রউফুর রহীম – লেখক ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি | Rowfur-Rohim

আমার জন্যই তাকে সইতে হয়েছে… 

“একদিন তিনি বাড়ির পেছনে তাঁর দুধ-ভাইয়ের সঙ্গে খেলা করছিলেন। এমন সময় তাঁর দুধ-ভাই কাঁপতে কাঁপতে আমাদের কাছে এসে বলল, জানো! আমি দেখলাম, আমার ওই কুরাইশি ভাইয়ের কাছে দুইজন লোক এলেন। গায়ে তাদের ধবধবে সাদা পোশাক। তারা তাঁকে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। এরপর তাঁর পেট চিড়ে ফেললেন।’ 

শুনে তো আমাদের অন্তরাত্মা বের হওয়ার জোগাড়। কাঁপতে কাঁপতে আমি ও আমার স্বামী পড়িমড়ি করে ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখি তিনি দাঁড়িয়ে আছেন; চেহারার রং বিবর্ণ। আমাদের দেখে দৌড়ে এলেন এবং কেঁদে দিলেন। 
হালীমা বলেন, আমি ও আমার স্বামী তাঁকে টেনে নিয়ে বুকের সঙ্গে শক্ত করে আঁকড়ে ধরি। বললাম, আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য উৎসর্গ হোক! তোমার কী হয়েছে? তিনি বললেন, “আমার কাছে দুইজন লোক এসে আমাকে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। একটু পর আমার পেট ফেড়ে দিয়ে কী যেন একটা রাখলেন। এরপর পেট আগে যেমন ছিল তেমনই করে দেন তারা।” 
আমার স্বামী বলল, ‘আল্লাহর শপথ! আমার এই ছেলের ওপর কিছু একটা ভর করেছে। জলদি তাঁকে তাঁর পরিবারের নিকট নিয়ে চলো। যে ভয়টা আমরা করছি, তা ঘটার আগেই তাঁকে তাদের কাছে রেখে আসো। 
হালীমা বললেন, তাঁকে নিয়ে আমরা তাঁর মায়ের কাছে নিয়ে চললাম। তাঁর মা আমাদের দেখে খুবই অবাক হলেন; আমরা যা করেছি তার জন্য মৃদু ভর্ৎসনা করলেন। বললেন, আমি বলার আগেই কী কারণে আমার ছেলেকে ফেরত নিয়ে এসেছ তোমরা? আগে তো তাঁকে রাখার ব্যাপারে তোমরা ছিলে খুবই উদ্‌গ্রীব! 
আমরা বললাম, না, তেমন কিছুই হয়নি। বরং আল্লাহ তাঁর দুগ্ধপানের মেয়াদকাল পূর্ণ করেছেন। এবং তাঁর স্বাস্থ্য দেখে আমরা খুশি। আমরা আরও বললাম, তবে আপনারা যদি চান আমরা তাঁকে খুব উত্তমভাবেই রাখব। 
তিনি বললেন, তোমরা কিছু একটা এড়িয়ে যাচ্ছ; আসলে কী হয়েছে আমার কাছে খুলে বলো। না বলা পর্যন্ত তিনি আমাদেরকে কিছুতেই ছাড়ছিলেন না। না বলে আর থাকতে পারলাম না। শেষে যা যা ঘটেছে আমরা তার কাছে সব বলে দিই; কিছুই লুকাই না। 
তিনি বললেন, ‘না, কখনোই না। আল্লাহর কসম! তিনি তার সঙ্গে এমন কিছু করবেন না। আমার ছেলের একটা মর্যাদা হবে। আমি তোমাদেরকে কি তার সংবাদটা দেব না? তাহলে শোনো, সে যখন আমার গর্ভে, আল্লাহর শপথ! আমি কোনো ধরনের ভার অনুভব করিনি। আমার পক্ষে তাকে গর্ভে ধারণ একদমই কষ্টকর কিছু ছিল না। 
সে যখন আমার গর্ভে তখন একদিন আমাকে (স্বপ্নে) দেখানো হয় যে, আমার থেকে একটি আলোকরশ্মি বের হয়ে বাস্‌রার উটের গ্রীবাগুলো আলোকিত করে দিয়েছে। (অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেছেন, বাস্‌রার অট্টালিকাগুলোকে আলোকিত করে দিয়েছে) এরপর তাকে আমি ভূমিষ্ট করলাম এবং আল্লাহর কসম! সে অন্যান্য শিশুর মতো ভূমিষ্ট হয়নি; বরং সে তার দুহাতের ওপর ভর করে, আকাশের দিকে মাথা তুলে জন্মগ্রহণ করে।’ 
তিনি নবিজিকে বুকে টেনে নেন। আমরা মা ও ছেলেকে এভাবে রেখে হাঁটা ধরি আমাদের পথে। 
.
‘রউফুর রহীম’ বই থেকে…
লেখক : ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?