- মধ্যযুগের বাংলা পিডিএফ
- খন্দকার স্বনন শাহরিয়ার
- বাতিঘর
- ৩০০ টাকা
বাঙালিরা বরাবরই স্বাধীনচেতা জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। যার দরুণ যুদ্ধ-বিগ্রহ, ক্ষমতার রদবদল, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, অর্ন্তকোন্দল কিংবা বহিঃশত্রুর আক্রমণ সর্বদা ছিল বাংলা ভূখন্ডে। তখনকার বাংলা আজকের মত ছিল না। ভারত বিভক্তির আগে বাংলা বড় একটি প্রদেশ ছিল এবং এখানের শাসকেরা স্বাধীনভাবেই শাসন করে গেছেন। তুর্কি সেনাপতি খলজির বাংলা বিজয়ের শুরু থেকে ব্রিটিশদের ক্ষমতা দখলের মধ্যবর্তী সময়কে মধ্যযুগ হিসেবে বিবেচিত করে বইটিতে বাংলার ক্ষমতার রদবদলের ইতিহাস উঠে এসেছে।
বাঙালিরা স্বাধীনচেতা জাতি হলেও এরা সবসময়ই বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়ে এসেছে। ফলশ্রুতিতে বাঙালিদের বাইরের শাসকেরা বিশ্বাসঘাতকদের সাহায্য নিয়ে শাসন করে গেছেন। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজির বাংলা জয়ের মাধ্যমে এই অঞ্চলে মুসলিম শাসনের সূচনা হয়। হিন্দু রাজা লক্ষ্মণ সেন পালিয়ে গেলে খুব সহজেই ক্ষমতা গ্রহণ করেন খলজি। হিন্দু বর্ণাশ্রম এর প্রতি তিক্ততা থেকে অনেক হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং খলজির হস্তক্ষেপে সুফি-সাধকদের মাধ্যমে বাংলায় ইসলাম ধর্ম অনুসারী উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বাংলা শাসনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছিল শাহী বংশ। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের আমলে বাংলার পূর্ব সীমান্ত যেমন নির্ধারণ হয়ে যায় তেমনি বারবক শাহের আমলে বাংলা ভাষার প্রসার ও প্রচার হয়। শাহী বংশের শাসনামলের উল্লেখযোগ্য দুইটি ঘটনা হলো রাজা গণেশ ও মালিক আন্দিল তথা ফিরোজ শাহের শাসনামল। ফিরোজ শাহ হাবশি শাসনের সূচনা করেন। হিন্দু রাজা গণেশ কিছুকাল শাসন করলেও মোগল আক্রমণের ভয়ে নিজের ছেলে যদুকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে ক্ষমতায় বসান এবং পেছন থেকে নিজে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। রাজা গণেশ বাংলার শেষ হিন্দু রাজা হলেও নিজের ছেলেকে ইসলামে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে মূলত ইসলামী শাসনব্যবস্থাকেই দীর্ঘায়িত করেছেন।
বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ছিলেন ঈসা-খাঁ। সোনারগাঁও এলাকায় রাজধানী বসিয়ে তিনি দীর্ঘদিন শাসন করেছেন ওই অঞ্চল। চাঁদ রায়ের কন্যা স্বর্ণময়ীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয় তাঁর। স্বর্ণময়ী ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন ঈসা-খাঁ কে। ঈসা-খাঁ এর আমলে মোগল অভিযান পরিচালিত হলেও তারা বাংলা অধিকার করতে পারেনি, তাই তাদের প্রতিবারই পরাজিত হয়ে ফেরত যেতে হয়েছে। অবশ্য তাঁর পুত্র মুসা-খাঁ মোগলদের হাতে পরাজিত হন এবং তাদের আনুগত্য স্বীকার করে নেন। শেরশাহের গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড নির্মাণ কিংবা মোগল বাদশাহ হুমায়ুনকে পরাজিত করে দিল্লির ক্ষমতা দখল, শায়েস্তা খানের চট্টগ্রাম জয়ের মাধ্যমে জলদস্যু দমন এবং বাংলার প্রথম নবাব হিসেবে মুর্শিদ কুলি খানের ঢাকার উন্নয়ন আমাদের মধ্যযুগের শাসকদের অন্যতম সাফল্য।
কোনো শাসনব্যবস্থাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একটা সময় তাকে বিদায় নিতে হয়ই। তেমনিভাবে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলতে থাকে। এই সময়ে আলিবর্দি খান সুযোগের সদ্বব্যবহার করে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার ক্ষমতা গ্রহণ করেন। মোগল, মারাঠা কিংবা আফগানদের বিরুদ্ধে তিনি বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করলেও প্রাসাদের যুদ্ধে তিনি নিজের উত্তরাধীকারীকে নিরাপদ রেখে যেতে পারেন নি। নাতি সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে ক্ষমতার অন্যান্য ভাগিদাররা ষড়যন্ত্র শুরু করেন; যার শেষ দৃশ্য দেখা যায় পলাশীতে। যুদ্ধে পরাজিত এবং পরবর্তীতে নিহত হলে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের মৃত্যু দিয়ে বাংলা দুইশ বছরের জন্য ব্রিটিশদের হস্তগত হয়। যদিও এর কিছুকাল পরে মীর জাফরের জামাতা মীর কাসিম মোগলদের সহায়তা নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। অথচ দেখা যায় পলাশীর ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে বক্সারের ময়দানে। যুদ্ধে মীর কাসিম শুধু পরাজিতই হলেন না, সাথে করে মোগল সাম্রাজ্যকেও ব্রিটিশদের হাতে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করে দিলেন।
বইটি অসংখ্য তথ্য দিয়ে ভরা। আমাদের ইতিহাসের বিজয়ী, পরাজিত, হতোদ্যম চরিত্রকে দেখতে পাই এখানে। বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যারাই শাসকের কাছাকাছি গিয়েছেন তারাই ক্ষমতার লোভে নিজ শাসককে হত্যা করতে পিছপা হন নি। আপন ভাই, বাবা কিংবা নিকট আত্মীয়স্বজনকে অবলীলায় হত্যা করে ক্ষমতায় বসার পথকে কণ্টক মুক্ত করেছেন তারা। ইতিহাস সবাইকে সমানভাবে দেখেনা। কাউকে করেছে বিজয়ী আবার কাউকে দেখিয়েছে অত্যাচারী শাসক হিসেবে। এটা ইতিহাসবিদদের ইচ্ছাকৃত বলার চাইতে অসচেতনতা বলাটাই শ্রেয়। ইতিহাস বারবার ফিরে এসেছে এই বাংলায়। তবুও কেউ শিক্ষা নেয়নি, ভবিষ্যতেও যে নিবে এটা নিয়ে সন্দেহ করাটা অমূলক নয়।
দারুণ একটা বই পড়লাম। অনেক কিছু জানলাম নতুন করে, বিস্তারিতভাবে। যা শুধু নামে নামে জেনে এসেছিলাম, সেইসব চরিত্রকেই দেখলাম নতুন আঙ্গিকে। লেখককে ধন্যবাদ এমন একটি বই আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। Safe Download Link
বইপাও থেকে আপনি আর কি কি কন্টেন্ট পেতে চান?