যুক্তিফাঁদে ফড়িং – চমক হাসান | Grasshopper in the trap of logic – Chamak Hasan

  • যুক্তিফাঁদে ফড়িং PDF Download Unavailable 
  • লেখক : চমক হাসান
  • প্রকাশনী : আদর্শ
  • বিষয় : দক্ষতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ
  • পৃষ্ঠা : 102, কভার : হার্ড কভার, সংস্করণ : 1st Published, 2021
  • আইএসবিএন : 9789849554943
  • রেটিং : ৪.৯৯/৫

লেখক চমক হাসান রচিত “যুক্তিফাঁদে ফড়িং” বইটিতে আছে ২৪ টি লজিক্যাল ফ্যালাসি। আমরা প্রত্যেকদিন ফেসবুক কিংবা বাস্তব জীবনে যুক্তিতর্ক করে থাকি! এই যুক্তির মাঝে লুকিয়ে থাকে অনেক ভুল ভ্রান্তি। এরকম অনেক গুলা ভুল ভ্রান্তি নিয়ে লেখা হয়েছে বইটি।

মুল চরিত্র হাসিব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যায় গ্রামে স্কুলের শিক্ষক হয়ে। যেখানে গিয়ে বুঝতে পারে শুধু শিক্ষা না শিক্ষার্থীদের যুক্তিবোধ কে শানিত করার প্রয়োজন আছে। যেন তাদের ফড়িংয়ের মতো অস্থির মন যুক্তির ভ্রান্তিতে না পড়ে। তখন থেকে হাসিব তাদের শোনায় যুক্তির নানা ভ্রান্তির গল্প। সেই ভ্রান্তির গল্প গুলোকে নিয়েই এই চমৎকার বই।

বইয়ের ভাষা অনেক সাবলীল।
বইটা অবশ্যই পড়া উচিত সবার। কারণ বইটা লিখেছেন চমক হাসান।(এটাও একটা যুক্তির ভ্রান্তি)। জানতে হলে পড়তে হবে!
হ্যাপি রিডিং।

গণিতে, বিজ্ঞানে কিংবা রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে তর্কে-বিতর্কে মানুষ সব জায়গাতেই যুক্তি প্রয়োগ করছে। এসব যুক্তির গঠন কেমন, সেগুলো কি আসলেই ঠিক যুক্তি নাকি ভুল, এমন নানা বিষয় নিয়ে ভাবা হয় যুক্তিবিদ্যায়।যুক্তিবিদ্যা নিজেই অনেক বড় একটা বিষয়। শুধু এটা নিয়েই অনেক অনেক পড়ালেখা করা যায়। আমি অবশ্য যুক্তিবিদ্যার অনেক গভীরে যাব না। যুক্তি প্রয়োগের সময় আমরা কী ধরনের ভুল করি তার কয়েকটা তোমাদের শেখাব।
যুক্তি দেওয়ার সময় যেসব ভুল আমরা করি, সেগুলোকে বলে ‘logical fallacy’ বা যুক্তির ভ্রান্তি। আরেকটা গালভরা বাংলা নামও আছে এটার— ‘হেত্বাভাস’। হেতু+আভাস এমন সন্ধি করে শব্দটা এসেছে। এই নামটার কথা হয়তো পরে কখনো বলব। এখন আমরা ভ্রান্তি শব্দটা ব্যবহার করব। মাঝে মাঝে সরাসরি ইংরেজি থেকে নিয়ে ফ্যালাসি শব্দটাও ব্যবহার করব।
আমরা একটা দারুণ সময়ে বসবাস করছি এখন। ইটারনেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো এই সময়ে আমাদের জীবনযাপনের অনুষঙ্গ হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, এটার একটা জাদুকরী প্রভাব পড়েছে সমাজে। সাধারণ মানুষ তাদের কথা ও কাজকে খুব সহজে বহু মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে। একটা সময় ছিল যখন নিজের লেখা কিংবা নিজের সৃষ্টিকর্মকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে হলে তাকে একটা বই প্রকাশ করতে হতো কিংবা তার কাজগুলোকে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে হতো। 
সবার পক্ষে সেটা সম্ভব হতো না। এখন এই প্রকাশের কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। অন্তর্জালে ব্লগে অথবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর নানা গ্রুপে তারা সৃষ্টিশীল কাজগুলো সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে তাকালে আমরা তাই অসাধারণ সৃষ্টিশীল কিছু কাজ দেখতে পাই।
কিন্তু প্রদীপের তলায় যেমন অন্ধকার থাকে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটা খারাপ দিকও আছে। মানুষ তাদের মনের অন্ধকার দিকগুলোও অবলীলায় এখানে প্রকাশ করে ফেলছে। কুরুচিপূর্ণ পোস্ট, মতামত কিংবা মন্তব্য চোখে পড়ে অহরহ। এসব পোস্টে কিংবা মন্তব্যে যে যার মতো উল্টোপাল্টা যুক্তি দিচ্ছে। ভুলভাল তথ্য ছড়াচ্ছে। জাল খবর’ বা ফেইক নিউজের পরিমাণও বাড়ছে।
আমার মনে হয়, এখন একটা ভালো সময় যৌক্তিকভাবে সচেতন হওয়ার। যে যা বলছে তা মেনে না নিয়ে একবার ভেবে দেখার। যুক্তির নিক্তিতে একবার পরখ করে নেওয়া যে তাদের কথায় কিংবা যুক্তিতে ফাঁক রয়ে গেল কি না। যারা পাঠক, তাদের যেমন জানা দরকার, তেমনি জানা দরকার যারা বক্তা তাদেরও।
আসলে সেই চিন্তা থেকেই এই বইটি লেখা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে মানুষ আমাকে চেনে গণিতের ভিডিও আর লেখালেখির কারণে। গণিত আমার অত্যন্ত প্রিয়, আমার প্রথম ভালোবাসা। আর গণিতের যেখানে ভিত্তি, সেটা হচ্ছে যুক্তি। যুক্তি ব্যাপারটা ভালো করে না জানলে গণিত-বিজ্ঞানের চর্চা ঠিকমতো করা যায় না। যুক্তি নিয়ে যেখানে আলোচনা করা হয়, তাকে বলে যুক্তিবিদ্যা, যেটা বহু প্রাচীন একটা বিজ্ঞান। এই বইয়ে যুক্তিবিদ্যার নানা রকম পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করা যেত। কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই সেগুলো এড়ানোর চেষ্টা করেছি, যেন এ বইটা একাডেমিক পাঠ্যবইয়ের মতো না। হয়ে যায়। আমি চেয়েছি বইটি যেন সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছে যেতে পারে। আমার আশা, তাহলে মানুষ চলতে-ফিরতে কথা বলার সময় কুযুক্তি কিংবা যুক্তির ভ্রান্তিগুলো নিয়ে সতর্ক থাকবে।
ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, যুক্তি ব্যাপারটাকে সবচেয়ে ভালো করে বোঝা যায় তখনই, যখন এর দুর্বলতাগুলো বোঝা যায়। যখন এর ভ্রান্তিগুলোকে অনুভব করা যায়। এই বইটিতে যুক্তির নানা রকম ভ্রান্তি (ইংরেজিতে বললে logical fallacy) নিয়ে আলোচনা করেছি।
এই বইটি যে আমি পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারছি, তার জন্য কিছু মানুষের কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। এখন থেকে দুই বছর আগে বুয়েটের সিনিয়র বড় ভাই নিউটন এম এ হাকিম আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন লজিক্যাল ফ্যালাসি নিয়ে একসঙ্গে একটি বই প্রকাশ করার। আমরা একসঙ্গে শুরু করেছিলাম, কিন্তু পরে সময়ের অভাবে কাজটা আর এগিয়ে নিতে পারিনি। এ বছর কিছুটা সময় পেয়ে নিজেই কাজটা করে ফেলেছি। পরে সময় পেলে একসঙ্গে আরেকটু বড় পরিসরে এই বিষয়টা নিয়ে লেখালেখির ইচ্ছে আছে। নিউটন ভাইয়ের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা রইল। এ ছাড়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি টেন মিনিট স্কুলের আয়মান সাদিকের কাছে। আমরা দুজনে একসঙ্গে একটা লাইভ অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেখানে যুক্তির বিভ্রান্তিগুলো নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। এই বইটি এ বছর শুরু করার পেছনে ওই অনুষ্ঠানটি একটা বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
আদর্শকে ধন্যবাদ, নিয়মিত তাগাদা দিয়ে যাওয়ার জন্য। বন্ধু মাহফুজ সিদ্দিকী হিমালয়কে ধন্যবাদ বইটির নাম নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য। আমার সহমানুষ ফিরোজা বহ্নি এবং আত্মজা বিনীতা বর্ণমালাকে ধন্যবাদ, তাদের ভাগের একটু সময় এই বইয়ের পেছনে ব্যয় করতে দেওয়ার জন্য। শুধু লেখালেখি না, আমার সানন্দে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় প্রেরণা, সবচেয়ে বড় অবলম্বন তোমরা!
বইটি পড়ে মানুষের যুক্তিবোধ আরেকটু শাণিত হোক, যুক্তির ভ্রান্তিগুলোর
ব্যাপারে মানুষ সচেতন হোক, লেখক হিসেবে এটুকুই চাওয়া।
চমক হাসান
সান্তা ক্লারিটা, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
মার্চ, ২০২১

যুক্তি আর ভ্রান্তির প্রথম পাঠ

শোমসপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল সাহেব হাসিবের বাবার বন্ধু ছিলেন। হাসিবকে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে তিনি খুব খুশি। হাসিবকে ডেকে সন্তানস্নেহে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলেন। ওকে দেওয়া হলো অষ্টম, নবম আর দশম শ্রেণির ক্লাস। গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের অনেক ক্লাসই ওকে নিতে হবে। অন্য সবার সঙ্গে কথা বলে হাসিব বুঝতে পারল, হাইস্কুলের কাজের চাপ আসলে ও যা ভেবেছিল তার চেয়ে অনেক বেশি!
প্রথম দুটো ক্লাস বেশ মসৃণভাবে নেওয়ার পর তৃতীয় ক্লাসে গিয়ে ও মূল প্রসঙ্গ থেকে বেশ দূরে সরে গেল ।
ক্লাসে অঙ্ক শেখাচ্ছিল হাসিব। একটা অঙ্ক শিখিয়ে আরেকটা সবাইকে করতে দেয়। সময় দেয় পাঁচ মিনিট। ঠিক করেছিল সময় শেষ হয়ে গেলে ও দুই-তিনজনের খাতা দেখবে। এমন সময় হুট করে হাসিবের মাথায় একটা চিন্তা আসে: দুই-তিনজনের খাতা দেখেই কি বোঝা যাবে ‘সবাই’ শিখেছে নাকি? অল্প নমুনা দেখে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা সব সময় যৌক্তিক নয়। Hasty Generalization’ বলে একটা ফ্যালাসি আছে। যা হোক, পরে ভাবা যাবে। ভাবনার জন্য বিষয়টা আপাতত তুলে রাখে।
পাঁচ মিনিট সময় শেষ। হাসিব ইচ্ছেমতো একজনের খাতা টেনে নেয়। হাসিব জানে উত্তর হওয়ার কথা শূন্য। সেই ছাত্রের উত্তরও এসেছে শূন্য। কিন্তু হাসিব দেখে, ছাত্রটা অনেক গোঁজামিল দিয়ে শেষ পর্যন্ত উত্তর মিলিয়ে দিয়েছে। হাসিবের হাসি পায়। ওর মনে হয় ছাত্রছাত্রীদের এবার একটু জ্ঞান দেওয়া দরকার। হেঁটে হেঁটে ও বোর্ডের কাছে যায়, ছাত্রছাত্রীদের দিকে ঘুরে মুখ হাসি হাসি রেখে বলে,
বলো তো, আমরা যখন অঙ্ক করি, তখন কোনটা বেশি জরুরি, উত্তরটা নাকি পদ্ধতিটা?
ছেলেমেয়েরা একটু দ্বিধান্বিত হয়ে যায়। অঙ্ক ঠিকমতো করেও যদি ছোট ভুলের কারণে উত্তরটা ভুল আসে, স্যাররা সব নম্বর কেটে রাখেন। এ থেকে ওদের মনে হয় উত্তরটাই বেশি জরুরি।
হাসিব ছাত্রছাত্রীদের দ্বিধাটা টের পায়। তারপরে বলে,
উত্তর অবশ্যই জরুরি। তবে গণিতে পদ্ধতিটা আরও বেশি জরুরি। অনেক সময় ভুল চিন্তা থেকেও ঠিক উত্তর আসতে পারে। মনে করো, আমি কাউকে জিজ্ঞেস করলাম ৫ দুগুণে কত হয়। সে উত্তর দিল এভাবে।
১ আর ৪ যোগ দিলে ৫ হয়।
৭ আর ৩ যোগ দিলে হয় ১০।
তাহলে আমার মনে হয় ৫ দুগুণে ১০ হবে।
তোমাদের কী মনে হয়, এটা কি ঠিক হলো? উঁহু। দেখো, এখানে তিনটা বাক্যের কোনোটাই ভুল না। কিন্তু ভুলটা হলো যুক্তি গঠনে। প্রথম দুই লাইন থেকে শেষ লাইন কী করে এল, কেউ জানে না। অঙ্কের ফল ঠিক এসেছে কিন্তু সেটাই সব কথা নয়। কোন পথ ধরে এল. সেটা খুব জরুরি।
আজকের ক্লাসে তোমাদের আর গণিত শেখাব না, তোমাদের একটু
যুক্তি শেখানো যাক। তোমরা কি রাজি?
সবাই একবাক্যে বলল, ‘জি স্যার। অঙ্কের ক্লাসে স্যার আর অঙ্ক করাতে চান না, এটাতে সবাইকে বেশ খুশি মনে হলো। হাসিব বোর্ডটা পরিষ্কার করে লিখল ‘যুক্তিবিদ্যা’।

যুক্তি (ARGUMENT)

গণিতে, বিজ্ঞানে কিংবা রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে তর্কে-বিতর্কে মানুষ সব জায়গাতেই যুক্তি প্রয়োগ করছে। এসব যুক্তির গঠন কেমন, সেগুলো কি আসলেই ঠিক যুক্তি নাকি ভুল, এমন নানা বিষয় নিয়ে ভাবা হয় যুক্তিবিদ্যায়।
যুক্তিবিদ্যা নিজেই অনেক বড় একটা বিষয়। শুধু এটা নিয়েই অনেক অনেক পড়ালেখা করা যায়। আমি অবশ্য যুক্তিবিদ্যার অনেক গভীরে যাব না। যুক্তি প্রয়োগের সময় আমরা কী ধরনের ভুল করি তার কয়েকটা তোমাদের শেখাব।
যুক্তি দেওয়ার সময় যেসব ভুল আমরা করি, সেগুলোকে বলে logical fallacy’ বা যুক্তির ভ্রান্তি। আরেকটা গালভরা বাংলা নামও আছে এটার— ‘হেত্বাভাস। হেতু+আভাস এমন সন্ধি করে শব্দটা এসেছে। এই নামটার কথা হয়তো পরে কখনো বলব। এখন আমরা ভ্রান্তি শব্দটা ব্যবহার করব। মাঝে মাঝে সরাসরি ইংরেজি থেকে নিয়ে ফ্যালাসি শব্দটাও ব্যবহার করব।
ভুলগুলো বোঝার আগে চলো একটু যুক্তি ব্যাপারটার দিকেই তাকাই। কখনো খেয়াল করেছ কী, আমরা যখন যুক্তি দিই, সেটার কাঠামোটা কী রকম হয়?
খুব সহজ করে বললে, যুক্তি দেওয়ার সময় কিছু একটা কথার ভিত্তিতে আমরা কিছু একটা বলি। যেমন ধরো কেউ বলল, মাথাটা খুব ব্যথা, তাই স্কুলে যাব না। এখানে তার মূল কথা হলো, ‘সে স্কুলে যাবে না। এটাকে বলে ‘সিদ্ধান্ত (conclusion)’। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে সে কিসের ভিত্তিতে পৌঁছাল? ‘মাথাটা খুব ব্যথা’- এই বাক্যের ভিত্তিতে, এই তথ্যের ওপর আশ্রয় করে। ওই তথ্যকে বলে ‘আশ্রয় বাক্য (premise)’।
মাথাটা খুব ব্যথা (আশ্রয় বাক্য) তাই স্কুলে যাব না (সিদ্ধান্ত)
আশ্রয় বাক্য একটা হতে পারে, একের বেশিও হতে পারে। যেমন খুব প্রচলিত একটা যুক্তির কথা বলা যেতে পারে, মানুষ মরণশীল (আশ্রয় বাক্য ১) হাফিজ একজন মানুষ (আশ্রয় বাক্য ২) অতএব, হাফিজ একদিন মরবে (সিদ্ধান্ত)
খেয়াল করো, এখানে কিন্তু আশ্রয় বাক্য দুটো।
হাসিবের কথা শেষ হওয়ার আগেই ক্লাসের পেছন থেকে হাসির শব্দ পাওয়া যায়। হাসিব জানত না যে ওই ক্লাসে হাফিজ নামে একটা ছেলে আছে। সে দাঁড়িয়ে বলল, ‘স্যার, তাই বলে যুক্তি শেখাতে গিয়ে আমাকে মেরেই ফেলবেন! পুরো ক্লাস খিলখিল করে ওঠে।
পেছন থেকে কেউ একজন মুখ লুকিয়ে বলে, ‘স্যার, হাফিজকে কিন্তু বেশি ঘাঁটায়েন না, সে আমাদের ক্লাসের বুনোকবি। আপনাকে নিয়েও যে কী লিখে ফেলবে, লুকানোর জায়গা পাবেন না।
“আচ্ছা মাথায় থাকবে ব্যাপারটা, হাসিব একটু হেসে আবার যুক্তির জগতে ফেরে।
এই আশ্রয় বাক্য আর সিদ্ধান্ত ছাড়াও যুক্তির খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান আছে। সেটাই আসলে যুক্তির প্রাণ। তাকে বলে ‘Inference’ বা অনুমিতি। আশ্রয় বাক্য থেকে সিদ্ধান্তে আসার ধাপ হলো এই অনুমিতি। এটা হলো আশ্রয় বাক্য আর সিদ্ধান্তের সেতুবন্ধ!
চলো এবার যুক্তির ভুলগুলোর দিকে তাকানো যাক।

ভ্রান্তি (FALLACY)

একটু আগেই তোমাদেরকে বলেছি, মানুষ যুক্তি প্রয়োগ করার সময় নানা রকমের ভুল করে, এগুলো ইংরেজিতে বলে fallacy। এই ভুলগুলো মূলত দুই রকমের হয়।
১. Formal fallacy বা কাঠামোগত ভুল: সেখানে আশ্রয় বাক্য ঠিক থাকে কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথটা ভুল হয়। যুক্তি গঠনের প্রক্রিয়াটাই এখানে ভুল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সেই পাঁচ দুগুণে দশ-এর অঙ্কটার কথা। আরেকটা ভাবতে পারো, মেঘ না হলে বৃষ্টি হয় না (আশ্রয় বাক্য ১) আজ বৃষ্টি হয়নি (আশ্রয় বাক্য ২) অতএব, আজকে মেঘও হয়নি (সিদ্ধান্ত)
দেখো, এটা কিন্তু ঠিক যুক্তি নয়। বৃষ্টি হয়নি মানেই যে মেঘও হয়নি— এটা বলা যায় না। শরতের সাদা মেঘ থেকে প্রায়ই হয়তো বৃষ্টি হয় না। এখানে প্রথম দুটো বাক্য যদি ঠিকও আছে, তিন নম্বর বাক্যটা ওটা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এখানে যুক্তির কাঠামোতেই ভুল।
ভুলগুলোর আরেকটা প্রকার হলো
2. Informal Fallacy বা আশ্রয় বাক্যের ভুল: এখানে আশ্রয় বাক্যটার ভেতরেই ঝামেলা থাকে। এই ধরনের ভুলই আসলে বেশি চোখে পড়ে। আশ্রয় বাক্যটাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন মনে হয় আরে, উনি তো ঠিকই বলছেন, কিন্তু আশ্রয় বাক্যটার দিকে নজর দিলেই বোঝা যায়, তিনি ভুলভাবে বা বিকৃতভাবে আশ্রয় বাক্যকে উপস্থাপন করেছেন।
যেমন ধরো,
বিখ্যাত ক্রিকেটার ‘ক’ বলেছেন, বিজ্ঞান মানুষের জন্য অভিশাপ
(আশ্রয় বাক্য)
অতএব, বিজ্ঞান থেকে দূরে থাকা উচিত (সিদ্ধান্ত)
এখানে যুক্তির গঠনে খুব একটা সমস্যা নেই। একজনের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাচ্ছি।
কিন্তু ঝামেলা আছে আশ্রয় বাক্যটার ভেতরে। আশ্রয় বাক্যটা নিজেই গ্রহণযোগ্য কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। একজন ক্রিকেটার বিজ্ঞান নিয়ে কী বলল, সেটা কেন গ্রহণযোগ্য, ব্যাপারটা পরিষ্কার না। এমন ভ্রান্তিকে বলে Appeal to questionable authority। পরবর্তী সময়ে এগুলো আরও বিস্তারিত শেখাব তোমাদের।
ঘড়ির দিকে তাকায় হাসিব। ক্লাসের সময় শেষ। সবাইকে বলে, আমি ঠিক করেছি আগামী ক্লাসেও অঙ্ক পড়াব না। মানুষ কী অদ্ভুত ধরনের উল্টোপাল্টা যুক্তি দেয়, সেগুলোর শোনাব তোমাদের! শুনতে চাও?’ সবাইকে বেশ খুশি মনে হয়। এমন ধরনের কথা আগে কেউ ওদের বলেনি।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?