মসজিদ কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান ইমাম সাহেবকে বললেন, ‘গ্রামের অনেক মানুষকে দেখবেন তারা ঠিকমতো জানেই না বাচ্চাদের সাথে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। বাচ্চাদেরকে মসজিদে দেখলে তারা ক্ষেপে যায়। অথচ আমাদের নবি ﷺ বাচ্চাদের সাথে কত সুন্দর আচরণ করতেন, আমাদেরকে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করার কথাও বলে গিয়েছেন, তাই না? আপনি যদি একদিন জুমুআর খুতবায় সুন্দরভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতেন, তা হলে আমার বিশ্বাস মানুষজন ঠিকই বুঝতে পারবে।’
সভাপতি সাহেবের কথা শুনে ইমাম সাহেব বললেন, ‘আপনি তো আমার মনের কথাই বলেছেন। গত জুমুআয় নামাজ শেষে সবার চিল্লাচিল্লি শুনে আমিও ভাবছি এটা নিয়ে কিছু বলব। যাক, আপনিও যেহেতু বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন, তাহলে আল্লাহর নাম নিয়ে আগামী জুমুআয় আমি এটার ওপর কথা বলব, ইন শা আল্লাহ।’
জুমুআর নামাজে মসজিদ যখন মুসল্লিতে ভরে গেল, ইমাম সাহেব তখন তাঁর নসীহত শুরু করলেন।
‘আপনাদেরকে আজকে নবিজি ﷺ-এর জীবনের কিছু ঘটনা শুনাবো। তিনি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন, ছোটোদের সাথে যেমন ভালো ব্যবহার করতেন, বড়োদের সাথেও ভালো ব্যবহার করতেন, ধনীদের সাথে যেমন ভালো ব্যবহার করতেন, গরীবদের সাথেও তেমন ভালো ব্যবহার করতেন। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করাটা ‘ঐচ্ছিক’ না। এটা এমন না যে, করলে করলাম, না করলে না। মানুষের সাথে অবশ্যই ভালো ব্যবহার করতে হবে। নবিজি ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের ছোটোদের স্নেহ করে না এবং বড়োদের সম্মান করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
ছোটো ছোটো বাচ্চাদের সাথে নবিজি কী সুন্দর আচরণ করতেন! তিনি যখন নামাজ পড়তেন, তাঁর নাতনী তাঁর কাঁধে চড়তেন। রুকুতে যাবার সময় নাতনীকে নামিয়ে রাখতেন, আবার যখন সাজদায় যেতেন, তাকে উঠিয়ে নিতেন।
নবিজি ﷺ তাঁর আদরের দুই নাতি হাসান-হুসাইন রা.-কে কত ভালোবাসতেন! হাসান রা.-কে খুঁজে না পেলে বলতেন, “আমার কলিজার টুকরো পিচ্চিটা কোথায়?”
তিনি নামাজে দাঁড়ালে তাঁর আদরের নাতিরা ছুটে আসত। সাজদায় গেলে তাঁর পিঠে উঠে বসত। যে রাসূলকে আল্লাহ তাআলা এত সম্মান দিয়েছেন, সেই রাসূলই নামাজে দাঁড়ালে তাঁর নাতিরা পিঠে উঠত। আপনারা চিন্তা করতে পারেন? ইবাদাতের সময় এভাবে বিরক্ত করায় নবিজি কি রাগ করতেন? তাঁদেরকে ধমক দিতেন? না, উল্টো সাজদা লম্বা করতেন।
নবিজি ﷺ-কে লম্বা সাজদা দিতে দেখে সাহাবিরা পেরেশান হয়ে উঠতেন। তারা ভাবতেন, না জানি নবিজির কিছু হয়ে গেল! নামাজ শেষে তারা জিজ্ঞেস করতেন, ‘এত লম্বা সাজদা দিলেন কেন? আমরা তো ভেবেছিলাম আপনার নিকট ওহি অবতরণ হচ্ছে, অথবা আপনার রূহ বাহির হয়ে গিয়েছে!’
আল্লাহর রাসূল ﷺ লম্বা সাজদা দিতেন, যাতে তাঁর আদরের নাতিরা দীর্ঘক্ষণ তাঁর পিঠে চড়ে খেলতে পারে! সুবহানাল্লাহ! আমাদের নবি বাচ্চাদের প্রতি কত সহনশীল ছিলেন, কত উদার ছিলেন!
নবি ﷺ-এর মসজিদে পুরুষ, মহিলা, বাচ্চা—সবাই নামাজ পড়ত। তিনি চাইতেন লম্বা সূরা তিলাওয়াত করতে; কিন্তু, যখনই শুনতেন পেছন থেকে বাচ্চারা কান্না করছে, ছোটো সূরা তিলাওয়াত করে সংক্ষেপে নামাজ শেষ করতেন। কারণ, বাচ্চারা কাঁদতে থাকলে মায়েদের কষ্ট হবে।
‘বাচ্চাদেরকে কেন মসজিদে নিয়ে আসো? বাচ্চাদের জন্য ঠিকমতো নামাজ পড়তে পারি না’ এসব বলে নবিজি ﷺ কখনো বাচ্চাদের অভিভাবককে ধিক্কার জানাতেন না, রাগারাগি করতেন না।
আরিফুল ইসলামের ‘খোঁপার বাঁধন’ বই থেকে।