যুগলবন্দি : লেখক নাবিল মুহতাসিম এবং কিশোর পাশা ইমন | Jugolbondi By Nabil Muhtasim And Kishor Pasha Imon

বই : যুগলবন্দি
লেখক : নাবিল মুহতাসিম এবং কিশোর পাশা ইমন
প্রথম প্রকাশ : এপ্রিল ২০২১
প্রকাশক : বাতিঘর প্রকাশনী
প্রচ্ছদ : পার্থ প্রতিম দাস
জনরা : থ্রিলার 
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
যুগল। রুমি এবং গার্গি। অবশ্য প্রচলিত যে অর্থে যুগল অথবা কাপল বুঝায় তা মোটেই নন এই দু’জন। ঈদের তিনদিনের ছুটির পাঞ্জাবি খুলার আগেই রুমিকে এবং বান্ধবীর বিয়ের আসর থেকে গার্গিকে বেরিয়ে আসতে হয়। প্রেমের টানে নয়, বরঞ্চ ‘দ্য এজেন্সি’ এর ট্রেইনিং প্রাপ্ত এজেন্ট হিসেবে যার যার প্রথম অভিযানে একত্রে তাঁরা চলে যান বাংলাদেশের অপর প্রান্তে। 
এই নভেলা বা উপন্যাসিকাতে এশিয়াজুড়ে নারকীয় ভাবে ঘটে যাওয়া সিরিয়াল কিলিং দমাতে দ্য এজেন্সির রুকি দুই এজেন্ট কে কেন পাঠানো হল? সাধারণত সিরিয়াল কিলারদের ধরতে ডিটেক্টিভরা ছুটেন। এস্পিওনাজ সংস্থা কেন? তাও আবার বাংলাদেশের সেরা দ্য এজেন্সির! কাহিনীর বেশিরভাগ গাড়িতে দুই এজেন্টের কথোপকথন এবং ফ্ল্যাশব্যাকে আবর্তিত হয়েছে। কিন্তু দু’জন ভিন্ন ব্যক্তিত্বের মানুষের এই কথাবার্তা পাঠক বেশি পছন্দ করতে পারেন। তাছাড়া নাবিল মুহতাসিমের লেখনীতে হিউমারের পাশাপাশি সন্তপর্নে এমন অন্ধকার জগতে রুমি এবং গার্গিকে পা রাখতে হবে যেখানে অলৌকিক এবং লৌকিক মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। 
নাবিল মুহতাসিম আমার পছন্দের লেখকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর স্বাপদ সনের গ্রাফিক নভেল অ্যাডাপ্টেশন বহুদিন মনে থাকবে। বাজিকর ট্রিলজি মনে হয় আমি কখনো ভুলবো না। এই আখ্যানের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে গিয়ে বারবার আহাদ, বাবু, শমশের, মাস্টার সিফাতের কথা মনে পড়ে যায়। নাবিল নিজস্ব স্টাইলে হিউমারের পাশাপাশি দুর্দান্ত একশনের চিত্রায়ন করে থাকেন। সাথে থাকে তাঁর সার্কাজম এবং ডার্ক এন্ড গ্রিটি লেখালেখির সমন্বয়। সকল বাধা অতিক্রম করে অনভিজ্ঞ রুমি ও গার্গি যুগলের প্রথম অভিযানেই বাজিমাত করতে হবে।
বন্দি। রুয়ান্ডার যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে কঙ্গোতে। ঝামেলা প্রকট হল যখন মার্কিন দুই সাংবাদিককে নিরাপদে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব পেলেন মার্সেনারি ইরফান এবং প্যাটেল। হুতু এবং তুতসি জাতির মধ্যকার ভয়ানক লড়াইয়ের মাঝে বাংলাদেশের ইরফান এবং ভারতের প্যাটেলকে নেমে পড়তে হচ্ছে এক উদ্ধার অভিযানে। বাঙালির আবেগ তো একটু বেশি। এই দু’জন কয়েকটি আর্মি ফোর্সের সাথে গুরুতর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। যুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি ইরফান ও প্যাটেলের শুধুমাত্র বন্ধুত্ব এবং নীতির কারণে এতবড় ঝুঁকি নেয়ার পর টিকে থাকার বা ঐ বিধ্বস্ত দেশ থেকে পালানোর সুযোগ কতটুকু? 
কিশোর পাশা ইমন আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন লেখক। রেসকিউ মিশন একদম যেন চোখের সামনে উন্মোচিত করে দিলেন নভেলাটির মাধ্যমে এই গল্পকথক। বাংলাদেশে সমসাময়িক লেখালেখির জগতে একশন সিনগুলো অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রায়নের করে ফুটিয়ে তুলতে পারা লেখকদের মাঝে কেপি লিস্টের উপরের দিকে থাকার কথা। তাছাড়া কেপির গল্পে আকস্মিক উইট চমৎকার। ইরফান সিরিজ আমি পড়িনি। তবে এই নভেলাটি ছিলো মার্সেনারি / আর্মি একশনে ভরপুর।
নাবিল এবং কেপি দু’জনের‌ই দাবী যে এই ব‌ইটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য কর্ম। কারণ আপাত দৃষ্টিতে নভেলা দুটি ভিন্ন মনে হলেও কোথায় জানি এই দুটির মধ্যে এক সুক্ষ্ম সংযোগ আছে। ইরফান কি বাজিকর বিশ্বে কোন ক্রশ‌ওভারের মাধ্যমে প্রবেশ করবেন? নাকি বাজিকর বিশ্বের নবীন কেউ ইরফানের বিশ্বে হাজির হবেন। দু’জন লেখক‌ই এরকম আরো দুইটি ব‌ই‌ নিয়ে হাজির হ‌ওয়ার কথা। হয়তো পরবর্তি ব‌ইগুলোতে বিষয়টা আরো পরিষ্কার হবে। ইরফান ডিটেক্টিভ আবার ‘দ্য এজেন্সি’ এর এসপিওনাজ এজেন্টরাও ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন দ্বন্দ্বে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় জড়িয়ে পড়েন। 
এই সময়ের দু’জন সেরা লেখিয়ের একশন, অ্যাডভেঞ্চার, সাসপেন্সে ভর্তি একধরণের পরাবাস্তবতার অনুভূতি দেয়া গল্পকথনের মাধ্যমে সমান্তরালে দুটি নভেলার হয়ে গেছে যুগলবন্দি।  
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?