- বইয়ের নাম : মুরগিগুলো গুণে রাখো
- মূল কাহিনী : ইউনিসেফ সহযোগিতায় প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে
- আঁকা : আহসান হাবীব
- প্রকাশনা : প্রগতি পাবলিশার্স।
- মুদ্রিত মূল্য্য : ১২০.০০ টাকা
মীনা আর মিঠু কাঠ কুড়িয়ে বাড়ি ফিরছিল।পথে রাজুর স্কুলে দেখতে পেল আপা কয়েকজন ছেলে মেয়েকে ভারি মজা করে গল্প বলছেন।বাড়ি ফিরে মীনা নিজে মাস্টার সাজলো আর মিঠু হলো তার ছাত্র।সে মিঠুকে তার নাম বলতে শেখাল।
মিঠু বলতে শিখলো,”আমার নাম মিঠু”।
এদিকে বাড়ি ফিরে রাজু বাবার কাছে স্কুলে সেদিন কী কী শিখেছে বলছিল।শুনে মীনার মন খারাপ হয়ে গেল,সে তার বাবাকে বললো ‘ আমি কেন স্কুলে যেতে পারিনা?’বাবা বললেন,’তুমি স্কুলে গেলে তোমার মাকে সাহায্য করবে কে?’
মা বললেন, ‘মেয়েদের কাজ রান্না করা,ঘর গোছানো আর বাড়ি দেখাশোনা করা।এসব কাজ তো বাড়িতেই শেখা যায় এর জন্য স্কুলে যাবার দরকার কি?’
মীনার মন খুব খারাপ হয়ে যায়।কিন্তু সে মোটেও হতাশ হয়না।ধীরে ধীরে সে তার বাবা-মাকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে মেয়েদেরও স্কুলে যাওয়ার দরকার আছে।নিজের বিদ্যাবলে বহুদিনের পুরনো এক চোরকে ধরিয়ে দিয়ে সে নিজ গ্রামে সকলের প্রিয়পাত্রী হয়ে ওঠে।সেই সাথে গ্রামের মোড়ল ও অন্য একজন প্রতিবেশিও মীনার বাবা-মাকে বোঝায় ছেলের পাশাপাশি মেয়েকেও লেখাপড়া শিখালে পরিবারের কত উপকার হয়।অতঃপর মীনার বাবা-মা মীনাকেও রাজুর সঙ্গে স্কুলে পাঠাতে রাজি হয়।
⚛⚛⚛
বরাবরই আমি অল্পকথায় রিভিউ লিখতে ও পড়তে পছন্দ করি।আজও তার ব্যতিক্রম করতে চাইনা।কথা বলছি,জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র মীনা কে নিয়ে।ছোটবেলায় অন্তত একবার মীনা কার্টুন দেখেননি বা বই পড়েননি এমন পাঠক কমই পাওয়া যাওয়ার কথা।
মীনা কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে বিদ্যালয়ে যেতে ভালবাসে এবং নতুন কোন কিছু সম্পর্কে শিখতে ও জানতে চায়। গ্রামের যে কোন সমস্যা মোকাবিলা করতে পছন্দ করে।রাজু মীনার পিঠেপিঠি ভাই।মিঠু মীনার পোষা টিয়া ও সবচেয়ে কাছের বন্ধু। মীনা-রাজুর ছোট্ট বোন রাণী।দোকানদার এক অত্যাচারী, অসৎ চরিত্রের লোক। কার্টুনগুলোতে তিনিই মূলত খলনায়ক।স্কুলের বড় আপা বা শিক্ষিকা যিনি মীনাকে বিভিন্ন সমস্যায় বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধারাবাহিকে বিভিন্ন চরিত্রের আগমন ঘটে সেগুলোও অত্যন্ত মজার এবং শিক্ষামলক বটে।
দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক একটি অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ইউনিসেফের সহায়তায় এই কার্টুনটি নির্মিত হয়ে থাকে।মোট ২৯টি ভাষায় প্রকাশিত হয় এই কার্টুনটি।তারই প্রেক্ষিতে বাজারেও মীনাকে নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানান রঙিন বই। এসকল বইতে সচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে মীনাকে ব্যবহার করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ ও ব্যবহারে উৎসাহিত করা, মেয়েদের স্কুলে পাঠানো, কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে না দেয়াকে গুরুত্ব দেয়া , যৌতুক বন্ধ করা, ছেলে-মেয়ে সমান পুষ্টি ও সুযোগ-সুবিধা পেলে মেয়েরাও অনেক কিছু করতে পারে তা বোঝানো ইত্যাদি।
আসছে ২৪ সেপ্টেম্বর মীনা কে উপলক্ষ্য করে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইস্ট-এশিয়ার দেশসমূহে মীনা দিবস পালন করা হবে।তাহলেই বুঝুন মীনার মর্যাদা।
একে একে পেরিয়ে গেছে জীবনের কতগুলো বছর অথচ আজও মীনা আমাদের মাঝে সমান জনপ্রিয়।আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও যেন মীনার আর্দশ নিয়ে গড়ে উঠতে পারে সেই প্রত্যাশা নিয়েই আজকের রিভিউ থেকে বিদায় নিচ্ছি।
আসছে মীনা দিবস উপলক্ষ্যে মীনাকে নিয়ে আরও ভালো মানের বই প্রকাশিত হোক এটাই আমাদের প্রার্থনা।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?