মানুষ পাইছে টা কি বলোতো, সুযোগ পেলেই জ্ঞান দেয়া শুরু করে!

“মানুষ পাইছে টা কি বলোতো, সুযোগ পেলেই জ্ঞান দেয়া শুরু করে,আমরা কি কিছুই জানিনা বুঝিনা নাকি?”

“কেন বন্ধু কি হইছে?”
“আরেহ,পেজগির শেষ নাই,এক ভাই কে আমি ভাল মানুষই জানতাম,হঠাৎ সে কাল আমার অজু করা দেখে বলে আমার নাকি অজু হয়না,কেমন্ডা লাগে বলো তো?”
“এতে এত সেরিয়াস হওয়ার কি আছে,অজু কেন হয়না জানতে চাইতে আর শিখে নিতে তাই তো হতো?”
“সেরিয়াস হব না মানে? অজু নাহলে আমার নামাজই হবেনা আর সেরিয়াস হবোনা?”
“এটা যেহেতু বুঝো অজু না হলে নামাজ হবেনা তাহলে অজুতে ভুল কোথায় সেটা তাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল তোমার।”
“জিজ্ঞাসা করেছিলাম,বলে অজুতে নাকি ঘার মাসেহ করা যাবেনা,আরেহ মিয়া বড় বড় আলেম ওলামারা, বড় বড় বক্তারা ঘার মাসেহ করে তারা কি ওর থেকে কম জানে নাকি? তাই রাগ করে আর কথাই বলিনি তার সাথে।”
“ওহ আচ্ছা, তা এখন কি সিদ্ধান্ত নিলা ঘার মাসেহ কি বাদ দিবা?
” আরেহ নাহ, এসব কিছু নতুন ফেৎনা। এসব পরিকল্পিত আমাদের কে ঈমান হারা করার জন্য বুঝলা?”
“হুম বুঝলাম, কিন্ত অজু ঠিক না হলে নামাজই হবেনা এটা বোঝার পরেও তুমি কোনটা সঠিক জানার চেস্টা না করে বসে রইলে?”
“নাহ তা ঠিক না,আমরা তো জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি সবাই এভাবেই অজু করে। মক্তবের হুজুর ও এভাবেই শিখিয়েছে,এখন কে কি বল্লো তাই বলে কি আমি আমার আমল বদলে ফেলব নাকি?”
“না,অবশ্যই আমল বদলে ফেলবে না, তবে অভার সিউর হয়ে আমল করবে,কারন কবরে যেয়ে যদি দেখো তোমার দুনিয়ার সকল আমল ভুল ছিল, তোমার নেকির পাল্লা একেবারেই শূণ্য তখন কি ফিরে এসে আমল করতে পারবে?”
“নাহ সেই সুযোগ তো নাই,তাহলে তুমিও কি বলছো ঘার মাসেহ করা যাবেনা?”
“আমি সেটা কখন বললাম,আমি বললাম সঠিক টা জেনে আমল করতে।”
“আচ্ছা ধরলাম অজুতে ঘার মাসেহ নাই,কিন্ত ঘার মাসেহ করলে কি সমস্যা? আমি কি চুরি করছি নাকি ডাকাতি?  ঘার মাসেহ না থাকলে নাই, আমি তো অজুতে যা যা করা লাগে সবই করছি,ঘার মাসেহ টা নাহয় সতর্কতার জন্য করলাম যেন ঘার মাসেহ অজুতে থাকলেও হলো না থাকলেও সমস্যা নাই।”
“হা হা হা, বন্ধু তুমি কি জানো যদি সত্যিই অজুতে ঘার মাসেহ না থাকে আর তুমি ঘার মাসেহ করো তাহলে ওজু তো হবেই না উলটা তোমার পাপ হবে,এটা তোমার ওই চুরি ডাকাতির চাইতে ভয়ানক?”
“বুঝলাম না তোমার কথা,বুঝায় বলো?”
“বিদা’আত বুঝো? যেটা রাসুলে কারীম সঃ করেন নি,করতে বলেন নি,করার অনুমতিও দেন নি,এমন কি সাহাবায়ে কেরামগনের মধ্যেও যে আমল ছিল না,সেই আমল সওয়াবের আশায় করা ই হলো বিদা’আত। আর যে বিদা’আত করে বা প্রশ্রয় দেয়,তার জীবনের সমস্ত ফরজ সুন্নাত নফল  নামাজ রোজা সকল আমলই নষ্ট হয়ে যাবে [সহীহ বুখারীঃ৩১৭২]”।
“বলো কি, তাহলে তো শুধু নামাজই না সাথে সাথে আমার সবই যাবে যদি বিদা’আত করি। তাহলে কি অজুতে ঘার মাসেহ করব না সেটা বলো..?”
“করবা না কেন, যদি অজুতে ঘার মাসেহ থাকে আর সেটা অজুর ফরজ হয় তাহলে তুমি ঘার মাসেহ না করলে অজুই হবেনা, আর ঘার মাসেহ সুন্নাহ হলে সেটা বাদ দিলে অজু হবে কিন্ত জেনে শুনে একটা সুন্নাহ ছেরে দেয়া হবে।”
“তুমি দেখি ২দিকেই বলো, তাহলে তো ঘার মাসেহ করলে এক বিপদ,না করলে আরেক বিপদ?”
“বন্ধু ইসলাম এত কঠিন না,আবার সহজ ও না। শুধু তোমাকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে,কোন বিশ্বস্ত আলেম,মুহাদ্দিস বা মাওলানার কাছে যাও আর সমাধান নাও।”
“এটা বলোনা বন্ধু তারা যে যেটা করে সে সেটার পক্ষে যুক্তি দেয়,অনেকটা আওয়ামীলীগ বিএনপির মত যার যার কাছে তার তার টা ভাল অন্যেরটাই দোষ।”
“হাহাহা,রাজনৈতিক আলোচনা টেনোনা,এসো সমাধান খুজি,সমাধান হোক বা না হোক নিজেকে একটা সেইফ পজিশনে নেয়ার ট্রাই করি।”
“আচ্ছা বলো শুনি কি বলবা…” 
“অজু কিভাবে করতে হবে সেটা কোর’আনুল কারীমের সুরা আল-মায়িদার ৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন। সেখানে বলা আছে শুধু পরিপূর্ণ ভাবে মুখ ধৌত করা,২হাত কুনুই পর্যন্ত ধৌত করা, পুরো মাথা মাসেহ করা ও ২পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা। মানে শুধু এই ৪টা কাজ করলেই তোমার অজু হয়ে যাবে, একেবারে সলিড কথা,কোর’আনের একটা আয়াতেও কোন সন্দেহ নেই [সুরা বাকারাঃ০২]। এখানে কিন্ত মাথা মাসেহ করার কথা উল্লেখ্য আছে কিন্ত ঘারের কথা নাই। কিন্ত আরেকটু ভাল করে অজু করা মানে বিস্তারিত ভাবে অজু করার ক্ষেত্রে এই ৪ টা কেই বিস্তারিত ভাবে রাসুলুল্লাহ (সঃ) অজু করেছেন বা বলেছেন। অজু নিয়ে বিস্তারিত জানতে তুমি নিচের হাদিস গুলো পড়ে দেখে সিউর হতে পারো
সহীহ বুখারীঃ ১৫৯,১৬৪,১৯৩৪,৬৪৩৩,১৮৫,১৮৬, ১৯১,১৯২,১৯৭,১৯৯।
সহীহ মুসলিমঃ ৪২৯,৪৩০,৪৩১,৪৪৬,৪৪৮,৪৪৯।
তিরমিজিঃ ৩২,৩৩,৩৬,৩৭,৪৭,৪৮।
আবু-দাউদঃ ১০৬,১০৮,১১১,১১৭,১২১,১২৬,১৩৫
ইবনু মাজাহঃ ৪৩৪,৪৩৯,৪৪৪,৪৪৬।
নাশাঈঃ ৮১,৮৪,৯২,৯৫,৯৭,৯৮,১০১।
মিশকাতঃ ৩৯৩,৩৯৪,৩৯৭,৪০৫,৪১০,৪১৪,১৪৬
এগুলো আমি নিজে পড়ে দেখেছি এর মধ্যে কোথাও আমি ঘার মাসেহ করার কথা পাইনি,তবে কান মাসেহ করার কথা উল্লেখ আছে সাথে এটাও উল্লেখ আছে রাসুল সঃ বলেছেন কান হলো মাথারই অংশ, তার মানে মাথা মাসেহ ই শুধু করতে হবে আর কিছু নয়। এর বেশি করলে সেটা বিদা’আত হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। তার চাইতে বড় কথা বিদ’আত হোক বা না হোক, যেহেতু ঘার মাসেহ না করলেও ওজু হচ্ছে সেহেতু আমি রিস্ক কেন নিতে যাব যেখানে অজু না হলে নামাজ হবার কোন চান্সই নাই [বুখারীঃ১৩৫,মুসলিমঃ৪২৭,তিরমিজিঃ০১]। 
আর হ্যা, মাথা কিন্ত পুরো মাথা মাসেহ করতে হবে প্রচলিত নিয়ম মাথার ৩ ভাগের ১ ভাগ নয়,মাসেহ কপালের উপর চুলের শুরু থেকে পেছনে ঘার পর্যন্ত হাত যাবে,আবার সেখান থেকে হাত মাসেহ করতে করতে কপালের সামনের চুল পর্যন্ত আসবে,মানে পুরো মাথা মাসেহ করতে হবে”।
“তাহলে তো ওই হুজুর আমার ভালর জন্যই বলেছিল দেখছি।”
“বন্ধু,শুনো দ্বীনের বেপারে যে যাই নিজ থেকে তোমাকে বলতে আসুক, মনে রাখবে সে তোমার ভালই চায়,নাহলে তোমার ক্ষতিতে তার কি আসে যায় বলো? তাই (প্রচলিত ফেৎনার হানাফী বা আহলে হাদিস নামধারী) যেই তোমাকে কোন দ্বীনের বেপারে বলুক না কেন রাগ না করে সেটাকে যাচাই করে আমল করবে।”
“তা ঠিকি বলছো,আর কিছু হোক বা না হোক, এমন হাই রিস্কি বেপারটা মানুষ কে জানানো উচিত বন্ধু।”
“হ্যা তা ঠিক,এমন সচেতনতার জন্যই কিছু দ্বীনি ভাই বোন “সাদাকাহ্” নামে একটা ফেসবুক গ্রুপ পরিচালনা করে,চাইলে সেখানে জয়েন হয়ে থাকো,আর কিছু মেম্বার ও  ইনভাইট করে দাও,কারন তোমার মাধ্যমে জেনে যদি কেও আমল করে তবে সে যা সওয়াব পাবে তুমিও তার সমান সওয়াব পাবে কিন্ত তার কোন কমতি হবেনা,মানে যত জন কে জানাতে পারবে ততই  তোমার লাভ [সুরা আন-নিসাঃ৮৫ ;মুসলিমঃ৬০৬৫]।”
“ওই গ্রুপের লিংক দাও বন্ধু।” 
“লিংক লাগবেনা আমি যে নীল কালারের “সাদাকাহ্”__”Sadaqah”    লেখে দিচ্ছি, এই লেখার উপর টাচ করো গ্রুপে চলে যাবে,জয়েন হয়ে ইনভাইট করো,আর হ্যা ওই গ্রুপে রেফারেন্স সহ পোষ্ট করা হয়,তবুও যাচাই করে আমল করবে।”
“ওকে বন্ধু জাযাকাল্লাহ খইর “। সংগৃহীত।
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?