক রকম আত্মরক্ষামূলক আচরণ (ডিফেন্স) মাত্র। আলবার্ট বান্দুরার মতো মনোবিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, ব্যক্তির অনিয়ন্ত্রিত রাগ মূলত তিনি পরিবেশ থেকেই শেখেন। তার মতে, ব্যক্তি তার আগ্রাসীভাবের কারণে চারপাশের মানুষের কাছ থেকে কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হয় (তার ইচ্ছা পূরণ হওয়া, অন্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ, অপরের ‘সমীহ’ ইত্যাদি)। অনেক সময় অন্যের আগ্রাসনও যখন পরিবার ও সমাজ কর্তৃক নানাভাবে উৎসাহিত হতে দেখে, সেটাও তাকে উৎসাহিত করে।
ব্যক্তি যদি কোনো বিষয়ে নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকে, সে ক্ষেত্রেও তার অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা রেগে যাওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।
অনেক কাজ একসঙ্গে এসে গেলে অথবা অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কাজ শেষ করতে গিয়ে সেসব যদি ঠাকমতো না হয়, তাহলে অনেকের মধ্যে টেনশন বা হতাশা জমতে জমতে রাগ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
ছোটবেলায় যদি কেউ এমন পরিবেশে বড় হয়, যেখানে মা-বাবা বা অভিভাবকেরা অল্পতেই রেগে যান, সেই পরিবারে শিশুরাও একই ধরনের আচরণ শেখে।
আবার কিছু বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যেমন ব্যক্তিত্বের ত্রুটি, বিষণ্নতা রোগ, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, উদ্বিগ্নতা রোগ, শুচিবায়িতা, মাদকাসক্তি, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, কনডাক্ট ডিসঅর্ডার, ডিমেনশিয়া ইত্যাদির অন্যতম উপসর্গ রাগ।
রাগ সামলাবেন কীভাবে :
১: কোন কিছু করার আগে সিদ্ধান্ত নিন , মনস্থির করুন
২: পরিস্থিতি থেকে সরে আসুন ।
৩: রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বাড়ান ।
৪: ব্যায়াম করুন নিয়মিত ।
● যখন আপনার রাগ হবে ঠিক ওই মুহূর্তে সেখান থেকে যতটা সম্ভব দূরে চলে যান। যেমন ধরুন, যে মানুষটির ওপর আপনি রাগ করেছেন তার কাছ থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে থাকুন অথবা সেই রুম থেকে অন্য রুমে চলে যান। দেখবেন, কিছুক্ষণ পর আপনাআপনি রাগ কমে যাবে।
● প্রচণ্ড রাগ হলে মনে করবেন আপনার এখন অক্সিজেন প্রয়োজন। তাই কিছুক্ষণের জন্য লম্বা শ্বাস নিন। ভালো লাগবে। বিষণ্ণতা কেটে যাবে এবং মুক্ত মনে হবে।
● পারলে কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার রাগ কমে যাবে এবং আপনি সবকিছু ভুলে স্বাভাবিক হতে পারবেন।
● অল্প সময়ের জন্য পার্কে গিয়ে হেঁটে আসুন। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলে রাগ এমনিতেই কমে যায়। তাই রাগ হলে ধারে কাছে কোথাও একটু হেঁটে আসুন।
● নিজের রুমে একা খানিকটা সময় পার করুন। বিশ্রাম নিন। দেখবেন, রাগের মাত্রা অনেকটা কমে যাবে।
● প্রচুর পানি খান। রাগের সময় মানুষের রক্তের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই এ সময় অস্থির লাগে এবং বিষণ্ণতা কাজ করে। পানি আপনার এই অস্থিরতা দূর করবে এবং আপনার রাগকে আয়ত্তে রাখবে।
● নিজের যে কাজটি পছন্দ রাগের সময় সেটি করার চেষ্টা করুন। দেখবেন, ভালো লাগার কাজ করলে রাগ নিজে থেকেই কমে যাবে।
এ রোগের চিকিৎসা আছে?
হ্যাঁ, এ রোগের চিকিৎসা আছে। সাধারণত : ওষুধ ও বিহ্যাভিয়ার থেরাপীর সমন্বয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। ব্যবহৃত ওষুধগুলোর মধ্যে আছে : ফ্লুক্সেটিন, সারট্রালিন, ক্লোমিপ্রামিন, ফ্লুভক্সামিন ইত্যাদি। বিহাভিয়ার থেরাপীর ক্ষেত্রে এক্সপোজার এড রেসপন্স প্রিভেনশন পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাল ফল পাওয়া যায়।