আচ্ছা! কেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে, মৃত্যু সম্পর্কে আপনার অবস্থান কি?
আপনি হয়তো এই ধ্রুব সত্য বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না কিংবা বলবেন, যা হবার তা হবে, এ নিয়ে চিন্তা করে কি আর তা আটকানো যাবে।
তবে, যখন কোন প্রিয়জনের মৃত্যুর কথা উঠবে, তখন আপনি কি অবস্থান নিবেন?
সহজ কথা, আমার অবস্থান পরিষ্কার, আমি এর ঘোর বিরোধী। কিন্তু হাসপাতালে প্রিয়জনের মৃত্যুর উত্তর হয়তো এত সহজেই দেয়া যায় না।
অনেক সহজ বিষয়ের কঠিন সমীকরণ দূর্বোধ্য হয়ে উঠে।
এরকমই একটি গল্পকে নিজের সাথে মিলিয়ে নিবেন যখন আপনি শাহাদুজ্জামানের “মামলার সাক্ষী ময়না পাখী” গল্পগ্রন্থের “মৃত্যু সম্পর্কে আমার অবস্থান খুব পরিষ্কার” গল্পটি পড়তে যাবেন।
শাহাদুজ্জামানের যতগুলো বই এদিক সেদিক করে পড়েছি, খুব সহজবোধ্য মনে হয়ে হয়েছে। লোকটার লেখার মধ্যে একটা জীবন ঘনিষ্ট ব্যাপার আছে, যা আপনাকে এংগেজ করে রাখবে।
“মামলার সাক্ষী ময়না পাখী” গল্পগ্রন্থের ১১ টি ছোট গল্পের ভাঁজে ভাঁজে উঠে এসেছে হাসপাতালের বেড, সেই বেড থেকে উঠে আসা কষ্ঠের গল্প। আবার একই বেড থেকে উঠে এসেছে হঠকারিতার গল্প। কথায় কথায় এসেছে সম্পর্কের প্রতারণা এবং একই সাথে মিশে গেছে নতুন সম্পর্কের রোমান্টিক অনূভূতি।
এই বইয়ের প্রত্যেকটি গল্পই আলাদা। কিন্তু বইয়ের প্রতিটি গল্প শেষ হলে দেখবেন, প্রত্যেকটা গল্পই আসলে একটি গল্পের কানেকটেড পার্ট। আর সেই গল্পের প্রতিটির চরিত্রের সাথেই আপনার পরিচয় আছে।
শহরে কোন পরিচিত শিল্পপতি হয়তো বাসায় বউ রেখেই আবার নতুন কোন প্রণয়ে ব্যস্ত। আবার গ্রামের কোন বৃদ্ধ যুবক হয়তো বুড়া বয়সে তরুণ কাউকে বিয়ে করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে কিংবা কেউ হয়তো কারো বউকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। এগুলো আমাদের আশেপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনা। এত দুঃখের মধ্যে হয়তো হতাশ হয়ে আপনি পাড়ি দিবেন দূরে কোথাও, যেখান থেকে ফিরে আশার টিকেট আপনি ইচ্ছে করেই কাটেননি। কারন আপনি আর আর ফিরতে চাচ্ছেন না, অথবা আপনার আর ফিরে আসার উপায় নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে আপনার জীবনে বৃহস্পতিবার চলে আসবে। আর আপনি জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে শিস দিয়ে বাসায় ফিরবেন, যদিও জানেন আবার আসছে রবিবার-পেটভর্তি ব্যস্ততা নিয়ে।
আধুনিক লেখকেরা তাদের লেখাতে পাঠককে ব্যস্ত রাখতে ভুলে যান বেশিরভাগক্ষেত্রেই। তারা গল্প শোনান, প্রেমের গল্প, বিচ্ছেদের গল্প আবার কখনো পলিটিক্যাল গল্প। কিন্তু কেউ জীবনের গল্প বলে না।
সেই দিক থেকে শাহাদুজ্জামান জীবনকেই গল্প উপস্থাপন করেছেন মৃত্যুর আবহ সঙ্গীতের সুরে।
“মামলার সাক্ষী ময়না পাখী” একটি পড়ার মত বই বলেই মনে করি। বিশেষ করে যাদের আমার মত বই পড়ার ধৈর্য নেই। কারন একটা বই পড়তে পড়তে চারটা সিনেমা দেখে নেয়া যায়। 🖐️
হ্যাপি_রিডিং 💜
(বই তেমন পড়িনা। আর রিভিউ লেখার দুঃসাহস দেখাইনি। ব্যাক্তিগত অনুভূতি তুলে ধরলাম)