ময়ূরাক্ষী book review (হিমুকে নিয়ে প্রথম উপন্যাস)

রিভিউঃ রুদ্র ফারাবীl

হুমায়ূন আহমেদ তার বিশাল সাহিত্যিক জীবনে রচনা করেছেন অসংখ্য গল্প, উপন্যাস। এর মধ্যে সৃষ্টি করছেন তিনি অসংখ্য চরিত্র। কিন্তু এর মধ্যে কতগুলো চরিত্র এতই বিখ্যাত হয়েছে, সময় গড়িয়ে গেলেও পাঠকরা তাদের এখনো নিজেদের মধ্যে ধারন করে রেখেছে। এমনি এক সাড়া জাগানো চরিত্র হল ‘হিমু’। হলুদ পাঞ্জাবি, খালি পায়ের এই রহস্যময় যুবকটি সহজেই দখল করে নিতে পেরেছে এদেশের বইপিপাসী মানুষের মন।

‘ময়ূরাক্ষী’ এই হিমু চরিত্র সৃষ্টিকারী প্রথম উপন্যাস। এই উপন্যাসের মাধ্যমেই পাঠকরা খুঁজে পান হিমু নামের এই রহস্যময় যুবকের সন্ধান। আমি যখন এই উপন্যাসটি পড়েছি, তখন অনেক সময়ই আমার মনে হয়েছে, ইশ! আমি যদি হিমু হতে পারতাম! যদি পারতাম এরকম স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে। যদি আমারও থাকতো এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কর্মকাণ্ড করে মানুষকে সহজেই আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা! অর্থাৎ এই ‘হিমু’ চরিত্রটি আমাকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছিল! যারা এখনো ‘হিমু’র সাথে পরিচিত হননি, তাদের উচিৎ অবশ্যই একবার ময়ূরাক্ষী বইটি পড়া। আমার দৃঢ় বিশ্বাস হিমু তার সম্মোহনী ক্ষমতা দ্বারা আপনাকেও সম্মোহিত করবে।

ময়ূরাক্ষী হিমুকে নিয়ে হুমায়ূন আহমদের প্রথম বই। “ময়ূরাক্ষী” দিয়েই হুমায়ুন আহমেদ হিমু কে আমাদের সামনে এনেছেন।”এ্যাই ছেলে এ্যাই ” বাক্যটি দিয়ে শুরু হওয়া বইটিতে পাঠক হিমুর সাথে পরিচিত হয়।

জাস্টিস সাহেবের স্ত্রী আর মেয়ের সাথে ভুলের  কারণে হিমু কে থানায় যেতে হয়।  তখন থেকে ছেলেটির কথা বলা পাঠকের একটা সুক্ষ্ম আকর্ষন দখল করে নেয়। তার কিছু পর হিমু পরিচয় করিয়ে দেয় তার  ময়ূরাক্ষী নদীর সাথে।এর  ইতিহাস পাঠক অজান্তে হিমুর মাধ্যমে কল্পনায় পেয়ে যাবে। হিমুর সাথে সাথে পাঠকের পরিচয় হয় তার গন্ডির সাথে।  সেখানে তার ফুফাত ভাই বাদল আর ফুফাতো বোন রিনকি হিমুকে প্রচন্ড ভালবাসে।

ফুপার সাথে হিমুর আলাপ সালাপ পাঠকদের অবাক করে দেবে।  এর পরেই আমরা একটু একটু করে হিমু কে চিনবো। তার  শৈশব থেকে শুরু করে তার বড় হওয়া দেখবো।

তার বাবার  মহাপুরুষ বানানোর প্রক্রিয়া আমাদের একটু হলেও অন্য অনুভূতি দিবে।

এর পর পাবো  অসম্ভব রুপবতী রুপাকে। তাকে কি হিমু ভালবাসে? কি জানি…

আমাদের অবাক করে দেবে হিমুর হাটা।

“আমি সারাদিন হাঁটি। আমার পথ শেষ হয় না। গন্তব্যহীন যে যাত্রা তার কোনো শেষ থাকার কথাও নয়…”।

ময়ূরাক্ষী উপন্যাস সৃষ্টির সাথে  হিমুর  পথ চলা শুরু ,  কিন্তু পাঠকের  অন্ত্যহীন পথের সঙ্গী সে । সেই  পথ চলা  কখনো আনন্দের, কখনো ভালোবাসার,  কখনো অনেক দূঃখময়।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন হুমায়ুন আহমেদ। কালজয়ী এই  ঔপন্যাসিকের সৃষ্ট চরিত্র হিমু ,  ওরফে হিমালয়। ময়ুরাক্ষী দিয়ে তার প্রবেশ। গল্পের মূল চরিত্র হিমু। তার সাথে পরিচিত হতে পাঠকের মোটেও খারাপ লাগবে না।

উপন্যাসের পুরো ফোকাস যে হিমু , পাঠকের তা বুঝতে বড় জোর মিনিট খানেক লাগবে। এই হিমু আপনাকে আস্তে আস্তে করে নিজের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। আপনি অবাক হবেন কি করে, আপনার সকল মনযোগ এই ছেলেটা নিয়ে গেছে। যখন টের পাবেন ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে।  কেন না ততক্ষনে আপনি আসক্ত।  হুমায়ূন আহমেদ এমন একটা চরিত্র তৈরি করেছেন,  যাতে আমাদের অপূরনীয়  ইচ্ছা গুলো প্রকাশ পায়। হিমু ভক্ত হতে তখন আর দেরি হয় না।

বহুদিন পরেও এই বই ছুয়ে মনে হলো আমারও একটা নদীর দরকার ছিলো যেখানে কিছু টা সময় আমি পার করতে পারতাম।  তার অগোছালো কাজ গুলোও আকর্ষনীয় মনে হবে।  বইয়ের শেষ পাতা গুলো আরো বেশি আচ্ছন্ন করে দিবে, যেখানে সে তার নদীর তীরে অন্য কাউকে  হাটতে দিয়েছে। রূপা কত টা পাঠিকাদের আকর্ষন করতে পেরেছে জানি না।  তবে পাঠক দের পুরো মনোযোগ নিয়ে গেছে। তারাও রূপার মতো কাউকে চায়। আর আমি তো আমার রুপার অপেক্ষায় আছি এখনো। যে তার জন্য অপেক্ষা করবে কিন্তু সে হিমুর  মতো ফাকি দিবে। কেন না ভালবাসার মানুষ এর কাছে বেশি যেতে নেই। তারা অপেক্ষা করুক….

(আপনার পছন্দের বই সাজেস্ট করুন। রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করবো। পাঠকের ভালোবাসা পাইলে প্রতিদিন রিভিউ দিতে ভালো। সকলকের ভালোবাসা রইলো🌸)

বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?