বইয়ের নামঃ রাখাল
লেখকঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী।
গায়ের মূল্যঃ ৩০০
পৃষ্টাঃ ১৪০
রিভিউ লেখকঃ জসিম উদ্দীন
আসমান পড়ে লেখকের লেখার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। রাখাল আমার পড়া লেখকের দ্বিতীয় বই। রাখাল এমন একটি যেটি আমি বহুদিন পর এক বসাতে পড়ে শেষ করেছি। যাহক এবার আসি বইয়ের আলোচলায়।
রাখাল মূলত ঐতিহাসিক সামাজিক উপন্যাস। যেখানে লেখক ১৮২৯ সালে রাজা রামমোহন রায় যখন হিন্দু ধর্মের সতিদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন। ঠিক সে সময়ে সংঘটিত ঐতিহাসিক সত্য ঘটনার প্রেক্ষিতে সতিদাহ প্রথার ভয়ংকর দিকগুলো চরিত্রায়ন করে অনবদ্য ভাবে বর্ণনা করেছেন৷
সতিদাহের চিতা থেকে পালিয়ে যাওয়া একজন নারীকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসের আদ্যোপান্ত রচিত হয়েছে। যেখানে সেই নারীকে বাঁচানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে একজন মুসলমান রাখাল। অত্যাচারী জমিদার এবং ঠোগি বিদ্রোহীদের হাত থেকে সেই নারীকে বাঁচানোর জন্য ঘনজঙ্গলে রাখালের সে কলাকৌশল, আর আরণ্যক জীবনের প্রতিটি ধাপে রয়েছে অসাধারণ টুইস্ট। প্রত্যেকটা পৃষ্ঠা যেনো আরেকটি পৃষ্ঠায় পড়ার জন্য টেনে নিয়ে যায়।
জীবন বাঁচাতে মেয়েটি রাখালের সাথে পালিয়ে থাকে সুউচ্চ পাহাড়ের খোঁজে,ঘন অরণ্যের মাঝে ঈগলের বাসায়। সেখানে মেয়েটি দেখতে এক অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পৃথিবী। সাধারণত নারীদের লাস্যময়ী সৌন্দর্যের মোহ পুরুষদের লোভী করে তোলে। কিন্তু সেই নারীকে একা পেয়েও মুসলিম রাখাল তার দিকে একবারের জন্যেও খারাপ দৃষ্টিতে না তাকালে, হিন্দু নারীটি মনে করে যেনো রাখাল নয়, রাখালের ছদ্মবেশে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
আশ্চর্যজনক ভাবে দুটি বিশ্বাসের দুটি মানুষের প্রেমানুভূতি মিলেছে এক মহান ঐশী অধ্যান্তবাদে।
কিছু পছন্দের উক্তি
‘যতক্ষণ তুমি নিজের সৌন্দর্য টের না পাও, ততক্ষণই তুমি সুন্দর। জেনে গেলেই অহংকার তোমাকে কুৎসিত করে দেয়।’
‘জঙ্গল সাহসীকে সমীহ করে আর দুর্বলকে খেয়ে খেলে’
‘একাকিত্ব খুব ভয়ংকর জিনিস। এটা কাউকে কাউকে মেরে ফেলে। আর কাউকে কাউকে মহান মানুষে পরিণত করে। একাকিত্ব আর নির্জনতাকে যারা কাজে লাগাতে পেরেছেন তারা মহামানব। মানুষ তাদেরকে মুনি, ঋষি অথবা দরবেশ বলে ডাকে। আপনার জীবনেও এমন সুযোগ এসেছে, পৃথিবীর সৌন্দর্যের গোপন রহস্য উপভোগ করার সুযোগ আল্লাহ সবাইকে দেন না।’
‘পাহাড় নিজের বিরাট রূপ দেখিয়ে বলে খবরদার আমাকে অতিক্রম করতে এসো না, তাই বেশির ভাগ মানুষই পাহাড় ডিঙাতে ভয় পায়। আর যে সাহসী মানুষেরা একবার পাহাড়কে ডিঙিয়ে ফেলে তাদের কাছে পাহাড় হয়ে যায় হরিণ শাবক, যেমন— হরিণ শাবক বাঘ দেখে ভয় পায়। তাই আজ একবার পাহাড়ে উঠলেই দেখবেন আপনি পাহাড়ের চেয়ে বড় হয়ে গেছেন।’
‘ যুক্তি-তর্কে পরাজিত মানুষের শেষ অস্ত্র চিৎকার। চিৎকার আর চ্যাঁচামেচির আড়ালে তারা আশ্রয় নেয়। তারা তখন জ্ঞানীদেরকে আলোচনা থেকে ঝগড়াতে টেনে নামাতে চায়। প্রকৃত জ্ঞানীরা তাদের এই হাস্যকর প্রচেষ্টা খুব সহজেই ধরতে পারে। তারা নীরব থাকে। পরাজিতরা কিছুক্ষণ অযাচিত চিৎকার চেচামেচি করে। ‘