- বই: মর্কট মঞ্জিল
- লেখক: নিয়াজ মেহেদী
- প্রকাশক: সতীর্থ প্রকাশনা
- মুদ্রিত মূল্য: ১৯০/=
- পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৬৮
- প্রচ্ছদ: পার্থ প্রতিম দাস
হোমিও ডাক্তার আলতাবের পসার খুব একটা খারাপ ছিল না এলাকায়। কিন্তু কোথা থেকে হরি উড়ে এসে জুড়ে বসল! বাচ্চা, বুড়ো সবাই ছুটছে তার কাছে। তার পুরোনো রোগীরা তো যাচ্ছেই। এমনকি তার স্ত্রীও অসুস্থ ছেলেকে হরির কাছে নেবার জেদ ধরেছে। কি এমন ধন্বন্তরি ঔষধ পেল সে? ওদিকে গ্রামের লোকজন বলাবলি করছে, রাতে নাকি আকাশে গামলা উড়তে দেখা যায়। অনেকের চোখেই নাকি পড়েছে। এর সাথে হরির কোনো যোগাযোগ নেই তো?
#আমনুরার_নাম_রহস্য
বউ পইপই করে বারণ করা সত্ত্বেও হরেকেষ্টর পাল্লায় পড়ে মদ গিলে বেহেড মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরল লিয়াকত। এর ভিতর দারোগা এসে হাজির। সে নাকি কাল রাতে চুরি করেছে। যা বাবা! মাতলামি করেই কূল পায়নি, সে চুরি করবে কখন? দারোগা শাসিয়ে গেল সে যাতে বাড়ি থেকে কোথাও না নড়ে। কিন্তু সেই কথা শুনলে তো! সে গা ঢাকা দিতে যায় হরেকেষ্টর বাড়ি। ঐ গ্রামের প্রাচীন আম বাগানটা তার খুব মনে ধরে যায়। আম পেড়েও নিয়ে আসে। কিন্তু বাঁধ সাধে সুমতি। তাকে বলে প্রাচীন এক অভিশাপের কথা। লিয়াকত এসব পাত্তা দেয় না। সে সুযোগ খোঁজে বাগান মালিকের বাড়িতে চুরি করার। এই দাওটা মারতে পারলে পায়ের উপর পা তুলে বসে খাওয়া যাবে।
#বাঘপীর
মাজার ঘিরে অলৌকিক গল্প তৈরি না হলে লোকের কাছে তা গুরুত্ব পায় না। বাঘপীরের মাজারও তার ব্যতিক্রম না। কিন্তু যে কাহিনীতে আশ্চর্য হতে হয় তা হল, এই পীর নাকি পাকিস্তানি মিলিটারিদের আক্রমণ করেছিল। এরকম গল্প বোধহয় আগে কেউ শোনেনি।
#দুইবন্ধু
আনোয়ার বাজারে শাক বিক্রি করে। কারো সাথে বচসায় যায় না বলে ঠকতে হয় প্রতিনিয়ত। এজন্য নাপিত বগা তাকে ভ্যাল্টা বলে ডাকে। সে সময় যুদ্ধে দেশ উত্তাল। আঁচ এসে একসময় বাজারেও লাগে। জীবন বাঁচাতে সবাই যখন দিগ্বিদিকশূণ্য সে সময় আনোয়ারকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে বগা। হিন্দু হওয়ার অপরাধে বন্দী হয় সুবাদারের হাতে। গোবেচারা আনোয়ার এবার তৈরি বন্ধুত্বের ঋণ মেটাতে।
#ইনস্টাগ্রাম
সঙ্গীতার সাথে প্রেমটা মরে গেলেও ঘটা করে ব্রেকাপ করা হয়নি। এখনও পাপা’স প্রিন্সেস হয়েই আছে সে। ইনস্টাগ্রামে ডেয়ারে অংশ নেয়া আর ড্রাগস নেয়া ছাড়া তেমন কিছুই করার নেই। এতদিন পর হুট করে ফোন দিয়ে সিনেমা দেখার অফার করলে অবাক হওয়ারই কথা। তাও আবার হলে না, বাসায়। আসলে কি চায় সে?
#জবদুল_হোসেনের_জগৎ
জবদুলকে তার রিকশা পেইন্টিংয়ের সুবাদে সকলে এক নামে চেনে। কিন্তু তার জগতটাকে নাড়িয়ে দেয় এক অপরিচিত রিকশাওয়ালা। সে তাকে শোনায় গণি ওস্তাদের কথা। তার আশ্চর্য শিল্পীসত্তাকে নিজ চোখে দেখতে ছুটে যায় সে। কি এমন আছে লোকটার ভেতরে? যা তার নেই? এই রহস্যের সমাধান তাকে করতেই হবে।
#জলদেব
থানায় জয়েন করার পর বেশিদিন অতিবাহিত হয়নি। এর মাঝে একদিন থানার সেকেন্ড অফিসার আতিকুল্লাহ এক লোকের খালি হাতে মাছ ধরার গল্প শোনাতে আসল। এত কাজের ভিড়ে এসব গালগল্প কোন সিনিয়র অফিসারের ভালো লাগে? সুযোগ না পেয়ে বিদায় নিল আতিকুল্লাহ। কিন্তু কিছুদিন পর মাছ ধরা নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় বুঝতে পারল খালি হাতে মাছ ধরা লোকটাকে নিয়ে বিরাট একটা গড়বড় আছে।
#নিরুদ্দেশ
সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের কঠোর জীবনযাপনের মাঝখানে তমালের জীবনে মুনা যেন এক ঝলক শীতল বাতাস। ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেম। তুচ্ছ কারণে তাদের মনোমালিন্য হয়, আবার ঠিকও হয়ে যায়। কিন্তু এবার তিনদিন হয়ে গেল কোনো খোঁজ নেই। মনটা বেশ খারাপ তমালের। এর ভেতরও রুমমেট অনিককে ফোনে খুনসুটি করতে দেখে ভালো লাগে তার। ছেলেটা মনে হয় প্রেমে পড়েছে। জিজ্ঞেস করতেই ঘটনার সত্যতা জানা গেল। কিন্তু প্রেমিকার পরিচয়ে জগত এলোমেলো হয়ে গেল তার।
#পয়সা
মেলা শেষে সবাই যখন ফিরে গেছে নিজ ঠিকানায়, নাসরিন তখন জুয়ারিদের আড্ডার জায়গায় বুভুক্ষের মত পয়সা খোঁজে। কয়েকটা সিকি আধুলি কুড়াতে কুড়াতে সে চলে আসে জাদুকরের ডেরার কাছে। মাটিতে পড়ে থাকা পয়সাটা হাতে নিয়ে গরম লাগায় আবার ছুঁড়ে ফেলে। অবাক হয়ে দেখে দু’টো পয়সা হয়ে গেছে। টাকা বাচ্চা দিল নাকি?
#প্রতিধ্বনি
অফিস পলিটিক্সের স্বীকার হয়ে অজপাড়াগাঁয়ে বদলি হয়ে আসতে হয়েছে এনায়েতের। জায়গাটা সাপখোপে ভরা। তার উপর জনমানুষ বিবর্জিত। সময় কাটানোর জন্য ক্যাসেট প্লপয়ারটা নিয়ে এসে ভালোই হয়েছে। গান শুনে ভাত ঘুম দিয়ে উঠে চা খেতে বেরোয় সে। ফিরে এসে শোনে অঞ্জন দত্তের গান বাজছে। প্লেয়ারটা কি তাহলে বন্ধ করেনি সে? সেই রাতে সে মুখোমুখি হয় এক ব্যাখ্যাতীত ঘটনার। সারাদিনের কথপোকথনগুলোই আবার প্রতিধ্বনি হতে থাকে। অবর্ণনীয় আতঙ্ক গ্রাস করে তাকে।
#রূপান্তর
মাকড়া মিয়াকে সবাই এক নামে চেনে। লোকে তাকে ভয় পায়, সমীহও করে। সে নাকি চাইলে মাকড়সার রূপও ধারণ করতে পারে৷ এখন তার কাজ ঘাটে চাঁদা তোলা। এক রাতে তার পরিচয় হয় এক রহস্যময় আগন্তুকের সাথে। তারপরই বদলে যায় সব হিসাব।
#মর্কট_মঞ্জিল
গল্প পাগল আওলাদ মিয়ার ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে অকালের বষর্ণে। মন মেজাজ খারাপ করে বসে ছিল। এমন সময় আলতাব ডাক্তারের সহকারী এল তাকে ডাকতে। ডাক্তারের কাছে নাকি এক অদ্ভুত রোগী এসেছে। সে বলতে চায় এক আশ্চর্য গল্প। তাই গল্প পাগল বন্ধুকে ডেকে পাঠিয়েছেন আলতাব ডাক্তার। গল্পটা এমন- বানরের দুনিয়ার আইন অমান্য করে সমাজচ্যুত হল এক তরুণ বানর। জঙ্গল থেকে বিতাড়িত হয়ে এসে পড়ল মনুষ্য সমাজে। সেখান থেকে ভাগ্যের ফেরে খোদ ঢাকার বুকে। এরপরই বদলে যেতে শুরু করল তার জীবন আর ঘটল অবিশ্বাস্য এক ঘটনা।
ইদানিং বই পড়ায় বেশ অনিয়মিত হয়ে গেছি। আস্ত একটা উপন্যাস ধরলে কয়েক পাতা পড়ে রেখে দেই। সময় হয় না বা ধৈর্য থাকে না। তাই গল্প সংকলনই ভরসা। এই বইটা আমার জন্মদিনে পাওয়া উপহার। হাতে পেয়ে আর দেরি করিনি। পড়া শুরু করে দিয়েছি। ‘মর্কট মঞ্জিল’ নাম ভূমিকার গল্পটি ছাড়াও বইটিতে বেশ কিছু গল্প রয়েছে। প্রতিটি গল্প একটি অপরটি থেকে ভিন্ন স্বাদের।
বইটি সব থেকে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বাহুল্যদোষ থেকে অনেকটাই মুক্ত। শব্দচয়ন, বাক্যের গঠন, গল্পের গাঁথুনি সবদিকেই অনবদ্য। বিশেষভাবে ভালো লেগেছে ‘অজানা উড়ন্ত বস্তু’, ‘আমনুরার নাম রহস্য’, ‘জলদেব’, ‘প্রতিধ্বনি’ গল্পগুলো। তবে ‘বাঘপীর’ আর ‘পয়সা’ গল্প দুটো পড়ে মনে হলো হুট করে যেন শেষ হয়ে গেল। ‘ইনস্টাগ্রাম’ গল্পটা একেবারেই অন্যরকম। ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পটি পড়ে কিছুটা খটকা তৈরি হয়েছে। ‘মর্কট মঞ্জিল’-এর শুরুর দিকটা সংক্ষিপ্ত হলে বোধহয় আরেকটু বেশি উপভোগ্য হত।
ইতোমধ্যে যারা ‘আওলাদ মিয়ার ভাতের হোটেল’ পড়েছেন তারা তো অবশ্যই লেখকের লেখার সাথে পরিচিত। সেই আওলাদ মিয়া আবার ফিরে এসেছেন ‘মর্কট মঞ্জিল’ গল্পে। পড়ে ভালো না লাগার কোনো কারণ নেই।
সতীর্থ প্রকাশনার পরিবেশনা বেশ পরিচ্ছন্ন। প্রচ্ছদটাও বেশ।
মোটের উপর বইটা হতাশ করেনি। ছোটগল্প পছন্দ করলে নির্দ্বিধায় পড়ে ফেলতে পারেন।
#হ্যাপি_রিডিং।😊
[বি.দ্রঃ বহুদিন পর রিভিউ লিখলাম। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।]
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?