প্রাচীন ভারতীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, বাম নাকের যে অংশ ফোরানো হয়, তার সাথে গর্ভধারণ অঙ্গের একটা যোগসূত্র থাকে… গর্ভধারণ যাতে ভাল হয়, তাই সেসময় থেকেই বিয়ের পর মেয়েদের বাম নাকে নাকফুল পরার প্রচলন চালু হয়… যদিও এই কথার বাস্তব ভিত্তি নেই।
মোগল শাসনের পর থেকে নাকফুল পরাটা বিশ্বাসের পরিবর্তে একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়। কেউ ডানে ফুরায়, কেউ বামে… বিভিন্নরকম নাকফুলও তৈরি হয়।
আমার বিয়ের কয়েকদিন আগের কথা… বাড়িতে প্রথম বউ আসছে… নতুন বউকে কি কি গহনা দেওয়া হবে, সেটা নিয়ে মা ও দুই বোনের সারাদিন জল্পনা কল্পনা…
হবু বউয়ের নাক ফুরানো ছিল না… তবুও তারা ঠিক করেছে বউকে নাকফুলও দিবে… কিন্তু আমি একদম নারাজ… কোনভাবেই নাকফুল দেওয়া যাবে না… নাকও ফুরাতে দিব না।
একরকম যুদ্ধ করেই অবশেষে নাকফুল না দেওয়ার জন্য সবাইকে রাজি করালাম।
বিয়ে হল… রাতে দুজন যখন একা হলাম, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে হঠাৎ বউ বলল, তার খুব ইচ্ছা নাক ফুরানোর… কিন্তু বিয়ের কোন নাকফুলই তো নেই। সে শুনেছে আমিই নাকি নাকফুল দিতে মানা করেছি।
আমিও আক্ষেপ করতে লাগলাম তার সাথে… কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ একগুচ্ছ ফুল আর বক্স থেকে ছোট্ট একটি নাকফুল বের করে বললাম, “এটা তোমার জন্য… প্রথম নাক ফুরিয়ে এটাই পরবে।”
তার মুখের দিকে তাকালাম… এই ছোট্ট নাকফুলটি দেখে সে যে খুশি হল, কোটি টাকার জিনিস পেয়েও হয়তো এতো খুশি হত না…
অবশ্য বাসায় ইচ্ছে করেই নাকফুল দিতে মানা করেছিলাম, যাতে সেটি সারপ্রাইজ হিসেবে বউকে প্রথম গিফট দিতে পারি… এইজন্য সবার সাথে একটু অভিনয় করতে হয়েছিল, যাতে সারপ্রাইজটা নষ্ট না হয়ে যায়।
উপরে উপরে “না”, কিন্তু লুকিয়ে নাকফুল ঠিকই কেনার জন্য পরদিন সকালে অবশ্য সবার কাছ থেকে ঝাড়িও শুনতে হয়েছে… তাতে কি আসে যায়… বউ খুশি তো সব খুশি… :p
যাই হোক, কথাগুলো এই জন্যই বলা যে বেশিরভাগ মেয়েরা ছোট ছোট জিনিসেই অনেক বেশি খুশি হয়… তারা আসলে গিফটের দামের চেয়ে গিফটদাতার আন্তরিকতা, ইচ্ছা আর ভালোবাসাকে সবার আগে দেখে…
পাঁচ টাকার একটি গোলাপ, বিশ টাকার চকোলেট কিংবা রাস্তার ধারে ফুচকা চটপাটি খেয়েও তারা অনেক বেশি খুশি হয়… ভালোবাসার মানুষ কাছে থাকলে বেঞ্চে বসে বাদাম খাওয়ার মধ্যেও সুখ খুঁজে পায়… শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রিয়জনটি একটুখানি সময় দিলে তারা দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ হয়ে যায়…
~ডাঃ তারাকী হাসান মেহেদি